Monday, December 25, 2017

নদীর নাম - River's name

Boston, 25-Dec-17, 9:49 PM

তিতাস নামের মানেই কি এক মন-কেমন,
যেমন করে তোমার চোখে শোকপালন।

আনত মুখে কিসের কথা লুকোতে চাও,
ঠোঁটের ফাঁকে আটকে আছে আঘাতটাও। 

তোমার হাসি পাগল করে অনেককেই,
তার গভীরে একটুও কি দুঃখ নেই ?

থাকেও যদি, প্রিয় মানুষ, খবর পায় ?
ঠিক যেভাবে তোমার লেখা মেঘ ঘনায় ?

মেঘের পাশে আমার আছে নতুন ঘর,
মেলানকলি উষ্ণতায় ভীষণ জ্বর। 

ঘোরের মধ্যে গাইছি আমি নদীর নাম,
স্বীকারোক্তির কবিতারা হয়েছে গান। 

সুরের মধ্যে রং-হারানো ব্যর্থ প্রাণ,
নিজের প্রতি প্রেমের তানে উদীয়মান।

তোমার এসব অন্ধকারের সময়কাল,
পেরিয়ে এসে হাত বাড়িও সখ্যতার। 

Sunday, December 24, 2017

সঞ্চারী - Sanchari

প্রথমে সঞ্চারীকে একদমই ভালো লাগেনি। কারণ ওকে বুঝতেই পারতাম না। এমনভাবে নিজেকে গোপন করে রাখতো, যে চিনতে পারতাম না। তার থেকে বরং অন্তরাকে বেশি পছন্দ ছিল। কিন্তু যেদিন "যখন পড়বে না মোর" আর "এমন দিনে তারে"-টা মন দিয়ে শুনলাম, সেদিন থেকেই সঞ্চারীর প্রেমে পড়া শুরু। সঞ্চারীর প্রতি যে রবিবাবু একজন পক্ষপাতদুষ্ট অভিভাবকের কাজ করেছেন, সেটা বলতে দ্বিধা নেই। সঞ্চারীকে তিনি একটু বেশি আদর দিয়েছেন। সঞ্চারীতে এসেই ওনার বেশিরভাগ গানে কথা ও সুর অন্য মোচড় নেয়। সঞ্চারী তাই হয়ে ওঠে একটা pleasant surprise. অন্তরাকে স্থায়ীর extension মনে হয়, আভোগও অনেকসময়ই অন্তরার বশবর্তী বা অনুপস্থিত। এদের মধ্যে থেকে আলাদা হয়ে সঞ্চারীই স্বতন্ত্র এবং নিজমহিমায় সুন্দরী হয়ে ওঠে।

Saturday, December 23, 2017

FRDI বিলের সমর্থনে (~ 7 মিনিট) - In Support of FRDI Bill

FRDI-বিলের মতো সুন্দর, উপকারী বিল, আমি আগে শুনিনি। সিপিএমের মতো আহাম্মকরাই এটার বিরোধিতা করতে পারে। আমার মনে হয়, সিপিএম সহ সব রাজনৈতিক দলের উচিত বিলটাকে ভালোভাবে স্টাডি করে আরো উন্নত এবং পাকাপোক্ত করার। জনগণের সুবিধার্থে এর থেকে ভালো কোনো বিল হতে পারে না। কেন এরকম বলছি, সেটা ব্যাখ্যা করছি।

প্রথমে বিলটা ছোট্ট করে বুঝে নেওয়া যাক। FRDI-বিলটা আদতে খুবই সহজ, বা cute-ও বলা যায়। বিলটায় বলা হচ্ছে যে, যদি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, মানে সাধারণ মানুষের গচ্ছিত সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থা ব্যাংকটির না থাকে, তাহলে জনগণকে তাদের জমা-রাখা টাকার একটা অংশমাত্রই ব্যাংক ফেরত দেবে। জনগণের গচ্ছিত বাকি টাকাটা সেই ব্যাংকের শেয়ার বা অন্য কোনো মাধ্যমে handover করা হবে। মানে ধরুন, আপনি HDFC ব্যাংকে ২ লক্ষ টাকা রেখেছেন। HDFC ব্যাংক যদি বসে যায়, তবে HDFC আপনাকে বলবে, আপনি ১ লক্ষ টাকা আপাতত রাখুন। আমরা একটু দুস্টুমি করে ফেলেছি, তাই বাকি টাকাটা এখন দিতে পারবো না। বাকি ১ লক্ষ টাকার জন্য আপনাকে HDFC ব্যাংকে কিছু শেয়ার দেওয়া হল, ধরুন আপনি ০.০০৫% শেয়ার পেলেন HDFC-র। এরকম একটা ব্যবস্থা করা হবে, এই হচ্ছে মদ্যা কথা।

