শহরে দুটো পরস্পরবিরোধী rally ছিল আজ। এর মধ্যে প্রথম যেটা ডাক দেওয়া হয় সেই rally-টা "Free Speech"-এর জন্য করা হয়েছিল। পরে সেই আপাত "Free Speech"-এর বিপক্ষে একটা counter-protest মার্চের ডাক দেওয়া হয়। "Free Speech" rally-টির উদ্যোক্তারা ছিলেন far right-wing extremist-রা। হ্যাঁ, extremist-দের "free speech" একটু অদ্ভুতই বটে। আর সেই "Free Speech"-এর বিপক্ষের মার্চটা করলেন liberal-activists-রা। মোটামুটি সব শান্ত থাকলেও, সামান্য tension ছিল শহরে। মার্চগুলো হওয়ার সময়ে উত্তেজনা কিছু বাড়ে, কিন্তু খুব বড় কিছু হয়নি, কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু উগ্র দক্ষিনপন্থীদের এই ধরণের সমাবেশ, বস্টনের মতো উদারবাদী শহরে বেশ বেমানান। তাই এই সমাবেশগুলোর পিছনের সামান্য কাহিনী ছোট্ট করে লেখা থাকুক। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টও যখন এই মার্চগুলো নিয়ে tweet করছেন, তখন বিষয়টার বেশ গুরুত্ত্ব আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
অগাস্ট মাসের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা ঘটনা গেছে। তারই প্রলম্বিত অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে, বস্টন শহরের এই সমাবেশগুলি। কিছুদিন আগেই আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যের শার্লটসভিল শহরে জমায়েতের আয়োজন করে কিছু white nationalist-রা। তাঁদের দাবি এই যে, আমেরিকা শুধুমাত্র তাঁদের নিজেদের দেশ; তাই এই দেশের ওপর তাঁদের অধিকার সব থেকে বেশি। অনেকাংশে এই দাবিও করা হয় যে, তাঁরা অন্য জাতিগুলির থেকে মানবিক বৈশিষ্ট্যে উন্নত। সুতরাং, সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি কাজে তাঁদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তাঁদের নিজেদের স্বার্থ সবাগ্রে দেখার পরই, অন্যের স্বার্থের কথা ভাবা উচিত। তারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তাঁদের কিছু অতীত সত্যকে। আমেরিকার কনস্ট্রাকশন খুব গোড়া থেকে গড়ে তুলেছেন, দাসত্ব প্রথার ভিতর দিয়ে আফ্রিকার কালো মানুষেরা, white-nationalism-এ বিশ্বাসীরা এই ব্যাপারটা স্বীকার করতে নারাজ। পরের দিকে ভারত, চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর educated migrant worker-রা এসে যে আমেরিকাকে শিক্ষা এবং প্রযুক্তির দিক থেকেও উৎকর্ষতার শিখরে নিয়ে গেছে, সেই সত্যিটাকেও এনারা স্বীকৃতি দিতে চান না। তাঁদের বক্তব্য, আমেরিকার ভূখণ্ডে তাঁদের স্বার্থ বিগ্নিত হচ্ছে। তাঁরা তাঁদের অধিকার ফেরত চান, এবং সেই অধিকার বলার "free speech"-এর জন্যই তাঁদের rally. অন্য জাতির মানুষদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ঘৃণার প্ল্যাকার্ডও দেখা যাচ্ছে এই rally-গুলোতে, এমনকি Nazi-দের স্বস্তিকা লোগো-ও দেখা গেছে। সকলেই ভীষণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এই rally-গুলোতে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের এভাবে চটে যাওয়ার কারণ কি?
