Tuesday, February 20, 2024

রাঙা বসন্ত

শীতকাল শেষ হয়েছে সুপর্ণা,
এবার ওঠো।
চারিদিকে পলাশের রং লেগেছে,
তোমার দেহ থেকেই এসেছে সে রঙ,
ছিটকে পড়েছে আকাশে বাতাসে,
বিবর্ণ ফ্যাকাশে একপেশে পরিবেশে।
সেই রাঙা বসন্তে সিঞ্চিত হচ্ছে মন,
ভেসে যাচ্ছে হৃদয়, জুড়িয়ে যাচ্ছে চোখ।
বইমেলা শেষ করে, সরস্বতী বন্দনার পরে,
আমাদের এখন রক্ত-"রাঙা হাসি রাশি রাশি"।

যদিও রক্ত আমাদের কারোর নয়, 
শুধু তোমারই সুপর্ণা।
তোমার কপাল ফেটে যে রক্ত বেরিয়েছে,
তোমরা হাত-পা ছড়ে যে রক্ত বেরিয়েছে,
তোমাকে টেনে হিঁচড়ে ভেড়িতে নিয়ে
যাওয়ার সময় মাটিতে পড়ে থাকা রক্ত,
তোমার ওপর গা-জোয়ারি করার পর
তোমার যোনি থেকে পা দিয়ে 
গড়িয়ে পড়া রক্ত। 
সেই রক্তের রঙেই আজ বসন্ত রাঙা। 
আমরা সেই রঙেই হাসছি সুপর্ণা,
রাশি রাশি সে হাসি,
নাগরিক সেই হাসি,
পাহাড়-জুড়োনো সেই হাসি,
সাগরভাঙ্গা সে হাসি,
সন্দেশখালিতে সীমাবদ্ধ নেই সে হাসি।
আমরা ভীষণ হাসছি সুপর্ণা।
এবার তুমি জেগে উঠে এই হাসি থামিয়ে দাও,
তোমাকে জাগতে হবেই,
নাহলে এই রাঙা হাসি যে কক্ষনো থামবে না,
থামতে পারে না।
---
সোহম

Sunday, December 10, 2023

আমায় যদি মরতেই হয় (If I must die)

ডক্টর রিফাত আল-আরীরের লেখা একটি অসামান্য কবিতা "If I Must Die" ভাবানুবাদ করলাম, রিফাতকে উৎসর্গ করে (রিফাত গত ৬ই ডিসেম্বর ইসরায়েলের বোমার আঘাতে মারা গেছেন)। মূল লেখাটি নিচে দেওয়া আছে।

আমায় যদি মরতেই হয়,
তোমায় কিন্তু বাঁচতে হবেই,
আমার কথা বলতে, আমার গল্প শোনাতে,
আমার পড়ে-থাকা জিনিসপত্র বেচতে।
সেই পয়সা দিয়ে তুমি কিনো
একটুকরো সাদা কাগজ আর কয়েকগজ সুতো -
তাই দিয়ে তৈরি কোরো একটা সাদা ঘুড়ি।
এরপর গাজার কোনো পিতৃহারা শিশু
আকাশের দিকে যখন তাকাবে,
আর তার স্বর্গীয় বাবার অপেক্ষা করবে -
যে বাবা কোনো বিস্ফোরণের পর নিরুদ্দেশ,
যে তার সন্তানকে বিদায় জানাতে পারেনি,
কাউকেই বিদায় জানাতে পারেনি,
এমনকি নিজের শরীরকেও নয়, নিজেকেও নয় -
সেই অভাগা শিশুটি যখন ঘুড়িটা দেখবে,
আমার যে ঘুড়ি, তুমি বানিয়েছো,
যে ঘুড়ি আকাশে উঁচু মেঘের মত উড়ছে,
যে ঘুড়ি অবশেষে মুক্ত বাতাস পেয়েছে,
যে ঘুড়ি মানেনি দেশ-সীমান্তের অলীক বাধা,
সেই ঘুড়ি দেখে হয়তো 
সেই সবহারানো শিশুটি ক্ষণিকের জন্য ভাববে,
কোনো শ্বেতশুভ্র স্বপ্নের পরী সত্যিই আছে,
যে পরী এখনও পৃথিবীর বুকে ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারে।
যদি আমাকে মরতেই হয়,
সেই মৃত্যু যেন একটুকরো আশা বয়ে আনে,
একটুকরো গল্প হয়ে থেকে যায়।
---
রিফাত আল-আরীর (অনুবাদে সোহম)

