Wednesday, November 30, 2016

অন্য আমেরিকা - A different USA

আমেরিকায় কেউ এলে, বরফের ছবি, সুন্দর ন্যাশনাল পার্কের ছবি, বিদেশের রকমারি খাবারের কথা - এসব দেখতে শুনতে পেতাম বহুকাল ধরে। যদিও ছোটবেলায় এসব জানতাম না, কারণ চেনা-পরিচিত কেউ বিদেশে থাকত না। কিন্তু শিবপুরের মতো কলেজে ভাগ্যের জেরে পড়তে আসায় এবং ওখানকার সিনিয়রদের সুবাদে, আমেরিকার এই ঝাঁ-চকচকে দিকটার সাথে পরিচয় হতে শুরু করে। তখন ভাবতাম, তাহলে ওখানে বেশিরভাগ মানুষই নিশ্চই দুঃখে থাকে না। আমার চেনাপরিচিত বামপন্থী লোকজনদের জিজ্ঞেস করলে বলতো, "ওরা একটা ভোগবাদের দুনিয়া তৈরি ক'রে, মানুষকে আসল সমস্যাগুলো থেকে ভুলিয়ে রেখেছে।" এই অতিসাধারণ তত্ত্ব-টা মেনে নিতে সামান্য অসুবিধে হতো।

পরের দিকে যখন Occupy Wall Street আন্দোলন শুরু হল, তখনও আমার চেনা পরিচিত ফেসবুক দুনিয়ায়, তার কোনো রেশ দেখিনি। মনে হতো, তাহলে এই আন্দোলনগুলো করছে কে? প্রকৃতি যদি সেখানে তার শোভা মেলে দাঁড়িয়েও থাকে, লাস্যময়ী দুনিয়া যদি তার সমস্ত রূপ মেলেও দেয়, এই আক্রোশে থাকা মানুষগুলো কারা? আমার চেনাপরিচিত মানুষদের মধ্যে তাদেরকে কেন দেখতে পাচ্ছিনা? সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনি, তবে এখানে এসে সেই মানুষগুলোকে খুঁজে পেতে শুরু করেছি, যারা আক্রান্ত। আজ শুরু করা যাক তাদের কিছু কথা বলার।

আমরা যখন ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে বলছি যে, বেশিরভাগ কাজের জায়গায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংগঠন বন্ধ করে দেওয়াই ভালো, তখন এখানে কিছুদিন আগে একটা বিচার দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তারা বলে যে, Graduate Students-রা এবার থেকে সংগঠন করতে পারবে, যদি বেশিরভাগ ছাত্রেরই তাই মতামত হয়। এমনকি আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীরাও সেই সংগঠনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সেই প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে আমরা দ্বিতীয়বার মিটিং করি বস্টন ইউনিভার্সিটিতে। আমাদের বক্তব্য, আমরা Graduate Students-রা, একটা ইউনিভার্সিটির রিসার্চ, টিচিং থেকে শুরু করে গ্রেডিং পর্যন্ত করি, কিন্তু তার বদলে ইউনিভার্সিটির বড় বড় সিদ্ধান্তে, অনেক সময়েই আমাদের কোনো ভূমিকা থাকেনা। এছাড়াও STEM, মানে Science, Technology, Engineering, Math, -ছাড়া অন্য ডিপার্টমেন্ট গুলোতে মাইনে খুব একটা বেশি না। এর ফলে তাদের এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে অসুবিধে হতে থাকে। এই সব আরো কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে আমাদের ইউনিয়ন করার প্রস্তুতি চলছে।

