Monday, December 25, 2017

নদীর নাম - River's name

Boston, 25-Dec-17, 9:49 PM

তিতাস নামের মানেই কি এক মন-কেমন,
যেমন করে তোমার চোখে শোকপালন।

আনত মুখে কিসের কথা লুকোতে চাও,
ঠোঁটের ফাঁকে আটকে আছে আঘাতটাও। 

তোমার হাসি পাগল করে অনেককেই,
তার গভীরে একটুও কি দুঃখ নেই ?

থাকেও যদি, প্রিয় মানুষ, খবর পায় ?
ঠিক যেভাবে তোমার লেখা মেঘ ঘনায় ?

মেঘের পাশে আমার আছে নতুন ঘর,
মেলানকলি উষ্ণতায় ভীষণ জ্বর। 

ঘোরের মধ্যে গাইছি আমি নদীর নাম,
স্বীকারোক্তির কবিতারা হয়েছে গান। 

সুরের মধ্যে রং-হারানো ব্যর্থ প্রাণ,
নিজের প্রতি প্রেমের তানে উদীয়মান।

তোমার এসব অন্ধকারের সময়কাল,
পেরিয়ে এসে হাত বাড়িও সখ্যতার। 

Sunday, December 24, 2017

সঞ্চারী - Sanchari

প্রথমে সঞ্চারীকে একদমই ভালো লাগেনি। কারণ ওকে বুঝতেই পারতাম না। এমনভাবে নিজেকে গোপন করে রাখতো, যে চিনতে পারতাম না। তার থেকে বরং অন্তরাকে বেশি পছন্দ ছিল। কিন্তু যেদিন "যখন পড়বে না মোর" আর "এমন দিনে তারে"-টা মন দিয়ে শুনলাম, সেদিন থেকেই সঞ্চারীর প্রেমে পড়া শুরু। সঞ্চারীর প্রতি যে রবিবাবু একজন পক্ষপাতদুষ্ট অভিভাবকের কাজ করেছেন, সেটা বলতে দ্বিধা নেই। সঞ্চারীকে তিনি একটু বেশি আদর দিয়েছেন। সঞ্চারীতে এসেই ওনার বেশিরভাগ গানে কথা ও সুর অন্য মোচড় নেয়। সঞ্চারী তাই হয়ে ওঠে একটা pleasant surprise. অন্তরাকে স্থায়ীর extension মনে হয়, আভোগও অনেকসময়ই অন্তরার বশবর্তী বা অনুপস্থিত। এদের মধ্যে থেকে আলাদা হয়ে সঞ্চারীই স্বতন্ত্র এবং নিজমহিমায় সুন্দরী হয়ে ওঠে।

Saturday, December 23, 2017

FRDI বিলের সমর্থনে (~ 7 মিনিট) - In Support of FRDI Bill

FRDI-বিলের মতো সুন্দর, উপকারী বিল, আমি আগে শুনিনি। সিপিএমের মতো আহাম্মকরাই এটার বিরোধিতা করতে পারে। আমার মনে হয়, সিপিএম সহ সব রাজনৈতিক দলের উচিত বিলটাকে ভালোভাবে স্টাডি করে আরো উন্নত এবং পাকাপোক্ত করার। জনগণের সুবিধার্থে এর থেকে ভালো কোনো বিল হতে পারে না। কেন এরকম বলছি, সেটা ব্যাখ্যা করছি।

প্রথমে বিলটা ছোট্ট করে বুঝে নেওয়া যাক। FRDI-বিলটা আদতে খুবই সহজ, বা cute-ও বলা যায়। বিলটায় বলা হচ্ছে যে, যদি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, মানে সাধারণ মানুষের গচ্ছিত সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থা ব্যাংকটির না থাকে, তাহলে জনগণকে তাদের জমা-রাখা টাকার একটা অংশমাত্রই ব্যাংক ফেরত দেবে। জনগণের গচ্ছিত বাকি টাকাটা সেই ব্যাংকের শেয়ার বা অন্য কোনো মাধ্যমে handover করা হবে। মানে ধরুন, আপনি HDFC ব্যাংকে ২ লক্ষ টাকা রেখেছেন। HDFC ব্যাংক যদি বসে যায়, তবে HDFC আপনাকে বলবে, আপনি ১ লক্ষ টাকা আপাতত রাখুন। আমরা একটু দুস্টুমি করে ফেলেছি, তাই বাকি টাকাটা এখন দিতে পারবো না। বাকি ১ লক্ষ টাকার জন্য আপনাকে HDFC ব্যাংকে কিছু শেয়ার দেওয়া হল, ধরুন আপনি ০.০০৫% শেয়ার পেলেন HDFC-র। এরকম একটা ব্যবস্থা করা হবে, এই হচ্ছে মদ্যা কথা।

এরকম জনহিতকারী বিলও যে আনা যায়, ২০০৮-এর financial crash আর দিগ্গজ ইকোনোমিস্ট এবং MBA-রা না থাকলে, আমরা বিশ্বাসই করতে পারতাম না ! আহা, কি দুর্দান্ত কনসেপ্ট ! যাই হোক, ব্যাংক কত টাকা নিশ্চিতভাবে ফেরত দেবেই, এই upper limit-টা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, এখনো অব্দি limit-টা ১ লক্ষ টাকা আছে। মানে ১ লক্ষ টাকা অব্দি আপনাকে যে কোনো পরিস্থিতিতেই যে কোনো মূল্যে ফেরত দেওয়া হবেই। এই limit-টা পরে বাড়িয়ে হয়তো ৩.৫ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। সিপিএম-সহ সব রাজনৈতিক দলের সেটা দেখা উচিত। তারপর ধীরে ধীরে বিলটাকে পাশ করিয়ে দেওয়া উচিত। তবেই শুরু হবে আসল মজা ! অনেক মজা !

কিভাবে মজাটা সবাই পাবে, সেটা বলছি। তার আগে বোঝা দরকার, ব্যাংক দেউলিয়া কখন হয়। মূলত বড় ব্যবসায়ীদের লোন দেওয়ার পরে, যদি সেই লোন আদায় বা recover করতে না পারে, তাহলে সেই ব্যাংক ধীরে ধীরে দেউলিয়াপনার দিকে এগোতে থাকে। যেমন বিজয় মালিয়া লোন নিয়ে বিদেশে গিয়ে বসে বিয়ার পান করছেন, সেরকম জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি হলে। এবার সেরকম অবস্থা হলে, ব্যাংক আপনার টাকাটা নিজেদের পুনরুজ্জীবনের কাজে লাগবে, নিজেকে আবার গড়ে তোলার জন্য। বদলে ব্যাংক আপনাকে তাদের উঠে-যেতে-বসা-ব্যাংকেরই কিছু শেয়ার দেবে। ব্যাংকটা এভাবে নিজেকে আবার গড়ে তুলতেও পারে, আবার fail-ও করে যেতে পারে। fail করে গেলে, আপনি আর টাকা ফেরত পাবেন না। দুস্টুমি করলে তো সবসময় শোধরানো যায় না, তাই ফেরত পাবেন না। তখন আপনি ব্যাংকটাকে সোনামনা-কুচিপুচি বলে মাফ করে দেবেন। আর এখানেই মজাটা লুকিয়ে আছে, কে এই মাফটা করবে।

একটা ব্যাপার ভেবে দেখুন, ৩.৫ লক্ষ টাকা কিন্তু সুরক্ষিত থাকবেই, যে কোনো ধরণের পরিস্থিতিতে। সে যদি ব্যাংক দেউলিয়াও হয়ে যায়, তাও ৩.৫ লক্ষ টাকা অব্দি আপনি পাচ্ছেনই। কারণ আপনার সেই পরিমান টাকা ব্যাংকে insure করা থাকবে। ৩.৫ লক্ষের উপরের টাকাটা ব্যাংক আপনাকে হয়তো আর নাও দিতে পারে, কোনো গ্যারান্টী নেই। তো এতে খারাপ কি? যাদের গচ্ছিত টাকা ৩.৫ লক্ষের কম, তাদের তো কোনো অসুবিধে নেই। মানে অসুবিধে হবে যে সব লোকেদের, তারা হল মূলত মধ্যবিত্ত, আর উচ্চ-মধ্যবিত্ত। মানে এই IT, Engineering, public সেক্টরে কাজ করা বা ছোট ব্যবসা-করা তাবৎ জনগোষ্ঠী, অনেকেই যুবক-যুবতী। এই ক্লাসের মানুষেরাই তাঁদের টাকা খোয়াতে পারেন বা তাদের টাকার devaluation হতে পারে, এই নতুন বিলের চক্করে। কিন্তু এই শ্রেণীর মানুষেরা হচ্ছেন তারাই, যারা স্বপ্ন দেখেছিল এবং এখনও দেখে বিজেপিকে নিয়ে। যারা স্বপ্ন দেখে, মার্কেট ইকোনোমি একদিন এদের উচ্চবিত্ত করে তুলবে। এরা স্বপ্ন দেখে, বিজেপির "development" ভারতকে প্রবলভাবে এগিয়ে দেবে প্রগতির দিকে। এরা ২০১৪-তে বিপুলভাবে বিজেপিকে ভোটও দিয়েছিল [১]। তো এরা এতো স্বপ্ন দেখে ফেললো, আর সেই স্বপ্নের কোনো মূল্য দেবে না, তা হয় নাকি? এমনি সময় "মার্কেট ইকোনোমি", "মার্কেট ইকোনোমি" করে লাফাবে, আর নিজের গচ্ছিত টাকার বেলায় safe খেলবে - তা হয় কি করে?

তাই এই ক্লাসটাকে পড়তে দেওয়া হোক মার্কেটের পাল্লায়। সরাসরি বুঝুক, মার্কেটের উত্তাপ কাকে বলে। যারা গরিব, তাঁরা তো সুরক্ষিত থাকছেনই। বাকি সুবিধাভোগী ক্লাসটাকে এবার দায়িত্ত্ব দেওয়া হোক নিজেদের এবং নিজেদের পছন্দের। শুধু "নোটা", বিজেপি, কংগ্রেস - এসব choose করে চলবো, আর নিজেদের গায়ে একটুও আঁচ লাগতে দেব না, তা তো হয় না। এরা শুধু বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের বদলে রুই মাছ কিনে, বা কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার বদলে কাকদ্বীপ ঘুরতে গিয়ে, বলবেন যে lifestyle adjust করছি - সেটা আর কদ্দিন চলবে। গরীবরা যে প্রচন্ড হারে আরো পিছিয়ে পড়ছেন, সেটা এই মধ্যস্বত্ত্বভোগী, সুখী middle class-টা realize-ই করতে পারেনা। কোন পার্টির ইকোনোমিক পলিসি কি, সেটা এই শ্রেণীর মানুষদের সরাসরি বোঝানোর সময় এসে গেছে। সিপিএমের মতো পার্টির তাই উচিত, এই গোষ্ঠীটাকে নিজেদের কর্মের ফল বোঝানোর। আশা করবো, এই সুবিধাভোগী ক্লাসকে বাঁচানোর যেন মিনিমাম চেষ্টাই সিপিএম করে। এই মধ্যবিত্তরা সিপিএমকে ভোটও দেয় না, সমর্থনও করে না, উপরন্তু communism-কে obsolete বলে মনে করে। কি দরকার এদের পাশে দাঁড়ানোর? তাতে হয়তো, কিছু মধ্যবিত্ত যারা এখনো সিপিএমকে ভোট দেন, তারা suffer করবেন, কিন্তু এটুকু collateral damage মেনে নেওয়া যায়, বৃহত্তর class consciousness-এর স্বার্থে।

[১] Christophe Jaffrelot; The Class Element in the 2014 Indian Election and the BJP’s Success with Special Reference to the Hindi Belt; Studies in Indian Politics; May, 2015

Wednesday, December 20, 2017

সুন্দরীর আত্মকথন

নমস্কার। আমাকে আপনারা হয়তো চেনেন না। তবে আমি কিন্তু আপনাদের আশেপাশেই ঘাপটি মেরে আছি। আমাকে দেখতে সুন্দরী, হয়তো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত না হলেও, যে কেউ দেখেই সুশ্রী বলবে। যদিও বেশিরভাগ বাঙালি মেয়েকেই বিশ্বসুদ্ধ লোক তা-ই বলে, তবুও আমি নিজেকে সাধারণের থেকে বেশি সুন্দরী বলে মনে করি। আসলে এছাড়া আমার আর কোনো উপায়ও নেই, এই একটিমাত্র ব্যাপারেই আমার পারদর্শিতা। জানি, আপনারা ভাবছেন যে, এখানে *আমার* পারদর্শিতার কি হল, কিন্তু একটা রূপ maintain করে চলারও তো ব্যাপার আছে। তাছাড়া আজকাল যা দূষণ চারিদিকে, এই মেইনটেন্যান্স এর পিছনে কত পরিশ্রম লাগে, তা তো আপনারা বুঝবেন না। দেখছেন, এতক্ষন কথা বলছি, আর এখনও আমার পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি। আসলে নিজেকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে, আমি কেমন যেন আত্মহারা হয়ে যাই ! যাই হোক, ইংরিজিতে আমার একটা গালভরা নাম আছে, সেটা আপনাদের guess করতে হবে। তবে আমাকে অনেক নামেই ডাকা যায়, যেমন আপনারা আমাকে সুনয়না বলতে পারেন। যদিও শুধু নয়ন নয়, আমার পুরোটাই সুমধুর।


ছোটবেলা থেকেই আমার কোনো আম্বিশ্যান নেই। খুব ছোটবেলায় তো কিছুই ভাবতে পারতাম না, শুধু টিভিতে চলমান ছবি দেখে উল্লসিত হতাম। একটু বড় হতে বুঝলাম, আমাকে দেখতে সুন্দরী। তারপর থেকেই মোটামুটি আমার বারোটা-বাজার শুরু। বাবা-মা ছোটবেলায় নাচ-গান করানোর চেষ্টা করেছিল; ওদের মনঃপুত করতে এবং সমাজের চাপে সেসব করিও। তবে ওসবে আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল না। আমি খেয়ে বসে হেসে, বেঁচে থাকতেই পছন্দ করতাম।



খুব মুশকিলে পড়ে গেছিলাম মাঝের কয়েক বছরে। প্রেমের নিবেদন অনেকই আসে, কিন্তু একটির চরিত্র বুঝতে ভুল হয়ে গেছিল। আমার সেই প্রেমিক আমাকে নিজের যোগ্যতায় ভালোলাগার কিছু করতে বলে, এবং তার জন্য আমাকে নাকি সে সমস্ত রকমের সহযোগিতা করবে। আমি তো হতবাক ! এ বলে কি ! ছোটবেলা থেকে বাবা মা যেটা করাতে পারলো না, এ বলে কিনা সেটা করতে ! যাই হোক, বেঁচে গেছি সেসব ব্যাপার থেকে।



তবে সমাজের কাছে মান রক্ষার্থে চাকরি করি এখন। কিন্তু আমিও জানি সে চাকরি আমি ঠিক কিসের জোরে পেয়েছি।আমার যে বর, সে কোনো দিক থেকেই আমার সমকক্ষ নয়, আমি জানি। আমি তাকে কতটা রোম্যান্টিকালি ভালোবাসি, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। কিন্তু তাতে কি যায় আসে? টাকা-পয়সা, সমাজে প্রতিপত্তি এসব দিক থেকে বেশ আদর্শ। আর মনের মিলের থেকে বড় দরকারি, টাকার অফুরন্ত যোগান, আর আমাকে প্যাম্পার করার মানসিকতা। আর একটা গোপন কথা চুপিচুপি বলে রাখি, আমার মত রূপসর্বস্ব মেয়েকে পেয়েই ও খুশি হয়েছে, কারণ এছাড়া ওর সঙ্গে থাকার মতো কেউ জুটতো কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সে জন্য আমার চাকরির টাকা, আমি নিজের কাছেই রাখি। বরের টাকাটা স্বভাবতই সংসারে যায়। আর আমিও পেয়ে যাচ্ছি যখন যা চাই। আর কি চাই ! জীবন মানে তো এটাই, তাই না? জীবন মানে কি দুনিয়াটাকে বোঝার চেষ্টা, কোন বোকচন্দর যে বলেছিল !