মোটামুটি গত দশক পর্যন্তও এই পরিমান white nationalism দেখা যায়নি, ku klux klan-জাতীয় উগ্র গোষ্ঠীরা থাকলেও প্রকাশ্যে বড় সমাবেশ করতো না কেউই। কিন্তু গত দশকে অন্যতম বড় যে ঘটনাটা ঘটেছে, তা থেকে আমেরিকা এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০০৮-এর গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের পর থেকে আমেরিকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমেছে। আরো বেশি লোক মাইনে না-বাড়ার ফলে, ঘরবাড়ির লোন দিতে গিয়ে, health care insurance-এর অভাবে গরিব হয়েছেন। অনেক লোক যে চাকরি হারিয়েছিলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। নতুন যেসব চাকরি তৈরী হচ্ছে, তা বেশিরভাগই ইনফরমেশান টেকনোলজি সেক্টরে। উপরন্তু সেই সব চাকরি আরো বেশি করে চলে গেছে ব্রাজিল, ভারত আর চীনে। যেসব চাকরি এখনো এখানে আছে, তাঁর একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে migrant worker, মানে আমার মতো লোকেদের কাছে। আমেরিকানরা সেই চাকরি পেতে পারছেন না, কারণ সেই চাকরি করতে দরকার প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষা। আমেরিকানদের চিরকাল এটাই মনে করানো হয়েছে, তাঁদের যেটা পছন্দ সেরকমই শিক্ষা গ্রহন করা উচিত; তাই তারা অনেকেই liberal art-জাতীয় বিষয় পড়তে আগ্রহী হয়েছেন। অথচ তারা যে সমাজে বাস করছেন, সেই high-tech society-র চাকুরিগত কি চাহিদা, সে সম্পর্কে তারা উদাসীন থেকেছেন। ফলে তাঁরা সঠিক টেকনিক্যাল শিক্ষা পাননি। আর এখন যখন সেই শিক্ষা তাঁরা পেতে চাইছেন, তখন আমেরিকার প্রায় সর্বত্র কলেজের টিউশন ফি এতটাই বেশি হয়ে গেছে, যে তারা সেটা afford-ই করতে পারছেন না। সুতরাং, অর্থনীতির কিছু সিদ্ধান্ত সাধারণ সাদা চামড়ার শান্তিপ্রিয় মানুষদেরও কোনঠাসা করে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বারাক ওবামা এখন নেলসন ম্যান্ডেলাকে কোট করতে বাধ্য হচ্ছেন, "No one is born hating another person because of the color of his skin or his background or his religion."
এইরকম একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে মানুষ অদৃষ্টের কাছে খুব সহজেই আশ্রয় নেন। এখনই তাঁদেরকে বোঝানো সহজ হয় যে, এই সাদা চামড়ার মানুষদের নাকি আলাদা করে সংগঠিত হওয়ার দরকার হয়ে পড়েছে। তা না করলে, তাঁদের অধিকার চলে যাচ্ছে, immigrant, কালো মানুষ বা অন্য কোনো জাতির কাছে। সেই কাজটিই খুব সুন্দর করে পলিটিক্যালি সমাপতিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে। আর তাই এখানে বেড়ে চলেছে white nationalism-এর বহিঃপ্রকাশ। আরো বেশি মানুষ অসহায় হয়ে, এই অজ্ঞানতার অন্ধকারের দিকে ঝুঁকছেন। বস্টনের মতো শহর, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ব্যাকগ্রউন্ডের অসংখ্য ছাত্র এসে পড়াশোনা করে, সেখানেও দেখা যাচ্ছে extremist-দের জমায়েত। অসহায়তাটা এখানেই যে, শিক্ষার অন্যতম concentration যে শহরে, সেখানেও অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে। আসল সমস্যাটা যে অর্থনীতিগত, কিছু মানুষের disastrous economic decision-এর জন্য যে মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, চাকরি পাচ্ছেন না - এই কথাটা এতো শিক্ষার ভিতরেও মানুষকে বোঝানো যায়নি। উন্নত দেশের নাগরিক হয়েও, এখানকার মানুষরা চামড়ার রং, ধর্ম, জন্মস্থানের ভিত্তিতে একে ওপরের দূরে সরে যাচ্ছেন, এবং সেই দূরত্ব রূপান্তরিত হচ্ছে এক কাল্পনিক ঘৃনায়। সমগ্র বর্তমান পৃথিবীটা সেই কাল্পনিক ঘৃণাগুলোরই নামান্তরে প্রতিফলন।
No comments:
Post a Comment