Sunday, December 10, 2023

আমায় যদি মরতেই হয় (If I must die)

ডক্টর রিফাত আল-আরীরের লেখা একটি অসামান্য কবিতা "If I Must Die" ভাবানুবাদ করলাম, রিফাতকে উৎসর্গ করে (রিফাত গত ৬ই ডিসেম্বর ইসরায়েলের বোমার আঘাতে মারা গেছেন)। মূল লেখাটি নিচে দেওয়া আছে।

আমায় যদি মরতেই হয়,
তোমায় কিন্তু বাঁচতে হবেই,
আমার কথা বলতে, আমার গল্প শোনাতে,
আমার পড়ে-থাকা জিনিসপত্র বেচতে।
সেই পয়সা দিয়ে তুমি কিনো
একটুকরো সাদা কাগজ আর কয়েকগজ সুতো -
তাই দিয়ে তৈরি কোরো একটা সাদা ঘুড়ি।
এরপর গাজার কোনো পিতৃহারা শিশু
আকাশের দিকে যখন তাকাবে,
আর তার স্বর্গীয় বাবার অপেক্ষা করবে -
যে বাবা কোনো বিস্ফোরণের পর নিরুদ্দেশ,
যে তার সন্তানকে বিদায় জানাতে পারেনি,
কাউকেই বিদায় জানাতে পারেনি,
এমনকি নিজের শরীরকেও নয়, নিজেকেও নয় -
সেই অভাগা শিশুটি যখন ঘুড়িটা দেখবে,
আমার যে ঘুড়ি, তুমি বানিয়েছো,
যে ঘুড়ি আকাশে উঁচু মেঘের মত উড়ছে,
যে ঘুড়ি অবশেষে মুক্ত বাতাস পেয়েছে,
যে ঘুড়ি মানেনি দেশ-সীমান্তের অলীক বাধা,
সেই ঘুড়ি দেখে হয়তো 
সেই সবহারানো শিশুটি ক্ষণিকের জন্য ভাববে,
কোনো শ্বেতশুভ্র স্বপ্নের পরী সত্যিই আছে,
যে পরী এখনও পৃথিবীর বুকে ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারে।
যদি আমাকে মরতেই হয়,
সেই মৃত্যু যেন একটুকরো আশা বয়ে আনে,
একটুকরো গল্প হয়ে থেকে যায়।
---
রিফাত আল-আরীর (অনুবাদে সোহম)

If I Must Die (Refaat Alareer)
---
If I must die,
you must live
to tell my story
to sell my things
to buy a piece of cloth
and some strings,
(make it white with a long tail)
so that a child, somewhere in Gaza
while looking heaven in the eye
awaiting his dad who left in a blaze–
and bid no one farewell
not even to his flesh
not even to himself–
sees the kite, my kite you made, flying up above
and thinks for a moment an angel is there
bringing back love
If I must die
let it bring hope
let it be a tale. 

Wednesday, August 09, 2023

ওপেনহাইমার নিয়ে কিছু কথা (নো স্পয়লার)

চারিদিকে খুব একটা বেশি আর কোনো কথাবার্তা নেই, "ওপেনহাইমার" রিলিজ করার পর। অভিনয়ের প্রশংসা, চিত্রায়নের মুগ্ধতা, বিশাল স্ক্রিনের চমক - ছবির মূলত এই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে বেশ অনেকগুলো প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েছে। কিন্তু চলচিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে তেমন সাড়াশব্দ নেই। আসলে নোলানের মতো এতটা মেইনস্ট্রিম, পপুলার, "অরাজনৈতিক" একজন পরিচালক এমন একটা ছবি বানিয়ে ফেলেছেন, যা দেখে অনেকেই একটু হতভম্ভ হয়ে গিয়েছেন। তার ওপর ছবিটা মূলত ওপেনহাইমার এবং অ্যাটম বম্ব নিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদপে ছবিটায় ম্যাকার্থি যুগের কলঙ্কের ঝলকই বারবার বেরিয়ে এসেছে। সেই কারণেও বোধ হয় এই আপাত নিস্তব্ধতা।

