Thursday, June 16, 2016

প্রাক্তন - Praktan - Movie Opinion

প্রথমে খারাপের কথা বলবো। খুব প্রচলিত এক ঘটনা। আপনার আমার সবার জানা চিত্রনাট্য। তাও সিনেমাটি যতক্ষণ ঘটনাকেন্দ্রিক ছিল, ততক্ষন মানা যাচ্ছিলো। কিন্তু সিনেমাটি যখনই conclusion-এর দিকে এগোতে থাকলো, যখনই একটি মেসেজ-দেওয়া-ধর্মী ছবি হওয়ার চেষ্টা করলো, তখন থেকেই প্রচন্ড বিরক্তিকর হওয়া শুরু হলো।

ঋতুপর্ণা-এবং-প্রসেনজিৎ-এর সংসার ভেঙে যায় কারণ প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণার চাকরি-করা, উদারপন্থী মনোভাব মেনে নিতে না পারায়। যদিও ঋতুপর্ণা বহুবার বহুভাবে চেষ্টা করে যায় সংসার টিকিয়ে রাখার, প্রসেনজিৎ-এর মনোভাবের সামান্য উন্নতি ঘটানোর। কিন্তু প্রসেনজিৎ একজন টিপিক্যাল Indian পুরুষতান্ত্রিক সমাজের product. তিনি Indian double standard-এরও সার্থক নিদর্শন। নারী স্বাধীনতার কথা বলে "স্বাধীনতা" ভুলে যান। অবশ্যই ঋতুপর্ণারও ভুল-ত্রুটি ছিল সংসার না করতে পারার জন্য। কিন্তু সে অনেক চেষ্টা করছিলো সম্পর্ক মেরামতের। সেখানে প্রসেনজিতের কোনো চেষ্টাই ছিল না, বরং expectation ছিল যে প্রচেষ্টা-টা অন্য তরফ থেকেই হবে।

এই পর্যন্ত সব ঠিক-ই ছিল, কারণ এগুলো স্রেফ ঘটনা, মানুষ এরকম হতেই পারেন। মুশকিল হলো যখন ঋতুপর্ণা প্রসেনজিতের বর্তমান স্ত্রী অপরাজিতা আঢ্যকে দেখে introspection করতে আরম্ভ করলো। এতো strong একটি character, কিন্তু ঐ বর্তমান স্ত্রীর সামনে পড়ে কেমন weak থেকে weaker হতে শুরু করলো। এবং শেষ অব্দি কান্নাকাটি করে নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে গেলো, যেন প্রাক্তন সম্পর্কে সেই ভুল করেছে। সিনেমাটির এই aspect-টি-ই প্রচন্ড বিরক্তিকর।

ঋতুপর্ণা একজন independent, strong কিন্তু মানিয়ে নিতে জানা মেয়ে। আর অপরাজিতা সেখানে টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত মেন্টালিটি-এর বাঙালি মেয়ে। হ্যাঁ, এখানে আমি stereotype করছি কারণ "প্রাক্তন"-এর সাফল্য প্রমাণ করে এই টিপিক্যাল মেয়ের মনোভাব কতটা prevalent ভারত ও বঙ্গে। অপরাজিতা আপাতভাবে স্বাধীনচেতা। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন যে সংসারের জন্য তার একদম নিজের আকাঙ্খা বলে কিছু রাখা যাবে না। তার ইচ্ছেগুলো যেন একদম সংসারের আকাঙ্খার সমার্থক হয়। তিনি চাকরি করতেন আগে, কিন্তু সুযোগ পেয়ে, ঘরে বসে, স্বামীর আয়ে, স্বামীর উন্নতিতে খেয়ে, সংসার করতে তার দ্বিধা নেই। তার নিজের talent-কে বিসর্জন দিতে তিনি কুন্ঠা বোধ করেন না। তার নিজের কোনো initiative নেই। এই হচ্ছে সেইসব mentality থেকে আসা মেয়ে যারা feminism-এর কথা নিয়ে চিৎকার জুড়তে পারেন, কিন্তু রেস্তোরাঁয় date-এ গেলে, expect করেন যে ছেলেটি-ই তার wallet বের করবে।