অনেক বাধা আছে, অনেক রেস্ট্রিকশন আছে, কিন্তু বক্তব্য সেটা নয়। বক্তব্য হল, এই যে চোরা স্রোতটা বয়ে যায় যে কোনো দেশেই, সেটার কথাও সকলের জানা দরকার। কোনো দেশ তো একদম পারফেক্ট নয়ই। এখানেও রেললাইনে দেখেছি যথাসাধ্য maintenance না করার চিহ্ন। প্রচুর মানুষ ঘরছাড়া হয়ে ঘুরে বেড়ায়, ভিক্ষা করে এবং মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে যায়। Consumer-দের স্বাধীনতা এখন Corporate-দের স্বাধীনতায় পরিণত। কিন্তু আমেরিকাতে যে লোকে এখন অন্য ভাবে ভাবছে, (এবং ভীষণ বেশি করে ভাবছে) সেই কথাটাও তো জানা জরুরি, বিশেষ করে আমার ঘরের দেশের মানুষদের।

তবে ভারতে শুধু নয়, সারা বিশ্বের নিরিখেই আমরা এক খুব অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এতদিনকার সিস্টেমের হর্তাকর্তারা বুঝে পাচ্ছেন না, আমাদের সিস্টেমের এই দুর্দশার পরবর্তী সমাধানটা ঠিক কি হতে পারে। তারা ভীষণ confused. সেই সুযোগে, উঠে আসছে, ট্রাম্প, brexit এবং ৫৬ ইঞ্চি। জানি ৫৬ ইঞ্চিকে এই দলে দেখলে অনেকে রেগে যান, কিন্তু আমি মানুষের উদারমনস্ক, নিরপেক্ষ, objective চিন্তা-ভাবনার উপর বিশ্বাস রাখলাম। তাছাড়াও সারা বিশ্বকে একটা প্যাটার্নের মধ্যে বাঁধার প্রয়াসের মধ্যেও ওটা পড়ে। তাই ৫৬ ইঞ্চির উত্থান, সেই প্যাটার্নের একটা অংশ বলেই মনে করি। সারা বিশ্বের সেই ভয়ঙ্করতম প্যাটার্নের মধ্যেও, ওই যে কিছু লোক চেষ্টা করছেন, একটু অন্য ভাবে ভাবার, তারাই কিন্তু আপাতত মানবজাতির আশা। আর এই আশার কথা চিরকাল বলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। The Shawshank Redemption-এ তো Andy বলেছিল, "Hope is a good thing, maybe the best of things, and no good thing ever dies." এবার মানুষের, মানে আমাদের সবার উপর নির্ভর করছে, আপনারা সেই আশার অংশীদার হবেন, নতুন ভাবনার অংশীদার হবেন, নাকি গতানুগতিকতার !

শেষ করবো, আপনাদের এতটা অব্দি পড়া হলে কি মনে হতে পারে - সেটা দিয়েই। একবার আমার সাথে এক বামপন্থী মনোভাবাপন্ন প্রফেসরের কথা হচ্ছিলো। তিনি তখন বলছিলেন, কিভাবে IITKgp-তে তাঁর সময়ে, তাঁর অনেক বন্ধু ট্রটস্কি-কে সমর্থন করতেন। তো আমার এক জায়গায় প্রশ্ন ছিল, এই বিশাল বিশ্বে আমি একটা ক্ষুদ্র মানুষ হয়ে কি-ই বা করতে পারি, নেতা হওয়া তো আমাদের কাজ নয়। উনি বলেছিলেন, যে মনোভাবটা রেখেছো, শুধু সেটা রেখে দিতে পারো, ওটুকুই তোমার কাজ। সেটুকু করতে গিয়ে, বাকি যদি আর কিছু হয়, তো হবে, কিন্তু সেটা তোমার হাতে নয়। আমাদের মতো মানুষেরা এটুকুই করতে পারি। ওনার সেই কথার সূত্র ধরেই এখন বলবো এবং পরেও হয়তো বারবারই বলবো, নিজের মনোভাবটা দেখুন, আর সেই মনের ভাবনা দিয়ে কিসের অংশীদার হবেন সেটা ভাবার চেষ্টা করুন। এরকম এক-এক জনের চেষ্টাতেই তো সংখ্যা বাড়ে, মানুষ বাড়ে। আর Bernie Sanders-ও বলেন, "*We* all have the power to make history.", হ্যাঁ, "মানুষই ইতিহাস রচনা করে।" এরকম যদি সকলেই মনে করতে থাকে, তাহলেই হয়তো ভবিষ্যৎটা আমাদের হাতে আসবে, নচেৎ গোলাপি মানুষ আর ৫৬ ইঞ্চি !