ম্যাকার্থি যুগ আমেরিকার একটা ওপেন সিক্রেট বলা যায়। অনেকেই বিষয়টা সম্পর্কে জানে, কিন্তু সেই নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যায়না। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে লিবারাল ডেমোক্রেসি বা উদার গণতন্ত্রের পরাকাষ্ঠা হয়ে আমেরিকা নিজেকে দেখতে চেয়েছিল, তার ঠিক বিপরীতটাই ভিতরে ভিতরে ঘটেছিল। ১৯৪০ এর দশকের শেষের দিক থেকে প্রথম ১০ বছর প্রবলভাবে ম্যাকার্থি যুগের কর্মকাণ্ড চলেছিল এবং প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে এর জের ছিল, কিছুটা হালকা চালে। এই যুগের প্রধান যে বক্তব্য ছিল, তা হল যে কোনো বামপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষকে হেনস্থা করা। সরকারের বিভিন্ন শাখা থেকে এই স্ট্যান্ড নেওয়া হয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন আইন পাশ করে সোশ্যালিস্ট এবং কম্যুনিস্টদের কার্যত ব্যান করা হয়েছিল, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থায়, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সেনেটর জোসেফ ম্যাকার্থির সময় থেকে এই পলিসি দ্রুতগতিতে সরকারের বিভিন্ন শাখায় ও অফিসে ছড়িয়ে পড়ে। উইকিপিডিয়াতে এই সম্পর্কে আরও খুঁটিনাটি পাবেন।

এবার এই সময়ের বড় একটা মুস্কিল ছিল এই যে, বড় বড় বিজ্ঞানী, অভিনেতা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা সেই সময় বেশিরভাগই সমাজবাদী ভাবনাচিন্তায় প্রভাবিত ছিলেন, সে আইনস্টাইনই হোক, বা চার্লি চ্যাপলিন, বা ওপেনহাইমার। মনে রাখা দরকার, নাৎসী জার্মানি প্রথম যাদের ওপর আক্রমণ করে তারা কম্যুনিস্ট ছিলেন, ফলে ইউরোপের বড় বড় বিজ্ঞানী এবং পন্ডিতরা, যারা সমাজবাদী চিন্তাধারা নিয়ে চলতেন, তারা অনেকেই আমেরিকায় পালিয়ে আসেন। আমেরিকাও ১৯৪০ এর আগে তাঁদের সাদরে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই আমেরিকাই পরে এই বামপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষদের হেনস্থা শুরু করে।

এই পুরো কাজটা কিন্তু বেশ কঠিন ছিল সেই সময়। কারণ সেই সময়ে আমেরিকাতেও সমাজবাদী চিন্তাভাবনার বেশ ভালো প্রসার ছিল। ইউজিন ডেবস সোশ্যালিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার, যদিও জিততে পারেননি একবারও, কিন্তু ওনার জনপ্রিয়তা ভালোই ছিল। ইউনিয়ন বা কর্মী সংগঠনগুলোও তখন বেশ শক্তিশালী ছিল। এমনকি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাংকলিন রোসভেল্ট যখন নিউ ডিল প্রণয়ন করে প্রচুর সরকারি সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করেন, তাও সম্ভব হয়েছিল কারণ সাধারণের মধ্যে একটা প্রবল বামপন্থী ও ইউনিয়ন ধর্মী হাওয়া ছিল। তাছাড়া আমেরিকার বড় বড় কলেজগুলোতে অধ্যাপক ও ছাত্ররা মূলত বামপন্থীদের পক্ষে ছিলেন এবং বেশ খোলামেলাভাবেই তাঁদের রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশ করতেন। ফলত এই পুরো ব্যাপারটাকে বন্ধ করার জন্য এক বড়সর কর্মকাণ্ডের দরকার ছিল, এবং সেটাই সেনেটর ম্যাকার্থি এবং পরে FBI প্রধান হুভার তদারকি করেছিলেন।