আর প্রসেনজিতের conclusion-গুলো আরো বিরক্তিকর। তিনি বলছেন তিনি ভালো মানুষ হয়ে গেছেন অপরাজিতাকে পেয়ে। আদপেই তা নয়। তিনি তার মনের মতন ঘরে সাজানো পুতুল পেয়ে গেছেন, তাই তিনি খুশি। এখানে তার দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় কি বদলালো, প্রাক্তন সম্পর্কের ভেঙে যাওয়ার পর, তিনি কি শিক্ষা পেলেন - সেটা কেউ জানেনা।

খুব অপ্রত্যাশিত আবার একদিক থেকে প্রত্যাশিত-ও বটে, যে প্রচুর মানুষ সিনেমাটি দেখছেন এবং বলছেন যে তারা relate করতে পারছেন। এটা যদি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা নামক একটি পপুলিস্ট জুটির ফিরে আসার হুজুগে হয় তাহলে ঠিক আছে, নাহলে মানে দাড়াঁবে, আমরা এখনো সেই male-dominated একটা চিন্তা ভাবনা খুব গভীরে পোষণ করে চলেছি। সব থেকে আগে যেটা দরকার যে মেয়েদের এই চিন্তাভাবনার এক আমূল বদল। এতো এতো উজ্জ্বল উদাহরণের পরেও কেন তারা এই চিন্তা থেকে বেরোতে পারছেন না, সেটা বড় কোনো বিশেষজ্ঞ বলতে পারবেন।

এবার কিছু ভালো কথা বলা যাক। গায়কদের include করাটা খুব পছন্দের। তাছাড়া সমগ্র মুভির sub-plot-গুলোকে "প্রাক্তন" দিয়ে বাঁধাটা বেশ। যদিও সেই প্রাক্তন ভাবনাটা মনের ভিতর আনাটা দর্শকের responsibility. গানগুলো নিয়ে আমার কিছু বলা উচিত না। অনিন্দ্য, অনুপম আমার প্রিয় এবং পছন্দের genre-এর শিল্পী, সেই জন্যে। অভিনয়ে সকলেই ভালো, ঋতুপর্ণাকে বেশি ভাল লেগেছে। Script ভালো, বোধ হয় একটু বেটার করা যেত।

শেষে বলি. নন্দিতা-শিবপ্রসাদের একটা ছোট্ট তারিফ করতে হয় তাদের বাঙালি মনন বোঝার জন্য (এই একই কারণে আমি মমতা ব্যানার্জীকেও ক্রেডিট দিই)। গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে কমার্শিয়াল আর প্যারালেল সিনেমার মাঝে একটা sweet spot ধরে রাখতে চেয়েছেন, সেটা প্রশংসনীয়। মুশকিল হলো সেটা ধরে রাখতে গিয়ে এবং একটা message-দেওয়া জাতীয় সিনেমা বানাতে গিয়ে, সিনেমাগুলি কত-টা ভালো হচ্ছে, তা প্রশ্নের মুখে পড়ছে বলে, আমার মনে হয়। Personally, ইচ্ছে এবং (সামান্য কিছুটা) অলীক সুখ বাদে বাকি কোনো সিনেমা-ই বেশ ভালো কিছু নয়। ওনারা খুব safe একটা territory-তে খেলছেন। ইচ্ছের মধ্যে যে boldness, যে honesty, যে complication-কে ধরার subtle প্রয়াস ছিল, সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বেলাশেষে-তে সেটা ফিরে পাওয়ার কিছুটা আশা পেলেও "প্রাক্তন" সেটাকে প্রায় শেষ করলো। আমার মনে হয় ওনারা অন্য একটি উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছেন। বাংলা ছবির সবচেয়ে খারাপ যে লেভেলটি, ওনারা বোধ হয় সেটিকে উন্নত করতে চাইছেন, যাতে at least কপি-করা, সাবস্টেন্স না-থাকা সিনেমা গুলো, সব থেকে খারাপ ছবি না হয়। সেদিক থেকে প্রয়াস-টা খারাপ না।