If I Must Die (Refaat Alareer)
---
If I must die,
you must live
to tell my story
to sell my things
to buy a piece of cloth
and some strings,
(make it white with a long tail)
so that a child, somewhere in Gaza
while looking heaven in the eye
awaiting his dad who left in a blaze–
and bid no one farewell
not even to his flesh
not even to himself–
sees the kite, my kite you made, flying up above
and thinks for a moment an angel is there
bringing back love
If I must die
let it bring hope
let it be a tale. 

Wednesday, August 09, 2023

ওপেনহাইমার নিয়ে কিছু কথা (নো স্পয়লার)

চারিদিকে খুব একটা বেশি আর কোনো কথাবার্তা নেই, "ওপেনহাইমার" রিলিজ করার পর। অভিনয়ের প্রশংসা, চিত্রায়নের মুগ্ধতা, বিশাল স্ক্রিনের চমক - ছবির মূলত এই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে বেশ অনেকগুলো প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েছে। কিন্তু চলচিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে তেমন সাড়াশব্দ নেই। আসলে নোলানের মতো এতটা মেইনস্ট্রিম, পপুলার, "অরাজনৈতিক" একজন পরিচালক এমন একটা ছবি বানিয়ে ফেলেছেন, যা দেখে অনেকেই একটু হতভম্ভ হয়ে গিয়েছেন। তার ওপর ছবিটা মূলত ওপেনহাইমার এবং অ্যাটম বম্ব নিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদপে ছবিটায় ম্যাকার্থি যুগের কলঙ্কের ঝলকই বারবার বেরিয়ে এসেছে। সেই কারণেও বোধ হয় এই আপাত নিস্তব্ধতা।

ম্যাকার্থি যুগ আমেরিকার একটা ওপেন সিক্রেট বলা যায়। অনেকেই বিষয়টা সম্পর্কে জানে, কিন্তু সেই নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যায়না। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে লিবারাল ডেমোক্রেসি বা উদার গণতন্ত্রের পরাকাষ্ঠা হয়ে আমেরিকা নিজেকে দেখতে চেয়েছিল, তার ঠিক বিপরীতটাই ভিতরে ভিতরে ঘটেছিল। ১৯৪০ এর দশকের শেষের দিক থেকে প্রথম ১০ বছর প্রবলভাবে ম্যাকার্থি যুগের কর্মকাণ্ড চলেছিল এবং প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে এর জের ছিল, কিছুটা হালকা চালে। এই যুগের প্রধান যে বক্তব্য ছিল, তা হল যে কোনো বামপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষকে হেনস্থা করা। সরকারের বিভিন্ন শাখা থেকে এই স্ট্যান্ড নেওয়া হয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন আইন পাশ করে সোশ্যালিস্ট এবং কম্যুনিস্টদের কার্যত ব্যান করা হয়েছিল, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থায়, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সেনেটর জোসেফ ম্যাকার্থির সময় থেকে এই পলিসি দ্রুতগতিতে সরকারের বিভিন্ন শাখায় ও অফিসে ছড়িয়ে পড়ে। উইকিপিডিয়াতে এই সম্পর্কে আরও খুঁটিনাটি পাবেন।

