FRDI-বিলের মতো সুন্দর, উপকারী বিল, আমি আগে শুনিনি। সিপিএমের মতো আহাম্মকরাই এটার বিরোধিতা করতে পারে। আমার মনে হয়, সিপিএম সহ সব রাজনৈতিক দলের উচিত বিলটাকে ভালোভাবে স্টাডি করে আরো উন্নত এবং পাকাপোক্ত করার। জনগণের সুবিধার্থে এর থেকে ভালো কোনো বিল হতে পারে না। কেন এরকম বলছি, সেটা ব্যাখ্যা করছি।
প্রথমে বিলটা ছোট্ট করে বুঝে নেওয়া যাক। FRDI-বিলটা আদতে খুবই সহজ, বা cute-ও বলা যায়। বিলটায় বলা হচ্ছে যে, যদি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, মানে সাধারণ মানুষের গচ্ছিত সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থা ব্যাংকটির না থাকে, তাহলে জনগণকে তাদের জমা-রাখা টাকার একটা অংশমাত্রই ব্যাংক ফেরত দেবে। জনগণের গচ্ছিত বাকি টাকাটা সেই ব্যাংকের শেয়ার বা অন্য কোনো মাধ্যমে handover করা হবে। মানে ধরুন, আপনি HDFC ব্যাংকে ২ লক্ষ টাকা রেখেছেন। HDFC ব্যাংক যদি বসে যায়, তবে HDFC আপনাকে বলবে, আপনি ১ লক্ষ টাকা আপাতত রাখুন। আমরা একটু দুস্টুমি করে ফেলেছি, তাই বাকি টাকাটা এখন দিতে পারবো না। বাকি ১ লক্ষ টাকার জন্য আপনাকে HDFC ব্যাংকে কিছু শেয়ার দেওয়া হল, ধরুন আপনি ০.০০৫% শেয়ার পেলেন HDFC-র। এরকম একটা ব্যবস্থা করা হবে, এই হচ্ছে মদ্যা কথা।
এরকম জনহিতকারী বিলও যে আনা যায়, ২০০৮-এর financial crash আর দিগ্গজ ইকোনোমিস্ট এবং MBA-রা না থাকলে, আমরা বিশ্বাসই করতে পারতাম না ! আহা, কি দুর্দান্ত কনসেপ্ট ! যাই হোক, ব্যাংক কত টাকা নিশ্চিতভাবে ফেরত দেবেই, এই upper limit-টা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, এখনো অব্দি limit-টা ১ লক্ষ টাকা আছে। মানে ১ লক্ষ টাকা অব্দি আপনাকে যে কোনো পরিস্থিতিতেই যে কোনো মূল্যে ফেরত দেওয়া হবেই। এই limit-টা পরে বাড়িয়ে হয়তো ৩.৫ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। সিপিএম-সহ সব রাজনৈতিক দলের সেটা দেখা উচিত। তারপর ধীরে ধীরে বিলটাকে পাশ করিয়ে দেওয়া উচিত। তবেই শুরু হবে আসল মজা ! অনেক মজা !
কিভাবে মজাটা সবাই পাবে, সেটা বলছি। তার আগে বোঝা দরকার, ব্যাংক দেউলিয়া কখন হয়। মূলত বড় ব্যবসায়ীদের লোন দেওয়ার পরে, যদি সেই লোন আদায় বা recover করতে না পারে, তাহলে সেই ব্যাংক ধীরে ধীরে দেউলিয়াপনার দিকে এগোতে থাকে। যেমন বিজয় মালিয়া লোন নিয়ে বিদেশে গিয়ে বসে বিয়ার পান করছেন, সেরকম জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি হলে। এবার সেরকম অবস্থা হলে, ব্যাংক আপনার টাকাটা নিজেদের পুনরুজ্জীবনের কাজে লাগবে, নিজেকে আবার গড়ে তোলার জন্য। বদলে ব্যাংক আপনাকে তাদের উঠে-যেতে-বসা-ব্যাংকেরই কিছু শেয়ার দেবে। ব্যাংকটা এভাবে নিজেকে আবার গড়ে তুলতেও পারে, আবার fail-ও করে যেতে পারে। fail করে গেলে, আপনি আর টাকা ফেরত পাবেন না। দুস্টুমি করলে তো সবসময় শোধরানো যায় না, তাই ফেরত পাবেন না। তখন আপনি ব্যাংকটাকে সোনামনা-কুচিপুচি বলে মাফ করে দেবেন। আর এখানেই মজাটা লুকিয়ে আছে, কে এই মাফটা করবে।