তবে কি জানেন, শুধু আমার কথা নয়। আমার হাজারো প্রতিমূর্তি দেখতে পাবেন আপনাদেরই চারপাশে। আমি কোনো একটা মানুষ নই, আমি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটা দর্শন। যে দর্শনে হোটেলে খেতে গিয়ে আমরা বিল পেমেন্ট করার কথা চিন্তাও করি না, সেই দর্শন। যে দর্শনে আমরা বিয়ের পর শুধু পদবী পরিবর্তন না-করাটাকেই সাফল্য মনে করি, সেই দর্শন। যে দর্শনে সামাজিকভাবে, কাজের জায়গায় মেয়ে হওয়ার অতিরিক্ত সুবিধে নিয়ে থাকি, ভিকটিম-প্লে করে থাকি, সেই দর্শন। এই দর্শনেই আমরা "ফেমিনিজম"-কে স্রেফ একটা উদ্বাহু আন্দোলনের ক্যারিকেচারে পরিণত করছি। এই দর্শন আমাদের মধ্যে গেঁথে বসে আছে। বহন করে চলছি খুব গভীরে। এবং অদূর ভবিষ্যতেও করে চলবো।



--- আপনার চেনা কোনো এক সুন্দরীর অল্টার-ইগো

Friday, December 15, 2017

Dead Poets Society - Realization - Quotes

In the end, the journey feels like from Todd Anderson to Knox Overstreet to Charlie Dalton to Neil Perry to John Keating, the teacher.

Thursday, December 07, 2017

বিটকয়েন আর অর্থনীতি | Bitcoin and Economics

বিটকয়েন এর নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি। যারা শুনেছেন এবং শোনেননি, সকলের জন্যই লেখাটা। শেষ পর্যন্ত লেখাটা সাধারণ অর্থনীতির দিকে নিয়ে গিয়ে শেষ করবো। যারা এ সম্পর্কে শোনেননি, তাদের উৎসাহ যোগানোর জন্য বলি যে, এখন মাত্র একটি বিটকয়েন-এর মূল্য ১৪-১৬ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। কি করে এই অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল, সেটা কিছু পরেই বোঝা যাবে। তার আগে এর সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। 

বিটকয়েন একটি ডিজিটাল কারেন্সি। মানে এর কোনোরকম ফিজিকাল অস্তিত্ব নেই। এই কারেন্সি যদি কিনতে চান, তাহলে আপনাকে অনলাইনেই কিনতে হবে। আপনার একটি প্রাইভেট পাসওয়ার্ড দ্বারা সেই কারেন্সি সুরক্ষিত থাকবে। কিভাবে এটা সুরক্ষিত থাকছে, সেটা বলার জন্য আর একটা লেখা লিখতে হবে। এমন দুর্দান্ত কিছু থিওরি নয়, এবং এই সম্পর্কিত একটি লেখা কিছুদিন পরে পাবেন। তবে এখন আপাতত এটুকু জানলেই চলবে যে, কিছু unsolved mathematical problem-এর জেরেই, আপনার পাসওয়ার্ডের দ্বারা ওই ডিজিটাল কারেন্সি, বিটকয়েন, সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা আছে। যেমন আপনার সাধারণ টাকা ব্যাংকে সুরক্ষিত থাকে, অনেকটা তেমন করেই। কিন্তু বিটকয়েন শুধু এই নিরাপত্তার জন্য এবং ডিজিটাল হওয়ার কারণেই স্পেশ্যাল, তা নয়। এর একটা অন্য কারণ আছে। 

এই বিটকয়েনকে কোনো সেন্ট্রাল অথরিটি নিয়ন্ত্রণ করছে না। এর মানে হলো, কোনো রিজার্ভ ব্যাংক বা সরকার নেই, যে বলে দিচ্ছে কত বিটকয়েন মার্কেটে থাকবে। অথবা কেউ কোনো অর্থনৈতিক নিয়ম তৈরী করে দিচ্ছে না, যাতে বিটকয়েনের যোগান কন্ট্রোল করা যায়। ফলে বিটকয়েনের মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় সরকারের কাছে নেই। এ বিষয়েই পরে আর একটু আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে বিটকয়েনের পিছনে আর একটি প্রযুক্তি কাজ করছে, সে ব্যাপারে জানা প্রয়োজন।

যেহেতু কোনো সেন্ট্রাল অথরিটি বিটকয়েনকে কন্ট্রোল করছে না, তাই এটা বোঝা তো খুব শক্ত যে কার কাছে কত বিটকয়েন আছে! অথবা কেউ অন্য কাউকে বিটকয়েন যদি ট্রান্সফার করে, তাহলে আদৌ সেই বিটকয়েনগুলি ভ্যালিড কিনা এটা যাচাই করার উপায় কি? এর পিছনে আছে একটি নতুন টেকনোলজি, blockchain। আরো সোজা ভাষায়, একটি পাবলিক ledger সিস্টেম। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মেশিনে কপি করে রাখা আছে, একটি public ledger. এই পাবলিক ডেটাবেস বা লেজারে জমা রাখা হচ্ছে সমস্ত transaction বা লেনদেনগুলো। এই public ledger-এ কোনো transaction তখনই ভ্যালিড বলে গণ্য হবে, যখন একটি নূন্যতম সংখ্যক মেশিন (যথাযত সংখ্যাটা বলাটা একটু জটিল) সেটাকে মান্যতা দেবে। এই মান্যতা দেওয়ার পদ্ধতিও বেশ অভিনব। এই মান্যতা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক মেশিনকে করতে হবে কিছু সময়সাপেক্ষ জটিল গাণিতিক ক্যালকুলেশন। যখন নূন্যতম সংখ্যক মেশিন ক্যালকুলেশনগুলি করার পরে কোনো transaction-কে মান্যতা দিলো, তখনই সেই transaction পাবলিক লেজারে বৈধ হিসেবে স্থান পাবে। সেই ক্যালকুলেশনগুলো করতে, আপনার বা আমার সাধারণ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার অনেক বেশি সময় লাগিয়ে দেবে। কিন্তু দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের বেশ পাওয়ারফুল মেশিনগুলো তুলনামূলকভাবে কম সময়ে এই ক্যালকুলেশন করতে পারে। এই পাওয়ারফুল মেশিনগুলোকে সমষ্টিগতভাবে কিনেছে আমার বা আপনার মতোই সাধারণ মানুষেরা। তারা এই জটিল ক্যালকুলেশনের পুরস্কারস্বরূপ কিছু নতুন বিটকয়েন পাবেন, এবং এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বিটকয়েনগুলি।

মূলত এই হচ্ছে বিটকয়েন সিস্টেম। এই সিস্টেমে কাউকে identify করা খুব কষ্টকর এবং প্রায় অসম্ভব বলা যায়। কারণ পুরো লেনদেনটাই হচ্ছে অজ্ঞাতপরিচয়ে। ফলত কারোর জানার ক্ষমতা নেই, কার কাছে কত বিটকয়েন আছে। এই বিটকয়েনের মূল্য মূলত নির্ধারিত হচ্ছে এর যোগানের অভাব থেকে। এখনো অব্দি মোটামুটি ১৬ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরী করা হয়েছে এবং বাজারে আছে। তবে বিটকয়েন সর্বাধিক তৈরী হতে পারে ২১ মিলিয়ন। গাণিতিক ফর্মুলার জেরেই তার থেকে বেশি বিটকয়েন তৈরী হওয়া আর সম্ভব নয়। ফলে একটা সীমা থেকে যাচ্ছে সর্বমোট বিটকয়েনের। (অনেকটা সোনার সাথে এক্ষেত্রে তুলনা করা যায় বিটকয়েনকে) এখানে যদিও হ্যাকিং বা চুরির সমস্যা আছে। কিন্তু সেই সমস্যা যে কোনো অনলাইন ডিজিটাল মিডিয়ামের থেকে বেশি কিছু নয়, বরং খানিকটা কমই। 

তবে বিটকয়েনের সবথেকে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যটা হল নিয়ন্ত্রণহীনতা। যেহেতু সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই যারা Free Market Capitalism-এর সমর্থক তারা এ ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী। এই কারেন্সির মূল্য ঠিক করে দিতে পারে শুধুই বাজার এবং সেখানের চাহিদা-যোগানের সমীকরণ। সে কারণে তাদের উচ্ছাসের যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু পুঁজিপতিদের সমস্যাও যদিও সেখানেই, নিয়ন্ত্রণ-না-থাকা নিয়ে। কারণ সরকার শুধুমাত্র একটি যন্ত্র, যা পুঁজিপতিদের লাভ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই সেই নিয়ন্ত্রণটুকু চলে গেলে, পুঁজিপতিরা কিভাবে তাদের লভ্যাংশ বাড়িয়ে চলবেন, সেটা বড় চিন্তার কারণ হতে পারে।

যারা anarchy পছন্দ করেন, তাঁদেরও কাছেও যথেষ্ট আকর্ষণীয় এই বেলাগাম মুদ্রা। কারণ যে established currency-গুলি আছে, সেগুলোর বাধা এড়িয়ে এই মুদ্রাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর সে কারণে এই মুদ্রা বিকল্প অর্থনীতির একটা দিক খুলে দিতে পারে। অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতিতে এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কোনোভাবেই এই মুদ্রা আমাদের সম্পদের চরম অসামঞ্জস্যকে কমাতে পারবে বলে, আমার মনে হয় না। এখনকার অর্থনীতিকে সাময়িক আঘাত দেওয়া ছাড়া, একে পরিবর্তনের জন্য বিটকয়েনের দিকে না তাকানোই ভালো। বরং এখনকার রাজনৈতিক সিস্টেমের প্রতি মানুষের আস্থা কতটা কমে গেছে, বিশেষত ২০০৮-এর ফিনান্সিয়াল ক্র্যাশ-এর পরে, তার একটা প্রতিফলন পাওয়া যায় বিটকয়েনের মতো সিস্টেমের বিপুল জনপ্রিয়তায়। শেষ পর্যন্ত আমরা তাকিয়ে থাকবো, বিটকয়েন গ্লোবাল কারেন্সি হিসেবে আন্তর্জাতিক বেড়াজাল ভেঙে দিয়ে কতটা সফল হতে পারে, সেই দিকে।  

Monday, December 04, 2017

চৈত্রের হলুদ বিকেল । Yellowish Afternoon of Spring (~ ৪ মিনিট)

শীতকাল। একসাথে মনে পড়ে যাওয়া অনেকগুলো অনুভূতির নাম শীতকাল। কারো কাছে সেটা স্রেফ নলেন গুড়ের মিষ্টি, কারো কাছে বইমেলা, আবার কারো কাছে সরস্বতী পুজো-সহ ছুটির মরসুম। এইসবগুলো ছাড়াও আরো কিছু মুহূর্ত শীতকালকে বয়ে আনে।

বাড়ি থেকে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে আছে দক্ষিণ-পূর্ব রেললাইন। রাত্রিবেলা যখন চারধার একদম নিশ্চুপ, তখন দূরে ছুটে যাওয়া ট্রেনটার শব্দে শীতকাল নামে। সেই শব্দ কখনো শুনেছি জয়েন্টের অঙ্ক কষতে কষতে, আবার কখনো প্রেমিকার আধো-আধো-কথার মধ্যেই অজান্তে মিশে গেছে। এখন আর জয়েন্ট নেই, প্রেমিকার আগে প্রাক্তন বিশেষণ বসেছে, কিন্তু শীতকাল আমারই হয়ে রয়ে গেছে। যে শীতকালে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসতো। সেই জন্য একটু আগে ক্রিকেট খেলতে যেতে হতো। দুপুর ৩টে নাগাদ, একটু চড়া রোদের মধ্যে। নাহলে কিছুতেই তিনটে ৮-ওভারের ম্যাচ খেলা যেত না। সেইসব ম্যাচে আমার টিমে যে অলরাউন্ডার, ব্যাট-বল দুটোতেই আমাকে যে ভরসা দিত, সে-ও আর নেই। কিন্তু ওর সাথে ম্যাচ খেলে ফেরার দৃশ্য থেকে গেছে। সেই দৃশ্যেকে আবছায়া করে তুলতো কুয়াশার সাদা চাদর আর রুম্পাদের বাড়ির উনুনের ধোঁয়ার সংমিশ্রণ। সেই ধোঁয়া পেরিয়ে আমরা বাড়ির দিকে যেতাম, গায়ে জ্যাকেট চাপানো হত না। দূর থেকে মা-কে অফিস থেকে ফিরতে দেখতাম, কাজ-করা একটা ঘিয়ে-রঙের চাদর গায়ে। জ্যাকেট না-পড়ার জন্য বকুনি শোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে, অন্য রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরার জন্য দৌড় লাগাতাম।

আবার কোনো কোনো দৌড় নন্দনে এসে থেমে যেত। দেরি হওয়ার জন্য অনেক অভিমান শীতকালে জমাট বেঁধে থাকতো। দৌড়ে এসেও সে অভিমান গলানো যেত না, কিন্তু নাটকীয়তায় কাজ হতো। শেষ অব্দি, পাশের মানুষটার হাত ধরে ক্রসিং পেরিয়ে মেট্রোর দিকে যাত্রা। রবীন্দ্র সরোবর, মাফলার, সারি সারি বেঞ্চ, হলুদ আলো, অন্ধকার, শীতকালের উষ্ণতা, কলকাতা-পুলিশ, ফুচকা পেরিয়ে ছোট্ট কোনো রেস্টুরেন্ট। তারপর একটা অটো এসে থামতো, আর গান হতো, "কার সাথে বলো, শব্দ ছুঁড়ে ফিরবো বাড়ি!" বুকের মধ্যে চিনচিন-করা শূন্যতা নিয়ে বাড়ি ফিরতেই হতো। বাড়ির যদিও নিশ্চিত কোনো ঠিকানা থাকে না, সেটা থাকে ঘরের। তাই বাড়ি হয়ে যেত কলকাতার অন্য প্রান্তে প্রযুক্তির-নগরীতে। তখন সেখানে শুনশান রাস্তাঘাট। কপাল ভালো থাকলে লেবু-মাখানো ভুট্টা পাওয়া যেত। অথবা রাতের জন্য রুটি-তরকার আয়োজন করে আনতাম। সেই রাত শেষ হয়ে যেত গিটারের সাথে পানীয়ের মিশ্রনে। কেমন আছে সেই রাত?

