Wednesday, May 31, 2017

ফেসবুক আর লাইকোনোমিক্স - Facebook and Likonomics

পৃথিবীর সব থেকে জাজমেন্টাল ক্যাটাগরির লোকেদের মধ্যে "লেখক" প্রজাতিটির সংখ্যাধিক্য বেশ ভালোরকম। অবশ্য তাদের পেশা এবং নেশার স্বার্থেই তাদের এরকম হতে হয়। মানুষকে বাইরে থেকে দেখেই তার সম্পর্কে নিজের মতো একটা কল্পিত গল্প সাজাতে না পারলে, লেখক হওয়া তো খুব ঝক্কির। আর এখন আমরা অনেকেই লেখকেদের মতোই হয়ে পড়ছি।কারণ আমরা সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই ঠিক করি, একটি মানুষের ভাবনা-চিন্তা-দর্শন। কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে হয়তো সরাসরি কোনোদিন কথাই বলিনি, অথবা কারোর সাথে হয়তো গত ২-৩ বছরে দেখাও হয়নি, কিন্তু স্রেফ তার ফেসবুক ফিড দেখে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করি। আর এখানেই লেখকের সাথে এক অদ্ভুত আঙ্গিকে আমরা মিশে যাই। লেখক যে দুনিয়াটা কল্পনায় রাখেন, আমরা সেই পৃথিবীটাকেই বাস্তবে নামিয়ে আনি। বাস্তবের মানুষগুলোকে আমরা কল্পনার রঙে মিশিয়ে ভাবতে আরম্ভ করি। আর সেই কল্পনার ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার ইকোনোমিক্স।

আমাদের সকলের পৃথিবীতেই থাকে খুব কাছের কিছু মানুষ। আমি এখানে বাস্তব পৃথিবীর কথা বলছি। সেই কাছের মানুষরা আমাদেরকে একটু বেশি চেনেন, অন্তত আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ৫০০-১০০০ বন্ধুদের থেকে বেশি। আমাদের যে কোনো বক্তব্যের পিছনের গল্পটা, এই কাছের মানুষগুলো জানেন, বোঝেন। সেই গল্পের কোনো অংশ যখন তারা ফেসবুকের মতো ওয়েব-দুনিয়ায় দেখেন, তখন তারাই সবথেকে বেশি sympathise করেন আমাদের অনুভূতির সাথে। তাই সেই close circle-এর বাস্তব-বন্ধুরাই সাধারণত প্রথম react করেন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো পোস্টে।

ফেসবুকের পোস্টগুলো ছড়িয়ে যায় ripple effect-এর মতো। মানে দেখবেন, নিস্তরঙ্গ জলে যখন সামান্য দুলুনিও ওঠে, তখন তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। ঠিক সেভাবেই, ফেসবুকের একটি লাইক, একটি কমেন্টের জের ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় বন্ধুমহলে। আমাদের কাছের বন্ধুদের প্রাথমিক লাইকের জেরে আমাদের সামান্য দূরের বন্ধুরা হদিশ পান, আমাদের পোস্টগুলোর। কিন্তু তাদের মনে এতদিনে তৈরী হয়ে গেছে, আমাদের সম্পর্কে তাদের কল্পিত ধারণা। তারা আগে থেকেই ভেবে নিয়েছেন, আমরা কিরকম, আমাদের চিন্তা-ভাবনা কি ধরণের। আর যেহেতু ফেসবুক আমাদের পূর্ববর্তী মনোভাব, পোস্ট এগুলো গ্রন্থিত করে রেখে দেয়, তাই তাদের মনেও গেঁথে গেছে, তাদের কল্পনায় গড়ে ওঠা আমাদের চরিত্র। সেই কাল্পনিক চরিত্রের বিশ্লেষণের সাথে যদি আমাদের পোস্টগুলি মিলে যায়, তাহলে অচিরেই আমাদের পোস্টে লাইক, রিয়্যাকশন বাড়তে থাকে।