এরকম জনহিতকারী বিলও যে আনা যায়, ২০০৮-এর financial crash আর দিগ্গজ ইকোনোমিস্ট এবং MBA-রা না থাকলে, আমরা বিশ্বাসই করতে পারতাম না ! আহা, কি দুর্দান্ত কনসেপ্ট ! যাই হোক, ব্যাংক কত টাকা নিশ্চিতভাবে ফেরত দেবেই, এই upper limit-টা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, এখনো অব্দি limit-টা ১ লক্ষ টাকা আছে। মানে ১ লক্ষ টাকা অব্দি আপনাকে যে কোনো পরিস্থিতিতেই যে কোনো মূল্যে ফেরত দেওয়া হবেই। এই limit-টা পরে বাড়িয়ে হয়তো ৩.৫ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। সিপিএম-সহ সব রাজনৈতিক দলের সেটা দেখা উচিত। তারপর ধীরে ধীরে বিলটাকে পাশ করিয়ে দেওয়া উচিত। তবেই শুরু হবে আসল মজা ! অনেক মজা !

কিভাবে মজাটা সবাই পাবে, সেটা বলছি। তার আগে বোঝা দরকার, ব্যাংক দেউলিয়া কখন হয়। মূলত বড় ব্যবসায়ীদের লোন দেওয়ার পরে, যদি সেই লোন আদায় বা recover করতে না পারে, তাহলে সেই ব্যাংক ধীরে ধীরে দেউলিয়াপনার দিকে এগোতে থাকে। যেমন বিজয় মালিয়া লোন নিয়ে বিদেশে গিয়ে বসে বিয়ার পান করছেন, সেরকম জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি হলে। এবার সেরকম অবস্থা হলে, ব্যাংক আপনার টাকাটা নিজেদের পুনরুজ্জীবনের কাজে লাগবে, নিজেকে আবার গড়ে তোলার জন্য। বদলে ব্যাংক আপনাকে তাদের উঠে-যেতে-বসা-ব্যাংকেরই কিছু শেয়ার দেবে। ব্যাংকটা এভাবে নিজেকে আবার গড়ে তুলতেও পারে, আবার fail-ও করে যেতে পারে। fail করে গেলে, আপনি আর টাকা ফেরত পাবেন না। দুস্টুমি করলে তো সবসময় শোধরানো যায় না, তাই ফেরত পাবেন না। তখন আপনি ব্যাংকটাকে সোনামনা-কুচিপুচি বলে মাফ করে দেবেন। আর এখানেই মজাটা লুকিয়ে আছে, কে এই মাফটা করবে।