Saturday, November 26, 2016

সাধারণের অর্থনীতিতে নাক গলানো - Interfering into Economics by Public

কিছুদিন এই demonetization-এর জেরে দেখবেন অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে, সবাই কি economics-এ পন্ডিত হয়ে গেলো? যে সবাই নিজের মতামত দিচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু কথা বলা দরকার।

বেশ করেছেন মতামত দিয়েছেন, এবং আরো বেশি বেশি করে মতামত তৈরি করুন আর দিন। Economics এমন একটি সাবজেক্ট যেটি পুরোপুরি বিজ্ঞান নয়। Economics-এর যে ভিত্তিগুলো আছে সেগুলো অনেক assumption-এর ওপর base করে তৈরি করা। মানুষের আচার আচরণ চিন্তা ভাবনা এসবকে অঙ্কের ভাষায় বাঁধতে চাওয়ার চেষ্টার নামই, খুব সহজ ভাষায়, economics. আর সেই জন্যই Economics-এর পন্ডিতরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে কখনো কিছু বলতে পারেন না। চেষ্টা করেন একটা কাছাকাছি prediction দেওয়ার।

সেই prediction সম্পর্কে যদি আপনার কোনো মতামত থাকে, সেটাও না বলার কিছু নেই, কারণ মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে আপনার আলাদা কোনো ধারণা থাকতেই পারে। আর সেই ধারণা কোনো mathematical model বা economist-এর চিন্তার সাথে না-ই মিলতে পারে। তা বলে আপনার ধারণা তাতে ছোট হয়ে যায়না। আপনি কোনো বিজ্ঞানকে challenge করছেন না, human behavior-কে বিশ্লেষণ করছেন। একজন মানুষ হিসেবেই সেটা আপনার স্বভাববশত আসতেই পারে।

আপনি যদি আমাকে computer science-এর যে কোনো বিষয়ে random বলেন, আমি হয়তো মানবো না। আপনাকে সঠিকটা ধরিয়ে দেব। কিন্ত যদি Artificial Intelligence (AI) নিয়ে কিছু বলতে আসেন, অবশ্যই শুনবো। কারণ এর মূলেও চলে আসছে, human behavior। একটি self-driving car, যে কিনা আগে থেকে জানে এবং বুঝতে পারছে, যে তার একটি accident হতে চলেছে, সামনে রাস্তায় হেঁটে যাওয়া একটি বাচ্চাকে সে কিছুক্ষনের মধ্যে পিষে দেবে। অথচ সামনের বাচ্চাটাকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে গাড়িতে যারা বসে আছে, তারা মারা যেতে পারে। এমতবস্থায়, গাড়ির AI machine-এর কি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত? কাকে বাঁচানো উচিত? গাড়ির সওয়ারীদেরকে নাকি সামনের বাচ্চাটাকে?এ বিষয়ে শুধু computer scientist-দের মতামত নয়, সাধারণ মানুষের মতামতও important.