আমরা নোলানের "ওপেনহাইমার" সিনেমায় দেখতে পাচ্ছি, যে এত বড় একজন বিজ্ঞানী, যাঁকে father of atomic bomb বলা হচ্ছে, যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া, তাঁকেও কি ধরনের হেনস্থা সহ্য করতে হচ্ছে। তাহলে এটা কল্পনা করতে কষ্ট হয় না, যে সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা সামান্য বামপন্থী ধারণাতেও বিশ্বাস করতেন, তাঁদের সাথে কি করা হয়েছিল। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে চলা এই ক্রমাগত অত্যাচার, হত্যা, টর্চারের পরে এই ধরনের চিন্তা সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যে থেকে প্রায় নির্বাসিত হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলগুলো থেকেও এই ধরনের পড়াশোনা সিলেবাস ও ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আমেরিকার পপ কালচার ও সাম্প্রতিক ইতিহাসে শ্রমিকদের যে বিশাল পরিমান প্রভাব ছিল, তার কিছুই প্রায় অবশিষ্ট ছিল না এই সময়ের পরে। আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে কিছু জানিনা, কারণ সযত্নে এই বিষয়টাকে আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে, ফুকুয়ামার ভাষায় বললে end of history ।

সবথেকে বড় পরিহাস বোধ হয় এটাই, নাৎসী জার্মানির হাত থেকে বাঁচতে যে উদার আমেরিকায় দেশবিদেশের বিজ্ঞানীরা তাদের স্বাধীন চিন্তাভাবনা করার পরিসর পাবেন ভেবেছিলেন, সেই আমেরিকাই তাঁদের ওপর গোপন আক্রমণ শানিয়েছিল। আজ বার্নি স্যান্ডার্স এর হাত ধরে গত এক দশকে যে এখানে আবার কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোশ্যালিজম, ম্যাকার্থি যুগের ৫০ বছর পরেও, সেটা একটা বিস্ময়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে নোলানের এই সিনেমা সত্যিই বেশ সময়োপযোগী। নোলানকে বিশেষ ধন্যবাদ যে উনি এরকম একটা বিষয় নিয়ে ছবি করেছেন, এবং উনি করেছেন বলেই কাতারে কাতারে মানুষ দেখছে। বেশ অনেকদিন টিকিট না পাওয়ার পরে শেষ অব্দি বড় স্ক্রিনে সিনেমাটা দেখে ভালো লেগেছে। কিছু কিছু অভিযোগ থাকলেও, এখন সেসবের সময় নয়। এখন সময় বুঝে নেওয়ার যে, এই মতাদর্শকে মুছে ফেলার চেষ্টা বারবার করা হলেও তাকে মুছে দেওয়া সম্ভব নয়, ম্যাকার্থি, হুভার বা অন্য কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।

Sunday, February 19, 2023

প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ ৫ (AI in the Wild)

ChatGPT সম্বন্ধে এতদিনে অনেকেই জানেন। যদিও এই সফ্টওয়্যারের পিছনে যে প্রযুক্তি রয়েছে, তার অন্দরের খবর তেমন পরিষ্কার নয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে নিঃসন্দেহে এটি একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য technological product। ChatGPT একটি conversational robot (অথবা bot), যাকে একটি ওয়েবসাইটের (chat.openai.com) মাধ্যমে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এই ওয়েবসাইটে একটি চ্যাটবক্সের মাধ্যমে আপনি এই bot-এর সাথে যে কোনো বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন ও একে প্রশ্ন করতে পারেন। এই bot-টির পিছনে কাজ করছে একটি Artificial Intelligence (AI) ইঞ্জিন, যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন অন্দরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তথ্যকে বিশ্লেষণ করে তৈরী করেছে একটি সফ্টওয়্যার মডেল। সেই মডেলটিকে ব্যবহার করে ChatGPT কথোপকথনের মতো করে উত্তর দিতে পারে আপনার যে কোনো প্রশ্নের।

