Friday, March 24, 2017

ইন্টেলেকচুয়াল - Intellectual (খুচরো দর্শন)

Boston, 24-Mar-2017, 10:38 PM

দিন গেলে ভাই তোমার জীবন
ছাপোষা চার দেওয়াল।
আমার ভোরে দুধ-চা-ও নাকি,
ইন্টেলেকচুয়াল।

তোমার সমাজ, আমরা বাদ,
সমাজবাদী তত্ত্ব।
দাস ক্যাপিটাল আমার ঘরে -
দেখনদারি মস্ত।

তোমার কোনো বারণ নেই,
পৈতে-আংটি পড়ায়।
আমিই খালি কনভিকটেড,
বিমানযাত্রা করায়।

কিওরোস্তামী মানুষ-ঘেঁষা,
চেরির মতো স্বাদ।
আমি শুধু মজিদ দেখলে -
আভিজাত্যবাদ।

তোমার ফোনে ইংরেজি গান -
ট্রেন্ডি নাকি খুব।
আমার কোহেন গাইতে এলে -
বুদ্ধিজীবী ভূত।

তোমার কবি ছন্দ ছাড়া -
রিয়েলিটির পাতা।
আমার খাতা, দু'কলমেই
এলিট এবং সস্তা।

তোমার হয়তো সাউথ পয়েন্ট
কিংবা কোনো সেন্ট।
বাংলা মিডিয়াম নিয়ে,
বক্র বাক্যভেদ।

এসব করে তুমি যখন,
নিজের কাছেই গোলাম,
আমি তখন দৃষ্টিভঙ্গি
পাল্টে নিচ্ছিলাম।

Thursday, March 09, 2017

ফেসবুক আর তার পারফর্মাররা - Facebook and its performers

ফেসবুক কিছুদিন আগেই নিজেকে মিডিয়া কোম্পানির মতো গড়ে তোলার কথা বলেছে। অনেক সংবাদমাধ্যমে এটাও দেখা যাচ্ছে, যে internally ফেসবুক নিজেকে একটি মিডিয়া কোম্পানিই ভাবে। কিন্তু ঠিক কি রকমের মিডিয়া কোম্পানি ফেসবুক?

এতদিন আমরা মিডিয়া বলতে জানতাম শুধুই খবরের কাগজ, টিভি। সেখানে আমরা রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশ-বিদেশ, গান, খেলাধুলা, সিনেমা – এসবের খবরাখবর পেতাম। কিন্তু ফেসবুক সেইসব খবরকে ছাপিয়ে গেলো। ফেসবুক বললো, খবর প্রত্যেক মানুষের ঘরে তৈরী হচ্ছে। তারা সেসব ঘরোয়া খবরকে তাদের মিডিয়ার বিষয় বানাবে। ফলে আমরা এক নতুন মিডিয়া, এক অভিনব বোকাবাক্সের সন্ধান পেলাম। যা কিনা আমাদের চারপাশের জগতের হালহকিকত সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখায়। মানে আমার বন্ধুর নতুন Himalayan Trip, বা পাশের পাড়ার সঞ্চিতার নতুন বিড়াল পোষার ছবি আর ওবামার কিউবা সফর – সবই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ফেসবুক এসব করার জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে ভেবেছে এবং user-সংখ্যা বাড়িয়েছে। কারণ ফেসবুকের প্রধান আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। আর সেই বিজ্ঞাপন খুব টার্গেটেড বিজ্ঞাপন। মানে আমরা টিভি বা খবরের কাগজে সবাই মিলে যে একই বিজ্ঞাপন দেখি তা নয়। আপনার পাশের বাড়ির সুলেখা কাকিমা, আর আপনার মা একই বিজ্ঞাপন কিন্তু দেখবেন না ফেসবুকে, যদিও তারা খবরের কাগজ বা টিভিতে একই বিজ্ঞাপন দেখেন। আপনি যা পছন্দ করেন, সেই অনুযায়ী আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। মানে সুলেখা কাকিমা যদি পি.সি.চন্দ্র-র গয়না পছন্দ করেন, আর আপনার মা সেনকো গোল্ড – তবে ওদের দুজনকে দুজনের পছন্দসই বিজ্ঞাপনই দেখানো হবে। আর আপনার পছন্দকে জানার জন্য শুধু সময় ব্যয় করলেই চলবে না, আপনার চারপাশের লোকজন, আপনার আশা-আকাঙ্খা জানাটাও খুব প্রয়োজন। আপনি কোন রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল আপনি আপনার বন্ধুর কোন্ ব্র্যান্ডের জামাকাপড় পছন্দ করছেন, বা আপনার বন্ধু কোন্ রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে আপনি সেটায় আগ্রহী হচ্ছেন।

