Wednesday, December 20, 2017

সুন্দরীর আত্মকথন

নমস্কার। আমাকে আপনারা হয়তো চেনেন না। তবে আমি কিন্তু আপনাদের আশেপাশেই ঘাপটি মেরে আছি। আমাকে দেখতে সুন্দরী, হয়তো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত না হলেও, যে কেউ দেখেই সুশ্রী বলবে। যদিও বেশিরভাগ বাঙালি মেয়েকেই বিশ্বসুদ্ধ লোক তা-ই বলে, তবুও আমি নিজেকে সাধারণের থেকে বেশি সুন্দরী বলে মনে করি। আসলে এছাড়া আমার আর কোনো উপায়ও নেই, এই একটিমাত্র ব্যাপারেই আমার পারদর্শিতা। জানি, আপনারা ভাবছেন যে, এখানে *আমার* পারদর্শিতার কি হল, কিন্তু একটা রূপ maintain করে চলারও তো ব্যাপার আছে। তাছাড়া আজকাল যা দূষণ চারিদিকে, এই মেইনটেন্যান্স এর পিছনে কত পরিশ্রম লাগে, তা তো আপনারা বুঝবেন না। দেখছেন, এতক্ষন কথা বলছি, আর এখনও আমার পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি। আসলে নিজেকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে, আমি কেমন যেন আত্মহারা হয়ে যাই ! যাই হোক, ইংরিজিতে আমার একটা গালভরা নাম আছে, সেটা আপনাদের guess করতে হবে। তবে আমাকে অনেক নামেই ডাকা যায়, যেমন আপনারা আমাকে সুনয়না বলতে পারেন। যদিও শুধু নয়ন নয়, আমার পুরোটাই সুমধুর।


ছোটবেলা থেকেই আমার কোনো আম্বিশ্যান নেই। খুব ছোটবেলায় তো কিছুই ভাবতে পারতাম না, শুধু টিভিতে চলমান ছবি দেখে উল্লসিত হতাম। একটু বড় হতে বুঝলাম, আমাকে দেখতে সুন্দরী। তারপর থেকেই মোটামুটি আমার বারোটা-বাজার শুরু। বাবা-মা ছোটবেলায় নাচ-গান করানোর চেষ্টা করেছিল; ওদের মনঃপুত করতে এবং সমাজের চাপে সেসব করিও। তবে ওসবে আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল না। আমি খেয়ে বসে হেসে, বেঁচে থাকতেই পছন্দ করতাম।



খুব মুশকিলে পড়ে গেছিলাম মাঝের কয়েক বছরে। প্রেমের নিবেদন অনেকই আসে, কিন্তু একটির চরিত্র বুঝতে ভুল হয়ে গেছিল। আমার সেই প্রেমিক আমাকে নিজের যোগ্যতায় ভালোলাগার কিছু করতে বলে, এবং তার জন্য আমাকে নাকি সে সমস্ত রকমের সহযোগিতা করবে। আমি তো হতবাক ! এ বলে কি ! ছোটবেলা থেকে বাবা মা যেটা করাতে পারলো না, এ বলে কিনা সেটা করতে ! যাই হোক, বেঁচে গেছি সেসব ব্যাপার থেকে।



তবে সমাজের কাছে মান রক্ষার্থে চাকরি করি এখন। কিন্তু আমিও জানি সে চাকরি আমি ঠিক কিসের জোরে পেয়েছি।আমার যে বর, সে কোনো দিক থেকেই আমার সমকক্ষ নয়, আমি জানি। আমি তাকে কতটা রোম্যান্টিকালি ভালোবাসি, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। কিন্তু তাতে কি যায় আসে? টাকা-পয়সা, সমাজে প্রতিপত্তি এসব দিক থেকে বেশ আদর্শ। আর মনের মিলের থেকে বড় দরকারি, টাকার অফুরন্ত যোগান, আর আমাকে প্যাম্পার করার মানসিকতা। আর একটা গোপন কথা চুপিচুপি বলে রাখি, আমার মত রূপসর্বস্ব মেয়েকে পেয়েই ও খুশি হয়েছে, কারণ এছাড়া ওর সঙ্গে থাকার মতো কেউ জুটতো কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সে জন্য আমার চাকরির টাকা, আমি নিজের কাছেই রাখি। বরের টাকাটা স্বভাবতই সংসারে যায়। আর আমিও পেয়ে যাচ্ছি যখন যা চাই। আর কি চাই ! জীবন মানে তো এটাই, তাই না? জীবন মানে কি দুনিয়াটাকে বোঝার চেষ্টা, কোন বোকচন্দর যে বলেছিল !



তবে কি জানেন, শুধু আমার কথা নয়। আমার হাজারো প্রতিমূর্তি দেখতে পাবেন আপনাদেরই চারপাশে। আমি কোনো একটা মানুষ নই, আমি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটা দর্শন। যে দর্শনে হোটেলে খেতে গিয়ে আমরা বিল পেমেন্ট করার কথা চিন্তাও করি না, সেই দর্শন। যে দর্শনে আমরা বিয়ের পর শুধু পদবী পরিবর্তন না-করাটাকেই সাফল্য মনে করি, সেই দর্শন। যে দর্শনে সামাজিকভাবে, কাজের জায়গায় মেয়ে হওয়ার অতিরিক্ত সুবিধে নিয়ে থাকি, ভিকটিম-প্লে করে থাকি, সেই দর্শন। এই দর্শনেই আমরা "ফেমিনিজম"-কে স্রেফ একটা উদ্বাহু আন্দোলনের ক্যারিকেচারে পরিণত করছি। এই দর্শন আমাদের মধ্যে গেঁথে বসে আছে। বহন করে চলছি খুব গভীরে। এবং অদূর ভবিষ্যতেও করে চলবো।



--- আপনার চেনা কোনো এক সুন্দরীর অল্টার-ইগো

No comments:

Post a Comment