একটা ব্যাপার ভেবে দেখুন, ৩.৫ লক্ষ টাকা কিন্তু সুরক্ষিত থাকবেই, যে কোনো ধরণের পরিস্থিতিতে। সে যদি ব্যাংক দেউলিয়াও হয়ে যায়, তাও ৩.৫ লক্ষ টাকা অব্দি আপনি পাচ্ছেনই। কারণ আপনার সেই পরিমান টাকা ব্যাংকে insure করা থাকবে। ৩.৫ লক্ষের উপরের টাকাটা ব্যাংক আপনাকে হয়তো আর নাও দিতে পারে, কোনো গ্যারান্টী নেই। তো এতে খারাপ কি? যাদের গচ্ছিত টাকা ৩.৫ লক্ষের কম, তাদের তো কোনো অসুবিধে নেই। মানে অসুবিধে হবে যে সব লোকেদের, তারা হল মূলত মধ্যবিত্ত, আর উচ্চ-মধ্যবিত্ত। মানে এই IT, Engineering, public সেক্টরে কাজ করা বা ছোট ব্যবসা-করা তাবৎ জনগোষ্ঠী, অনেকেই যুবক-যুবতী। এই ক্লাসের মানুষেরাই তাঁদের টাকা খোয়াতে পারেন বা তাদের টাকার devaluation হতে পারে, এই নতুন বিলের চক্করে। কিন্তু এই শ্রেণীর মানুষেরা হচ্ছেন তারাই, যারা স্বপ্ন দেখেছিল এবং এখনও দেখে বিজেপিকে নিয়ে। যারা স্বপ্ন দেখে, মার্কেট ইকোনোমি একদিন এদের উচ্চবিত্ত করে তুলবে। এরা স্বপ্ন দেখে, বিজেপির "development" ভারতকে প্রবলভাবে এগিয়ে দেবে প্রগতির দিকে। এরা ২০১৪-তে বিপুলভাবে বিজেপিকে ভোটও দিয়েছিল [১]। তো এরা এতো স্বপ্ন দেখে ফেললো, আর সেই স্বপ্নের কোনো মূল্য দেবে না, তা হয় নাকি? এমনি সময় "মার্কেট ইকোনোমি", "মার্কেট ইকোনোমি" করে লাফাবে, আর নিজের গচ্ছিত টাকার বেলায় safe খেলবে - তা হয় কি করে?

তাই এই ক্লাসটাকে পড়তে দেওয়া হোক মার্কেটের পাল্লায়। সরাসরি বুঝুক, মার্কেটের উত্তাপ কাকে বলে। যারা গরিব, তাঁরা তো সুরক্ষিত থাকছেনই। বাকি সুবিধাভোগী ক্লাসটাকে এবার দায়িত্ত্ব দেওয়া হোক নিজেদের এবং নিজেদের পছন্দের। শুধু "নোটা", বিজেপি, কংগ্রেস - এসব choose করে চলবো, আর নিজেদের গায়ে একটুও আঁচ লাগতে দেব না, তা তো হয় না। এরা শুধু বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের বদলে রুই মাছ কিনে, বা কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার বদলে কাকদ্বীপ ঘুরতে গিয়ে, বলবেন যে lifestyle adjust করছি - সেটা আর কদ্দিন চলবে। গরীবরা যে প্রচন্ড হারে আরো পিছিয়ে পড়ছেন, সেটা এই মধ্যস্বত্ত্বভোগী, সুখী middle class-টা realize-ই করতে পারেনা। কোন পার্টির ইকোনোমিক পলিসি কি, সেটা এই শ্রেণীর মানুষদের সরাসরি বোঝানোর সময় এসে গেছে। সিপিএমের মতো পার্টির তাই উচিত, এই গোষ্ঠীটাকে নিজেদের কর্মের ফল বোঝানোর। আশা করবো, এই সুবিধাভোগী ক্লাসকে বাঁচানোর যেন মিনিমাম চেষ্টাই সিপিএম করে। এই মধ্যবিত্তরা সিপিএমকে ভোটও দেয় না, সমর্থনও করে না, উপরন্তু communism-কে obsolete বলে মনে করে। কি দরকার এদের পাশে দাঁড়ানোর? তাতে হয়তো, কিছু মধ্যবিত্ত যারা এখনো সিপিএমকে ভোট দেন, তারা suffer করবেন, কিন্তু এটুকু collateral damage মেনে নেওয়া যায়, বৃহত্তর class consciousness-এর স্বার্থে।

[১] Christophe Jaffrelot; The Class Element in the 2014 Indian Election and the BJP’s Success with Special Reference to the Hindi Belt; Studies in Indian Politics; May, 2015