ChatGPT-র সঙ্গে Google-এর মতো সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের বিস্তর পার্থক্য আছে। Google শুধুমাত্র আমাদের দেওয়া কিছু শব্দের ভিত্তিতে ইন্টারনেট থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইটের খোঁজ দিতে পারে। কিন্তু ChatGPT-কে আমরা কোনো প্রশ্ন করলে, সে তার সঞ্চিত তথ্যকে বিশ্লেষণ করে একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে সক্ষম। সবথেকে চমকপ্রদ বিষয় হলো, ChatGPT-র বিশ্লেষণী ও সৃষ্টিশীল ক্ষমতার সংমিশ্রণ। মানে এটি তথ্যকে বিশ্লেষণ করে এমন অভিনব আঙ্গিকে উত্তর দিতে পারে, যে উত্তর হয়তো আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। ফলতঃ খানিকটা একজন প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের মতোই, ChatGPT তার সফ্টওয়্যার মডেলকে সম্বল করে নতুন বিশ্লেষণ তুলে আনতে পারে, এবং সেটা প্রায় যে কোনো বিষয়েই। Google-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলোর এই ক্ষমতা এখনো নেই। 

তবে ChatGPT-এর উত্তরকে সব বিষয়ে যে সর্বক্ষণ ভরসা করা যায়, এমন নয়। যেমন কোনো গাণিতিক প্রশ্নে এর উত্তর অনেক সময়ই ভুল হতে পারে। আবার ChatGPT-র সাথে বেশিক্ষন ধরে কথাবার্তা চালিয়ে গেলে, কিছু সময় পর থেকে সে প্রাসঙ্গিক উত্তর হয়তো নাও দিতে পারে। এতদসত্ত্বেও ChatGPT-এর মূল কার্যকারিতা একটি Knowledge Synthesis Assistant-এর মতো। মানে কোনো বিষয়ে আপনি যদি সংক্ষেপে কিছু জানতে চান, সেক্ষেত্রে ChatGPT খুবই উপকারী। যেমন ধরুন, সত্যজিৎ রায় এবং মৃনাল সেনের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল, সেই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত একটা ধারণা আপনাকে দিয়ে দিতে পারে। কিংবা মোদী সরকারের আমলে ভারতের অর্থনৈতিক হাল কেমন, সে বিষয়ে ছোট্ট একটি ধারণা দিতে পারে। এছাড়া, ChatGPT computer programming বা coding-এর জন্য ভীষণরকমভাবে উপকারী। ইন্টারনেটের বিভিন্ন কোণ ঘেঁটে, বিশ্লেষণ করে coding-এর বিষয়ে খুব প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে এটি সক্ষম। ChatGPT-এর মতো উন্নত একটি সফ্টওয়্যার-এর উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসের দিকে একটু চোখ ফেরানো যাক। 

গত এক দশকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকেই ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে এক বিশেষ ধরণের অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়, যাদের মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম বলা হয়ে থাকে। গুগল ফোটোস যে আমাদের পরিবার পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে সকলকে আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখতে পারে, তা কিন্তু হয় মেশিন লার্নিং-এর সাহায্যেই। ইউটিউব খুললেই আজকাল আমরা আমাদের পছন্দমতো ভিডিও রেকমেন্ডেশন পেতে থাকি। এর পিছনেও আছে মেশিন লার্নিং। তবে মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে গবেষণা কিন্তু চলছে প্রায় ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে এক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট ২০১২ সাল।