তাই ভাবুন, প্রশ্ন করুন, এবং নির্দ্বিধায় করুন। কেউ কেউ চায় না আপনারা সেটা করুন, বেশিরভাগই নিজেরা প্রশ্ন করতে পারেনা বলেই চায় না। নিজেকে সেই দলে ফেলবেন না।

Sunday, November 20, 2016

মনখারাপের রংগুলি - Colors of Melancholia

শেষবার যখন বাড়ি ফিরেছিলাম, এক বন্ধু এক আড্ডায় বলেছিলো যে ফেসবুকটা হল এমন একটা জায়গা যেখানে সবাই তাদের জীবন কতটা ভালো সেটা প্রমান করতে ব্যস্ত। তখনই মনে হয়েছিল, সত্যিই তো, আমরা কে-ই বা আমাদের জীবনের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরি! তুলে না ধরার অনেক কারণের মধ্যে প্রধান হল, করলেই তো অন্য লোকে স্টিরিওটাইপ এবং judge করতে শুরু করবে। সেই জন্য বেশিরভাগ মানুষই খারাপ দিকের কথা share করে থাকেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে হল, মানুষ তো তার স্বভাব-বশতই judgemental, তা আমি যা-ই করি না কেন! তাই ভাবলাম খারাপ দিকগুলো নিয়েও কিছু লেখা এখানে থাকুক। নিজের কাছে যেগুলো আছে, তার মধ্যে থেকেই কিছু কিছু। লেখাগুলোর নাম হোক, মনখারাপের রংগুলি।

পশ্চিমবঙ্গের শীতকালের রাতের একটা অদ্ভুত মায়াবী রূপ আছে। চারদিক ভীষণ শান্ত হয়ে যায়। হয়তো খুব দূরে হঠাৎ একটা ট্রেন বা মালগাড়ি চলে যাওয়ার আওয়াজ ভেসে আসে। তাছাড়া বাকি চরাচর জুড়ে এক বহুকাঙ্খিত প্রশান্তি। এতো ডামাঢোল, এতো অসুবিধে, এতো অস্থিরতা - এসব পেরিয়ে এসেও এই আশ্চর্য শান্তি মনে লেগে থাকে। জানিনা বাংলা ছাড়া আর কোথায় কোথায় এই শান্তি থাকে, তবে বস্টনের রাতে থাকে। এডমন্টনেও থাকতো। হয়তো এই শান্তি আসলে রাতের অন্ধকারে আমাদের মনে এসেই ধরা দেয়, কোনো স্থানের তোয়াক্কা না করে! আবার এই শান্তির সাথে পুরোনো কথা, মনখারাপ আর নস্টালজিয়া একসাথে আসে, এ যেন সেই ছোটবেলার এক টাকার চকোলেটের সাথে পাওয়া চরকিটা - যদিও দ্বিতীয়টা ফ্রিতে পাওয়া কিন্তু দুটোই সমান দামি।

সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মনখারাপের রংগুলোতে আজ প্রথম ছোপ পড়ুক কলেজের।এখন স্থানীয় সময়ে যটা বাজছে, এই রকম গভীর রাতগুলোতে কলেজে কি হতো তার কথা বলা যাক। যে রেসিডেন্সিয়াল হোস্টেলে আমরা থাকতাম, সেই "ম্যাকডোনাল্ডস হল্"-এর সুপার উইং-এ ছিল আমার রুম। আমার রুমের দরজা বেশ রাত অব্দি খোলা থাকতো। তখন কেউ হয়তো আশেপাশের কোনো রুম থেকে আসতো আমার কাছে, হন্তদন্ত হয়ে। এসে বলতে শুরু করলো, "সোহম, সব শেষ, এভাবে পারা যায়না। আমি এভাবে বেশিদিন টানতে পারছিনা, আজ সব শেষ করে দিলাম, একদম final break-up." এবং তার পরেও কিছু কথা এই নিয়ে। অগভীর মন নিয়ে গভীর জীবনবোধ চর্চা করার চেষ্টা চলত।