প্রশ্ন তো শুধু রাতকে নয়, পুরোনো আরো অনেককে। যেমন, চঞ্চল কি এখনো ডিসাইন করে? সাগর কি এখনো রাতের বেলায় কবিতা লেখে? সেই লেখা কোনো সৌম্যকে পড়াতে আসে? শফিকুল কি রাতে হিন্দি গান গায়? কেউ কি সাথে আনাড়ি গিটার বাজায়? সুখময় কি মন-খারাপ হলে সৌম্যকে ফোন করে, চারপাশের হলুদ আলোয় একটু বেড়িয়ে আসার জন্য? বাণীব্রত সিপিএমকে গালি দেয়, তৃণমূলের দিন-বদলের স্বপ্ন দেখে? অংশুমান কি এখনো abstract painting করে, নাকি ওর জীবন এখন বড়ই বাস্তব, সেখানে বিমূর্ততার বিলাসিতা নেই ! শীতকাল এই প্রশ্নগুলোর সামনে বারবার ছুঁড়ে ফেলে আমায়। 

এখন আমি কম তাপমাত্রার ঠান্ডা সর্বক্ষণ পাই, কিন্তু সে ঠান্ডায় "শীতকাল" নেই। যে শীতকাল অপেক্ষা করতে বলে উষ্ণতার জন্য, খুব জবুথবু হয়েও। যে শীতকাল ফাল্গুন-চৈত্রের দিকে চেয়ে থাকে। সেই শীতকালেই এখনো বসে আছি আমি। অপেক্ষা করছি সৌম্য, চঞ্চল, সাগর, শফিকুল, এদের সব্বার। গিটার হাতে "চৈত্রের কাফন" গাইবার চেষ্টা করছি A-মাইনরে। স্ট্রামিং করতে পারছি না ভালোমতো, শিখতে চেষ্টা করছি। এই result-oriented money-market-এ শেখার কোনো মূল্য নেই জানা সত্ত্বেও, নতুন স্ট্রামিং প্যাটার্নটা হাতে তোলার চেষ্টা করছি। কারণ শীতকালেই বোধ হয় "চৈত্রের কাফন"-এর সুর আসে, যে সুরে আদ্যন্ত মনখারাপকেও আপন করে নেওয়া যায়। শীতকাল আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছে, "চৈত্রের হলুদ বিকেলে"র। আমি চেয়ে আছি আকাশের সাদা মেঘের দিকে। সেই মেঘে আঁকা আছে শীতকালের প্রতীক্ষা, শুধুই চৈত্রের জন্য। 

Saturday, November 18, 2017

পাগল হাওয়া

একজন জিজ্ঞেস করছিল, কিন্তু ওনাকে কজন মনে রাখলো বল তো? আমি বলি, সাধারণ মানুষ তো তেমন কাউকেই মনে রাখে না। তাদের দৈনন্দিন ঝুটঝামেলার শেষে, শিল্পের চলমান ধারাকে মনে রাখার মতো সময় কোথায়! কিন্তু যারা সত্যিই সংগীতের বিবর্তন নিয়ে আগ্রহী, সংগীতের প্রকৃত গুণগ্রাহী, তারা ঠিক জানে, রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সংগীতে যে আধুনিকতার আঘাত দেওয়াটা দরকার ছিল, সেটা সলিল চৌধুরী ছাড়া সম্ভব ছিল না। 

তাঁর গান লেখা শুরু হচ্ছে ৪০-এর দশকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাহেন্দ্রক্ষণে। বাংলায় তখন রবীন্দ্র, নজরুল বা দ্বিজেন্দ্রলালের ভারতীয় ধারার সংগীত প্রবলভাবে বিদ্যমান। সেই সময়েই চা-বাগানে বড় হওয়া এক কিশোর বাখ-মোৎজার্ট-বেঠোভেন শুনে ফেলছেন। আর শুধু শুনছেনই না, সেই পাশ্চাত্য সংগীতকে মিশিয়ে দিচ্ছেন ভারতের রাগাশ্রয়ী এবং রাবীন্দ্রিক-ঘরানার সংগীতের সাথে। কিন্তু সেইরকম সুরের মতো উপযুক্ত কথাও তো চাই। কখনো সেই কথা পাচ্ছেন সুকান্তের কবিতায়। কখনো রচনা করছেন নিজেই। 

ইউরোপিয়ান মোডাল music থেকে শুরু করে ভারতীয় রাগের modes হয়ে পাশ্চাত্যের আধুনিক scale-based music সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা সলিলের, শুধু সংগীত নিয়েই দিস্তের পর দিস্তে ভরিয়ে দেওয়া যায়, রাতের পর রাত আলোচনা করা যায়। সত্যিই ভেবে দেখুন, "রানার"-এর মতো এতো বৈচিত্র্যের গান, আর কিছু আপনি শুনেছেন কিনা! শুধুমাত্র একটি গানেই এতো ওঠা-নামা আনা যায়? এতো অনুভূতির সূক্ষতাকে একটি গানেই শুধুমাত্র সুরের বৈচিত্র্য দিয়ে ধরা যায়? সলিল সেটা ভারতীয় আঙিনায় করে দেখালেন। এবং শুধু সুরে নয়, কথাতেও করলেন। ১৯৪৩-এর কুখ্যাত বাংলার মন্বন্তরের পরে, তিনি তাঁর গানে তুলে ধরলেন "কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা"। যদিও এই গানেও তাঁকে সমালোচনা শুনতে হল, গাঁয়ের বধূর অনুভূতি এবং গানের বাস্তবরূঢ়তা নিয়ে। কিন্তু সলিলের লেখা গান মানুষকে অনুপ্রাণিত করা থামালো না। "আলোর পথযাত্রী" হয়ে মানুষকে পথ দেখালো, বললো "পথে এবার নাম সাথী, পথেই হবে এ পথ চেনা"। ওনার গানগুলিতে তখন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের "ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে"। গণনাট্য সংঘ (IPTA) ও কমিউনিস্ট পার্টির সভাগুলিতে হাজার হাজার মানুষ তার এই গানের সাথে গলা মেলাচ্ছেন।

প্রথম দিকে এসব গান রেকর্ড না হয়েও, মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে শুরু করলো। সলিল গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে এসব গান করেছেন এক সময়ে। দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখার্জি IPTA-এর হয়ে তাঁর সাথেই পথে নেমেছেন। তাঁরা গেয়েছেন "পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি।" এবং সে পথ তো সোজা ছিল না। স্বাধীনতার আগে ও পরে কমিউনিস্ট পার্টিকে বিভিন্ন জায়গায় ব্যান করা হয়েছে। অনেক সমস্যা সয়েছেন সলিলের মতো অনেক শিল্পীই। তবে বোধ হয়, সংগীত সলিলকে উজ্জীবিত রেখেছিল সবসময়। আর এছাড়াও তিনি ছিলেন চিরপরিবর্তনশীল। এরপরে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছেন, পারিবারিক অবস্থা খারাপ হওয়ায়। সেখানেও তিনি বদলে দিয়েছেন, নৌশাদ, খৈয়্যাম, মদন মোহনের music-এর সংজ্ঞা। "দো বিঘা জমিন", "মধুমতি", "হাফ টিকিট", "আনন্দ", "ছোটি সি বাত"-এর মতো ফিল্মের গানের মাধ্যমে এক অন্য ধরণের দমকা হাওয়া এনে ফেলেছেন আরব সাগরের তীরে। তবে এসব সাফল্যের মাঝেই তাকে শুনতে হয়েছে গঞ্জনা। কম্যুনিস্ট পার্টি (স্বভাবজাতভাবে) তাঁকে পার্টি থেকে বহিস্কারও করেছে।

কিন্তু এসবের জন্য তাঁর ধ্যানধারণা কখনো পাল্টায়নি। ছোটবেলায় চা-বাগানে থাকার সময় থেকেই মানুষের সম্মিলিত শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। মানুষের অনুপ্রেরণার জন্য গান, কবিতা লিখে গেছেন। মার্ক্স্ পড়ার সাথে সাথেই চারপাশের জগৎটাকে সূক্ষভাবে চেনবার চেষ্টা ছিল তার মধ্যে। সংগীতের এক বিরাট পারদর্শিতা কখনো সেই চেনায় খাদ আনতে পারেনি, বরং সহায়তা করেছে। নিজেকে নিরন্তর বদলাতে গিয়েই অবহেলায় বলতে পেরেছেন, "যাক যা গেছে তা যাক"। তাই জীবনের পরের দিকে সুর দিয়েছেন "মন লাগে না", "ও মোর ময়না গো", "ধিতাং ধিতাং বোলে"-এর মতো গানে। এই ধরণের চিরআধুনিক মানুষেরই অনুগামী হতে ইচ্ছে করে। আমি কোনোকিছু নিয়েই খুব একটা গর্ব বোধ করি না। কিন্তু সলিলের এই চিন্তাভাবনার অনুগামী হতে-পারার একটা গর্ব যেন কোথাও অনুভব করি। নিজেকে বামপন্থী মনে করি আর না-ই করি, সলিলপন্থী মনে করা যায়। ভেবে ভালো লাগে যে, নিজের মধ্যে একটুকরো সলিল চৌধুরীকে নিয়ে চলছি আমি। যে সলিল শুধু ঝড়ের কাছেই নিজের ঠিকানা রেখে যান, ঠিক "পাগল হাওয়া"র মতো।

Sunday, November 12, 2017

একলা বিকেলের - Lonely afternoon's

Boston, 12-Nov-2017, 3:19 AM
একলা বিকেলের সূর্য ছুঁলো
মন কেমনের বাঁক।
জানলা বেয়ে শীতল রোদে
স্মৃতির অভিঘাত। 

নিজের সাথে নিজের লড়াই,
নিজের স্বার্থ ত্যাগের বড়াই,
দুঃখসারি পার করে দেয়
নিজের সান্তনা-ই।

হলদে ডায়রির কবিতারা,
ঘরের সন্ধান চায়। 
প্রথম পাতায় তোমার লেখা
ভীষণ যন্ত্রনায়। 
হঠাৎ হাওয়ায় শব্দবন্ধ
নতুন দিশা পায়। 
ফেলে আসা ছায়ার ছবি
ধূসর কল্পনায়। 

অতীতের বাইপাস পেরিয়ে,
সুমনের গান সাথে নিয়ে,
আমার প্রিয় কলকাতারই
কাছে ফিরে যাই।

সন্ধ্যে নামে শহর জুড়ে,
যানবাহনের ভিড়।
প্রেমের শেষে আমরা সবাই
শুধুই পৃথিবীর।

Friday, November 10, 2017

ভালো মানুষ - Good Man (~৩.৫ মিনিট)

"Good" বলে একটি ড্রামা দেখলাম আজকে। একটি ভালো জার্মান লোকের গল্প। আদতে সে ভালই ছিল, সুখী ছিল। সুন্দরী স্ত্রী, দুটো সন্তান। স্ত্রী যদিও ঘর গুছিয়ে রাখতে পারে না ঠিকঠাক, কিন্তু যেহেতু আদপে লোকটা ভালো, তাই তার কোনো অভিযোগ নেই স্ত্রীকে নিয়ে। মাঝে মাঝে গান মাথায় আসতো তার। সেই গান মাথায় নিয়ে সে কলেজ যেত, ছাত্র পড়াতো। সে আবার মনের ডাক্তারও ছিল, তাই রোগীও দেখতো মাঝেসাঝে। নিজের বৃদ্ধা মায়েরও যথাসাধ্য খেয়াল রাখতো। পরকীয়ার সুযোগ পেয়েও তাতে জড়াতে পারেনি, কারণ সে তো ভালো মানুষ।

এহেন ভালো মানুষটিরই ছিল এক Jews (ইহুদী) বন্ধু। তাদের বন্ধুত্বও বেশ দৃঢ়। এমন সময়েই জার্মানিতে নিদান এলো, যে Jews-রা নাকি নিম্নশ্রেণীর মানবপ্রজাতি। প্রথমটা সে care করেনি অতটা। ভেবেছিল, হিটলার নামক পাগল রাষ্ট্রনায়ক বেশিদিন মসনদে থাকতে পারবেনা। সে ভালো মানুষের মতোই বই লিখছিল, অধ্যাপনা করছিল। কিন্তু তাকে সকলে উপদেশ দিতে শুরু করলো, নাৎসি সোশ্যালিস্ট পার্টিতে নাম লেখাতে। সে ভাবলো, নাম লেখাতে তো কোনো বাধা নেই। সে নিজে তো আর সেই পার্টির সব ধারণা মেনে চলে না। তাই সে নাম লেখালো, নাৎসিদের বিরুদ্ধে কিছু বললো না। তার ইহুদী বন্ধু তাকে কৈফিয়ত চাইলে, সে বললো, এটা একটা জাতীয় উন্নয়নের যজ্ঞ। একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে তার কলেজে এসে তাকে একসময় বলা হল, কিছু বই পুড়িয়ে ফেলতে। কার্ল মার্ক্স-সহ বিখ্যাত লেখকদের বই পুড়িয়ে ফেলতে, সে প্রথমে রাজি হয়নি। কিন্তু সে যুক্তি সাজলো যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা আরো hands-on হওয়া উচিত। বইয়ের কি দরকার! তাই নিজে হাতেই সে বইগুলো পুড়িয়ে ফেললো। তাকে এরপর একটি মনগড়া রিসার্চ পেপার লিখতে বলা হল, এটা প্রমাণ করতে যে ইহুদীরা মনোস্তত্বগতভাবে নিচু জাতির মানুষ। যদিও সে জানতো যে, তার নিজের ইহুদী বন্ধু-সহ আরো অনেক চেনাজানা ইহুদীই খুবই বুদ্ধিমান এবং মর্মস্পর্শী, কিন্তু সে ভাবলো, এটুকু করলে তেমন তো ক্ষতি নেই। তার নিজের বন্ধু হয়ত ব্যতিক্রম। আর আইনস্টাইনও ইহুদী হলেও, সে তো নিজে আইনস্টাইনের বই পড়ে দেখেনি। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে, এই রিসার্চ পেপারটা লেখা যেতেই যেতে পারে। সে তো নিজে কিছু খারাপ করছে না, কোনো ইহুদীকে মারতে যাচ্ছে না।

এভাবে ধীরে ধীরে সে সমগ্র পার্টি মেশিনারির অংশ হয়ে গেল। নৈতিকতাকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়ে নিজের কাজগুলোকে জাস্টিফাই করতে শিখে গেল। তবে সে কিন্তু ভালো লোক ছিল, সুখী ছিল। কোনো খারাপ কাজ করেনি। কিন্তু একদিন ওরা ওর ইহুদী বন্ধুকেও মেরে ফেললো। তখনও কিছু করতে পারেনি সে। বন্ধুকে বাঁচাতে পারেনি। তখন তার মাথায় শুধু বেঠোভেনের কোনো এক সিম্ফনি বেজে উঠেছিল। তারস্বরে। তবু লোকটা ভালো থাকার চেষ্টা করেছিল, হয়ত ভালই ছিল। যেমন আপনারা আছেন।

কোনো ডাক্তারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে? তাতে কি? আপনি নিজে বা আপনার কোনো আত্মীয় তো ডাক্তার নয়। সাংবাদিককে মেরে ফেলছে? তাতে কি? আপনার জানাশোনা কেউ তো নয়। আর যদি জানাশোনা কেউ সরকারি চাকরি করেও, সে তো সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলছে না। আর যদি বলেও, ফেসবুক বা পাবলিক প্লেস-এ তো বলছে না। আর যদি তাও বলে, সরকার তো এখনও জানতে পারেনি। আর সরকার জানলেও, আগের আমলেও নিশ্চই এমন কিছু একটা ঘটার উদাহরণ পাওয়া যাবে। তাই আপনি ভালোই আছেন। আপনি ভালো থাকছেন। খাওয়া দাওয়া করছেন। ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেছেন। WhatsApp গ্রুপে meme শেয়ার করছেন। আপনি একজন ভালো নাগরিকের মত ভালো আছেন। কিন্তু জানেন তো, একজন সচেতন আর দায়িত্ববান নাগরিক হওয়াটা বোধহয় এই সময়টায় একটু বেশি দরকার ছিল! তবু চিন্তা করবেন না, এরকমই থাকুন। কারণ সেই জার্মান লোকটার মত, আপনিও একজন "ভালো" মানুষ। তবে পরবর্তী ক্রিকেট ম্যাচটা দেখার পরে কিছু সময় পেলে, সেই "ভালো"-র সংজ্ঞাটা একবার যাচাই করে নেবেন।

Sunday, October 29, 2017

ক্ষণিকের জন্য - For some time

Boston, 29-Oct-2017, 2:15 AM

আশার ডালি শূন্য যখন
তোমার সাথে দেখা,
ঝাপসা কাঁচের স্তর পেরিয়ে
সজল সীমারেখা।

কথার পিছে কথার খেলা,
ভাবের ঘরবাড়ি,
সম্পর্কের সংজ্ঞা বানায়
বিমূর্ততার সারি।

মানুষ খানিক জটিল ভালো ,
নিজের পরিপূরক,
বুঝবে যে জন বদলানোটাই,
শুধুমাত্র ধ্রুবক।

দৃষ্টি তোমার এরকমটাই,
ভীষণ কাছাকাছি।
তবু কেন যে তোমার মন
হতে চায় না রাজি!