Wednesday, December 20, 2017

সুন্দরীর আত্মকথন

নমস্কার। আমাকে আপনারা হয়তো চেনেন না। তবে আমি কিন্তু আপনাদের আশেপাশেই ঘাপটি মেরে আছি। আমাকে দেখতে সুন্দরী, হয়তো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত না হলেও, যে কেউ দেখেই সুশ্রী বলবে। যদিও বেশিরভাগ বাঙালি মেয়েকেই বিশ্বসুদ্ধ লোক তা-ই বলে, তবুও আমি নিজেকে সাধারণের থেকে বেশি সুন্দরী বলে মনে করি। আসলে এছাড়া আমার আর কোনো উপায়ও নেই, এই একটিমাত্র ব্যাপারেই আমার পারদর্শিতা। জানি, আপনারা ভাবছেন যে, এখানে *আমার* পারদর্শিতার কি হল, কিন্তু একটা রূপ maintain করে চলারও তো ব্যাপার আছে। তাছাড়া আজকাল যা দূষণ চারিদিকে, এই মেইনটেন্যান্স এর পিছনে কত পরিশ্রম লাগে, তা তো আপনারা বুঝবেন না। দেখছেন, এতক্ষন কথা বলছি, আর এখনও আমার পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি। আসলে নিজেকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে, আমি কেমন যেন আত্মহারা হয়ে যাই ! যাই হোক, ইংরিজিতে আমার একটা গালভরা নাম আছে, সেটা আপনাদের guess করতে হবে। তবে আমাকে অনেক নামেই ডাকা যায়, যেমন আপনারা আমাকে সুনয়না বলতে পারেন। যদিও শুধু নয়ন নয়, আমার পুরোটাই সুমধুর।


ছোটবেলা থেকেই আমার কোনো আম্বিশ্যান নেই। খুব ছোটবেলায় তো কিছুই ভাবতে পারতাম না, শুধু টিভিতে চলমান ছবি দেখে উল্লসিত হতাম। একটু বড় হতে বুঝলাম, আমাকে দেখতে সুন্দরী। তারপর থেকেই মোটামুটি আমার বারোটা-বাজার শুরু। বাবা-মা ছোটবেলায় নাচ-গান করানোর চেষ্টা করেছিল; ওদের মনঃপুত করতে এবং সমাজের চাপে সেসব করিও। তবে ওসবে আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল না। আমি খেয়ে বসে হেসে, বেঁচে থাকতেই পছন্দ করতাম।



খুব মুশকিলে পড়ে গেছিলাম মাঝের কয়েক বছরে। প্রেমের নিবেদন অনেকই আসে, কিন্তু একটির চরিত্র বুঝতে ভুল হয়ে গেছিল। আমার সেই প্রেমিক আমাকে নিজের যোগ্যতায় ভালোলাগার কিছু করতে বলে, এবং তার জন্য আমাকে নাকি সে সমস্ত রকমের সহযোগিতা করবে। আমি তো হতবাক ! এ বলে কি ! ছোটবেলা থেকে বাবা মা যেটা করাতে পারলো না, এ বলে কিনা সেটা করতে ! যাই হোক, বেঁচে গেছি সেসব ব্যাপার থেকে।



তবে সমাজের কাছে মান রক্ষার্থে চাকরি করি এখন। কিন্তু আমিও জানি সে চাকরি আমি ঠিক কিসের জোরে পেয়েছি।আমার যে বর, সে কোনো দিক থেকেই আমার সমকক্ষ নয়, আমি জানি। আমি তাকে কতটা রোম্যান্টিকালি ভালোবাসি, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। কিন্তু তাতে কি যায় আসে? টাকা-পয়সা, সমাজে প্রতিপত্তি এসব দিক থেকে বেশ আদর্শ। আর মনের মিলের থেকে বড় দরকারি, টাকার অফুরন্ত যোগান, আর আমাকে প্যাম্পার করার মানসিকতা। আর একটা গোপন কথা চুপিচুপি বলে রাখি, আমার মত রূপসর্বস্ব মেয়েকে পেয়েই ও খুশি হয়েছে, কারণ এছাড়া ওর সঙ্গে থাকার মতো কেউ জুটতো কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সে জন্য আমার চাকরির টাকা, আমি নিজের কাছেই রাখি। বরের টাকাটা স্বভাবতই সংসারে যায়। আর আমিও পেয়ে যাচ্ছি যখন যা চাই। আর কি চাই ! জীবন মানে তো এটাই, তাই না? জীবন মানে কি দুনিয়াটাকে বোঝার চেষ্টা, কোন বোকচন্দর যে বলেছিল !