সেই ছেলে চলে যাওয়ার পর হয়তো এলো আর একজন কেউ। যে হয়তো কলেজের অন্য সব রেসিডেন্সিয়াল হলগুলো ঘুরে এসেছে। তার কাছে অন্য লোকেদের খবর থাকতো, সেগুলো নিয়ে কথাবার্তা শুরু হতো। যাদের যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে তাদের ফেসবুক দেখা থেকে শুরু করে কোনো সিনিয়রের লিংকড-ইন অব্দি দেখে ক্লান্ত হয়ে, সে চলে যেত। তার পরেই হয়তো আবার আগের ছেলেটি ফিরে আসতো, তবে এবার ধীরে ধীরে। তার এবার বক্তব্য, "জানিস মেয়েটা ভালোই, আসলে ওর আগের জীবনের এতো কষ্ট, তাই কখন কি করে, ঠিক থাকে না, সব মিটিয়ে নিলাম বুঝলি।"

এভাবে আধ-ঘন্টার ব্যবধানে মানুষের জীবন পরিবর্তন হতে দেখা চলতে থাকতো। কেউ হয়তো রাতে এসে দুটো গান গেয়ে গেলো। কারো আবার রাতে নাচতে ইচ্ছে করেছে বলে, কোনো অবক্ষয়ী বঙ্গ-মানসিকতার গান খুব জোরে স্পিকারে চালিয়ে, তারা নাচের মাধ্যমে শরীরের কিছু মেদ ঝরিয়ে গেলো। কোনো সিনিয়র এসে হয়তো আবার তার নতুন কবিতা শুনিয়ে গেলো, কিন্তু সেই কবিতার ভাষার সাথে পরমুহূর্তেই তার গালাগালির ভাষাকে মেলানো যেত না।

তবে এ শুধু আমার নয়, বছরের পর বছর, এভাবেই সব রেসিডেন্সিয়াল হোস্টেলের কোনো না কোনো উইং-এ এরই রকমফের হয়ে চলেছে। কারোর না কারোর দরজা এভাবেই এখনো খোলা আছে, আজ থেকে বহুবছর আগেও যেমন ছিল, আবার পরেও যেমন থাকবে। এখনও এখানে আমার নিজের একলা ঘরের দরজা রাতের দিকে খোলাই রাখি। এখানেও থাকে অন্য রুমমেটরা, আমার সাথে পাশের অন্য ঘরগুলোতে। শুধু এখন আর কেউ তাদের জীবন নিয়ে আমার দরজার এপারে আসে না। তাদের সাথে হয়তো এখন ফিফা খেলা হয় আজকালকার X-Box-এ। তবে সত্যিটা তো এটাই যে, আমাদের সবার জীবনেই মাঝে কেটে গেছে বেশ কতগুলো বছর। সবার জীবনের চারিদিকেই হয়তো এসে গেছে কতগুলো স্তর, সেগুলো নিয়ে বোধ আর নাড়াচাড়া না করাই ভালো। তাদের কথা, আমার কথা যে যার ঘরের দেওয়ালে ধাক্কা খায় আর অবশেষে মিলিয়ে যায়। যেভাবে আমরাও মিলিয়ে যাবো একদিন...

Wednesday, November 09, 2016

তুই আর হিমালয় - You and the Himalaya

Boston, 09-Nov-2016, 08:56 PM

তুইও জানিস, আমিও জানি
সময় ঠিক কতখানি,
মানুষ ঠিকই সুযোগ বুঝে চলে যায়।
আর পাঁচটা ব্রেক-আপে,
যেমন করে মনখারাপে,
তুইও ভাবিস, আমি তেমন অসহায়।

দামি গিটার, সস্তা গলা,
খুশি করতেই ভালো বলা,
এমন করে কটাই বা দিন চালাবি তুই!
আমার চিংড়ি-আলু-পেঁয়াজ,
তোর আরো গম্ভীর কাজ,
Java-তে CPU লাগে সবটুকুই।

তোর অটো স্বপ্ন-নীল,
পদ্যেতে নেই অন্ত্যমিল,
আমার এখনো ছড়া কাটতেই ভাল্লাগে।
শিল্পীরা সব গান পাঠায়,
তোকেই শুধু শোনাতে চায়,
YouTube-এই আমার সারা রাত জাগে।