কিন্তু এসব করার মাঝেই, ফেসবুক যেটা করলো, সেটা একদিক থেকে খুব অভাবনীয়। ফেসবুক সবার জীবনকে সবার চোখের সামনে ঠেলে নিয়ে এলো। শুধু তাই নয়, সেই জীবন কতটা আকর্ষক তার মাপকাঠির একটা জায়গাও তৈরী করলো, “লাইক”-ব্যাপারটার মাধ্যমে। এভাবে ফেসবুক আমাদের চারপাশের সকলকে পারফর্মার বানিয়ে দিলো। যখনই আমরা কিছু post করছি ফেসবুকে, তখনই আমাদের অবচেতনে আমরা যেন কিছু একটা perform করার মানসিকতা নিয়ে করছি। আর সেই performance শুধু একলা নয়, তাতে আবার প্রতিযোগীও আছে। প্রতিযোগীরা হচ্ছেন আমাদের অবচেতনেই আমাদের চারপাশের স্বল্প-চেনা, বেশি-চেনা, অচেনা লোকজনেরা। প্রতিযোগিতার মাপকাঠি কিছু virtual number, যার পোশাকি নাম, লাইক, কমেন্ট, রিয়্যাকশন বা শেয়ার। এই performance-এর জগতে সর্বশেষ সংযোজন – Facebook Live. আপনি শুধু এমনি পারফর্মার নয়, প্রায় সরাসরি লাইভ পারফর্মার। যার আবার প্রতিক্রিয়াও real-time-এ পাওয়া যাচ্ছে।

যে কোনো পারফর্মারকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলেই দেখবেন, তারা বলবে যে তাদের performance anxiety বলে একটা ব্যাপার হয়। প্রত্যক্ষ্য অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আপনি যাই করুন না কেন, আপনি যতই দক্ষ হন না কেন, আপনি যতই practice করুন না কেন, একটা উদ্বেগ আপনার থেকেই যাবে, perform করার জন্য। আর এই উদ্বেগ সরাসরি performance-গুলোতে আরো বেশি হয়। এবার ভেবে দেখুন, আমরা সকলেই এই ফেসবুক platform-এ যখন performer হয়ে যাচ্ছি, তখন এই উদ্বেগ আমাদের সকলের ভিতরে কাজ করছে। এই উদ্বেগ আরো অনেক বিষয়ের সাথে মিলে একটা হতাশা সৃষ্টি করে। দেখবেন অনেক performer অনেক সময় লম্বা ছুটিতে চলে যান, এই উদ্বেগ, এই সবসময়ের প্রত্যাশা থেকে পার পাওয়ার জন্য।