বুকের মাঝে অশ্রু ক্ষরণ,
মনখারাপি সময়।
রাখতে হলে হৃদয়ে রেখো,
হাতের পরে' নয়।

Monday, September 04, 2017

বুদ্ধিমতীর প্রতি - Towards the intelligent

 Boston, 4-Sep-2017, 4:28 PM

অতল পথে চলেছিলেম, ঝাপসা কোনো দিকে,
হঠাৎ যেন দেখতে পেলেম মনের চাওয়া-কে। 
সফেদ জামা আর তোমার কানে রাজকীয় দুল,
রোদ্দুরেতেও বৃষ্টি আনে তোমার খোলা চুল। 
তুমি যখন গঙ্গাপাড়ে, রোদচশমায় আড়াল,
তোমার চুড়ির ঝঙ্কারে বাতাস হলো মাতাল !
নীল পাড় আর লাল শাড়িতে যৌবন অঘোষ,
ভীষণ রাতের আধো-আলোয় জীবন্ত মালকোষ। 
তোমার প্রিয়, সাতসমুদ্র পারে-ই তোমায় চায়,
তোমার মনও সাজানো আছে প্রেমের মূর্ছনায়।
কিন্তু তোমার মুখের আদল, থাকবে মনে আঁকা,
সৌন্দর্য্যকে প্রেম দিয়েও যায় না বেঁধে রাখা। 

Wednesday, August 23, 2017

ফ্ল্যাশব্যাক - Flashback

ইন্টারভিউ দেখতে বেশ ভালো লাগে আজকাল। মেকী ইন্টারভিউ নয়, সামান্য মন-খোলা এবং সোজাসাপটা প্রশ্নোত্তর-সম্বলিত ইন্টারভিউ। কিংবা শুধু ভালো আলোচনাও চলতে পারে। সেসব কথোপকথনে যদি নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়, তবে আরও বেশি পছন্দ হয়। এহেন একটি ইন্টারভিউতে কবীর সুমন একবার বলেছিলেন, কিছু গান আছে, যেগুলোতে গলায় আবেগ না এনে, সোজাসুজি গাইতে হয়। "এ তুমি কেমন তুমি" গানটার প্রসঙ্গে, জাতীয় পুরস্কারের পর উনি এই মতামতটা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়, অনেক গানের ক্ষেত্রেই এই কথাটা খাটে, বিশেষত বেশ কিছু রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষেত্রে তো বটেই। আসলে অনেক গানের ক্ষেত্রে, কথা ও সুরটাকেই তার ম্যাজিকটা করতে দিতে হয়, কণ্ঠ্য শুধু কিছু nuance-কে ধরতে সাহায্য করে। "এমন দিনে তারে বলা যায়" - এমনই একটা গান।

মাঠের ধারে গাছের তলায় বসে এসব কথা ভাবছিলাম। ঠিক তখনই হেডফোনে "এমন দিনে তারে"-গানটা শুরু হল, ইমনের গলায়। নাহ, ইমন বড্ড আবেগ দিয়েই গাইছেন, সুমনের বলা নীতিকে ভেঙে দিয়ে। রূপঙ্কর মনে হয় এর থেকে ভালো গেয়েছেন। তবুও কেন জানি না, গানটার সাথে বয়ে চললাম। ইমনের একটা ইন্টারভিউতে পড়েছিলাম, উনি যখন "তুমি যাকে ভালোবাসো"-গানটা রেকর্ড করেন, তখন সদ্য পুরোনো সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওই গানটি খুব নির্লিপ্তভাবে গেয়েও সমস্ত আবেগ ঢেলে দিতে পেরেছিলেন। E minor-কর্ডের সমস্ত বিষাদ ওঁর কণ্ঠ্য ছুঁয়ে আমাদের সকলের হৃদয়ে আছড়ে পড়েছিল। কিন্তু এই গানটিতে কি ইমন একটু বেশিই ভেসে গেছেন তার প্রাক্তনের সাথে কাল্পনিক আলাপচারিতায়, তাই নির্লিপ্ত থাকতে পারেননি?

বেশ উজ্জ্বল ঝকঝকে নীল আকাশে টুকরো কিছু সাদা মেঘই দেখছিলাম এতক্ষন, বেশ মনোরম বাতাসও বইছিল। কিন্তু ইমনের "এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে, তপনহীন ঘন তমসায়"-গাওয়াতেই একটা কাল্পনিক আঁধার নেমে এলো। আমি আকাশের দিকে চেয়ে থেকেই দেখলাম, একটা খয়েরি রঙের গোলটেবিলের দুপ্রান্তে মুখোমুখি বসে আছে - একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। টেবিলের ওপর রাখা আছে, একটি স্ট্যান্ডের ওপর নরম আলোর মোমবাতি। ইমন গেয়ে উঠলেন,

"""
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার ।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর ॥
"""
সামান্য রাগই হল রবি ঠাকুরের ওপর। এভাবে দু'জনকে মুখোমুখি বসিয়ে দিলেন, হঠাৎ এতো বছর বাদে, জীবনের সায়াহ্ন যখন দুজনকেই হাতছানি দিচ্ছে ! ইজাজত-এর নাসির-রেখার মনে ঠিক কি চলছিল, একটু যেন অনুভব করলাম। এতো সহজে যে সহজ হওয়া যায় না, আগের জটিলতাগুলোকে পেরিয়ে আসা যায় না, তা বেশ বুঝতে পারছিলাম। রবি ঠাকুর সেই বুঝেই বোধ হয় নির্দেশ দিলেন, উচ্চৈঃস্বরে, "দেশ" রাগের সম্বাদী স্বর "পা" ছুঁয়ে পরের octave-এর "সা" ছুঁলেন।
"""
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব ।
""""
"কলরব"-এর তীব্রতা ধরতেই বোধ হয় রবি ঠাকুর "সা"-তে অনেকক্ষন সুরটাকে ধরে রাখলেন। কিন্তু সেই তীব্র প্রতিঘাতে আমরা সেই যে জীবন-সমাজকে পিছনে ফেললাম, তারপর তো আমাদের সামনে শুধু আমরাই থাকতে পারতাম। আমি ডুবে যেতাম তোমার চোখে, যে চোখে কোনো কলুষ ছিল না। তুমি আশা দেখতে আমার চোখে। আর সেই আশায় আমরা নিমজ্জিত হতাম হৃদয়াবেগের সাগরে। ইমন তখন গাইছেন,
"""
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব ॥
"""
হ্যাঁ, আমাদের অতীত-দুশ্চিন্তা-সঙ্কোচ তখন যেন আঁধারে হারিয়ে গেছে। এভাবেই ওগুলো অদৃশ্য হোক। তবেই বোধ হয় আমরা বলতে পারবো সমস্ত কথা খোলামনে। আমাদের যে মন একে ওপরের কষ্ট সত্যিই দেখতে চাইতো না। আমি জানি যে, তুমি কখনোই চাওনি আমার চোখে দুঃখ দেখতে। তুমিও জানো যে, আমি চাইনি। কিন্তু আজ আমরা সেই অযাচিত দুঃখ-কষ্টকেই স্বীকৃতি দেব স্বীকারোক্তির সুরে। আমাদের অন্তরজ্বালা ধুয়ে যাবে সেই সততার আবহে। রবীন্দ্রনাথ "দেশ" রাগের বাদী "রে", সম্বাদী "পা" আর "মা" -কে নিয়ে নতুন দ্যোতনা তৈরী করবেন এবং ইমন গাইবেন,
"""
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার ।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার ॥
"""
কিন্তু সত্যিই কি কিছু যাবে আসবে না? তোমার বর্তমান প্রিয়তম কি মেনে নেবে এই সুস্থ সরল বাক্যালাপ? আমার বন্ধু-বান্ধবী আর মনের কাছের মানুষ কি মেনে নেবে তোমার-আমার এই বাঁধনছাড়া কাব্যের আলিঙ্গন? জানি তারা খুব ভালোবাসে আমায়; তোমার ক্লেদাক্ত অবয়বটার কাছে আমায় যেতে দিতে চায় না। কিন্তু তুমি তো আজ "এমন দিনে", তোমার সমস্ত গ্লানি মুছে শুধু স্বচ্ছতার প্রতিমূর্তিতে আবির্ভূত - এ কথা আমি তাদের বোঝাতে পারি না। নিজেকেও বোঝাতে বড় কষ্ট হয়। আমিও তো জানি, যে "তুমি"-কে আজ আমি কল্পনা করছি এখন, অথবা আগেও করেছি, তার কোনো বাস্তব অস্তিত্বই নেই। ভালোবাসা তো আসলে অন্তরে চাওয়া মানুষটির স্রেফ প্রতিফলন। পৃথিবীতে কোনো মানুষেরই ভালোবাসার বাস্তব প্রতিরূপ বলে তো কিছু হয় না। পুরোটাই কাল্পনিক মূর্তি-গড়া। রবিবাবু ভালোবাসার এই অসম্ভবতা অনুধাবন করলেন এবং ইমন গাইলেন,
"""
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায় ।
"""
এখানে আবার রবিবাবু উঁচু স্বরের আশ্রয় নিলেন উদ্বেলিত বাতাসকে বয়ে আনতে, অসম্ভবকে প্রকাশ করতে। তা'ও আমাদের এই কাল্পনিক দেখা হওয়া তো মিথ্যে হতে পারে না, হোক না সে যতই অস্বাভাবিক। আবহাওয়া আর বিশ্ব-সংসারের বিদ্রোহেও, আমরা একে অন্যকে জানালাম আমাদের নিজেদের দিকগুলো, ভুলগুলো-ঠিকগুলো। 
"""
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
""""
মন আমাদের বহুকালই শান্ত হয়েছিল, আমরা বোধ হয় এবার পরিশ্রান্ত হলাম। আমরা আবারও বুঝলাম, দোষারোপের ভার সময়েরই নেওয়া দরকার, আমরা যে স্রেফ তার গোলামের কাজ করছিলাম। ভালোবাসা আমাদের গভীরে থাকলেও, কবর খুঁড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।
আকাশের দিকে তাকিয়ে এই নাট্যচিত্র দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম যে, তুমি, টেবিল, মোমবাতি - সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, আর যেন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। চোখে আর্দ্রতার অস্বচ্ছতা ঘনিয়ে আসছে। ইমন তখন গান শেষ করছেন,
"""
এমন ঘনঘোর বরিষায় 
এমন দিনে তারে বলা যায়।।
"""

পুনশ্চ: আমাদের এই কথোপকথনের পরেও একটা গান হওয়া প্রয়োজন ছিল, তাই "আমার ভিতর ও বাহিরে" শুরু হল। যেন বলে গেলো, চিঠিগুলো যেন আমরা আকাশের উদ্দেশ্যেই লিখি, একে-অপরকে নয়।

Saturday, August 19, 2017

বস্টনের বিশে অগস্ট ২০১৭ - Boston's 20th August 2017

শহরে দুটো পরস্পরবিরোধী rally ছিল আজ। এর মধ্যে প্রথম যেটা ডাক দেওয়া হয় সেই rally-টা "Free Speech"-এর জন্য করা হয়েছিল। পরে সেই আপাত "Free Speech"-এর বিপক্ষে একটা counter-protest মার্চের ডাক দেওয়া হয়। "Free Speech" rally-টির উদ্যোক্তারা ছিলেন far right-wing extremist-রা। হ্যাঁ, extremist-দের "free speech" একটু অদ্ভুতই বটে। আর সেই "Free Speech"-এর বিপক্ষের মার্চটা করলেন liberal-activists-রা। মোটামুটি সব শান্ত থাকলেও, সামান্য tension ছিল শহরে। মার্চগুলো হওয়ার সময়ে উত্তেজনা কিছু বাড়ে, কিন্তু খুব বড় কিছু হয়নি, কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু উগ্র দক্ষিনপন্থীদের এই ধরণের সমাবেশ, বস্টনের মতো উদারবাদী শহরে বেশ বেমানান। তাই এই সমাবেশগুলোর পিছনের সামান্য কাহিনী ছোট্ট করে লেখা থাকুক। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টও যখন এই মার্চগুলো নিয়ে tweet করছেন, তখন বিষয়টার বেশ গুরুত্ত্ব আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

অগাস্ট মাসের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা ঘটনা গেছে। তারই প্রলম্বিত অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে, বস্টন শহরের এই সমাবেশগুলি। কিছুদিন আগেই আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যের শার্লটসভিল শহরে জমায়েতের আয়োজন করে কিছু white nationalist-রা। তাঁদের দাবি এই যে, আমেরিকা শুধুমাত্র তাঁদের নিজেদের দেশ; তাই এই দেশের ওপর তাঁদের অধিকার সব থেকে বেশি। অনেকাংশে এই দাবিও করা হয় যে, তাঁরা অন্য জাতিগুলির থেকে মানবিক বৈশিষ্ট্যে উন্নত। সুতরাং, সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি কাজে তাঁদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তাঁদের নিজেদের স্বার্থ সবাগ্রে দেখার পরই, অন্যের স্বার্থের কথা ভাবা উচিত। তারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তাঁদের কিছু অতীত সত্যকে। আমেরিকার কনস্ট্রাকশন খুব গোড়া থেকে গড়ে তুলেছেন, দাসত্ব প্রথার ভিতর দিয়ে আফ্রিকার কালো মানুষেরা, white-nationalism-এ বিশ্বাসীরা এই ব্যাপারটা স্বীকার করতে নারাজ। পরের দিকে ভারত, চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর educated migrant worker-রা এসে যে আমেরিকাকে শিক্ষা এবং প্রযুক্তির দিক থেকেও উৎকর্ষতার শিখরে নিয়ে গেছে, সেই সত্যিটাকেও এনারা স্বীকৃতি দিতে চান না। তাঁদের বক্তব্য, আমেরিকার ভূখণ্ডে তাঁদের স্বার্থ বিগ্নিত হচ্ছে। তাঁরা তাঁদের অধিকার ফেরত চান, এবং সেই অধিকার বলার "free speech"-এর জন্যই তাঁদের rally. অন্য জাতির মানুষদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ঘৃণার প্ল্যাকার্ডও দেখা যাচ্ছে এই rally-গুলোতে, এমনকি Nazi-দের স্বস্তিকা লোগো-ও দেখা গেছে। সকলেই ভীষণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এই rally-গুলোতে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের এভাবে চটে যাওয়ার কারণ কি?

মোটামুটি গত দশক পর্যন্তও এই পরিমান white nationalism দেখা যায়নি, ku klux klan-জাতীয় উগ্র গোষ্ঠীরা থাকলেও প্রকাশ্যে বড় সমাবেশ করতো না কেউই। কিন্তু গত দশকে অন্যতম বড় যে ঘটনাটা ঘটেছে, তা থেকে আমেরিকা এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০০৮-এর গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের পর থেকে আমেরিকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমেছে। আরো বেশি লোক মাইনে না-বাড়ার ফলে, ঘরবাড়ির লোন দিতে গিয়ে, health care insurance-এর অভাবে গরিব হয়েছেন। অনেক লোক যে চাকরি হারিয়েছিলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। নতুন যেসব চাকরি তৈরী হচ্ছে, তা বেশিরভাগই ইনফরমেশান টেকনোলজি সেক্টরে। উপরন্তু সেই সব চাকরি আরো বেশি করে চলে গেছে ব্রাজিল, ভারত আর চীনে। যেসব চাকরি এখনো এখানে আছে, তাঁর একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে migrant worker, মানে আমার মতো লোকেদের কাছে। আমেরিকানরা সেই চাকরি পেতে পারছেন না, কারণ সেই চাকরি করতে দরকার প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষা। আমেরিকানদের চিরকাল এটাই মনে করানো হয়েছে, তাঁদের যেটা পছন্দ সেরকমই শিক্ষা গ্রহন করা উচিত; তাই তারা অনেকেই liberal art-জাতীয় বিষয় পড়তে আগ্রহী হয়েছেন। অথচ তারা যে সমাজে বাস করছেন, সেই high-tech society-র চাকুরিগত কি চাহিদা, সে সম্পর্কে তারা উদাসীন থেকেছেন। ফলে তাঁরা সঠিক টেকনিক্যাল শিক্ষা পাননি। আর এখন যখন সেই শিক্ষা তাঁরা পেতে চাইছেন, তখন আমেরিকার প্রায় সর্বত্র কলেজের টিউশন ফি এতটাই বেশি হয়ে গেছে, যে তারা সেটা afford-ই করতে পারছেন না। সুতরাং, অর্থনীতির কিছু সিদ্ধান্ত সাধারণ সাদা চামড়ার শান্তিপ্রিয় মানুষদেরও কোনঠাসা করে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বারাক ওবামা এখন নেলসন ম্যান্ডেলাকে কোট করতে বাধ্য হচ্ছেন, "No one is born hating another person because of the color of his skin or his background or his religion."

