বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেলো না।
মা-টা বেশ খানিকটা চেষ্টা করেছিল। পঙ্কিলতায় ডুব দিয়েছিল। বাবা-টা সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না। তবে এই ধরণের বাচ্চাদের কি বাঁচানো যায়? শুধু মা-বাবার ভালোবাসা দিয়ে কি কোনো শিশু বেঁচে থাকতে পারে? খাওয়া-পড়া-পরিবেশ এসবকিছুরও তো দরকার। আর পরিবেশ তো সর্বাগ্রে সেই শিশুর বিপরীতে। কারণ সে তো জন্ম নিয়েছে, হিন্দু-মা আর মুসলমান-বাবার ঘরে।
"ভালোবাসার শহর"-নামক ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি বানাতে বানাতে পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী কি ভেবেছিলেন, জানি না। তবে ছবির ওই ছোট্ট শিশুটার সাথে পশ্চিমবঙ্গকে রূপক হিসেবে বেশ মেলানো যায়। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গকে তার অভিভাবকরাই মেরে ফেলবেন, টুঁটি টিপে। কিছুটা হতাশায়, কিছুটা নিরুপায় হয়ে। রাজ্যের প্রতি ভালোবাসার মৃত্যু ঘটবে ভালোবাসারই শহরে। সেদিকেই এগোচ্ছি আমরা। সেদিকেই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। ধর্মের জিগির তুলে রাজ্যকে ভাগ করার যে ক্ষমতালোভী খেলায় দুটি রাজনৈতিক দল নেমেছে - তাতে পাল্লা দিয়ে নাচতে উদ্যোগী হচ্ছেন আমার রাজ্যবাসী। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখা ও শোনা, বড়ই কষ্টের।
তবে ইন্দ্রনীল বাবু স্বতন্ত্রভাবে ছবি বানিয়ে অন্য এক আশার কথা শুনিয়ে গেলেন। যেভাবে YouTube আর Vimeo-তে সিনেমাটা release করে দিলেন, সেটা ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। বড় দৈর্ঘ্যের ছবিও এভাবে release হোক, সেটা চাইবো। কিন্তু এসব ছাড়াও সিনেমাটির মধ্যে একটা লুকোনো সারল্য আছে। সেটা ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি বলে ভালো লাগে। আবার কলকাতার সাথে সিরিয়ার শহরের প্যারালালিজম - বেশ আলাদা ধরণের প্রচেষ্টা বলে মনে হয়। আর ফিল্মের শেষে সাবটেক্সটের কথাগুলো একটু অপাংক্তেয় মনে হলেও, শৈল্পিক ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু ইন্দ্রনীল বাবুর কাছ থেকে আর একটু বেশি চাহিদাও থেকে যায়। "ফড়িং" বা "বাঙালি ভূতের গল্প"-এর মতো সারল্যের সাথে প্রাপ্তমনস্কতা যুক্ত করলে, উনি যে ম্যাজিকটি তৈরী করতে পারেন - ওনার কাছ থেকে সেরকম একটা প্রত্যাশা রয়েই গেল। যদিও বাংলার "চমকবাজ" ফিল্ম-মহলে উনি নিজের কাজ করার কতটা স্বাধীনতা পাবেন, সে ব্যাপারে সংশয় থাকছে। তবুও মানুষের সমবেত সাড়া দেওয়ার আশাটা এখনো রাখছি। Ritwick Chakraborty, Jaya Ahsan, Sohini Sarkar - সকলকে ধন্যবাদ, ফিল্মটার সাথে যুক্ত থাকার জন্য
No comments:
Post a Comment