এই হতাশার আরো একটা কারণ অবশ্য আছে। আপনি যখন ফেসবুকে আপনার মতামত জানাচ্ছেন, তখন ততক্ষণ সবই ঠিক চলছে, যতক্ষণ বেশিরভাগ মানুষ আপনার পক্ষে। কিন্তু সময়বিশেষে সেটা থাকে না। এই ক্রমশ-বৃত্ত-ছোট-হয়ে-আসা-র যুগে, আমরা চাই, virtual দুনিয়া হলেও, মানুষ আমাদের কাছে থাকুন। কিন্তু ফেসবুকের এতো মানুষের এতো মতামতের ভিড়ে মাঝে মাঝেই আমরা সেই কাঙ্খিত সাহচর্যটা পাচ্ছি না। আমরা সেই কোনোখানে একলা হয়ে পড়ছি। হতাশার একটা উৎস সেটাও বটে। ফেসবুক কিন্তু এই হতাশার কথা আগাম আঁচই করেছিল।
তাই ফেসবুক চালু করেছে deactivation system. ফেসবুক বুঝেছে যে শুধু log out করেও মানুষ এই উদ্বেগ, একাকীত্ত্ব, হতাশা এবং এই চিরন্তন ভালো performance করে চলার প্রত্যাশা থেকে বের হতে পারছে না। তাদের দরকার হচ্ছে, আর একটা level of protection. সেই জন্যই এই deactivation-এর অবতারণা। আমার নিজের ফেসবুক বন্ধুতালিকার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ এখন তাদের profile deactivate করে বসে আছেন। তবে অনেকে deactivation না করে, প্রায় passive user হয়ে যান ফেসবুকে। মানে তারা অন্যের performance-এ খুশি হন, মন্তব্য করেন। কিন্তু নিজের মধ্যে কোথাও একটা সুপ্ত ভয় জন্ম নেয়। তাই নিজে থেকে আর ফেসবুকে কিছু বলতে এগিয়ে আসেন না। তাদের অবচেতনে কোনো একটা কণ্ঠ্যস্বর সাবধানবাণী শোনায়, “যদি আমি সবার মতো perform না করতে পারি ! তার থেকে চুপ থাকাই শ্রেয়।” এই passive user-এর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান, তাই নিয়ে ফেসবুক চিন্তিতও বটে

বেশিরভাগ মানুষ যে ভুলটা করেন এই virtual দুনিয়াতে পা রেখে, সেটা হল, এটাকে এক অন্য দুনিয়া মনে করা। তারা মনে করেন, আমার চারপাশ আর ফেসবুক – দুটো আলাদা জগৎ। বাস্তব পৃথিবীর একটা separate, কিন্তু extension যে এই virtual medium-টা, সেটা অনেকেই ভাবেন না। আপনার পক্ষে কি সম্ভব, নিজের চারপাশের বাস্তবকে deactivate করে থাকা? তা যখন সম্ভব নয়, তখন আপনি এই virtual দুনিয়াকে কিভাবে “না” বলতে পারেন, খানিক সময়ের জন্য। কিন্তু মানুষ এটাই করছেন। আমাদের চারপাশের পারফর্মাররা এটাই করতে বাধ্য করাচ্ছেন আমাদের। কিন্তু এটা বোঝা খুব দরকার – বাস্তব জীবনেও যেমন আপনি পারফর্মার নন, তেমনি virtual-এও নন। আপনার পোস্টের লাইক, কমেন্টের সংখ্যা দিয়ে আপনার পারফর্মেন্স মাপার জায়গা তৈরী করলে – সেটা খুব বড় ভুল হয়ে যাবে। কারণ এই সংখ্যাগুলো একটা ব্যক্তি-মানুষকে মুছে ফেলে’ তাকে সংখ্যা দিয়ে ভাবতে চায়। আমরা যখন আলোয় থাকি, তখন অন্ধকারের মানুষগুলোকে আমরা স্রেফ সংখ্যায় বা স্ট্যাটিস্টিক্স-এ পরিণত করি। আশা রাখবো, আপনার “পারফর্মেন্স” মানুষকে তার ব্যক্তি-সত্ত্বাটুকুর মূল্য দেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

[ফেসবুক নিয়ে একটা সিরিজ অফ লেখার এটা প্রথম কিস্তি - পরেরটা আসবে মে মাসে]

