Tuesday, February 14, 2017

সব কি সাজানো? - Is everything artificial?

এখানে একটা Park Street আছে, একটা Esplanade আছে। গঙ্গা নেই, তবে চার্লস নদী আছে। কলকাতার যেমন হাওড়া আছে, বস্টনের তেমনি কেমব্রিজ আছে। তারা চার্লস নদীর দু'পাড়ে দুটো শহর, যমজ নয় কিন্তু খুব কাছের দুটো ভাইয়ের মতো, যেমন হাওড়া-কলকাতা। বঙ্গোপসাগর যেমন কলকাতা থেকে দূরে, সেরকম নয়, তবে শহরের একটা পাশেই অতলান্তিকে ভেসে যাওয়া আছে। কলকাতায় যেমন প্রচুর কলেজ, বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, তেমনি বিশ্বের সেরা কিছু পড়াশোনা আর গবেষণার জায়গা এখানে; Harvard, MIT-এর নাম তো অনেকেরই শোনা।

এই এতগুলো মিল ঠিক কেন ঘটলো, কেন ঘটে যায় এই co-incidence গুলো? যখনই এরকম ঘটে যায়, তখনই দুটো জিনিসের কথা মনে পড়ে: ১) টেলিপ্যাথির কথা, যার ব্যাপারে সোনার কেল্লায় প্রথম শোনা। ২) The Truman Show-এর কথা, যেই ফিল্মটি এক প্রিয় শিক্ষকের পরামর্শে দেখেছিলাম। Truman Show-এর কথাই বেশি মনে পড়ে। সেখানে ছোট্ট থেকে একটা বাচ্চাকে বড় করা হচ্ছে। অথচ সেই বাচ্চাটির চারপাশে কেউই আসল নন। সকলে অভিনয় করে চলেছেন। আর বাচ্চাটিকে যে জায়গায় বড় করা হচ্ছে সেটা একটা TV Show-এর সেট। পুরোটাই বানানো। এবং সেই সেটে লুকোনো ক্যামেরা রাখা আছে, যার সাহায্যে ২৪x৭ বাচ্চাটির জীবন সম্প্রচার করা হচ্ছে টিভিতে। বাচ্চাটি ছোট থেকে যুবক হয়ে উঠছে, কিন্তু তাও সে বুঝে উঠতে পারেনি, যে তার চারপাশে এতবড়ো একটা ভাঁওতা চলছে।

চারপাশের সবই কি তাহলে এরকমই কোনো অদৃশ্য কৃত্তিমতা দিয়ে বানানো ! আজো ঘটে গেলো, এরকমই একটা সন্দেহজনক ঘটনা। আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে, পৃথিবীর জন্য অফিসিয়ালি প্রেমের দিবস। ঘরে ফিরে আজ একটা গল্প দেখছিলাম, download করে। সেই গল্পে সকলে একটা অদ্ভুত দুনিয়ায় বাস করে, যেখানে তাদের জীবনধারণ খুব সোজা - হাত আর মুখের অঙ্গভঙ্গিতে সব কিছু হাতের কাছে পাওয়া যায়। বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করার মতো ভঙ্গি করলে ব্রাশ আর মাজন হাতের কাছে এসে যায়। একটা button ক্লিক করে খাবার পাওয়া যায়। মানে আদ্যন্ত যান্ত্রিক দুনিয়া।

তবে ওই যান্ত্রিক দুনিয়াতে একটাই জিনিসের বড় অভাব। অনুভূতির। সমব্যাথী হওয়া, ভালো লাগা, ভালোবাসা - এই ধরণের কোনো অনুভূতিই নেই সে দুনিয়ায়। একটা ছেলে সেই অনুভূতিগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও, সে তার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে যন্ত্রের কাছে। এমনকি যন্ত্রের আধিপত্য এমনই যে, সে নিজের মধ্যে অনুভূতি জিইয়ে রাখার যে প্রবল ইচ্ছে, সেটাকেও বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। সে সবার সামনে এই যান্ত্রিক সিস্টেমের বিরোধিতা করতে, একসময়, গেছিলো। কিন্তু সকলের চাপে, জনগণের মত্ততায় সে সবার মতোই একজন হয়ে যায়।