এইরকম একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে মানুষ অদৃষ্টের কাছে খুব সহজেই আশ্রয় নেন। এখনই তাঁদেরকে বোঝানো সহজ হয় যে, এই সাদা চামড়ার মানুষদের নাকি আলাদা করে সংগঠিত হওয়ার দরকার হয়ে পড়েছে। তা না করলে, তাঁদের অধিকার চলে যাচ্ছে, immigrant, কালো মানুষ বা অন্য কোনো জাতির কাছে। সেই কাজটিই খুব সুন্দর করে পলিটিক্যালি সমাপতিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে। আর তাই এখানে বেড়ে চলেছে white nationalism-এর বহিঃপ্রকাশ। আরো বেশি মানুষ অসহায় হয়ে, এই অজ্ঞানতার অন্ধকারের দিকে ঝুঁকছেন। বস্টনের মতো শহর, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ব্যাকগ্রউন্ডের অসংখ্য ছাত্র এসে পড়াশোনা করে, সেখানেও দেখা যাচ্ছে extremist-দের জমায়েত। অসহায়তাটা এখানেই যে, শিক্ষার অন্যতম concentration যে শহরে, সেখানেও অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে। আসল সমস্যাটা যে অর্থনীতিগত, কিছু মানুষের disastrous economic decision-এর জন্য যে মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, চাকরি পাচ্ছেন না - এই কথাটা এতো শিক্ষার ভিতরেও মানুষকে বোঝানো যায়নি। উন্নত দেশের নাগরিক হয়েও, এখানকার মানুষরা চামড়ার রং, ধর্ম, জন্মস্থানের ভিত্তিতে একে ওপরের দূরে সরে যাচ্ছেন, এবং সেই দূরত্ব রূপান্তরিত হচ্ছে এক কাল্পনিক ঘৃনায়। সমগ্র বর্তমান পৃথিবীটা সেই কাল্পনিক ঘৃণাগুলোরই নামান্তরে প্রতিফলন।

Wednesday, August 16, 2017

সুখে না থাকাতেই - What is happiness?

সুখে না থাকাতেই, আছে আমার সুখ রাখা।

Thursday, August 10, 2017

ভালোবাসার মরীচিকা - Mirage of Love

Boston, 11-Aug-2017, 2:03 AM

তোমার অমন চুপটি করে আসা,
উজান মনে নিবিড় ভালোবাসা।
তোমার অমন মিষ্টি করে ডাক,
ভুলিয়ে দেয় সমস্ত বিভ্রাট।
তোমার আমার সরব অঙ্গীকার,
জীবনতরী একসাথে বাইবার।
তুমি যখন ব্যস্ত নিজের গানে,
আমার গিটার থাকবে সুরে-তানে।
শুরু হোক এই অজানা পথ চলা,
নতুন করে স্বপ্নের ডানা মেলা।

Wednesday, August 09, 2017

খামোকা অভিমান

Boston, 09-Aug-2017, 5:02 AM

আনমনা এই নরম আবেগ,
চিঠি পাঠায় শূন্যতার,
চুপটি করে বৃষ্টি আসে,
সাথে নিয়ে বিষণ্ণতা।

Friday, August 04, 2017

খামতিগুলো কি আমাদেরই? - Are those really our mistakes?

IIT-তে পড়ার সুযোগ পাইনি; Stanford বা MIT-তে apply করার সাহস হয়নি; মায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অব্দি পড়িনি। কিন্তু এইসব জায়গার ভালো ছেলেরাও যেখানে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, সেখানে কাজটা করার সুযোগ যখন পেলাম, তখন ভাবলাম এই লেখাটা এবারই প্রকাশ্যে আনা যেতে পারে। না না, ভাববেন না এটা কোনো, ছোট জায়গা থেকে বড় জায়গায় উঠে আসার রোমাঞ্চকর সংগ্রামের কাহিনী হবে। তার থেকে বাস্তবের কাছাকাছির কথাই বলার চেষ্টা করবো। এই লেখাটা এখনই লিখতে হতো কারণ, তা না হলে ভাওঁতাটাকে তো প্রকাশ করা যেত না, সেটা স্রেফ অভিযোগের মত শোনাতো।

আপনাদের অনেকেই হয়তো ছোটবেলা থেকে আমার মতো দুরূহ পরিস্থিতিতে বারবার পড়েছেন। যতবারই কোনো ভালো জায়গায় চাকরি বা শিক্ষার সুযোগ হারিয়েছেন, তখন নিশ্চয়ই কাছের লোকের সান্ত্বনা পেয়েছেন। কিন্তু সাথে সাথেই সমাজের থেকে নিশ্চয় পেয়ে থাকবেন, একটা ছোট হয়ে যাওয়ার দৃষ্টিমুখ। অন্যদের তুলনায় কোথাও যেন আপনি পিছিয়ে পড়েছেন বলে, আপনাকে মনে করানো হয়েছে। ধীরে ধীরে, আপনি নিজের মনেও কোথাও একটা সেটা মেনে নিয়েছেন। নিজের মধ্যে, খুব গভীরে তৈরী হয়েছে একটা inferiority complex.

এই যে আপনার মনের insecurity-এর সুযোগ নিয়ে, আপনার নিজের কাছেই, নিজেকে খানিকটা খাটো করে দেওয়া হলো - এটা ভীষণভাবে দরকার। কারণ আমরা যদি এটা প্রমান করতে না পারি, একজন অন্যজনের তুলনায় মেধা বা অন্য কোনো অংশে খারাপ, তা না হলে ঘোরতর সমস্যা। জয়েন্টের দু-তিনটে MCQ ভুল হলে আপনার কলেজ যাদবপুর থেকে যদি কোনো প্রাইভেটে পাল্টে দেওয়া না যায়, তাহলে তো খুব মুশকিল। কারণ সকল প্রাইভেট কলেজে তো যাদবপুরের মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু সেই ঘাটতি মানুষের কাছে নিয়ে এলে সিস্টেম চলবে কেমন করে! তাই প্রমান করা দরকার, ওই দু-একটা প্রশ্নের উত্তর ভুল দেওয়াই আপনার মেধাকে ছোট করে দেয়, অন্য একজনের তুলনায়।

এবার যেই আমরা সমষ্টিগতভাবে ভালো-খারাপের সংজ্ঞাটা শিক্ষার মতো প্রাথমিক বিষয়ে প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে পারলাম, ব্যাস, কেল্লা ফতে! এরপর আপনাকে বলা হবে, আপনি প্রমান করুন আপনার কাজের মাধ্যমে, যে আপনিও চাকরিক্ষেত্রে একজন ভালো কলেজের ছেলের সমমানের। অথচ শিক্ষাক্ষেত্রের পরেই যে চাকরিজীবনে আপনি ঢুকবেন, সেখানে প্রথমেই দেখা হবে আপনার শিক্ষাক্ষেত্র বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলীনতা। পরে, ধীরে ধীরে, আপনার মেধার কথাও বিচার্য হবে। কিন্তু লক্ষ্য করুন, প্রথমেই আপনাদের মধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে ভালো-খারাপের একটা কাল্পনিক দেওয়াল। আদপে সে দেওয়ালের প্রস্থ হয়তো সামান্যই, কিন্তু তাকেই সিস্টেম দেখাবে বিরাটভাবে। এভাবে অদৃশ্য মাপকাঠিগুলো গড়ে না তুললে তো, মানুষের মধ্যে ছোট-বড়র সংজ্ঞাটাকে বাড়তে দেওয়া যাবে না।

ঠিক এভাবেই systematic ঘাটতিগুলোকে মানুষের ঘাটতিতে চালান করা হয়। আপনার যখন চাকরি হচ্ছে না, আপনি ভাববেন যে আপনি নিজেই হয়তো যোগ্য নন। অথচ সিস্টেমের যে এটা দায়িত্ত্ব আপনাকে প্রকৃত সুযোগটা দেওয়া, এই কথাটা মাথাতেও আসবে না। এই যে দেখছেন গুগল, মাইক্রোসফট বা অন্যান্য বড় কোম্পানিতে লোকে কাজ করছে, আপনি ভাববেন, বাপরে, নিশ্চয় ওদের অসামান্য মেধার জেরে ওরা এসব জায়গায় কাজ করছে। কিন্তু সত্যিটা তো আমাকে আমারই এক সিনিয়র কয়েকবছর আগে বলেছিলেন। তাঁর নাম নেবো না, তবে তিনি বলেছিলেন, ২০০ টা মতো কোয়েশ্চেন হয় প্রোগ্রামিং-এর, ওগুলো ভালো করে তৈরী করে নে, তাহলেই যে কোনো বড় সফটওয়্যার কোম্পানিতে হয়ে যাবে। আর সত্যিটাও তাই, ওই ২০০টা কোয়েশ্চেনকেই এপাশ-ওপাশ করে প্রশ্ন করা হয় এসব জায়গায়। আর গাণিতিকভাবে বলতে গেলে, এর থেকে আলাদা ধরণের problem solve করার দরকারও পড়ে না, আমাদের কাজের ক্ষেত্রে। কিন্তু সকলেই যদি এটা রপ্ত করে ফেলে, তাহলেও সবাই কি এসব বড় জায়গায় কাজ করতে পারবে? কারণ এদের কোম্পানিতে কাজ করার লোকের চাহিদা তো সীমিত। সুতরাং, আবার দরকার পড়ে সেই তুলনামূলকভাবে ছোট করার গল্পটা।

সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা এই জিনিসটাকেই cater করে ranking, competitive exam-জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোর মাধ্যমে। আমাদের মনে প্রোথিত করে দেওয়া হয়, যে আমরা হয়তো খারাপ অন্যদের থেকে, তাই আমরা সুযোগ পাচ্ছি না বা আমাদের মাইনে কম অন্যদের তুলনায়। কিন্তু আইনস্টাইনই বলেছেন, "Everybody is a genius. But if you judge a fish by its ability to climb a tree, it will live its whole life believing that it is stupid." আমরা সাধারণরা বেশিরভাগই কেউ আইনস্টাইন বা রবীন্দ্রনাথ নই। কিন্তু আমাদের নিজেদের মতো করে যে বিশেষত্বগুলো আমাদের ভিতরেই আছে, সেগুলোকে তো আমরা বাড়তেই দিতে পারি না। সমাজের এলিটিজমের ফাঁকফোকর দিয়ে গলে যায় আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া-ভালোলাগা-প্রতিভাগুলো। তাই যেখানেই ওই এলিটিজমের ছোঁয়া দেখবেন, বুঝবেন লোকানো রয়েছে সিস্টেমেরই কোনো গাফিলতি। আর এভাবেই সিস্টেমটা survive করতে পারে। এখানে আপনার survival-এর উপায় হলো, এই সিস্টেমের খুঁটিনাটি জেনে, তার সাথেই ধূর্ততার খেলায় নামা। শুধু খেয়াল রাখা দরকার, সেই খেলায় নেমে, আপনি নিজে যেন সিস্টেমের তৈরী করা ট্র্যাপগুলোকে কোনোভাবেই বড় করতে সাহায্য না করে ফেলেন। অন্তত এটুকু চাহিদা সমাজ আপনার কাছে রাখে।


পুনশ্চঃ আমার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান কিছু বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় এখনো বিভিন্ন জায়গায় এই চাকরির সংগ্রামটা চালিয়ে যাচ্ছে, একটু ভালো চাকরি বা মাইনের আশায়, একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়। আমি যে প্রিভিলেজগুলো পেয়েছি, সেগুলো তাদের অনেকেই পায়নি। তাদের কারো কারো সাথে এখন কথা বলে বুঝতে পারি, কিভাবে তারা নিজেদের যোগ্যতাকেই প্রশ্ন করে! তাই এক ভিতরের তাড়না থেকেই লিখতে বাধ্য হলাম এই লেখাটা। আশা করবো, যারাই সাফল্য পাচ্ছেন, মনে রাখবেন যে তারা ঠিক কোন advantage-এর জায়গা থেকে শুরু করছেন, এবং কি কি সুবিধাগুলো পেয়ে আসছেন, যার জন্য আপনার এই সাফল্য। আর একটু খেয়াল রাখবেন, সমাজের কাছে যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে দিতে, আপনার কাছের বন্ধুবান্ধবগুলো যেন নিজেদেরকে হারিয়ে না ফেলে।

Tuesday, August 01, 2017

বিদেশের ছাত্রজীবন - Student Life abroad

বেশ আগের কথা। পেয়াঁজ কাটছিলাম। অসাবধানবশতঃ আঙ্গুলটায় ছুরি বসিয়ে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভিতর আঙ্গুল। কিছুক্ষণ পরে বাইরে এনে দেখলাম, রক্ত থামছেই না। বোরোলিনটা ইচ্ছে করেই ভারত থেকে নিয়ে আসি। একহাতেই কেটে-যাওয়া তর্জনীতে লাগালাম বাঙালীর মহৌষধী। রক্ত পড়া থামলো তাতে। কিন্তু খাবার বানানো থামালে তো চলবে না, তাহলে তো অভুক্তই শুতে হবে। বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার মত ডলার খরচের বিলাসিতা সম্ভব নয়। তাই বোরোলিন লাগিয়ে কাছের মার্কেট থেকে এক প্যাকেট ব্যান্ড-এড আনতে হল। ঘরে ফিরে ব্যান্ড-এড লাগিয়ে, একহাতেই যেরকম পারা যায় রান্না। তারপর রক্ত-বোরোলিন মিশিয়ে জমিয়ে খাওয়া।

এরকম আরো ঘটনা আছে। একবার স্কোয়াশ খেলতে গিয়ে, স্কোয়াশ বল এসে লেগেছিল চোখে। স্কোয়াশ বলের স্পিড খুব বেশি হয় বলে, চশমা ভেঙে এক চোখ প্রায় অকেজো করে দিল কয়েক সপ্তাহের জন্য। অগত্যা একচোখেই বেশ কয়েকদিন দোকান-বাজার-রান্না। তখন আমেরিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুরূহ দশাটাও বেশ বুঝেছিলাম। যাই হোক, একবার বুড়ো আঙ্গুলটা পুড়ে যেতেও এভাবেই আধা-সক্ষমতায় সপ্তাহ-দুয়েক চালাতে হয়েছিল।

তবে স্রেফ আমি তো না, আমার মতো অনেক ছাত্র এভাবেই বিভিন্ন নিত্য-নৈমিত্তিক অসুবিধার মধ্যে পড়াশোনাটা চালিয়ে যায় এখানে। দেশ ছেড়ে, বন্ধু ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে। এই তো আমারই এখানের এক বন্ধুর ৫ বছরের সম্পর্ক ভেঙে গেল, সে এদেশে চলে আসার কিছু পরেই। তাড়াহুড়ো করে এক সপ্তাহের জন্য দেশে ফিরেও কিছু লাভ হল না। তাকে দেখেছি, বেশ কষ্ট করে নিজেকে আবার ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। অনেকদিন চুপিচুপি অভুক্ত থাকতেও দেখেছি তাকে। তবে যখন কোনো assignment বা অন্য কিছুর deadline থাকে, তখন আমাদের এমনিও পরপর বেশ কয়েকদিন ঠিকঠাক ঘুম-খাওয়া-দাওয়া হয় না। সময়ই থাকে না, নিজে খাবার তৈরি করার। আর নিজেকে তো একটু অবহেলা করাই যায়। নিজের প্রতিই তো অবহেলা, অন্য কেউ তো নয়।

এই অব্দি যদি পড়া হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তো ভাবতে শুরু করেছেন যে, এই কাঁদুনি গাওয়ার মানে কি। কিন্তু বাইরে থাকার উজ্জ্বল দিকগুলো দেখে যেমন সহজেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তার অপর পিঠটা সম্পর্কেও তো অবগত থাকতে হবে। নাহলে তো এটাও আমেরিকার War on Terror-এর মতো হয়ে যাবে।

এখন অবশ্য আর ছুরিতে আঙ্গুল কাটে না, বা গরম ভেসেলে হাত পোড়ে না, এখন এসব সামলে নিয়েছি। তবে মনটা তো চিরকালই অনিয়ন্ত্রিত, কেটে যায়, ছড়ে যায়, আঁধারেতে মিশে যায়। তবু বাইরের দুনিয়ার কাছে আমরা ভালো আছি। বন্ধুবান্ধবদের বেড়াতে যাওয়ার photo দেখে আনন্দ উপলব্ধি করছি। আমাদের আবার খারাপ থাকলে চলে নাকি! আমরা স্বপ্নের দেশে স্বপ্নের মতো আছি। তবে সেই স্বপ্নটা শুধুই যারা বেশ দূর থেকে দেখছে, তাদের কল্পিত স্বপ্ন, কিন্তু আমাদের তুলিতে রাঙানো। আচ্ছা তুলিরা কি ক্লান্ত হয়, অন্যের জন্য ছবি আঁকতে আঁকতে?

