যারা জানেন না বা miss করে গেছেন, তাদের জন্য দুটো সমান্তরাল ঘটনা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। প্রথম, Uber নামক যে app-টা ব্যবহার করেন আপনারা, সেই Uber কোম্পানির CEO Travis Kalanick গতকাল resign করেছেন। দ্বিতীয়, TVF-নামক একটি বিখ্যাত ভারতীয় মিডিয়া কোম্পানি, যেটি ২৫ লক্ষ YouTube ফলোয়ার নিয়ে ভারতের প্রথমসারির ওয়েব-মিডিয়া চ্যানেল, সেই কোম্পানির CEO-ও কিছুদিন আগে পদত্যাগ করেছেন। দুটি পদত্যাগেরই পিছনে আছে একই ধরণের ঘটনা।
কেন করলেন তারা পদত্যাগ? Susan Fowler নামের একজন IT-কর্মী Uber-এ কাজ করতেন। তিনি গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী নিজের ওয়েবসাইটে একটি বিস্ফোরক লেখা লেখেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন যে, Uber কোম্পানিতে কাজের কালচার খুবই মহিলাবিরুদ্ধ। মানে মহিলাদের সহ্য করতে হয় তাদের বসের চোখরাঙানি। এছাড়াও মহিলাদের casual sexism-এর স্বীকার হতে হয়। এর পরই ভীষণ শোরগোল পড়ে যায় Uber এবং সিলিকন ভ্যালিতে। Susan-এর পরে আরো অন্যান্য মহিলারা (কেউ স্বনামে, কেউ নাম গোপন রেখে) একই অভিযোগ করেন Uber-এর কালচারের বিরুদ্ধে। এমনকি Uber-এর CEO এই কালচারকে nurture করেছেন, সেই অভিযোগ পর্যন্ত ওঠে। শেষ পর্যন্ত, কাল প্রায় ৪ মাস বাদে, Uber-এর CEO Travis পদত্যাগ করলেন।
TVF-এর ঘটনাও অনেকটা এরকমই। মার্চ মাস নাগাদ একটি মেয়ে তাঁর পরিচয় গোপন রেখে TVF-এর CEO অরুনাভ কুমারের দিকে sexual favor চাওয়ার অভিযোগ তোলেন। একটি ব্লগে তিনি তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এরপরে অনেকেই সেই অভিযোগের সমর্থনে এগিয়ে আসেন (স্বনামে এবং নাম গোপন রেখে)। Mumbai-এ FIR হয়, যদিও তার কোনো ফয়সালা হয়নি। কিন্তু অরুনাভ কিছুদিন আগে TVF-এর CEO পদ থেকে সরে গিয়েছেন।
এই দুটি ঘটনাতে যেটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ, সেটা হল ওয়েব মিডিয়ার মাধ্যমে গোপন তথ্য বেরিয়ে আসা এবং তার বিপুল প্রচার পাওয়া। প্রচার পেতে টুইটার এবং ফেসবুক - দুটো মাধ্যমই প্রচুর সাহায্য করেছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, মানুষের হাতে যে কি ভীষণ পরিমান ক্ষমতা এখন রয়েছে - তার একটা আভাস এই দুটো ঘটনা থেকে পাওয়া যায়। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, Uber এখন সারা বিশ্বের অন্যতম highest valuable start-up কোম্পানি। সেই কোম্পানির CEO-কে সরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতেও এখন থাকছে। তাই ইন্টারনেটের এই বিপুল সম্ভাবনা - প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের এক ভীষণ উজ্জ্বল দিক।
কিন্তু এর সাথেই থেকে যাচ্ছে একটি সংশয়ের প্রশ্ন। দুটি ঘটনার কোনোটাতেই, কোনো কোর্টে এই অভিযোগগুলোর বিচার হয়নি। ফলে যা হয়েছে, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা, বিচার, সমালোচনা, এবং কোম্পানির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া - এইসব। তাই বোঝা যাচ্ছে, মানুষের হাতে বিপুল ক্ষমতা আসার ফলে এক বিশাল দায়িত্ত্বও এসে পড়ছে। যদিও এ কিছু নতুন কথা নয়। কিন্তু আবারো মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, আমাদের স্মার্টফোনগুলোর সাথে যতটা ক্ষমতা আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরছি, আমরা যেন তাকে যথাযোগ্য দায়িত্ত্ব নিয়ে ব্যবহার করতে শিখি। নাহলে বিচার কিন্তু বড্ড বেশি একতরফা হতে শুরু করবে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নোট: এই লেখার পিছনের ভাবনা আমার নিজের নয়, বিভিন্ন ওয়েবমিডিয়া থেকে জড়ো করা। ভাষা আর বিস্তৃতি আমার।
No comments:
Post a Comment