ওই গল্পের ছেলেটার মতোই আমরা কি এভাবেই আমাদের হারিয়ে ফেলবো? যন্ত্রের শাসনে, জনগণের অনুশাসনে, আমাদের স্বাধীন মূল্যবোধ, ছোটোখাটো চাহিদা, স্বকীয়তা, এগুলো কি শেষ হয়ে যাবে! ভালোবাসা কি শুধু পরিণত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ তাকে যেভাবে প্রকাশ করে, সেই ধরণের কোনো স্থূল অভিব্যক্তিতে? নাকি এসব ভবিষ্যৎ আশঙ্কা নয়, ঘোর বাস্তব! সত্যিই হয়তো এখন পৃথিবীটা কতকটা ওই গল্পের মতোই। আর ওই download-করা গল্পটা আমাকে ওই ছেলেটির প্রতিরূপের মাধ্যমে কোনো ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইলো সেই সত্যিটাকে।

Sunday, February 05, 2017

পরিবেশের পরিণতি - Fate of Environment

এই লেখাটা বেশ পরে লিখবো ভেবেছিলাম, কিন্তু এখনই লিখে ফেলতে হচ্ছে। কিছু এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যে, এ লেখা আর পরে লেখার সুযোগই হয়তো পাবো না।

পেট্রল-ডিজেলের দাম গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার কমেছে। বিশ্বের তেলের বাজার আর দেশের তেলের বাজারেও। এরকমটা আগে খুব একটা দেখা যায়নি। কিন্তু কেন এরকম হল? পৃথিবীর সীমিত তেলের ভান্ডারে তেল তো কমে আসছে, তাহলে দাম কমবে কি করে? অনেকগুলো geo-political কারণ আছে। কিন্তু তার মধ্যেও একটা অন্য রকমের কারণ লুকিয়ে আছে, যেটা বেশ আলাদা। কারণটা একটা নতুন আবিষ্কার। আমরা এতদিন যেভাবে তেল তুলতাম মাটির বা সমুদ্রের নিচে থেকে, তার থেকে একটা অন্য পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। যদিও আসলে এই পদ্ধতি বেশ অনেকদিনই জানা ছিল। কিন্তু এই পদ্ধতিটার খরচ খুব বেশি। তাই এই ধরণের পন্থা অবলম্বন করে তেল তোলা হতো না। কিন্তু তেলের দাম ধীরে ধীরে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে এখন সেই আলাদা ধরণের পদ্ধতিও আমরা afford করতে পারবো।

যে নতুন পদ্ধতির কথা বলছি, তাকে বলা হয় ফ্র্যাকিং (fracking). খুব বিস্তারিতভাবে বলার মতো জ্ঞান বা পরিসর নেই। সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি। কোনো কোনো জায়গায়, মাটির নিচে পাথরের মধ্যে খুব ছোট্ট ছোট্ট কুণ্ডলীতে তেল জমা হয়ে থাকে। এই সব ছোট্ট কুণ্ডলীর তেল খুব সহজে বের করে আনা যায় না। এই তেল বের করে আনার জন্য মাটির নিচে পাইপে করে কিছু তরল পাঠাতে হয়। সেই তরলে থাকে জল আর কিছু রাসায়নিক পদার্থ। এর পরে সেই তেল কুণ্ডলীগুলো থেকে বেরিয়ে আসে। বেশ চাপ দেওয়ার ফলেও এই কাজটি সহজ হয়। মোটের ওপর এটাই পদ্ধতি, YouTube-এ এর থেকে ভালো বিবরণ পেয়ে যাবেন।

ফ্র্যাকিং-এ প্রথমেই যে বিশাল ক্ষতিটা প্রকৃতি সহ্য করে, সেটা জল-সম্পর্কিত। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ফ্র্যাকিং জলকে ভীষণভাবে দূষিত করে তোলে, রাসায়নিক পদার্থগুলোর জন্যে। এ ছাড়াও এই পদ্ধতিতে যেহেতু প্রচুর পরিমান জলের দরকার হয়, তাই আমাদের পানীয় এবং ব্যবহারযোগ্য জলেরও প্রচুর অপচয় হয়।

আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিজ্ঞানীরা ফ্র্যাকিং-কে ভালো চোখে দেখেন না। ফ্র্যাকিং মাটির নিচের পাথরের মাঝের অংশগুলি খালি করে দেয়। ফলে আমাদের থাকার জায়গার নীচটাও অনেকটা ফাঁপা হয়ে পড়ে। আর ফ্র্যাকিং যেহেতু জনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও করা যায়, তাই বসবাসযোগ্য এলাকা ধীরে ধীরে ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। একটা গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, ফ্র্যাকিংয়ের কারণেই আমেরিকার দক্ষিণের অনেক অঞ্চলে গত কয়েক বছরে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে।

এই ফ্র্যাকিং মূলত শুরু হয়েছে আমেরিকায়। আর সে জন্যই গত কয়েক বছরে তেলের দামের এই পতন। কারণ আমেরিকা এখন নিজেই প্রচুর পরিমানে তেল উৎপাদন করতে পারছে। ফ্র্যাকিং সাধারণত করে থাকে Shell-এর মতো বড় বড় তেলের কোম্পনিগুলি। সম্প্রতি তারা একটি নতুন জায়গায় ফ্র্যাকিং শুরু করেছে। যার পাইপলাইন যাবে আমেরিকার নর্থ ডাকোটা বলে একটি রাজ্যের ওপর দিয়ে। কিন্তু সেই অঞ্চলটি আবার নেটিভ আমেরিকানদের বাসভূমি। মানে সেইসব মানুষরা এখানে থাকেন, যারা ব্রিটিশদের আমেরিকা আবিষ্কার করার পূর্ববর্তী সময় থেকেই, এখানে কয়েক বংশ ধরে আছেন। সেসব আদিবাসী মানুষেরা নর্থ ডাকোটায় পাইপলাইনের-এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। অনেক স্বনামধন্য মানুষ, যেমন পিঙ্ক ফ্লয়েডের রজার ওয়াটার্স, তাদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেছিলেন। ফলে এর পর ওবামা-সরকার নর্থ ডাকোটায় পাইপলাইন পাতার অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে।

কিন্তু ট্রাম্প-এর সরকার ক্ষমতায় এসে সেই অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা শুরু করেছেন। প্রাথমিক ছাড়পত্র পাওয়া হয়ে গিয়েছে। বলা যাচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত কি হবে ! কিন্তু এই ছাড়পত্র যদি পাওয়া যায়, আমরা ধ্বংসের পথে আরো এক ধাপ এগোবো। এর মূলত দুটো কারণ, এক এই fossil fuel-এর ব্যবহার আমাদের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করবে। আর সারা পৃথিবীর কাছে বার্তা যাবে, যে আমেরিকা ফ্র্যাকিং করছে, মানে অন্যান্য দেশও এটা করতে পারে। আর দুই, পৃথিবীর আবহাওয়াকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যে কাজগুলো করা হচ্ছিলো, তা ভীষণভাবে আহত হবে। টাকা বোঝে না কে মানুষ, আর কে পৃথিবী। সে শুধু বোঝে যে, তার কাজ বেড়ে চলা। তাতে পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্থ হোক আর না হোক, তার কিছু যায় আসে না।

আমরা ঠিক কতটা পিছিয়ে পড়ছি তা সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্রে লিওনার্ডো ডি ক্যাপ্রিও তুলে ধরেছিলেন। নাম, Before the Flood. দেখে না থাকলে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখার চেষ্টা করুন। প্রথম ক'দিন তথ্যচিত্রটি YouTube-এ বিনামূল্যে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না, তবে তাও YouTube-এ খুঁজলে পাওয়া যাবে। আসলে Before the Flood-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল National Geographic. সেই National Geographic হল Fox Studio-এর একটি অংশ। আর Fox Studio এবং তার মালিক Rupert Murdoch হলেন অন্যতম বড় Climate Change Deniers. মানে এরা মানেন না যে, তেলের যথেচ্ছ ব্যবহার আর মানুষের কার্যকলাপের জন্যই প্রকৃতির বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই এই পুরো ব্যাপারটাতেই থেকে যাচ্ছে অনেক ধোঁয়াশা। কে, কোন কাজ, কেন করছে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। আশা করবো এ ব্যাপারে আমরা সকলে আরো বেশি করে সচেতন থাকতে পারবো। সচেতন থাকতে হবে - কি পড়ছি, কাদের থেকে পড়ছি, এবং আরো কিছু প্রশ্ন মনে নিয়ে। তবে আপাতত ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল নয়।