এবার এই সময়ের বড় একটা মুস্কিল ছিল এই যে, বড় বড় বিজ্ঞানী, অভিনেতা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা সেই সময় বেশিরভাগই সমাজবাদী ভাবনাচিন্তায় প্রভাবিত ছিলেন, সে আইনস্টাইনই হোক, বা চার্লি চ্যাপলিন, বা ওপেনহাইমার। মনে রাখা দরকার, নাৎসী জার্মানি প্রথম যাদের ওপর আক্রমণ করে তারা কম্যুনিস্ট ছিলেন, ফলে ইউরোপের বড় বড় বিজ্ঞানী এবং পন্ডিতরা, যারা সমাজবাদী চিন্তাধারা নিয়ে চলতেন, তারা অনেকেই আমেরিকায় পালিয়ে আসেন। আমেরিকাও ১৯৪০ এর আগে তাঁদের সাদরে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই আমেরিকাই পরে এই বামপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষদের হেনস্থা শুরু করে।

এই পুরো কাজটা কিন্তু বেশ কঠিন ছিল সেই সময়। কারণ সেই সময়ে আমেরিকাতেও সমাজবাদী চিন্তাভাবনার বেশ ভালো প্রসার ছিল। ইউজিন ডেবস সোশ্যালিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার, যদিও জিততে পারেননি একবারও, কিন্তু ওনার জনপ্রিয়তা ভালোই ছিল। ইউনিয়ন বা কর্মী সংগঠনগুলোও তখন বেশ শক্তিশালী ছিল। এমনকি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাংকলিন রোসভেল্ট যখন নিউ ডিল প্রণয়ন করে প্রচুর সরকারি সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করেন, তাও সম্ভব হয়েছিল কারণ সাধারণের মধ্যে একটা প্রবল বামপন্থী ও ইউনিয়ন ধর্মী হাওয়া ছিল। তাছাড়া আমেরিকার বড় বড় কলেজগুলোতে অধ্যাপক ও ছাত্ররা মূলত বামপন্থীদের পক্ষে ছিলেন এবং বেশ খোলামেলাভাবেই তাঁদের রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশ করতেন। ফলত এই পুরো ব্যাপারটাকে বন্ধ করার জন্য এক বড়সর কর্মকাণ্ডের দরকার ছিল, এবং সেটাই সেনেটর ম্যাকার্থি এবং পরে FBI প্রধান হুভার তদারকি করেছিলেন।

আমরা নোলানের "ওপেনহাইমার" সিনেমায় দেখতে পাচ্ছি, যে এত বড় একজন বিজ্ঞানী, যাঁকে father of atomic bomb বলা হচ্ছে, যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া, তাঁকেও কি ধরনের হেনস্থা সহ্য করতে হচ্ছে। তাহলে এটা কল্পনা করতে কষ্ট হয় না, যে সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা সামান্য বামপন্থী ধারণাতেও বিশ্বাস করতেন, তাঁদের সাথে কি করা হয়েছিল। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে চলা এই ক্রমাগত অত্যাচার, হত্যা, টর্চারের পরে এই ধরনের চিন্তা সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যে থেকে প্রায় নির্বাসিত হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলগুলো থেকেও এই ধরনের পড়াশোনা সিলেবাস ও ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আমেরিকার পপ কালচার ও সাম্প্রতিক ইতিহাসে শ্রমিকদের যে বিশাল পরিমান প্রভাব ছিল, তার কিছুই প্রায় অবশিষ্ট ছিল না এই সময়ের পরে। আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে কিছু জানিনা, কারণ সযত্নে এই বিষয়টাকে আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে, ফুকুয়ামার ভাষায় বললে end of history ।

সবথেকে বড় পরিহাস বোধ হয় এটাই, নাৎসী জার্মানির হাত থেকে বাঁচতে যে উদার আমেরিকায় দেশবিদেশের বিজ্ঞানীরা তাদের স্বাধীন চিন্তাভাবনা করার পরিসর পাবেন ভেবেছিলেন, সেই আমেরিকাই তাঁদের ওপর গোপন আক্রমণ শানিয়েছিল। আজ বার্নি স্যান্ডার্স এর হাত ধরে গত এক দশকে যে এখানে আবার কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোশ্যালিজম, ম্যাকার্থি যুগের ৫০ বছর পরেও, সেটা একটা বিস্ময়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে নোলানের এই সিনেমা সত্যিই বেশ সময়োপযোগী। নোলানকে বিশেষ ধন্যবাদ যে উনি এরকম একটা বিষয় নিয়ে ছবি করেছেন, এবং উনি করেছেন বলেই কাতারে কাতারে মানুষ দেখছে। বেশ অনেকদিন টিকিট না পাওয়ার পরে শেষ অব্দি বড় স্ক্রিনে সিনেমাটা দেখে ভালো লেগেছে। কিছু কিছু অভিযোগ থাকলেও, এখন সেসবের সময় নয়। এখন সময় বুঝে নেওয়ার যে, এই মতাদর্শকে মুছে ফেলার চেষ্টা বারবার করা হলেও তাকে মুছে দেওয়া সম্ভব নয়, ম্যাকার্থি, হুভার বা অন্য কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।