তবে কি জানেন, শুধু আমার কথা নয়। আমার হাজারো প্রতিমূর্তি দেখতে পাবেন আপনাদেরই চারপাশে। আমি কোনো একটা মানুষ নই, আমি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটা দর্শন। যে দর্শনে হোটেলে খেতে গিয়ে আমরা বিল পেমেন্ট করার কথা চিন্তাও করি না, সেই দর্শন। যে দর্শনে আমরা বিয়ের পর শুধু পদবী পরিবর্তন না-করাটাকেই সাফল্য মনে করি, সেই দর্শন। যে দর্শনে সামাজিকভাবে, কাজের জায়গায় মেয়ে হওয়ার অতিরিক্ত সুবিধে নিয়ে থাকি, ভিকটিম-প্লে করে থাকি, সেই দর্শন। এই দর্শনেই আমরা "ফেমিনিজম"-কে স্রেফ একটা উদ্বাহু আন্দোলনের ক্যারিকেচারে পরিণত করছি। এই দর্শন আমাদের মধ্যে গেঁথে বসে আছে। বহন করে চলছি খুব গভীরে। এবং অদূর ভবিষ্যতেও করে চলবো।



--- আপনার চেনা কোনো এক সুন্দরীর অল্টার-ইগো

Friday, December 15, 2017

Dead Poets Society - Realization - Quotes

In the end, the journey feels like from Todd Anderson to Knox Overstreet to Charlie Dalton to Neil Perry to John Keating, the teacher.

Thursday, December 07, 2017

বিটকয়েন আর অর্থনীতি | Bitcoin and Economics

বিটকয়েন এর নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি। যারা শুনেছেন এবং শোনেননি, সকলের জন্যই লেখাটা। শেষ পর্যন্ত লেখাটা সাধারণ অর্থনীতির দিকে নিয়ে গিয়ে শেষ করবো। যারা এ সম্পর্কে শোনেননি, তাদের উৎসাহ যোগানোর জন্য বলি যে, এখন মাত্র একটি বিটকয়েন-এর মূল্য ১৪-১৬ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। কি করে এই অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল, সেটা কিছু পরেই বোঝা যাবে। তার আগে এর সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। 

বিটকয়েন একটি ডিজিটাল কারেন্সি। মানে এর কোনোরকম ফিজিকাল অস্তিত্ব নেই। এই কারেন্সি যদি কিনতে চান, তাহলে আপনাকে অনলাইনেই কিনতে হবে। আপনার একটি প্রাইভেট পাসওয়ার্ড দ্বারা সেই কারেন্সি সুরক্ষিত থাকবে। কিভাবে এটা সুরক্ষিত থাকছে, সেটা বলার জন্য আর একটা লেখা লিখতে হবে। এমন দুর্দান্ত কিছু থিওরি নয়, এবং এই সম্পর্কিত একটি লেখা কিছুদিন পরে পাবেন। তবে এখন আপাতত এটুকু জানলেই চলবে যে, কিছু unsolved mathematical problem-এর জেরেই, আপনার পাসওয়ার্ডের দ্বারা ওই ডিজিটাল কারেন্সি, বিটকয়েন, সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা আছে। যেমন আপনার সাধারণ টাকা ব্যাংকে সুরক্ষিত থাকে, অনেকটা তেমন করেই। কিন্তু বিটকয়েন শুধু এই নিরাপত্তার জন্য এবং ডিজিটাল হওয়ার কারণেই স্পেশ্যাল, তা নয়। এর একটা অন্য কারণ আছে। 

এই বিটকয়েনকে কোনো সেন্ট্রাল অথরিটি নিয়ন্ত্রণ করছে না। এর মানে হলো, কোনো রিজার্ভ ব্যাংক বা সরকার নেই, যে বলে দিচ্ছে কত বিটকয়েন মার্কেটে থাকবে। অথবা কেউ কোনো অর্থনৈতিক নিয়ম তৈরী করে দিচ্ছে না, যাতে বিটকয়েনের যোগান কন্ট্রোল করা যায়। ফলে বিটকয়েনের মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় সরকারের কাছে নেই। এ বিষয়েই পরে আর একটু আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে বিটকয়েনের পিছনে আর একটি প্রযুক্তি কাজ করছে, সে ব্যাপারে জানা প্রয়োজন।

