Friday, April 21, 2017

মনের ম্যানিপুলেশন - Manipulating yourself

বরফ পড়ে যেসব দেশে, সেখানে সূর্য ডুবে যাওয়ার বেশ পরেও একটা সফেদ উজ্জ্বলতা থেকে যায়। আকাশে যদি চাঁদের মায়াটা কখনো নাও থাকে, রয়ে যায় চাঁদের গরিমার মোহটা। এই সাদাটে ভাবটার রেশ থেকে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকে দূরে সরিয়ে, একটু মন দিয়ে চারপাশটাকে অনুভব করলে, মনের মধ্যে একটা বেয়াড়া ইচ্ছের জন্ম হয়। মনে হয় জীবনানন্দকে এখানে এনে ফেলি। সাথে নির্মলেন্দু গুনকেও। প্রথমজন প্রকৃতির এই নিস্তব্ধ রঙ্গকে ভালোবাসবেন আর অক্ষর জুড়ে তৈরি করবেন আবেগ। আর দ্বিতীয়জন ওনার ভালোবাসাকে ভালোবাসবেন, তাতে তৈরি হবে কিছু "বরফমাখা জল"।

বরফের দেশে তো ওই হিমশীতল জলই আছে। বাকি সবকিছুতেই উষ্ণতার অভাব। তাই বোধ হয় পাখিরাও এখানে গান গায় না, ঠোঁট বেঁকায় না, গাছে বসে না। অন্য কোনো পাখি নয়, তবে একটা পাখির কথা বেশ মনে পড়ে। সকালে উঠে ডাকতো। মামাবাড়িতে কিংবা গ্রামের বাড়িতে বেশি শুনতে পেতাম। তবে আমাদের বাড়িতেও যে শোনা একদম যেতো না, তা নয়। সেদিন সকালে বাবা যখন ফোনে প্রাত্যহিক জীবনের চর্যা শোনাচ্ছে, পিছনে সেই পাখির ডাকটা শুনতে পেলাম। ডাকটা আমাকে বোধ হয় স্বস্তি দিলো, যে সব কিছু নিজের গতিময়তায় ঠিকঠাক আছে। কিন্তু মনটা তাতেও কেন জানিনা খারাপ করে এলো।

মনের কোনো দোষ অবশ্য নেই। যখন খুশি তার অসুখ হয়। কারণ মনকে তো আমরা খুব একটা আলাদা করে যত্ন করি না, বা অসুখ থেকে সরিয়ে তুলি না। শরীরকে যাও বা দায়ে পড়ে যত্ন করতে হয়, মনের বেলায় সে রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অতএব অবহেলাই ওর প্রাপ্য হয়। কিন্তু আমাদের যত বয়স বাড়ে, এই দক্ষতাটাই বোধ হয় সব থেকে প্রয়োজনীয় হয়। কিভাবে মনকে শরীরের মতোই বুঝে নেওয়া যায় এবং তাকে পরিপূর্ণ পুষ্টি দেওয়া যায়, যত্ন করা যায়। মানে মনের ম্যানিপুলেশন।

যদি প্রেম করার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সেই ভীতকে সম্বল করে এই নিজেকে ম্যানিপুলেশনের গেমে একটা advantage নিয়ে শুরু করা যায়। এই খেলাটা নিজের সাথেই খেলতে হয়, নিজের স্বার্থেই। আর এই খেলায় শরীর পালন করে আপনার পক্ষে থাকা এক বন্ধুর ভূমিকা। ঠিক কোন হরমোনগুলো মনের ঠিক কোন জিনিসটা হরণ করে, শরীর তার খোঁজ রাখে। যেমন ধরুন চকোলেট, এটা খেলে এমন এক হরমোন ক্ষরণ হয়, যা আপনার মনকে খুশি করবে। সুতরাং, মনের কোনো অকারণে খারাপকরা সময়ে এই ওষুধ কাজ করে যেতে পারে। আবার খুব অবসাদ বা আলস্যের সময়, একবার ঈষদুষ্ণ জলের তলায় যদি শরীরটাকে ভিজিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। একটা জমাট ঘুমও মনকে বেশ খানিকটা সতেজ করে তোলে, আর ঘুমের ভিতরে মন নিজের মতো করে অনেক কিছু সাজিয়ে-ঘুছিয়েও নেয়। আবার কনফিডেন্স বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নিজে যে কাজটায় বেশ পারদর্শী বা যে কাজটা করতে বেশ পছন্দ, সেরকম কিছু করে নেওয়া যেতে পারে। নিজের যে কোনো নতুন সৃষ্টিই মনের মধ্যে একটা আলাদা আরাম বয়ে আনে। এসব ছাড়াও খুব খারাপ লাগলে, স্রেফ প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলেও, নিজের অস্তিত্বের একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এই বিশ্ব-সংসারে সবকিছুর সাথে একাত্ব হওয়ার অনুভূতিটা কিন্তু কম কিছু নয়।

তবে যখন মন কোনো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন তার রোগ নির্ণয় করে তাকে সঠিক ওষুধ বাতলানোটাই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। আর সবার জন্য তো ওষুধ এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু যদি নিজেদের মধ্যেই একটা দ্বৈত স্বত্ত্বা তৈরি করে মনকে নজর রাখা যায়, তাহলে কিন্তু মনের আলাদা করে খেয়াল রাখা যায়। অন্তত মনের ভিতরে কি চলছে, তার হালহকিকতের একটা আভাস মেলে। সেটুকুই যথেষ্ট মনের যত্ন নেওয়ার শুরু করার জন্য। শুরুটাই হোক, সু-মনে থাকার। বরফের দেশের রাতে সূর্যের অনুপস্থিতিতে সবকিছুই খুব হতাশাজনক লাগতে পারে, কিন্তু তখনও তো থেকে যায় সূর্যের ফেলে যাওয়া আলোর রেশ। তা দিয়ে তো জীবনানন্দের মতো কেউ রোমাঞ্চও তৈরি করতে পারেন। তাই এই আশাটুকুই থাকুক না!

No comments:

Post a Comment