(চলবে, লেখাটা নয়, জীবনটা)

Sunday, July 16, 2017

A nostalgic blabber on Jagga Jasus

This is one of the daring mainstream Hindi movies in recent times. Good to see a totally different kind of storytelling. It's amazing that, in the peak time of his career, Ranbir Kapoor chose such a movie to be a part of. Anurag Basu also deservs a special credit to materialize this movie. Surely, the film has everything in it, to be a flop among the Indian viewership. We can watch the flying cars out of nowhere in Salman-Sharukh's or foreign movies, but can't appreciate such excellent cinematography. We can love La-la-land, but not an Indian musical.

Anyway, this movie becomes closer to my heart, because of the parellels that it creates, related some of the fond childhood memories and movies. Those parallels become evident, just into the first few minutes of the movie. Early on, we discover that all the dialogues are rhymes. Just like what we watched and heard in our favourite Bengali classic, Satyajit Ray's Hirak Rajar Deshe. However, Anurag improves it by making the English subtitles rhythmic as well. Ray only tried rhythms for the Bengali dialogues. Anuraag and his team deserve a special credit for putting all this hard work together. Moreover, we all know how Hirak Rajar Deshe was a satirical depiction of the India Gandhi's emergency period. Similarly, Jagga Jasoos also touches some sensitive issues of the current government, with subtelty and humour.

And then there's reference to Shundi. Shundi, as probably many of us know, is one of the kingdom in the Satyajit Ray's famous children film, "Gupi Gain Bagha Bain". Here, Jagga finds his beloved lost father in the land of happiness, named Shundi. Then, there is a sequence of catching a train which has already passed a certain station. Jagga, the investigator chases down the train with a small plane. In our iconic Indian adventure film, "Sonar Kella", our own idol investigator, Feluda tries catching a passed train by riding a camel in a dessert. And, there are so many more parallels like these ones. Seeing all those, it feels like that Anurag has probably made this film with his "Agapashtala" (means "all along") Bengali part of his heart.

But as with most things in the world, everything is not good in the movie. It's too long. Although I am in favour of artistic freedom, but some songs can really be kept for promotion. A part of those songs could be included in the movie. Also, the ending of the story was stretched unnecessarily long, when the end became pretty obvious at some point. Easily, 30 minutes or more could be saved. Anurag should have understood that a musical is good, only for maximum 2 hours.

Finally, the movie is about boldness and showing what Indian directors are capable of, if they make movies by their heart and not for money. So, cheers to that boldness and independence of art!

P.S - The movie's base-story is the Purulia Arms Drop Case. Thanks to Anurag for bringing this up. You can web-search about this case. But in a nutshell, Congress and Ananda Margis (a dubious Hindu outfit) purportedly tried toppling the democratically elected West Bengal government in 1995 with the help of CIA, by providing firearms from the foreign bodies. So, yeah, Bijan Setu massacre was unfortunate, but some intentions were pretty clear.

Saturday, July 08, 2017

পৃথিবীর নতুন শক্তির সমীকরণে চীনের অবস্থান - China's position in the new world order

কিছুদিন আগে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের Mar-a-lago রিসর্টে সপত্নীক এসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট Xi Jinping. সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্ত্রী, মেয়ে, নাতনীরাও উপস্থিত ছিলেন। মানে অনেকটা ওই ফ্যামিলি গেট-টুগেদারের মতন। তো এরকম পরিস্থিতিতে যেরকম হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক নাতনী তার বাচ্চা-বাচ্চা গলায় একটা চীনের গান শোনালো। গানটার আসল মালিক হলেন চীনের খুব জনপ্রিয় গায়িকা Peng, চীনের প্রেসিডেন্ট Xi-এর স্ত্রী। এবার আবার একটু ভাবুন, ঠিক কি ঘটলো। সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্টের নাতনী, বিশ্বের একটি উঠতি দেশের রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর গান শোনাচ্ছে। তাও এমন একটা ভাষায়, যা কিনা ইংরাজীর থেকে সম্পূর্ণ রকম ভাবে আলাদা, এবং বিশ্বের অন্যতম কঠিন একটি ভাষা, চীনা ভাষায়।

এবার আর একটা ঘটনার দিকে চোখ রাখা যাক। প্যারিসে কিছুদিন আগে হয়ে গেলো বিশ্বের গুরুত্ত্বপূর্ণ দেশের প্রধানদের নিয়ে আবহাওয়া-বিষয়ক সম্মেলন এবং আলোচনা। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বললেন যে, তারা এই সম্মেলনে সব দেশের মিলিতভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত মানবেন না। কিন্তু অন্য একটি ছোট্ট ঘটনার দিকে আমরা চোখ রাখবো। এই সম্মেলন চলাকালীন, যখন অন্তিম বক্তৃতাগুলি হচ্ছে, তখন সবকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ দেশপ্রধানরা মঞ্চে উপস্থিত। সেখানে যখন সবথেকে গুরুত্ত্বপূর্ণ বক্তৃতাটার সময় আসলো, তখন হঠাৎই, আচম্বিতে, জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান Angela Merkel চীনের প্রেসিডেন্ট Xi-কে বলেন এগিয়ে যেতে। Angela-এর সাথে বাকিরাও একই কথা বলেন। Xi খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন, কারণ তিনি এই ঘটনায় একটু চমৎকৃত হয়ে গেছিলেন। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত তিনি বক্তৃতা দেন। কিন্তু এর মানেটা এই, যে বিশ্বের প্রথমসারির নেতারা আবহাওয়ার মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে চীনকে অন্যতম প্রধান কান্ডারির দায়িত্ত্ব দিলেন, ভরা মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে ।

প্রশ্ন আসতে পারে, হঠাৎ এই দুটো আপাতভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা কেন বললাম। কারণ দুনিয়ার power-structure-এ একটা tectonic shift যে আসতে চলেছে, এই দুটি ঘটনা তারই ইঙ্গিতবাহী। ১৯৪০-এর সময় থেকে পৃথিবীর সুপারপাওয়ারের ভূমিকা পালন করছিলো সোভিয়েত এবং আমেরিকা। ১৯৯০-এর পর থেকে সেই জায়গাটার দখল নেয় শুধুই আমেরিকা। কিন্তু গত ১০-১৫ বছরে চীনের দুর্দান্ত গ্রোথ-এর পর আপাতত সেটার পরিবর্তন হতে চলেছে। পৃথিবীকে লিড করার জায়গাটা এখন সারা বিশ্বই তুলে দিচ্ছে চীনের হাতে। সেটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (অনিচ্ছায়) হোক, বা জার্মানির Angela Merkel. চীনের অর্থনৈতিক অবস্থার অভাবনীয় উন্নতি চীনকে এখন এই লিড করার জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু চীন কি আদৌ প্রস্তুত এই দায়িত্বে?

মনে করুন, প্যারিসে কিভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন, ইতস্তত করছিলেন লিডারের ভূমিকা পালন করতে। ঠিক সেভাবেই, চীন খুব অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন। একাধারে তারা আজ পর্যন্ত কোথাও আমেরিকার মতো বড়দার ভূমিকা পালন করেনি। তারা যেসব আগ্রাসী নীতি ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, বা জাপানের কাছাকাছি নিয়েছে, তার বেশিরভাগই নিজেদের রক্ষার্থে। সেক্ষেত্রে তাঁদের আমেরিকার মতো লিড করার কোনো ইচ্ছে আছে বলে মনে হয় না। এটা পৃথিবীর সামগ্রিক কূটনীতির দিক থেকে যেমন ভালো খবর, তেমনি থেকে যাচ্ছে কিছু প্রশ্নচিহ্নের জায়গা।

আমেরিকার কাছে এমন একটা শক্তি আছে, যা চীনের ভাণ্ডারে প্রায় নেই। আপনি আমেরিকার সিনেমার কথা শুনতে পাবেন, আমেরিকার গানের কথা শুনতে পাবেন। আমরা বব ডিলান শুনি, Martin Scorsese-র ছবি দেখি, লিওনার্ডো-ডি-ক্যাপ্রিও কে ভালোবাসি। কিন্তু বলুন তো আপনি চীনের শেষ কোন সিনেমাটি দেখেছেন? বা চীনের শেষ কোন গানটা আপনার ভালো লেগেছে? ঠিক এই জায়গাটাই চীনের ক্ষেত্রে খুব আশংকাজনক। আমরা তাদের কালচার সম্পর্কে খুব কম জানি। ফলে, তাদের কাছে আমেরিকার মতো soft-power-টা প্রায় অনুপস্থিত। এই ধরণের রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়ে পৃথিবীকে লিড করা খুব কষ্টকর। কিন্তু চীনের ইতিহাসটাও এক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন। যে জাতিটা বারবার বাইরের শক্তিগুলোর দ্বারা সম্পূর্ণ রক্তাক্ত হয়ে নিঃশেষ হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছেছিল, যে জাতিটা আবহাওয়ার খামখেয়ালি গ্রাসে বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে, তারা যে রক্ষণাত্মক নীতি থেকে খুব সহজে বেরোবে না, সেটাই স্বাভাবিক।

আর সব থেকে বড় উদ্বেগের বিষয় হল চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি। এরা এমনই একটি পার্টি, যার ভিতরের কার্যকলাপ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান শূন্য। আমরা শুধু জানি, এরা meritocracy-তে বিশ্বাস করে, এরা দেশের মধ্যে অনেক সোশ্যালিস্টিক পলিসি নিয়েছে জমি, স্বাস্থ্য এসব বিষয় নিয়ে। আবার আমরা এটাও জানি, এই পার্টিই আমেরিকার উদারবাদের অন্যতম ফায়দা তুলেছে। স্টেট্ ক্যাপিটালিজমের সুযোগ নিয়ে তাঁদের দেশকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই পার্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ ব্ল্যাঙ্ক, কারণ এই পার্টি একদমই স্বচ্ছ নয়, বাইরের জগতের পরিপ্রেক্ষিতে। এরা কি আদৌ এদের ম্যানিফেস্টো মেনে চলবেন, নাকি সম্পূর্ণ অন্য দিকে চীন তথা বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। এরই মধ্যে আরো উদ্বেগের খবর - চিনে গত এক বছরেই মিলিয়নিয়ারের ভালো রকমের সংখ্যাবৃদ্ধি। (যদিও ক্যাপিটালিজমে সেটাই প্রত্যাশিত)

সুতরাং সব মিলিয়ে চীনের এই আবছায়া অবস্থান আপাতত বিশ্বের ভবিষ্যৎটাও বেশ আবছা করে রেখেছে। সামনের কয়েক বছরে ওদের দিকেই আমরা তাকিয়ে থাকবো খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্তের জন্য। তার মধ্যে সব থেকে আগে থাকবে, আবহাওয়ার বিষয়টি। চীন ইতিমধ্যে renewable energy-তে বিপুল ইনভেস্টমেন্ট আরম্ভ করেছে, সেটা আরো অনেকটা বাড়ানো দরকার। এছাড়াও middle-east-এর অনন্তকাল ধরে ঘটে যাওয়া কনফ্লিক্টগুলোর প্রতি চীন কি অবস্থান নেয়, সেটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ। চীন আফ্রিকার দিকেও নজর দেওয়া শুরু করেছে, যদিও সেটা ব্যবসার স্বার্থে, কিন্তু আফ্রিকার গরিবদের দারিদ্র্য ঘোচাতে ব্যবসাও সহায় হলে সেটা মানুষগুলোর মঙ্গলেই হবে বলে মনে হয়। আর সর্বোপরি আশা করা যায়, চীন আমাদের আর একটা আমেরিকা হয়ে দেখা দেবে না।

Tuesday, July 04, 2017

Bhalobasar Shohor - Movie Opinion

বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেলো না।

মা-টা বেশ খানিকটা চেষ্টা করেছিল। পঙ্কিলতায় ডুব দিয়েছিল। বাবা-টা সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না। তবে এই ধরণের বাচ্চাদের কি বাঁচানো যায়? শুধু মা-বাবার ভালোবাসা দিয়ে কি কোনো শিশু বেঁচে থাকতে পারে? খাওয়া-পড়া-পরিবেশ এসবকিছুরও তো দরকার। আর পরিবেশ তো সর্বাগ্রে সেই শিশুর বিপরীতে। কারণ সে তো জন্ম নিয়েছে, হিন্দু-মা আর মুসলমান-বাবার ঘরে।

"ভালোবাসার শহর"-নামক ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি বানাতে বানাতে পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী কি ভেবেছিলেন, জানি না। তবে ছবির ওই ছোট্ট শিশুটার সাথে পশ্চিমবঙ্গকে রূপক হিসেবে বেশ মেলানো যায়। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গকে তার অভিভাবকরাই মেরে ফেলবেন, টুঁটি টিপে। কিছুটা হতাশায়, কিছুটা নিরুপায় হয়ে। রাজ্যের প্রতি ভালোবাসার মৃত্যু ঘটবে ভালোবাসারই শহরে। সেদিকেই এগোচ্ছি আমরা। সেদিকেই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। ধর্মের জিগির তুলে রাজ্যকে ভাগ করার যে ক্ষমতালোভী খেলায় দুটি রাজনৈতিক দল নেমেছে - তাতে পাল্লা দিয়ে নাচতে উদ্যোগী হচ্ছেন আমার রাজ্যবাসী। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখা ও শোনা, বড়ই কষ্টের।

তবে ইন্দ্রনীল বাবু স্বতন্ত্রভাবে ছবি বানিয়ে অন্য এক আশার কথা শুনিয়ে গেলেন। যেভাবে YouTube আর Vimeo-তে সিনেমাটা release করে দিলেন, সেটা ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। বড় দৈর্ঘ্যের ছবিও এভাবে release হোক, সেটা চাইবো। কিন্তু এসব ছাড়াও সিনেমাটির মধ্যে একটা লুকোনো সারল্য আছে। সেটা ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি বলে ভালো লাগে। আবার কলকাতার সাথে সিরিয়ার শহরের প্যারালালিজম - বেশ আলাদা ধরণের প্রচেষ্টা বলে মনে হয়। আর ফিল্মের শেষে সাবটেক্সটের কথাগুলো একটু অপাংক্তেয় মনে হলেও, শৈল্পিক ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু ইন্দ্রনীল বাবুর কাছ থেকে আর একটু বেশি চাহিদাও থেকে যায়। "ফড়িং" বা "বাঙালি ভূতের গল্প"-এর মতো সারল্যের সাথে প্রাপ্তমনস্কতা যুক্ত করলে, উনি যে ম্যাজিকটি তৈরী করতে পারেন - ওনার কাছ থেকে সেরকম একটা প্রত্যাশা রয়েই গেল। যদিও বাংলার "চমকবাজ" ফিল্ম-মহলে উনি নিজের কাজ করার কতটা স্বাধীনতা পাবেন, সে ব্যাপারে সংশয় থাকছে। তবুও মানুষের সমবেত সাড়া দেওয়ার আশাটা এখনো রাখছি। Ritwick Chakraborty, Jaya Ahsan, Sohini Sarkar - সকলকে ধন্যবাদ, ফিল্মটার সাথে যুক্ত থাকার জন্য

Friday, June 23, 2017

অন্তরালে - Behind the scene

বিছানা-বালিশ-আদর ছাড়তে দিওনা আমায়,
টেবিল ফ্যানের শান্ত হাওয়া ভীষণ ক্লান্তিময়।
যেমন ক্লান্তি ভালোবাসায় পঁচিশ বছরে আসে,
দায়িত্বরাই পড়ে থাকে প্রেমের অবশেষে।
সংসার শুধু বাজার-করা, রান্না-অফিস পংক্তি,
প্রয়োজনহীন মৌনতার নিয়ম থাকে কয়েকটি।
নিয়ম-হিসেব মিলেমিশে বদ্ধ ঘরের প্রান্তর,
পরবর্তী প্রজন্মেও প্রভাব পড়ে মন্থর।
সময় আর দূরত্ব একদিন ছাড়ে বাড়িঘর,
জীবনের ডাকে ঠিকই দূরে সরে যায় সহোদর।
স্কুলপথে যাওয়া ছোট্ট হাত - এখন ভীষণ স্বাধীন,
আঙুলের ফাঁকে পেতে চায় বেমানান নোট রাতদিন।
বাস্তবের এই বাস্তবায়ন অসহ্য লাগে খুব,
মুক্তিবিহীন ধন্দের পঙ্কিল প্রতিরূপ।