Monday, March 06, 2017

নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ - প্রথম পর্ব

বেশ একটা আবেশ করার মতো ঠান্ডা আবহাওয়া। আমরা দুজন পাশাপাশি ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছি। এভাবে আমরা কলেজের শীত-গ্রীষ্মতেও হোস্টেল থেকে ক্যাম্পাসের গেট অব্দি হেঁটে যেতাম, ঝালমুড়ি-তেলেভাজা খেতে। তবে এবারে আমরা বেড়িয়েছি স্রেফ চারপাশটা একটু দেখতে, আর কিছু ভালো পানীয়ের সন্ধান পেতে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, কলেজ থেকে আজকের এই মার্কিন মুলুকের পাশাপাশি হাঁটা - বেশ অনেকটা পথ হয়ে এলো। আমরা দুজনেই এরকমটা হতে পারে, ভাবিনি কোনোদিন। আমাদের ব্র্যাকগ্রাউন্ড যেরকম, তাতে ভাবাও সম্ভব না। আমি সরকারি চাকুরের ছেলে, মধ্যমেধার ছাত্র। আর আমার বন্ধুটি চাষির ছেলে, পরীক্ষার নম্বরের দিক থেকে আমারই মতন। কিন্তু তারাই আজ, কিছুটা ভাগ্য, আর কিছুটা চেষ্টার জোরে, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরে ঘুরতে বেড়িয়েছি।


লন্ডন-প্যারিস-নিউ ইয়র্ক - বিশ্বের এই তিনটে জায়গার নাম একসাথে উচ্চারিত হয়, এই শহর তিনটের আলাদা আকর্ষণের জন্য। এদের মধ্যে নিউ ইয়র্ককে বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী বলেন অনেকেই। বাণিজ্য, ব্যবসা - এই   শব্দগুলোর মধ্যে কোথাও যেন একটা কাঠিন্য লুকিয়ে আছে। মনে হয়, শব্দগুলোর বুঝি হৃদয় নেই, আবেগ নেই। কিন্তু তাও কোনো একটা আবেগের তাড়না থেকেই আমরা ২০১৭ সালের শুরুটা নিউ ইয়র্কেই করতে গেলাম ।


আমি বস্টনে থাকি। সেখান থেকে চার ঘন্টায় বাসে করে, নিউ ইয়র্কে আমরা পৌঁছলাম বিকেল নাগাদ। এক হোমস্টেতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। এই ধরণের থাকায় দুটো সুবিধে: এক, একটু কম খরচায় থাকা যায়, হোটেলের থেকে। দুই, জায়গাটার খুঁটিনাটি সম্পর্কে, যার বাড়িতে থাকছি, তার থেকে অনেক কিছু ব্যক্তিগতভাবে জানা যায়। এছাড়াও নতুন মানুষের সাথে পরিচয়ের সুযোগ থাকে, তাতে নিজের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির দিগন্তটা আর একটু বিস্তৃত হয়। জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা বড় উদ্দেশ্য তো নিজের যে কোনো ধরণের দিগন্তের বিস্তার ঘটানো। এই ধরণের থাকার ব্যবস্থায় সেটা সাবলীলভাবেই হয়। আমরা নিউ ইয়র্কে ছিলাম বালুচিস্তানের (পাকিস্তান) এক মধ্যবয়স্কা মহিলার বাড়িতে। তিনি যথেষ্ট আপ্যায়নের সাথেই আমাদের থাকার বন্দোবস্ত করেছিলেন।


নিউ ইয়র্ক শহরের মধ্যে যদি হৃদয় বলে কিছু থাকে, তাহলে টাইমস স্ক্যোয়ারের কথাই বলতে হয়। আমরা প্রথম দিন পৌঁছেই সন্ধ্যেবেলা সেখানে চলে গেলাম। পৌঁছেই অবাক হয়ে গেলাম। প্রচুর লোক সেখানে আনন্দে মাতোয়ারা। রাস্তার ধারে স্ট্রিট ফুড তৈরী হচ্ছে। সকলে ফটো তুলছেন। রাস্তা পেরোতে কেউ লাল-সবুজের তোয়াক্কা করছেন না। এ যেন এশিয়ার কোনো বড় শহরের ছবি। এমনিতে মার্কিন মুলুকের বেশিরভাগ শহরে এ ছবি দেখাই যায় না। আমরা এসব দেখে, খেয়ে ফেললাম বীফ স্যান্ডউইচ, রাস্তার ধার থেকেই। মোটামুটি কম দামের মধ্যে বেশ মুখরোচক খাবার। আর খিদে পেলে, যে কোনো খাবারের মধ্যেই একটা আলাদা স্বাদের আবির্ভাব হয়। তাই স্যান্ডুইচটা একটু বেশিই ভালো লেগে গেলো খেতে।