যেহেতু কোনো সেন্ট্রাল অথরিটি বিটকয়েনকে কন্ট্রোল করছে না, তাই এটা বোঝা তো খুব শক্ত যে কার কাছে কত বিটকয়েন আছে! অথবা কেউ অন্য কাউকে বিটকয়েন যদি ট্রান্সফার করে, তাহলে আদৌ সেই বিটকয়েনগুলি ভ্যালিড কিনা এটা যাচাই করার উপায় কি? এর পিছনে আছে একটি নতুন টেকনোলজি, blockchain। আরো সোজা ভাষায়, একটি পাবলিক ledger সিস্টেম। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মেশিনে কপি করে রাখা আছে, একটি public ledger. এই পাবলিক ডেটাবেস বা লেজারে জমা রাখা হচ্ছে সমস্ত transaction বা লেনদেনগুলো। এই public ledger-এ কোনো transaction তখনই ভ্যালিড বলে গণ্য হবে, যখন একটি নূন্যতম সংখ্যক মেশিন (যথাযত সংখ্যাটা বলাটা একটু জটিল) সেটাকে মান্যতা দেবে। এই মান্যতা দেওয়ার পদ্ধতিও বেশ অভিনব। এই মান্যতা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক মেশিনকে করতে হবে কিছু সময়সাপেক্ষ জটিল গাণিতিক ক্যালকুলেশন। যখন নূন্যতম সংখ্যক মেশিন ক্যালকুলেশনগুলি করার পরে কোনো transaction-কে মান্যতা দিলো, তখনই সেই transaction পাবলিক লেজারে বৈধ হিসেবে স্থান পাবে। সেই ক্যালকুলেশনগুলো করতে, আপনার বা আমার সাধারণ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার অনেক বেশি সময় লাগিয়ে দেবে। কিন্তু দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের বেশ পাওয়ারফুল মেশিনগুলো তুলনামূলকভাবে কম সময়ে এই ক্যালকুলেশন করতে পারে। এই পাওয়ারফুল মেশিনগুলোকে সমষ্টিগতভাবে কিনেছে আমার বা আপনার মতোই সাধারণ মানুষেরা। তারা এই জটিল ক্যালকুলেশনের পুরস্কারস্বরূপ কিছু নতুন বিটকয়েন পাবেন, এবং এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বিটকয়েনগুলি।

মূলত এই হচ্ছে বিটকয়েন সিস্টেম। এই সিস্টেমে কাউকে identify করা খুব কষ্টকর এবং প্রায় অসম্ভব বলা যায়। কারণ পুরো লেনদেনটাই হচ্ছে অজ্ঞাতপরিচয়ে। ফলত কারোর জানার ক্ষমতা নেই, কার কাছে কত বিটকয়েন আছে। এই বিটকয়েনের মূল্য মূলত নির্ধারিত হচ্ছে এর যোগানের অভাব থেকে। এখনো অব্দি মোটামুটি ১৬ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরী করা হয়েছে এবং বাজারে আছে। তবে বিটকয়েন সর্বাধিক তৈরী হতে পারে ২১ মিলিয়ন। গাণিতিক ফর্মুলার জেরেই তার থেকে বেশি বিটকয়েন তৈরী হওয়া আর সম্ভব নয়। ফলে একটা সীমা থেকে যাচ্ছে সর্বমোট বিটকয়েনের। (অনেকটা সোনার সাথে এক্ষেত্রে তুলনা করা যায় বিটকয়েনকে) এখানে যদিও হ্যাকিং বা চুরির সমস্যা আছে। কিন্তু সেই সমস্যা যে কোনো অনলাইন ডিজিটাল মিডিয়ামের থেকে বেশি কিছু নয়, বরং খানিকটা কমই। 

তবে বিটকয়েনের সবথেকে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যটা হল নিয়ন্ত্রণহীনতা। যেহেতু সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই যারা Free Market Capitalism-এর সমর্থক তারা এ ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী। এই কারেন্সির মূল্য ঠিক করে দিতে পারে শুধুই বাজার এবং সেখানের চাহিদা-যোগানের সমীকরণ। সে কারণে তাদের উচ্ছাসের যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু পুঁজিপতিদের সমস্যাও যদিও সেখানেই, নিয়ন্ত্রণ-না-থাকা নিয়ে। কারণ সরকার শুধুমাত্র একটি যন্ত্র, যা পুঁজিপতিদের লাভ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই সেই নিয়ন্ত্রণটুকু চলে গেলে, পুঁজিপতিরা কিভাবে তাদের লভ্যাংশ বাড়িয়ে চলবেন, সেটা বড় চিন্তার কারণ হতে পারে।