Wednesday, June 21, 2017

লিঙ্গবৈষম্য এবং পাবলিক ট্রায়াল - Gender discrimination and public trials

যারা জানেন না বা miss করে গেছেন, তাদের জন্য দুটো সমান্তরাল ঘটনা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। প্রথম, Uber নামক যে app-টা ব্যবহার করেন আপনারা, সেই Uber কোম্পানির CEO Travis Kalanick গতকাল resign করেছেন। দ্বিতীয়, TVF-নামক একটি বিখ্যাত ভারতীয় মিডিয়া কোম্পানি, যেটি ২৫ লক্ষ YouTube ফলোয়ার নিয়ে ভারতের প্রথমসারির ওয়েব-মিডিয়া চ্যানেল, সেই কোম্পানির CEO-ও কিছুদিন আগে পদত্যাগ করেছেন। দুটি পদত্যাগেরই পিছনে আছে একই ধরণের ঘটনা।

কেন করলেন তারা পদত্যাগ? Susan Fowler নামের একজন IT-কর্মী Uber-এ কাজ করতেন। তিনি গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী নিজের ওয়েবসাইটে একটি বিস্ফোরক লেখা লেখেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন যে, Uber কোম্পানিতে কাজের কালচার খুবই মহিলাবিরুদ্ধ। মানে মহিলাদের সহ্য করতে হয় তাদের বসের চোখরাঙানি। এছাড়াও মহিলাদের casual sexism-এর স্বীকার হতে হয়। এর পরই ভীষণ শোরগোল পড়ে যায় Uber এবং সিলিকন ভ্যালিতে। Susan-এর পরে আরো অন্যান্য মহিলারা (কেউ স্বনামে, কেউ নাম গোপন রেখে) একই অভিযোগ করেন Uber-এর কালচারের বিরুদ্ধে। এমনকি Uber-এর CEO এই কালচারকে nurture করেছেন, সেই অভিযোগ পর্যন্ত ওঠে। শেষ পর্যন্ত, কাল প্রায় ৪ মাস বাদে, Uber-এর CEO Travis পদত্যাগ করলেন।

TVF-এর ঘটনাও অনেকটা এরকমই। মার্চ মাস নাগাদ একটি মেয়ে তাঁর পরিচয় গোপন রেখে TVF-এর CEO অরুনাভ কুমারের দিকে sexual favor চাওয়ার অভিযোগ তোলেন। একটি ব্লগে তিনি তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এরপরে অনেকেই সেই অভিযোগের সমর্থনে এগিয়ে আসেন (স্বনামে এবং নাম গোপন রেখে)। Mumbai-এ FIR হয়, যদিও তার কোনো ফয়সালা হয়নি। কিন্তু অরুনাভ কিছুদিন আগে TVF-এর CEO পদ থেকে সরে গিয়েছেন।

এই দুটি ঘটনাতে যেটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ, সেটা হল ওয়েব মিডিয়ার মাধ্যমে গোপন তথ্য বেরিয়ে আসা এবং তার বিপুল প্রচার পাওয়া। প্রচার পেতে টুইটার এবং ফেসবুক - দুটো মাধ্যমই প্রচুর সাহায্য করেছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, মানুষের হাতে যে কি ভীষণ পরিমান ক্ষমতা এখন রয়েছে - তার একটা আভাস এই দুটো ঘটনা থেকে পাওয়া যায়। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, Uber এখন সারা বিশ্বের অন্যতম highest valuable start-up কোম্পানি। সেই কোম্পানির CEO-কে সরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতেও এখন থাকছে। তাই ইন্টারনেটের এই বিপুল সম্ভাবনা - প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের এক ভীষণ উজ্জ্বল দিক।

কিন্তু এর সাথেই থেকে যাচ্ছে একটি সংশয়ের প্রশ্ন। দুটি ঘটনার কোনোটাতেই, কোনো কোর্টে এই অভিযোগগুলোর বিচার হয়নি। ফলে যা হয়েছে, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা, বিচার, সমালোচনা, এবং কোম্পানির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া - এইসব। তাই বোঝা যাচ্ছে, মানুষের হাতে বিপুল ক্ষমতা আসার ফলে এক বিশাল দায়িত্ত্বও এসে পড়ছে। যদিও এ কিছু নতুন কথা নয়। কিন্তু আবারো মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, আমাদের স্মার্টফোনগুলোর সাথে যতটা ক্ষমতা আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরছি, আমরা যেন তাকে যথাযোগ্য দায়িত্ত্ব নিয়ে ব্যবহার করতে শিখি। নাহলে বিচার কিন্তু বড্ড বেশি একতরফা হতে শুরু করবে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

নোট: এই লেখার পিছনের ভাবনা আমার নিজের নয়, বিভিন্ন ওয়েবমিডিয়া থেকে জড়ো করা। ভাষা আর বিস্তৃতি আমার।

Tuesday, June 20, 2017

গানে একদিন - Day in Songs

সকালে উঠতেই "ভোরের কুয়াশা" ঘুমের ঘোর কাটিয়ে দিল, যদিও জানালার বাইরে কুয়াশা ছিল না। এর বেশ কিছুটা পরে, অফিসে যখন git-এর branch manage করতে করতে আমি নাজেহাল, তখন হঠাৎই "দুপুরের খামোকা খেয়াল" মাথায় এলো। কয়েক ঘন্টা বাদে অফিস থেকে বেরিয়ে, ট্রেনের পর যখন বাসের দিকে এগোচ্ছি, শুনতে পেলাম কেউ গাইছে, "বন্ধু তোমায় এ গান শোনাবো বিকেলবেলায়।" এখন রাতের আকাশ বেশ পরিষ্কার, তাই সেখানে চলছে "আমার ভিনদেশি তারা"-দের আনাগোনা। চাঁদটাকে যদিও দেখতে পাচ্ছি না, হয়তো "চন্দ্রবিন্দু"-র আকার নিয়ে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে।

Friday, June 09, 2017

ব্রিটেনের ২০১৭ স্ন্যাপ নির্বাচনে লেবারের সাফল্য - Labour's success in Britain's 2017 Snap Election

মানুষ, হ্যাঁ মানুষই পারে ইতিহাস রচনা করতে। যতবার ভাবি, আর কোনো আশা নেই, ততবার বৃহত্তর সমাজ ভাবতে শিখিয়েছে, না এখনো বাকি কিছু আছে। যেরকমভাবে United Kingdom (UK)-এ গতকাল ঘটে যাওয়া নির্বাচন বেশ কিছুটা আশার কথা শুনিয়ে গেল।

UK-তে প্রধান দুটি পার্টি, Conservative এবং Labour-পার্টির মধ্যে Labour, গতকালকের নির্বাচনে বেশ ভালো ফল করেছে, ৪০% ভোট নিয়ে। ৪২% ভোট পেয়েছে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা conservative. এই নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, তবে Labour-এর এই ফলাফলের অন্য এক গুরুত্ব আছে। UK-এর দুটো পার্টিই দক্ষিণপন্থী ঘেঁষা পার্টি। আমরা জানি, Labour-এরই Tony Blair কিভাবে বুশের সাথে মিলে Iraq war শুরু করেছিলেন, যা ISIS জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্মের জন্য একাংশে দায়ী। কিন্তু এই Labour পার্টি Tony Blair-এর পার্টি নয়। এই পার্টি Jeremy Corbyn-এর। কে এই জেরেমি কর্বিন?

জেরেমি কর্বিন Labour Party-এর ক্ষেত্রে সেই, Bernie Sanders আমেরিকার Democratic পার্টির কাছে যা। মানে দুজনেই দক্ষিণপন্থার পার্টিগুলোর ভিতরে বামপন্থী মতাদর্শের প্রবেশ ঘটিয়েছেন। এমনিতে অনেক neoliberal-পন্থীরাও এখন মানতে শুরু করেছেন যে, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো ব্যাপারগুলোয় সরকারের প্রধান ভূমিকা থাকা উচিত। জেরেমি নিজেও সে কথা বলেছেন। কিন্তু জেরেমি তার নির্বাচনের ম্যানিফেস্টোতে আর একটি দুর্দান্ত clause রেখেছেন। কি সেই clause?

সেখানে বলা হচ্ছে, যখন কোনো কোম্পানি dissolve হয়ে যাচ্ছে, বা বেচে দেওয়ার মতো অবস্থায় চলে যাচ্ছে, তখন তা সরাসরি করা যাবে না। প্রথমে সেই কোম্পানীর কর্মীদের সুযোগ দিতে হবে, সকলে মিলে সেই কোম্পানি কিনে নেওয়ার, as a co-operative. সরকার দরকার হলে loan দিয়ে কর্মীদের সেই কেনায় সহায়তা করবে। কিন্তু সবার আগে কর্মীরা সুযোগ পাবে। বোঝা যাচ্ছে এটার ইঙ্গিত কোন দিকে?

এর মানে Air India বেচে দেওয়ার আগে কর্মীদের জিজ্ঞেস করতে হবে, তোমরা নিজেরা এই কোম্পানি চালাতে চাও কিনা। এর মানে কর্মীদের সমষ্টিগতভাবে, উৎপাদনের শিকড়টা অধিকার করার সুযোগ থাকছে। কিছু কথা শোনা শোনা লাগছে কি? "Seize the means of production"? আমি আশা করি না, বিপ্লব একদিনে চলে আসবে। আমি চাই না, রক্ত বিপ্লব নিয়ে আসুক। রক্ত হয়তো কিছু ঝরবে, কিন্তু আমরা সকলে মিলে সচেতন ভাবে চেষ্টা করলে, প্রকৃত পরিবর্তন আসতে পারে। তার জন্য সচেতনতা দরকার, পার্টি দরকার, লিডার দরকার, কিছু Bernie Sanders, Jeremy Corbyn-দের দরকার, আর নতুন ভাবনাচিন্তা করবার মতো ছেলেমেয়েদের দরকার। সেই নতুনরাই বার্নিকে ভোট দিচ্ছেন, জেরেমিকে ভোট দিচ্ছেন, আরো আশা দেখাচ্ছেন। সব কিছু শেষ হয়নি বন্ধুরা! শেষ হতে পারে না...

Thursday, June 08, 2017

কষ্ট না থাকার কষ্ট - Pain of not having the pain

কষ্টটাও আর না থাকার কষ্ট হয় সামান্য মাঝে মাঝে। সময়ের উপরে অভিযোগ বলতে স্রেফ ওটুকুই...

গন্ধ - Smell

পঞ্চইন্দ্রিয়ের কাজগুলোর মধ্যে দেখা আর শোনা-কে আমরা বেশ ভালোভাবে digitally replicate করতে পারি। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুভূতি, গন্ধ আহরণের ক্ষেত্রে আমরা বেশ অসহায়। বিভিন্ন perfume-এর মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি ভালো গন্ধগুলোকে বোতলবন্দি করার, কিন্তু বেশিরভাগ গন্ধই তো পারিনি। যেমন, সেদিন apartment থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমেই মনে হল, উষ্ণতার কি গন্ধ হয়? তাহলে সে গন্ধ ভুলতে বসেছি।

উষ্ণতার গন্ধ কি কলকাতারও গন্ধ? তাহলে সেই কলকাতার গন্ধই বা ঠিক কি রকম? সেটা কি আরসালানের বিরিয়ানির গন্ধে শুরু হয়? নাকি যে ভিড়-বাসে করে, সন্ধ্যেবেলা কলকাতা থেকে হাওড়ায় ফিরতাম, সেই ভিড়ে দাঁড়ানো তন্বীর ফিকে-হতে-থাকে পারফিউম, আর বসের-ঝাড়-খাওয়া মধ্যবয়স্ক কোনো মানুষের সারাদিনের ক্লান্তির গন্ধের মিশেল? নাকি অন্য কিছু? গড়িয়াহাট থেকে প্রিয়া পর্যন্ত হেঁটে আসার সময়ে, দক্ষিণের আধুনিকতা, রেস্টুরেন্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফুটপাথ, কম দামের জামাকাপড়, মিষ্টি, প্রেমিকার নখের নেলপলিশ, ফুচকার সমন্বয়ে তৈরি হওয়া গন্ধই কি উষ্ণতাকে মনে করায়? সেরকমটা হলে, তাপমাত্রা আর উষ্ণতার সম্পর্ক বোধ হয় শুধুই বৈজ্ঞানিক।

রসায়ন বিজ্ঞান বা কেমিস্ট্রির ল্যাবের গন্ধগুলোকে তাও আমরা নিজেরা চাইলেই তৈরি করতে পারি। কিন্তু নিজের বাড়ির গন্ধ? যেখানে ঢুকলেই প্রথম পাওয়া যায় মায়ের গন্ধ। এই গন্ধ বোধ হয় আমি একাই পাই। আর এই গন্ধকে ভাষায় ব্যক্ত করার মতো শব্দ, আমার অভিধানে নেই। তাই অন্য কেউ সে গন্ধ আমার কাছে এনেও দিতে পারবেনা। তবে যখন ওই লাইনগুলো শুনি, "মায়ের শাড়ি রেলিং থেকে ঝোলে", তখন কাছাকাছি একটা গন্ধের সন্ধান যেন পাই।

গান যেমন কখনো আঘ্রানের ছোঁয়া দেয়, অপ্রত্যাশিত মুহূর্তরাও তেমনি বেহিসেবি গন্ধদের বয়ে আনে। বহুমাস আগে একদিন হঠাৎই, স্নান করার সময়, মাথায় খেলে গেলো এক প্রাক্তন প্রেমিকার গন্ধ। তখন আবারও বুঝেছিলাম, নতুন "বাইশে শ্রাবণ"-এর গানটার কথাগুলোর মানে। সেই ছবিটাতে প্রসেনজিতের নাকি ক্রিমিনালদের গন্ধই প্রিয় ছিল। কিছু মানুষ বোধ হয় এরকমই হয়।

কিন্তু আমরা অনেকেই বৃষ্টিভেজা মাটি, পেট্রোল, নতুন খাতা, জামাকাপড়, খাবার - এসবের গন্ধ ছাড়িয়েও কোনো না কোনো অজানা গন্ধের মোহতে মাতোয়ারা। আর সেসব গন্ধকে বেঁধে রাখার ইচ্ছেও নেই, কারণ তারা তো অনুভূতি। অনুভূতি খোলা আকাশেই ছড়িয়ে থাক, "পারিজাতের মধুর গন্ধ"-এর মত।

Thursday, June 01, 2017

আমেরিকার প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্ট থেকে প্রস্থান - America's Exit from Paris Climate Accord

এলিয়েনরা যখন পৃথিবীর ধ্বংসাবশেষ পাবে, তখন তারা পৃথিবীর ইতিহাসে আজকের দিনটার গুরুত্ত্ব বেশ ভালো করে বুঝবেই। পৃথিবীকে রক্ষা করার আশা ক্রমশই কমছিল। আজ মোটামুটি শেষের দিকে যাত্রা শুরু হল। জানিনা, আর সামান্যও আশা আছে কিনা !

যে দেশটা সারা বিশ্বের ১৬% গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপন্ন করে, বিশ্বের ২০% তেল খরচ করে, বিশ্বে মাথাপিছু energy consume করায় প্রথম, সেই দেশটাই আজ ঘোষণা করেছে, তারা নিজেদের Paris Climate Agreement থেকে সরিয়ে নেবে । এই Paris Agreement-এর মাধ্যমেই বিশ্বে fossil fuel ব্যবহার-করা বৃহৎ অগ্রণী দেশগুলি, নিজেদের fossil fuel consumption কমাবে বলে অঙ্গীকার নিয়েছিল। আমেরিকার জন্য সেই অঙ্গীকারটুকুর বাঁধনটাও আর রইলো না। মানে আবহাওয়া নিয়ে কোনোরকম আইনের বালাই নেই।

এর মানে Exxon Mobile, Chevron-এর মতো আমেরিকান কোম্পানিগুলি বিনা বাধায় প্রকৃতির ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে পারে। অথচ গুগল, মাইক্রোসফট, স্পেস এক্স-এর মতো টেকনোলজি কোম্পানিগুলো প্রচুর চেষ্টা করেছিল, আমেরিকা যাতে Paris Agreement থেকে বেরিয়ে না যায়। যদিও এদের চেষ্টার খুব সৎ উদ্দেশ্যে ছিল না, কিন্তু সমস্যা এখন সেসবের বহু ঊর্ধ্বে চলে গেছে। তাই সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে বলছি না। যেখানে পৃথিবীটাই বাসযোগ্য থাকছে না, তো আর কোনো "ইসম"-এর কি-ই বা মানে !

