পঞ্চইন্দ্রিয়ের কাজগুলোর মধ্যে দেখা আর শোনা-কে আমরা বেশ ভালোভাবে digitally replicate করতে পারি। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুভূতি, গন্ধ আহরণের ক্ষেত্রে আমরা বেশ অসহায়। বিভিন্ন perfume-এর মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি ভালো গন্ধগুলোকে বোতলবন্দি করার, কিন্তু বেশিরভাগ গন্ধই তো পারিনি। যেমন, সেদিন apartment থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমেই মনে হল, উষ্ণতার কি গন্ধ হয়? তাহলে সে গন্ধ ভুলতে বসেছি।
উষ্ণতার গন্ধ কি কলকাতারও গন্ধ? তাহলে সেই কলকাতার গন্ধই বা ঠিক কি রকম? সেটা কি আরসালানের বিরিয়ানির গন্ধে শুরু হয়? নাকি যে ভিড়-বাসে করে, সন্ধ্যেবেলা কলকাতা থেকে হাওড়ায় ফিরতাম, সেই ভিড়ে দাঁড়ানো তন্বীর ফিকে-হতে-থাকে পারফিউম, আর বসের-ঝাড়-খাওয়া মধ্যবয়স্ক কোনো মানুষের সারাদিনের ক্লান্তির গন্ধের মিশেল? নাকি অন্য কিছু? গড়িয়াহাট থেকে প্রিয়া পর্যন্ত হেঁটে আসার সময়ে, দক্ষিণের আধুনিকতা, রেস্টুরেন্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফুটপাথ, কম দামের জামাকাপড়, মিষ্টি, প্রেমিকার নখের নেলপলিশ, ফুচকার সমন্বয়ে তৈরি হওয়া গন্ধই কি উষ্ণতাকে মনে করায়? সেরকমটা হলে, তাপমাত্রা আর উষ্ণতার সম্পর্ক বোধ হয় শুধুই বৈজ্ঞানিক।
রসায়ন বিজ্ঞান বা কেমিস্ট্রির ল্যাবের গন্ধগুলোকে তাও আমরা নিজেরা চাইলেই তৈরি করতে পারি। কিন্তু নিজের বাড়ির গন্ধ? যেখানে ঢুকলেই প্রথম পাওয়া যায় মায়ের গন্ধ। এই গন্ধ বোধ হয় আমি একাই পাই। আর এই গন্ধকে ভাষায় ব্যক্ত করার মতো শব্দ, আমার অভিধানে নেই। তাই অন্য কেউ সে গন্ধ আমার কাছে এনেও দিতে পারবেনা। তবে যখন ওই লাইনগুলো শুনি, "মায়ের শাড়ি রেলিং থেকে ঝোলে", তখন কাছাকাছি একটা গন্ধের সন্ধান যেন পাই।
গান যেমন কখনো আঘ্রানের ছোঁয়া দেয়, অপ্রত্যাশিত মুহূর্তরাও তেমনি বেহিসেবি গন্ধদের বয়ে আনে। বহুমাস আগে একদিন হঠাৎই, স্নান করার সময়, মাথায় খেলে গেলো এক প্রাক্তন প্রেমিকার গন্ধ। তখন আবারও বুঝেছিলাম, নতুন "বাইশে শ্রাবণ"-এর গানটার কথাগুলোর মানে। সেই ছবিটাতে প্রসেনজিতের নাকি ক্রিমিনালদের গন্ধই প্রিয় ছিল। কিছু মানুষ বোধ হয় এরকমই হয়।
কিন্তু আমরা অনেকেই বৃষ্টিভেজা মাটি, পেট্রোল, নতুন খাতা, জামাকাপড়, খাবার - এসবের গন্ধ ছাড়িয়েও কোনো না কোনো অজানা গন্ধের মোহতে মাতোয়ারা। আর সেসব গন্ধকে বেঁধে রাখার ইচ্ছেও নেই, কারণ তারা তো অনুভূতি। অনুভূতি খোলা আকাশেই ছড়িয়ে থাক, "পারিজাতের মধুর গন্ধ"-এর মত।
No comments:
Post a Comment