যারা anarchy পছন্দ করেন, তাঁদেরও কাছেও যথেষ্ট আকর্ষণীয় এই বেলাগাম মুদ্রা। কারণ যে established currency-গুলি আছে, সেগুলোর বাধা এড়িয়ে এই মুদ্রাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর সে কারণে এই মুদ্রা বিকল্প অর্থনীতির একটা দিক খুলে দিতে পারে। অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতিতে এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কোনোভাবেই এই মুদ্রা আমাদের সম্পদের চরম অসামঞ্জস্যকে কমাতে পারবে বলে, আমার মনে হয় না। এখনকার অর্থনীতিকে সাময়িক আঘাত দেওয়া ছাড়া, একে পরিবর্তনের জন্য বিটকয়েনের দিকে না তাকানোই ভালো। বরং এখনকার রাজনৈতিক সিস্টেমের প্রতি মানুষের আস্থা কতটা কমে গেছে, বিশেষত ২০০৮-এর ফিনান্সিয়াল ক্র্যাশ-এর পরে, তার একটা প্রতিফলন পাওয়া যায় বিটকয়েনের মতো সিস্টেমের বিপুল জনপ্রিয়তায়। শেষ পর্যন্ত আমরা তাকিয়ে থাকবো, বিটকয়েন গ্লোবাল কারেন্সি হিসেবে আন্তর্জাতিক বেড়াজাল ভেঙে দিয়ে কতটা সফল হতে পারে, সেই দিকে।  

Monday, December 04, 2017

চৈত্রের হলুদ বিকেল । Yellowish Afternoon of Spring (~ ৪ মিনিট)

শীতকাল। একসাথে মনে পড়ে যাওয়া অনেকগুলো অনুভূতির নাম শীতকাল। কারো কাছে সেটা স্রেফ নলেন গুড়ের মিষ্টি, কারো কাছে বইমেলা, আবার কারো কাছে সরস্বতী পুজো-সহ ছুটির মরসুম। এইসবগুলো ছাড়াও আরো কিছু মুহূর্ত শীতকালকে বয়ে আনে।

বাড়ি থেকে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে আছে দক্ষিণ-পূর্ব রেললাইন। রাত্রিবেলা যখন চারধার একদম নিশ্চুপ, তখন দূরে ছুটে যাওয়া ট্রেনটার শব্দে শীতকাল নামে। সেই শব্দ কখনো শুনেছি জয়েন্টের অঙ্ক কষতে কষতে, আবার কখনো প্রেমিকার আধো-আধো-কথার মধ্যেই অজান্তে মিশে গেছে। এখন আর জয়েন্ট নেই, প্রেমিকার আগে প্রাক্তন বিশেষণ বসেছে, কিন্তু শীতকাল আমারই হয়ে রয়ে গেছে। যে শীতকালে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসতো। সেই জন্য একটু আগে ক্রিকেট খেলতে যেতে হতো। দুপুর ৩টে নাগাদ, একটু চড়া রোদের মধ্যে। নাহলে কিছুতেই তিনটে ৮-ওভারের ম্যাচ খেলা যেত না। সেইসব ম্যাচে আমার টিমে যে অলরাউন্ডার, ব্যাট-বল দুটোতেই আমাকে যে ভরসা দিত, সে-ও আর নেই। কিন্তু ওর সাথে ম্যাচ খেলে ফেরার দৃশ্য থেকে গেছে। সেই দৃশ্যেকে আবছায়া করে তুলতো কুয়াশার সাদা চাদর আর রুম্পাদের বাড়ির উনুনের ধোঁয়ার সংমিশ্রণ। সেই ধোঁয়া পেরিয়ে আমরা বাড়ির দিকে যেতাম, গায়ে জ্যাকেট চাপানো হত না। দূর থেকে মা-কে অফিস থেকে ফিরতে দেখতাম, কাজ-করা একটা ঘিয়ে-রঙের চাদর গায়ে। জ্যাকেট না-পড়ার জন্য বকুনি শোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে, অন্য রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরার জন্য দৌড় লাগাতাম।