কবিতাগুলো যেমন করে
ভেসে গেছিলো সুর না ধরে,
তেমনি করেই তোরও জীবন গতিময়।
বন্ধুত্ব বন্ধই রাখ,
আশা করি সুখেই থাক,
তুই, কৃত্তিমতা আর হিমালয়।

ট্রাম্পের জয় - একটি অন্য দৃষ্টিভঙ্গি - Trump's Win - A different perspective

খুব ইচ্ছে করছিল, "পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়"-জাতীয় কথা লিখে দিতে বা Bernie Sanders-এর একটা মুচকি হাসির ছবি share করে দিতে। কারণ বেশ ওটুকু করলেই চলত এই election result-এর জন্য। কিন্তু কিছু কথা না জানালে এবং সবথেকে বড় ব্যাপার, কিছু কথা গ্রন্থিত করে না রাখলে, সেটা আজকের সময়ের প্রতি অন্যায় হবে। বড় লেখা, ইচ্ছে থাকলে আর সময় না থাকলে, "save" বলে একটি feature দেয় facebook, প্রত্যেক পোস্ট-এর Top-right corner-এ।

একদম প্রথমেই বলতে হয়, কোনো দেশে থেকে সে দেশকে চেনা আর globalization-এর যুগে সেই দেশের বাইরে বসে সে দেশকে চেনার মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে - সেই দেশের মানুষের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া, যেটা শুধুমাত্র সে দেশে বসেই পাওয়া সম্ভব।

আমেরিকান একটি culture আছে, তা হলো খুব private circle ছাড়া রাজনীতি নিয়ে আলোচনা না করা। অনেকদিনের একটি silent rule বলা যেতে পারে। কিন্তু এখানে এসে থেকেই বুঝতে পেরেছি, মানুষ সেই tradition ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন। obviously, আমি দেশের অন্যান্য জায়গার মানুষের সাথে কথা বলিনি। কিন্তু Boston-এ, মানুষের মধ্যে এই বাঁধন ভাঙার প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। সেটা কোনো social science-এর teacher-ই হোক, বা কোনো furniture দোকানের কর্মী। সকলে রাজনৈতিক ভাবে সচেতন শুধু নয়, তাদের মতামত openly বলতেও দ্বিধা করছেন না। এই ধরণের রাজনৈতিক সচেতনতা একটা সমাজের পক্ষে ভালো লক্ষণ। কিন্তু সেই সমাজকে অন্তত তাদের উপযুক্ত leader-কে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

আমরা বাইরে থেকে বলে দিতে পারি, "A nation gets the leader it deserves". হ্যাঁ, অবশ্যই তাই। কিন্তু এই দেশ আজ যেটা পাচ্ছে, সেটা তাদের এখনকার choice-এর ফল তো নয়। এখনকার তাবড় তাবড় মানুষ হয়তো Donald Trump-এর মত মানুষকে চাননি, কিন্তু তাদের কাছে establishment-কে challenge জানানোর মতো আর কাউকে দেওয়াই তো হলো না। তাহলে তারা কি করবেন, তারা তো নিজেদের এই শোচনীয় অবস্থায় পড়ে থাকতে পারেন না, শুধু এটা ভেবে যে বাকি পৃথিবীর কি হয়ে যাবে যদি Trump-এর মত কেউ ক্ষমতায় আসেন। তাদের তো নিজেদের জীবনকে উন্নত করার চেষ্টাটা চালাতে হবে। তারা সেই খড়-কুঁটো আঁকড়ে ধরেছেন।

কিন্তু এখানে এটা তো পরিষ্কার যে কি বিশাল সংখ্যক মানুষ বলছেন যে, না আমরা এই establishment-এর বিরুদ্ধে। এভাবে আমাদের উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না। তাই দুই পার্টির দুটি candidate-এর মধ্যে যে ব্যক্তি, standard rule-গুলির ওপর সবথেকে বেশি আঘাত করছে, তাকেই আমরা প্রাধান্য দেব। আমেরিকানরা কিন্তু একজন world-leader choose করছেন না। বেছে নিচ্ছেন নিজেদের বাঁচার উপায়, নিজেদের দেশের রাষ্ট্রপতি।