শেষে বলি, পরবর্তী প্রজন্মকে পৃথিবীতে আনার আগে, বেশ ভালো করে একবার ভেবে নেবেন। কারণ আজ যা কিছু হচ্ছে, তার মূল আঁচটা ওরাই পেতে চলেছে, আমাদের কথা বাদ-ই দিন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের কথাই যখন উঠলো, তাই একটু আশার আলোর দিশা দিয়ে যাই। Massachusetts রাজ্য হিসেবে আজই ঘোষণা করেছে, দেশ যদিও Paris-এর চুক্তি মেনে না নেয়, তারা এই রাজ্যে ওই চুক্তি মেনে চলবে এবং renewable energy-এর ওপর জোর দেবে। তবে এই আশা, ঠিক যেন নিভতে থাকা প্রদীপের মতো, যার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

Wednesday, May 31, 2017

ফেসবুক আর লাইকোনোমিক্স - Facebook and Likonomics

পৃথিবীর সব থেকে জাজমেন্টাল ক্যাটাগরির লোকেদের মধ্যে "লেখক" প্রজাতিটির সংখ্যাধিক্য বেশ ভালোরকম। অবশ্য তাদের পেশা এবং নেশার স্বার্থেই তাদের এরকম হতে হয়। মানুষকে বাইরে থেকে দেখেই তার সম্পর্কে নিজের মতো একটা কল্পিত গল্প সাজাতে না পারলে, লেখক হওয়া তো খুব ঝক্কির। আর এখন আমরা অনেকেই লেখকেদের মতোই হয়ে পড়ছি।কারণ আমরা সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই ঠিক করি, একটি মানুষের ভাবনা-চিন্তা-দর্শন। কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে হয়তো সরাসরি কোনোদিন কথাই বলিনি, অথবা কারোর সাথে হয়তো গত ২-৩ বছরে দেখাও হয়নি, কিন্তু স্রেফ তার ফেসবুক ফিড দেখে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করি। আর এখানেই লেখকের সাথে এক অদ্ভুত আঙ্গিকে আমরা মিশে যাই। লেখক যে দুনিয়াটা কল্পনায় রাখেন, আমরা সেই পৃথিবীটাকেই বাস্তবে নামিয়ে আনি। বাস্তবের মানুষগুলোকে আমরা কল্পনার রঙে মিশিয়ে ভাবতে আরম্ভ করি। আর সেই কল্পনার ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার ইকোনোমিক্স।

আমাদের সকলের পৃথিবীতেই থাকে খুব কাছের কিছু মানুষ। আমি এখানে বাস্তব পৃথিবীর কথা বলছি। সেই কাছের মানুষরা আমাদেরকে একটু বেশি চেনেন, অন্তত আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ৫০০-১০০০ বন্ধুদের থেকে বেশি। আমাদের যে কোনো বক্তব্যের পিছনের গল্পটা, এই কাছের মানুষগুলো জানেন, বোঝেন। সেই গল্পের কোনো অংশ যখন তারা ফেসবুকের মতো ওয়েব-দুনিয়ায় দেখেন, তখন তারাই সবথেকে বেশি sympathise করেন আমাদের অনুভূতির সাথে। তাই সেই close circle-এর বাস্তব-বন্ধুরাই সাধারণত প্রথম react করেন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো পোস্টে।

ফেসবুকের পোস্টগুলো ছড়িয়ে যায় ripple effect-এর মতো। মানে দেখবেন, নিস্তরঙ্গ জলে যখন সামান্য দুলুনিও ওঠে, তখন তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। ঠিক সেভাবেই, ফেসবুকের একটি লাইক, একটি কমেন্টের জের ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় বন্ধুমহলে। আমাদের কাছের বন্ধুদের প্রাথমিক লাইকের জেরে আমাদের সামান্য দূরের বন্ধুরা হদিশ পান, আমাদের পোস্টগুলোর। কিন্তু তাদের মনে এতদিনে তৈরী হয়ে গেছে, আমাদের সম্পর্কে তাদের কল্পিত ধারণা। তারা আগে থেকেই ভেবে নিয়েছেন, আমরা কিরকম, আমাদের চিন্তা-ভাবনা কি ধরণের। আর যেহেতু ফেসবুক আমাদের পূর্ববর্তী মনোভাব, পোস্ট এগুলো গ্রন্থিত করে রেখে দেয়, তাই তাদের মনেও গেঁথে গেছে, তাদের কল্পনায় গড়ে ওঠা আমাদের চরিত্র। সেই কাল্পনিক চরিত্রের বিশ্লেষণের সাথে যদি আমাদের পোস্টগুলি মিলে যায়, তাহলে অচিরেই আমাদের পোস্টে লাইক, রিয়্যাকশন বাড়তে থাকে।

এভাবে আমরা, সাধারণরা, যখন অচেনা-স্বল্পচেনা মানুষদের প্রশংসা পেতে থাকি, তখন কোথাও কোথাও, আমরা সেই প্রশংসা পারলে ফিরিয়েও দিই। এভাবে তৈরী হয় একটা barter economy. কিন্তু এই barter economy-কে ফেসবুক interpret করে অন্যভাবে। তারা মনে করে, এই একে-অন্যের মনোভাবগুলো ভালো-লাগার অর্থ - আমরা বোধ হয় এই একটা মনোভাবকেই আমাদের ভার্চুয়াল দুনিয়াতে প্রাধান্য দিচ্ছি। ফলে, Facebook-ও আমাদের একই মনোভাবের বক্তব্য দেখাতে থাকে। মানে ধরুন, আমি যদি The Hindu সংবাদপত্রের কোনো লিংক আমার ফেসবুকে শেয়ার করি, এবং আমার বন্ধু অজিত যদি সেই পোস্ট লাইক করে; ফেসবুক এটাকে interpret করে এভাবেই যে - অজিতের The Hindu-র news পড়তে ভালো লাগে। ফলে একটা closed circuit তৈরী হয়, সমভাবাপন্ন লোকেদের। আর আমরা আস্তে আস্তে বিপরীত চিন্তাগুলো করতেই ভুলে যাই। একটা তীব্র মেরুকরণের দুনিয়া সৃষ্টি হয়।

কিন্তু সেই মেরুকৃত দুনিয়াটা আদৌ বাস্তব নয়। কারণ বেশিরভাগ সময়েই, আমাদের ফেসবুকের বন্ধুদের সামনাসামনি দেখাই হয়না। ফলে আমরা জানতেও পারিনা, মানুষটা আসলে কি রকম। আমরা তাদের সাথে direct কথাও বলি না, মেসেজ করি না। অথচ তাদেরকে বসিয়ে ফেলি একেকটা ধাঁচে। আর এই categorisation আসলে আরো দূরে সরিয়ে দেয় আমাদের। সবথেকে বড় irony-টা হল - এই ফেসবুক আসলে তৈরী হয়েছিল মানুষকে কাছে নিয়ে আসার জন্য।

তবে মানুষ যে কাছে আসেন না, তা নয়। ফেসবুকেই তো তৈরী হয় কত মানুষের প্রেমের সম্পর্ক। সেখানেও জড়িয়ে থাকে লাইকের পরিমাপ। ফেসবুকের নিজের একটি পরিসংখ্যান বলছে,  কোনো couple যখন তাদের একে-অপরের পোস্টে লাইকের সংখ্যা ১০০ দিন আগে থেকে বাড়িয়েছেন, তারাই পরে গিয়ে relationship-এ আবদ্ধ হয়েছেন। সুতরাং, ফেসবুক লাইকের আদান-প্রদান হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে "মধুরেণ সমাপয়েৎ"-এর জায়গাও করে দিচ্ছে।

কিন্তু সে তো গেলো, শুধু রোমান্টিক রিলেশানের কথা। অন্য ক্ষেত্রগুলোতে তো আমরা আরো আরো দূরে সরে যাচ্ছি, ফেসবুকের সৌজন্যে। এক্ষেত্রে যদি আমরা এই ফেসবুকের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে একটু সচেতন থাকতে পারি, তাহলে বোধ হয় সমস্যা একটু দূর হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে, আমরা একটা গোটা মানুষের স্রেফ কয়েকটা দিক দেখতে পাচ্ছি, একটি ছোট্ট জানলা দিয়ে। সেই মানুষটার পুরো আকাশটা পড়ে আছে সেই জানলার বাইরে। আমরা যদি এই ছোট্ট ব্যাপারটা মাথায় রাখতে পারি, তাহলে ফেসবুক অন্তত আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে বোঝার পথে অস্বচ্ছ দেওয়াল হয়ে দাঁড়াবে না।

ফেসবুক নিয়ে একটি সিরিজের এটা দ্বিতীয় ভাগ। প্রথম ভাগটা এখানে পড়া যাবে। 

Monday, May 08, 2017

কবিতার শেষ - Poetry's End

Boston, 09-May-2017, 01:59 AM

তোর পায়েতে নূপুর ছিল
ঝর্ণাঝরা শব্দ হতো। 
মনের মাঝে গল্প ছিল ,
কলকাতাকে আকাশ করে,
নন্দনে খুব ভিড় করে। 
কিছু শেষের নাম ছিল না,
কবিতা তবু গান ছিল,
উপন্যাসের ভুল ছিল। 

আমি ছিলাম, তুই ছিলি,
দর্শনে খুব মিল ছিল,
অপেক্ষমান দিন ছিল,
রাত্তিরে ওই অন্ধ-আকাশ
তারা গোনা শিখছিল।

ডিসেম্বরে আর শীত থাকে না,
আশার মাঝে কুয়াশা হয়,
দিনকে দিন অবক্ষয়।
আবেগের তবু স্থান ছিল,
ফ্যাকাশে হোক, লাল ছিল,
সে হয়তো তুই ছিলি না,
তোর কোনো এক রং ছিল। 

Friday, April 21, 2017

মনের ম্যানিপুলেশন - Manipulating yourself

বরফ পড়ে যেসব দেশে, সেখানে সূর্য ডুবে যাওয়ার বেশ পরেও একটা সফেদ উজ্জ্বলতা থেকে যায়। আকাশে যদি চাঁদের মায়াটা কখনো নাও থাকে, রয়ে যায় চাঁদের গরিমার মোহটা। এই সাদাটে ভাবটার রেশ থেকে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকে দূরে সরিয়ে, একটু মন দিয়ে চারপাশটাকে অনুভব করলে, মনের মধ্যে একটা বেয়াড়া ইচ্ছের জন্ম হয়। মনে হয় জীবনানন্দকে এখানে এনে ফেলি। সাথে নির্মলেন্দু গুনকেও। প্রথমজন প্রকৃতির এই নিস্তব্ধ রঙ্গকে ভালোবাসবেন আর অক্ষর জুড়ে তৈরি করবেন আবেগ। আর দ্বিতীয়জন ওনার ভালোবাসাকে ভালোবাসবেন, তাতে তৈরি হবে কিছু "বরফমাখা জল"।

বরফের দেশে তো ওই হিমশীতল জলই আছে। বাকি সবকিছুতেই উষ্ণতার অভাব। তাই বোধ হয় পাখিরাও এখানে গান গায় না, ঠোঁট বেঁকায় না, গাছে বসে না। অন্য কোনো পাখি নয়, তবে একটা পাখির কথা বেশ মনে পড়ে। সকালে উঠে ডাকতো। মামাবাড়িতে কিংবা গ্রামের বাড়িতে বেশি শুনতে পেতাম। তবে আমাদের বাড়িতেও যে শোনা একদম যেতো না, তা নয়। সেদিন সকালে বাবা যখন ফোনে প্রাত্যহিক জীবনের চর্যা শোনাচ্ছে, পিছনে সেই পাখির ডাকটা শুনতে পেলাম। ডাকটা আমাকে বোধ হয় স্বস্তি দিলো, যে সব কিছু নিজের গতিময়তায় ঠিকঠাক আছে। কিন্তু মনটা তাতেও কেন জানিনা খারাপ করে এলো।

মনের কোনো দোষ অবশ্য নেই। যখন খুশি তার অসুখ হয়। কারণ মনকে তো আমরা খুব একটা আলাদা করে যত্ন করি না, বা অসুখ থেকে সরিয়ে তুলি না। শরীরকে যাও বা দায়ে পড়ে যত্ন করতে হয়, মনের বেলায় সে রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অতএব অবহেলাই ওর প্রাপ্য হয়। কিন্তু আমাদের যত বয়স বাড়ে, এই দক্ষতাটাই বোধ হয় সব থেকে প্রয়োজনীয় হয়। কিভাবে মনকে শরীরের মতোই বুঝে নেওয়া যায় এবং তাকে পরিপূর্ণ পুষ্টি দেওয়া যায়, যত্ন করা যায়। মানে মনের ম্যানিপুলেশন।

যদি প্রেম করার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সেই ভীতকে সম্বল করে এই নিজেকে ম্যানিপুলেশনের গেমে একটা advantage নিয়ে শুরু করা যায়। এই খেলাটা নিজের সাথেই খেলতে হয়, নিজের স্বার্থেই। আর এই খেলায় শরীর পালন করে আপনার পক্ষে থাকা এক বন্ধুর ভূমিকা। ঠিক কোন হরমোনগুলো মনের ঠিক কোন জিনিসটা হরণ করে, শরীর তার খোঁজ রাখে। যেমন ধরুন চকোলেট, এটা খেলে এমন এক হরমোন ক্ষরণ হয়, যা আপনার মনকে খুশি করবে। সুতরাং, মনের কোনো অকারণে খারাপকরা সময়ে এই ওষুধ কাজ করে যেতে পারে। আবার খুব অবসাদ বা আলস্যের সময়, একবার ঈষদুষ্ণ জলের তলায় যদি শরীরটাকে ভিজিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। একটা জমাট ঘুমও মনকে বেশ খানিকটা সতেজ করে তোলে, আর ঘুমের ভিতরে মন নিজের মতো করে অনেক কিছু সাজিয়ে-ঘুছিয়েও নেয়। আবার কনফিডেন্স বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নিজে যে কাজটায় বেশ পারদর্শী বা যে কাজটা করতে বেশ পছন্দ, সেরকম কিছু করে নেওয়া যেতে পারে। নিজের যে কোনো নতুন সৃষ্টিই মনের মধ্যে একটা আলাদা আরাম বয়ে আনে। এসব ছাড়াও খুব খারাপ লাগলে, স্রেফ প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলেও, নিজের অস্তিত্বের একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এই বিশ্ব-সংসারে সবকিছুর সাথে একাত্ব হওয়ার অনুভূতিটা কিন্তু কম কিছু নয়।

তবে যখন মন কোনো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন তার রোগ নির্ণয় করে তাকে সঠিক ওষুধ বাতলানোটাই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। আর সবার জন্য তো ওষুধ এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু যদি নিজেদের মধ্যেই একটা দ্বৈত স্বত্ত্বা তৈরি করে মনকে নজর রাখা যায়, তাহলে কিন্তু মনের আলাদা করে খেয়াল রাখা যায়। অন্তত মনের ভিতরে কি চলছে, তার হালহকিকতের একটা আভাস মেলে। সেটুকুই যথেষ্ট মনের যত্ন নেওয়ার শুরু করার জন্য। শুরুটাই হোক, সু-মনে থাকার। বরফের দেশের রাতে সূর্যের অনুপস্থিতিতে সবকিছুই খুব হতাশাজনক লাগতে পারে, কিন্তু তখনও তো থেকে যায় সূর্যের ফেলে যাওয়া আলোর রেশ। তা দিয়ে তো জীবনানন্দের মতো কেউ রোমাঞ্চও তৈরি করতে পারেন। তাই এই আশাটুকুই থাকুক না!