এভাবে আমরা, সাধারণরা, যখন অচেনা-স্বল্পচেনা মানুষদের প্রশংসা পেতে থাকি, তখন কোথাও কোথাও, আমরা সেই প্রশংসা পারলে ফিরিয়েও দিই। এভাবে তৈরী হয় একটা barter economy. কিন্তু এই barter economy-কে ফেসবুক interpret করে অন্যভাবে। তারা মনে করে, এই একে-অন্যের মনোভাবগুলো ভালো-লাগার অর্থ - আমরা বোধ হয় এই একটা মনোভাবকেই আমাদের ভার্চুয়াল দুনিয়াতে প্রাধান্য দিচ্ছি। ফলে, Facebook-ও আমাদের একই মনোভাবের বক্তব্য দেখাতে থাকে। মানে ধরুন, আমি যদি The Hindu সংবাদপত্রের কোনো লিংক আমার ফেসবুকে শেয়ার করি, এবং আমার বন্ধু অজিত যদি সেই পোস্ট লাইক করে; ফেসবুক এটাকে interpret করে এভাবেই যে - অজিতের The Hindu-র news পড়তে ভালো লাগে। ফলে একটা closed circuit তৈরী হয়, সমভাবাপন্ন লোকেদের। আর আমরা আস্তে আস্তে বিপরীত চিন্তাগুলো করতেই ভুলে যাই। একটা তীব্র মেরুকরণের দুনিয়া সৃষ্টি হয়।

কিন্তু সেই মেরুকৃত দুনিয়াটা আদৌ বাস্তব নয়। কারণ বেশিরভাগ সময়েই, আমাদের ফেসবুকের বন্ধুদের সামনাসামনি দেখাই হয়না। ফলে আমরা জানতেও পারিনা, মানুষটা আসলে কি রকম। আমরা তাদের সাথে direct কথাও বলি না, মেসেজ করি না। অথচ তাদেরকে বসিয়ে ফেলি একেকটা ধাঁচে। আর এই categorisation আসলে আরো দূরে সরিয়ে দেয় আমাদের। সবথেকে বড় irony-টা হল - এই ফেসবুক আসলে তৈরী হয়েছিল মানুষকে কাছে নিয়ে আসার জন্য।

তবে মানুষ যে কাছে আসেন না, তা নয়। ফেসবুকেই তো তৈরী হয় কত মানুষের প্রেমের সম্পর্ক। সেখানেও জড়িয়ে থাকে লাইকের পরিমাপ। ফেসবুকের নিজের একটি পরিসংখ্যান বলছে,  কোনো couple যখন তাদের একে-অপরের পোস্টে লাইকের সংখ্যা ১০০ দিন আগে থেকে বাড়িয়েছেন, তারাই পরে গিয়ে relationship-এ আবদ্ধ হয়েছেন। সুতরাং, ফেসবুক লাইকের আদান-প্রদান হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে "মধুরেণ সমাপয়েৎ"-এর জায়গাও করে দিচ্ছে।

কিন্তু সে তো গেলো, শুধু রোমান্টিক রিলেশানের কথা। অন্য ক্ষেত্রগুলোতে তো আমরা আরো আরো দূরে সরে যাচ্ছি, ফেসবুকের সৌজন্যে। এক্ষেত্রে যদি আমরা এই ফেসবুকের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে একটু সচেতন থাকতে পারি, তাহলে বোধ হয় সমস্যা একটু দূর হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে, আমরা একটা গোটা মানুষের স্রেফ কয়েকটা দিক দেখতে পাচ্ছি, একটি ছোট্ট জানলা দিয়ে। সেই মানুষটার পুরো আকাশটা পড়ে আছে সেই জানলার বাইরে। আমরা যদি এই ছোট্ট ব্যাপারটা মাথায় রাখতে পারি, তাহলে ফেসবুক অন্তত আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে বোঝার পথে অস্বচ্ছ দেওয়াল হয়ে দাঁড়াবে না।

ফেসবুক নিয়ে একটি সিরিজের এটা দ্বিতীয় ভাগ। প্রথম ভাগটা এখানে পড়া যাবে। 

Monday, May 08, 2017

কবিতার শেষ - Poetry's End

Boston, 09-May-2017, 01:59 AM

তোর পায়েতে নূপুর ছিল
ঝর্ণাঝরা শব্দ হতো। 
মনের মাঝে গল্প ছিল ,
কলকাতাকে আকাশ করে,
নন্দনে খুব ভিড় করে। 
কিছু শেষের নাম ছিল না,
কবিতা তবু গান ছিল,
উপন্যাসের ভুল ছিল। 

আমি ছিলাম, তুই ছিলি,
দর্শনে খুব মিল ছিল,
অপেক্ষমান দিন ছিল,
রাত্তিরে ওই অন্ধ-আকাশ
তারা গোনা শিখছিল।

ডিসেম্বরে আর শীত থাকে না,
আশার মাঝে কুয়াশা হয়,
দিনকে দিন অবক্ষয়।
আবেগের তবু স্থান ছিল,
ফ্যাকাশে হোক, লাল ছিল,
সে হয়তো তুই ছিলি না,
তোর কোনো এক রং ছিল।