কিন্তু কিভাবে এলো এই সময়? খুব সহজ ভাষায় বলি, ছোট্ট করে। 1980-90, আমাদের সারা পৃথিবীর সামনে খুলে গেল উদারবাদের নয়া দিশা। ভারতের মতো দেশগুলিতে নতুন upscale jobs। আমেরিকানরা সেই নীতি সমর্থন করলেন। ব্রিটেনেও তাই হলো। ভারত কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল। কিন্তু আমাদের system, unforunately যে একটি zero-sum-game, মানে কেউ এগোলো তো কাউকে পিছাতে হবে। আমেরিকানরা সেই সময় থেকে কাজ হারাতে থাকেন। তাদের salary সেই সময় থেকে stagnant। সুতরাং সেই ভুলের দাম তো তাদের দিতেই হবে, যে তারা তাদের সরকারের মাধ্যমে সেই যুগে তাদের কাজগুলোকে কম দামে developing world-এ পাচার করে দিয়েছিল আর, company গুলোকে মুনাফার সুযোগ করে দিলো। সেই দাম তারা এভাবেই দিলেন।

কিন্তু একটু ভাবুন, কি প্রবল সম্ভাবনার কথা বলে যাচ্ছে এই সব election-গুলো। মানুষ তারস্বরে বলছে, আমরা এই সিস্টেমের প্রতি আর বিশ্বাস রাখতে পারছিনা, এর জন্য তারা যে কোনো এক extreme প্রান্তে চলে যেতেও প্রস্তুত। ভারতের মানুষের কাছে শুধুই BJP as the choice, মানুষ বললেন, তাই সই, যতই আমাদের প্রধানমন্ত্রী আগে যা-ই করে থাকুন। গ্রিসে মানুষ আবার বেছে নিলেন বেশি বামপন্থী একটি দলকে, তাদের কঠিন সময়ে। স্পেন-এ একটি far-right party অনেক বেশি seat পেল, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও সেই extremism-এর ছায়া। আমেরিকাও সেই একই global-trend থেকে আলাদা নয়।

শেষ করবো আর কয়েকটা কথা দিয়ে, 1930-এ একটি বড়োসড়ো financial depression হয়েছিল এই আমেরিকায়। আজকের 2008-এর থেকেও অনেক বড়। সেই সময় এখানকার communist, socialist পার্টিগুলো খুব পপুলার হয়ে গেছিল। trade union আন্দোলনও জোরকদমে চলে। এইসব তখনকার বড়লোকেরা একদমই ভালো চোখে দেখেননি। communist, socialist সহ সকলকে ban করা হয় রাশিয়ার সাথে connection আছে, সেই অভিযোগে। আর এখন কিছুদিন আগে, একজন নিজেই claim করা democratic socialist, প্রায় presidential candidate হয়ে যাচ্ছিলেন। এই পরিবর্তন কিন্তু হচ্ছে, এবং তা হচ্ছে, এতদিন ধরে communist জুজু দেখানোর পরেও।

এখানে কিছুদিন আগে Harvard University-তে একটি কর্মী আন্দোলনে কর্মীরা তাদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন চালিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন।
আমি সেদিন train-এ করে কলেজ যাচ্ছিলাম। দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ শুনলাম দূরে দুটি White ছেলের কথোপকথনে "Communism" কথাটা উঠে আসছে। লেনিন বলেছিলেন, একটি পার্টির মাধ্যমে আমরা হয়তো পৌঁছে যাবো utopian সমাজের লক্ষ্যে, কিন্তু মানুষ যদি তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হন, সেটুকু খুব খুব জরুরি। সেটা কিন্তু মানুষকে হতেই হচ্ছে, বিলাসের মায়াজাল ছাড়িয়েও। আমার কাছে কোনো পার্টি, বা কারো জয়ের থেকেও, system-কে আঘাত করাটা বেশি আশাজনক।