২০১২ সালের আগে মেশিন লার্নিং নিয়ে বহু রিসার্চ ল্যাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হতো ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ গবেষণা শুধুই গাণিতিক কিছু তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তাদের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেত না। এর মূলত দুটো কারণ ছিল: data এবং computing power। আমাদের কাছে ডিজিটাল ফর্মে যথেষ্ট data ছিল না, যা মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি কার্যকরী হওয়ার জন্য অপরিহার্য। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি ডেটা বা তথ্য থেকেই কোনো প্রশ্নের সমাধান অনুমান করার চেষ্টা করে, data-ই তাদের মূল চালিকাশক্তি। ২০০০ সালের কাছাকাছি সময় থেকেই digitally data ধরে রাখার কাজটা মোটামুটি জোরকদমে এগোচ্ছিল, এবং ২০১০-এর মধ্যে মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করার জন্য বেশ ভালোরকম datasets তৈরী হয়ে গেছিল। 

কিন্তু যেদিকটায় তখনো খামতি ছিল, তা হল কম্পিউটিং পাওয়ার। মানে মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করার জন্য যে কম্পিউটার দরকার হতো, তা সাধারণভাবে পাওয়া যেত না। এই পুরো চিত্রটা বদলে গেল ২০১২-এর সেপ্টেম্বরে। ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টোর তিনজন বিজ্ঞানী দেখালেন যে, মেশিন লার্নিং-এর ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত যে CPU (Central Procesing Unit) ব্যবহার করি, তা কার্যকরী নয়।। বরং যদি Graphics Processing Unit বা GPU ব্যবহার করা যায়, তাহলে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। ইতিমধ্যে ভিডিও গেম, ভিডিও প্রসেসিং এবং সিনেমার কাজে GPU-র ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এরপর থেকে মেশিন লার্নিং-এও ব্যাপক হারে GPU-র ব্যবহার শুরু হয়। গবেষণাও তীব্র গতিতে এগোতে থাকে, সাথে সাথে AI-বিষয়ক পরীক্ষা-নিরিক্ষাও। গত এক দশকের ব্যাপক এবং বিবিধ AI গবেষণার অন্যতম সফল সফটওয়্যার হল ChatGPT । 

ChatGPT নিয়ে এতো উত্তেজনার কারণ হল যে, এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য তৈরী নয়। যেমন এটি শুধুমাত্র একটি computer programming assistant নয়, বা এটি শুধুমাত্র একটি ছবির ভিতর কি কি বস্তু আছে তা চিহ্নিত করছে না। এর আগে বিভিন্ন মেশিন লার্নিং সফ্টওয়্যার কোনো একটি নির্দিষ্ট ধরণের কাজের বিষয়ে বেশ কার্যকরী হয়েছে। কিন্তু এই আগের সফ্টওয়্যারের তুলনায় ChatGPT অনেক বেশি সাধারণ কাজ করতে পারে, কতকটা মানুষের মতোই। কোনো বিশ্লেষণ থেকে আমরা যেমন কোনো উপলব্ধিতে পৌঁছোই, সেরকম বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির ক্ষমতাও ChatGPT-র আছে, বরং মানুষের থেকে কিছুটা বেশিই আছে। এর একটা মূল কারণ হল, বিশ্লেষণের জন্য সে আর এখন আমাদের উপর বা আমাদের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভরশীল নয়। মনে রাখতে হবে, নতুন বিশ্লেষণের উদ্ভাবনী ক্ষমতাও আছে ChatGPT-র কাছে। সে নিজেই নতুন নতুন বিশ্লেষণ তৈরী করে সেখান থেকে নতুন উপলব্ধি করতে পারে। সেটা স্বভাবতই মানুষের উপলব্ধির গতিবেগের থেকে কয়েক গুন্ বেশি। ChatGPT-এর এই বিশ্লেষণ এবং সেখান থেকে উপলব্ধিতে উত্তরণের যে শেষ কোথায়, তা হয়তো মানুষ হিসেবে আমাদের উপলব্ধির বাইরে।

নোট: লেখক এই লেখার সময় GPU-র সর্ববৃহৎ কোম্পানি Nvidia-তে চাকরিরত