এখানে একটা Park Street আছে, একটা Esplanade আছে। গঙ্গা নেই, তবে চার্লস নদী আছে। কলকাতার যেমন হাওড়া আছে, বস্টনের তেমনি কেমব্রিজ আছে। তারা চার্লস নদীর দু'পাড়ে দুটো শহর, যমজ নয় কিন্তু খুব কাছের দুটো ভাইয়ের মতো, যেমন হাওড়া-কলকাতা। বঙ্গোপসাগর যেমন কলকাতা থেকে দূরে, সেরকম নয়, তবে শহরের একটা পাশেই অতলান্তিকে ভেসে যাওয়া আছে। কলকাতায় যেমন প্রচুর কলেজ, বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, তেমনি বিশ্বের সেরা কিছু পড়াশোনা আর গবেষণার জায়গা এখানে; Harvard, MIT-এর নাম তো অনেকেরই শোনা।
এই এতগুলো মিল ঠিক কেন ঘটলো, কেন ঘটে যায় এই co-incidence গুলো? যখনই এরকম ঘটে যায়, তখনই দুটো জিনিসের কথা মনে পড়ে: ১) টেলিপ্যাথির কথা, যার ব্যাপারে সোনার কেল্লায় প্রথম শোনা। ২) The Truman Show-এর কথা, যেই ফিল্মটি এক প্রিয় শিক্ষকের পরামর্শে দেখেছিলাম। Truman Show-এর কথাই বেশি মনে পড়ে। সেখানে ছোট্ট থেকে একটা বাচ্চাকে বড় করা হচ্ছে। অথচ সেই বাচ্চাটির চারপাশে কেউই আসল নন। সকলে অভিনয় করে চলেছেন। আর বাচ্চাটিকে যে জায়গায় বড় করা হচ্ছে সেটা একটা TV Show-এর সেট। পুরোটাই বানানো। এবং সেই সেটে লুকোনো ক্যামেরা রাখা আছে, যার সাহায্যে ২৪x৭ বাচ্চাটির জীবন সম্প্রচার করা হচ্ছে টিভিতে। বাচ্চাটি ছোট থেকে যুবক হয়ে উঠছে, কিন্তু তাও সে বুঝে উঠতে পারেনি, যে তার চারপাশে এতবড়ো একটা ভাঁওতা চলছে।
চারপাশের সবই কি তাহলে এরকমই কোনো অদৃশ্য কৃত্তিমতা দিয়ে বানানো ! আজো ঘটে গেলো, এরকমই একটা সন্দেহজনক ঘটনা। আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে, পৃথিবীর জন্য অফিসিয়ালি প্রেমের দিবস। ঘরে ফিরে আজ একটা গল্প দেখছিলাম, download করে। সেই গল্পে সকলে একটা অদ্ভুত দুনিয়ায় বাস করে, যেখানে তাদের জীবনধারণ খুব সোজা - হাত আর মুখের অঙ্গভঙ্গিতে সব কিছু হাতের কাছে পাওয়া যায়। বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করার মতো ভঙ্গি করলে ব্রাশ আর মাজন হাতের কাছে এসে যায়। একটা button ক্লিক করে খাবার পাওয়া যায়। মানে আদ্যন্ত যান্ত্রিক দুনিয়া।
তবে ওই যান্ত্রিক দুনিয়াতে একটাই জিনিসের বড় অভাব। অনুভূতির। সমব্যাথী হওয়া, ভালো লাগা, ভালোবাসা - এই ধরণের কোনো অনুভূতিই নেই সে দুনিয়ায়। একটা ছেলে সেই অনুভূতিগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও, সে তার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে যন্ত্রের কাছে। এমনকি যন্ত্রের আধিপত্য এমনই যে, সে নিজের মধ্যে অনুভূতি জিইয়ে রাখার যে প্রবল ইচ্ছে, সেটাকেও বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। সে সবার সামনে এই যান্ত্রিক সিস্টেমের বিরোধিতা করতে, একসময়, গেছিলো। কিন্তু সকলের চাপে, জনগণের মত্ততায় সে সবার মতোই একজন হয়ে যায়।
ওই গল্পের ছেলেটার মতোই আমরা কি এভাবেই আমাদের হারিয়ে ফেলবো? যন্ত্রের শাসনে, জনগণের অনুশাসনে, আমাদের স্বাধীন মূল্যবোধ, ছোটোখাটো চাহিদা, স্বকীয়তা, এগুলো কি শেষ হয়ে যাবে! ভালোবাসা কি শুধু পরিণত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ তাকে যেভাবে প্রকাশ করে, সেই ধরণের কোনো স্থূল অভিব্যক্তিতে? নাকি এসব ভবিষ্যৎ আশঙ্কা নয়, ঘোর বাস্তব! সত্যিই হয়তো এখন পৃথিবীটা কতকটা ওই গল্পের মতোই। আর ওই download-করা গল্পটা আমাকে ওই ছেলেটির প্রতিরূপের মাধ্যমে কোনো ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইলো সেই সত্যিটাকে।