Sunday, November 06, 2016

কিছু সিনেমা আর কলেজ - Some movies and college

কিছুদিন বাদেই Rock On ২ release করবে। এই প্রসঙ্গে পুরোনো কিছু কথা মনে পড়ে গেলো।

প্রথম Rock On যখন release করে, তখন আমরা সবে কলেজে ঢুকছি। হিন্দি সিনেমাতে এ ধরণের music আগে প্রায় হয়নি। তাছাড়া তখন বাংলায় ব্যান্ড culture খুব পপুলার। ফলে ক্যাকটাস নিয়ে এরকম একটা ফিল্ম খুব আলোড়ন ফেলেছিলো। বেশ জমিয়ে দেখেছিলাম। সেটাই সম্ভবত কলেজের বন্ধুদের সাথে প্রথম সিনেমা। লিপিতে দেখেছিলাম।
Jaane Tu... Ya Jaane Na-ও কতকটা সেই কলেজবেলারই মুভি। ওটাও কলেজের মানুষজনদের সম্পর্ক, আর বন্ধুত্ব, প্রেম এসব গোছের ভালো সিনেমা। সেকালে সেটাই বেশ ভালো লেগেছিলো।

এরপরে ২০০৯, দুটো ফিল্ম, যেটা long-standing প্রভাব ফেলে গেলো। প্রথমে, সেই ফিল্মটি যেটি তখনকার সদ্য জেগে ওঠা ইন্টারনেট আর SMS-pack-এর যুগে just বাইবেল ছিল। সেই যে "অন্তহীন" অপেক্ষার শুরু, এর শেষ বোধ হয় আর নেই। এখনো বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে সেই ভাষায় কথাবার্তা চলে।

দ্বিতীয় সিনেমাটি অবশ্যই 3 idiots. ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নিয়ে এরকম relate করার মতো সিনেমা, তখন দেখতে পেরে দারুন লেগেছিলো।

২০১০, আমার এখন অব্দি জীবনের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার শুরুর বছর। তার একটা, একটি বাংলা ছবি নিয়ে। ছবিটা অটোগ্রাফ, তখন ভালো লেগেছিলো, এখন আর লাগে না, তবে সৃজিতের ভালো যে মাত্র ২-৩টে কাজ আছে, তার একটা। তবে যেটা আমার জন্য significant, সেটা ওই ছবির দুটো গান দিয়ে অনুপমের প্রবেশ, আমার জগতে। তারপর থেকে সে জুড়েই আছে। সেই পুজোতে প্রচুর শুনেছিলাম।

২০১১-য় কলেজ নিয়ে না হলেও বন্ধুবান্ধব নিয়ে Zindegi Na Milegi Dubara, কলেজের জন্যই মনে থাকবে। সম্ভবত মেনকাতে দেখেছিলাম, Souvik-এর সাথে। বন্ধুত্ব, জীবনের মানে, আর জাভেদ আখতারের শায়েরি মিলিয়ে বেশ ছাপ ফেলেছিলো।

২০১২-য় আমরা কলেজ ছেড়ে দি। কলেজ ছাড়ার কিছু আগেই কলেজের কাছে PVR হয়, সেখানে দেখা কলেজের শেষ সিনেমা, Kahani. এবং আমি কিন্তু শেষটা guess করতে পারিনি, তবে যে গ্রুপটা গেছিলো, তার কেউ একজন পেরেছিলো।

এরকমই কলেজের প্রতিটা বছরের সাথেই আরো কত কত সিনেমা জড়িয়ে আছে, যেভাবে সবার জীবনেই থাকে। আবার moment-এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কিছু কিছু গান। সেসব নিয়ে আবার কোনো একদিন লেখা যাবে...