একটা ব্যাপার ভেবে দেখুন, ৩.৫ লক্ষ টাকা কিন্তু সুরক্ষিত থাকবেই, যে কোনো ধরণের পরিস্থিতিতে। সে যদি ব্যাংক দেউলিয়াও হয়ে যায়, তাও ৩.৫ লক্ষ টাকা অব্দি আপনি পাচ্ছেনই। কারণ আপনার সেই পরিমান টাকা ব্যাংকে insure করা থাকবে। ৩.৫ লক্ষের উপরের টাকাটা ব্যাংক আপনাকে হয়তো আর নাও দিতে পারে, কোনো গ্যারান্টী নেই। তো এতে খারাপ কি? যাদের গচ্ছিত টাকা ৩.৫ লক্ষের কম, তাদের তো কোনো অসুবিধে নেই। মানে অসুবিধে হবে যে সব লোকেদের, তারা হল মূলত মধ্যবিত্ত, আর উচ্চ-মধ্যবিত্ত। মানে এই IT, Engineering, public সেক্টরে কাজ করা বা ছোট ব্যবসা-করা তাবৎ জনগোষ্ঠী, অনেকেই যুবক-যুবতী। এই ক্লাসের মানুষেরাই তাঁদের টাকা খোয়াতে পারেন বা তাদের টাকার devaluation হতে পারে, এই নতুন বিলের চক্করে। কিন্তু এই শ্রেণীর মানুষেরা হচ্ছেন তারাই, যারা স্বপ্ন দেখেছিল এবং এখনও দেখে বিজেপিকে নিয়ে। যারা স্বপ্ন দেখে, মার্কেট ইকোনোমি একদিন এদের উচ্চবিত্ত করে তুলবে। এরা স্বপ্ন দেখে, বিজেপির "development" ভারতকে প্রবলভাবে এগিয়ে দেবে প্রগতির দিকে। এরা ২০১৪-তে বিপুলভাবে বিজেপিকে ভোটও দিয়েছিল [১]। তো এরা এতো স্বপ্ন দেখে ফেললো, আর সেই স্বপ্নের কোনো মূল্য দেবে না, তা হয় নাকি? এমনি সময় "মার্কেট ইকোনোমি", "মার্কেট ইকোনোমি" করে লাফাবে, আর নিজের গচ্ছিত টাকার বেলায় safe খেলবে - তা হয় কি করে?
তাই এই ক্লাসটাকে পড়তে দেওয়া হোক মার্কেটের পাল্লায়। সরাসরি বুঝুক, মার্কেটের উত্তাপ কাকে বলে। যারা গরিব, তাঁরা তো সুরক্ষিত থাকছেনই। বাকি সুবিধাভোগী ক্লাসটাকে এবার দায়িত্ত্ব দেওয়া হোক নিজেদের এবং নিজেদের পছন্দের। শুধু "নোটা", বিজেপি, কংগ্রেস - এসব choose করে চলবো, আর নিজেদের গায়ে একটুও আঁচ লাগতে দেব না, তা তো হয় না। এরা শুধু বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের বদলে রুই মাছ কিনে, বা কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার বদলে কাকদ্বীপ ঘুরতে গিয়ে, বলবেন যে lifestyle adjust করছি - সেটা আর কদ্দিন চলবে। গরীবরা যে প্রচন্ড হারে আরো পিছিয়ে পড়ছেন, সেটা এই মধ্যস্বত্ত্বভোগী, সুখী middle class-টা realize-ই করতে পারেনা। কোন পার্টির ইকোনোমিক পলিসি কি, সেটা এই শ্রেণীর মানুষদের সরাসরি বোঝানোর সময় এসে গেছে। সিপিএমের মতো পার্টির তাই উচিত, এই গোষ্ঠীটাকে নিজেদের কর্মের ফল বোঝানোর। আশা করবো, এই সুবিধাভোগী ক্লাসকে বাঁচানোর যেন মিনিমাম চেষ্টাই সিপিএম করে। এই মধ্যবিত্তরা সিপিএমকে ভোটও দেয় না, সমর্থনও করে না, উপরন্তু communism-কে obsolete বলে মনে করে। কি দরকার এদের পাশে দাঁড়ানোর? তাতে হয়তো, কিছু মধ্যবিত্ত যারা এখনো সিপিএমকে ভোট দেন, তারা suffer করবেন, কিন্তু এটুকু collateral damage মেনে নেওয়া যায়, বৃহত্তর class consciousness-এর স্বার্থে।
[১] Christophe Jaffrelot; The Class Element in the 2014 Indian Election and the BJP’s Success with Special Reference to the Hindi Belt; Studies in Indian Politics; May, 2015
No comments:
Post a Comment