আবার কোনো কোনো দৌড় নন্দনে এসে থেমে যেত। দেরি হওয়ার জন্য অনেক অভিমান শীতকালে জমাট বেঁধে থাকতো। দৌড়ে এসেও সে অভিমান গলানো যেত না, কিন্তু নাটকীয়তায় কাজ হতো। শেষ অব্দি, পাশের মানুষটার হাত ধরে ক্রসিং পেরিয়ে মেট্রোর দিকে যাত্রা। রবীন্দ্র সরোবর, মাফলার, সারি সারি বেঞ্চ, হলুদ আলো, অন্ধকার, শীতকালের উষ্ণতা, কলকাতা-পুলিশ, ফুচকা পেরিয়ে ছোট্ট কোনো রেস্টুরেন্ট। তারপর একটা অটো এসে থামতো, আর গান হতো, "কার সাথে বলো, শব্দ ছুঁড়ে ফিরবো বাড়ি!" বুকের মধ্যে চিনচিন-করা শূন্যতা নিয়ে বাড়ি ফিরতেই হতো। বাড়ির যদিও নিশ্চিত কোনো ঠিকানা থাকে না, সেটা থাকে ঘরের। তাই বাড়ি হয়ে যেত কলকাতার অন্য প্রান্তে প্রযুক্তির-নগরীতে। তখন সেখানে শুনশান রাস্তাঘাট। কপাল ভালো থাকলে লেবু-মাখানো ভুট্টা পাওয়া যেত। অথবা রাতের জন্য রুটি-তরকার আয়োজন করে আনতাম। সেই রাত শেষ হয়ে যেত গিটারের সাথে পানীয়ের মিশ্রনে। কেমন আছে সেই রাত?

প্রশ্ন তো শুধু রাতকে নয়, পুরোনো আরো অনেককে। যেমন, চঞ্চল কি এখনো ডিসাইন করে? সাগর কি এখনো রাতের বেলায় কবিতা লেখে? সেই লেখা কোনো সৌম্যকে পড়াতে আসে? শফিকুল কি রাতে হিন্দি গান গায়? কেউ কি সাথে আনাড়ি গিটার বাজায়? সুখময় কি মন-খারাপ হলে সৌম্যকে ফোন করে, চারপাশের হলুদ আলোয় একটু বেড়িয়ে আসার জন্য? বাণীব্রত সিপিএমকে গালি দেয়, তৃণমূলের দিন-বদলের স্বপ্ন দেখে? অংশুমান কি এখনো abstract painting করে, নাকি ওর জীবন এখন বড়ই বাস্তব, সেখানে বিমূর্ততার বিলাসিতা নেই ! শীতকাল এই প্রশ্নগুলোর সামনে বারবার ছুঁড়ে ফেলে আমায়। 

এখন আমি কম তাপমাত্রার ঠান্ডা সর্বক্ষণ পাই, কিন্তু সে ঠান্ডায় "শীতকাল" নেই। যে শীতকাল অপেক্ষা করতে বলে উষ্ণতার জন্য, খুব জবুথবু হয়েও। যে শীতকাল ফাল্গুন-চৈত্রের দিকে চেয়ে থাকে। সেই শীতকালেই এখনো বসে আছি আমি। অপেক্ষা করছি সৌম্য, চঞ্চল, সাগর, শফিকুল, এদের সব্বার। গিটার হাতে "চৈত্রের কাফন" গাইবার চেষ্টা করছি A-মাইনরে। স্ট্রামিং করতে পারছি না ভালোমতো, শিখতে চেষ্টা করছি। এই result-oriented money-market-এ শেখার কোনো মূল্য নেই জানা সত্ত্বেও, নতুন স্ট্রামিং প্যাটার্নটা হাতে তোলার চেষ্টা করছি। কারণ শীতকালেই বোধ হয় "চৈত্রের কাফন"-এর সুর আসে, যে সুরে আদ্যন্ত মনখারাপকেও আপন করে নেওয়া যায়। শীতকাল আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছে, "চৈত্রের হলুদ বিকেলে"র। আমি চেয়ে আছি আকাশের সাদা মেঘের দিকে। সেই মেঘে আঁকা আছে শীতকালের প্রতীক্ষা, শুধুই চৈত্রের জন্য।