এর পরে আমরা দেখতে থাকলাম চারদিক, আর অবাক হলাম। বিশাল বড় বড় নিয়ন আলো দিয়ে তৈরী ডিসপ্লে বোর্ড। সেখানে বিশ্বের নামিদামি মডেল, অভিনেতারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন বিভিন্ন ব্যান্ডের। সেই বিজ্ঞাপনের নীল আর লাল আলো সাধারণ মানুষের উপর পড়ছে, আর তারাও যেন খানিকটা রঙিন হয়ে উঠছেন, তাদের সাদা-কালো জীবনকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখে।


নিউ ইয়র্কের সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর মিউজিয়াম। কোনোটায হয়তো আছে ভ্যান গগের পুরোনো পেন্টিং। কোনোটায় দারুন সব স্থাপত্য, আবার কোনোটায় মহাজাগতিক বিশ্ব থেকে ধার করে আনা ছবি। আমাদের পক্ষে সব কিছু দেখা সম্ভব ছিল না। কারণ আমাদের হাতে সময় কম, আর অর্থ তো চিরকালই সীমিত। তাই আমরা ঘুরে দেখেছিলাম ৩-৪টি জায়গা - ম্যাডাম ট্যুসো মিউজিয়াম, আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টোরি, আর মিউজিয়াম অফ সেক্স। এছাড়া নিউ ইয়র্ক শহর আরো একটা যে কারণে বিখ্যাত - তা হল এখানের লম্বা লম্বা হাইরাইস গুলো। আকাশকে ভেদ করে চলে যাওয়া এই বিল্ডিংগুলো যেন মানুষের কীর্তিকে সদম্ভে প্রকাশ করে। আমরা এর মধ্যে অন্যতম প্রধান দুটো বিল্ডিং-এর শীর্ষে উঠেছিলাম (যেগুলোতে উঠতেও প্রবেশমূল্য দিতে হয়) - এম্প্যায়ার স্টেট্ বিল্ডিং, রকাফেলার সেন্টার।

এই সমস্ত জায়গা ঘুরতে ঘুরতে প্রচুর মানুষ দেখেছি, তাবড় তাবড় শিল্পীর দুর্দান্ত সব সৃষ্টি সেখানে। এতকালের সভ্যতার ইতিহাসের টুকরো টুকরো সাজানো আছে অনেক জায়গায়। ম্যাডাম ট্যুসো মিউজিয়ামে বিশ্বের বিখ্যাত মানুষদের মোমের মূর্তিগুলো দেখছিলাম। মানুষের বাইরেটাকে কিভাবে সহজে আবদ্ধ করে নেওয়া যায় - তা বোধ হয় এখানে আসলেই বোঝা যায়। মানুষের ভিতরের নীতি, বোধ, জীবনচর্চাই যে তার প্রকৃত স্বাক্ষর, সেটা এই বাহ্যিক মোড়কগুলো যেন আমাদের সামনে খুলে দেয়। আবার অন্য এক মিউজিয়ামে মানুষের আদি-অনন্তকাল থেকে যে আদিম চাহিদা, যে যৌন আকাঙ্খা - যার সাহায্যে আমরা পৃথিবীকে এক সূত্রে গেঁথে ফেলতে পারি - তার বিবরণ। রকাফেলার সেন্টারের চূড়ায় উঠে মনে হচ্ছিলো - এদের এই এতো উঁচু বিল্ডিং যারা তৈরী করলো, তারা কি আর এখানে উঠে দেখতে পারে! তাদের নিজেদের সৃষ্টির স্বাদ কি তারা উপভোগ করতে পারে? আবার এই রকাফেলাররা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রায় গত একশো বছর ধরে তেলের সাহায্যে নিজেদের বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তাই ওই বিল্ডিং-এর উপরে উঠে, নিচে তাকিয়ে আমার বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম, নিজে কি দেখছিস? ও বলেছিলো, ছোট ছোট অনেক আরো বিল্ডিং দেখতে পাচ্ছি। আমি বলেছিলাম, আমি কি দেখছি জানিস, শত শত মানুষের ঘাম।