Sunday, February 19, 2023

প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ ৫ (AI in the Wild)

ChatGPT সম্বন্ধে এতদিনে অনেকেই জানেন। যদিও এই সফ্টওয়্যারের পিছনে যে প্রযুক্তি রয়েছে, তার অন্দরের খবর তেমন পরিষ্কার নয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে নিঃসন্দেহে এটি একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য technological product। ChatGPT একটি conversational robot (অথবা bot), যাকে একটি ওয়েবসাইটের (chat.openai.com) মাধ্যমে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এই ওয়েবসাইটে একটি চ্যাটবক্সের মাধ্যমে আপনি এই bot-এর সাথে যে কোনো বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন ও একে প্রশ্ন করতে পারেন। এই bot-টির পিছনে কাজ করছে একটি Artificial Intelligence (AI) ইঞ্জিন, যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন অন্দরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তথ্যকে বিশ্লেষণ করে তৈরী করেছে একটি সফ্টওয়্যার মডেল। সেই মডেলটিকে ব্যবহার করে ChatGPT কথোপকথনের মতো করে উত্তর দিতে পারে আপনার যে কোনো প্রশ্নের।

ChatGPT-র সঙ্গে Google-এর মতো সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের বিস্তর পার্থক্য আছে। Google শুধুমাত্র আমাদের দেওয়া কিছু শব্দের ভিত্তিতে ইন্টারনেট থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইটের খোঁজ দিতে পারে। কিন্তু ChatGPT-কে আমরা কোনো প্রশ্ন করলে, সে তার সঞ্চিত তথ্যকে বিশ্লেষণ করে একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে সক্ষম। সবথেকে চমকপ্রদ বিষয় হলো, ChatGPT-র বিশ্লেষণী ও সৃষ্টিশীল ক্ষমতার সংমিশ্রণ। মানে এটি তথ্যকে বিশ্লেষণ করে এমন অভিনব আঙ্গিকে উত্তর দিতে পারে, যে উত্তর হয়তো আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। ফলতঃ খানিকটা একজন প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের মতোই, ChatGPT তার সফ্টওয়্যার মডেলকে সম্বল করে নতুন বিশ্লেষণ তুলে আনতে পারে, এবং সেটা প্রায় যে কোনো বিষয়েই। Google-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলোর এই ক্ষমতা এখনো নেই। 

তবে ChatGPT-এর উত্তরকে সব বিষয়ে যে সর্বক্ষণ ভরসা করা যায়, এমন নয়। যেমন কোনো গাণিতিক প্রশ্নে এর উত্তর অনেক সময়ই ভুল হতে পারে। আবার ChatGPT-র সাথে বেশিক্ষন ধরে কথাবার্তা চালিয়ে গেলে, কিছু সময় পর থেকে সে প্রাসঙ্গিক উত্তর হয়তো নাও দিতে পারে। এতদসত্ত্বেও ChatGPT-এর মূল কার্যকারিতা একটি Knowledge Synthesis Assistant-এর মতো। মানে কোনো বিষয়ে আপনি যদি সংক্ষেপে কিছু জানতে চান, সেক্ষেত্রে ChatGPT খুবই উপকারী। যেমন ধরুন, সত্যজিৎ রায় এবং মৃনাল সেনের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল, সেই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত একটা ধারণা আপনাকে দিয়ে দিতে পারে। কিংবা মোদী সরকারের আমলে ভারতের অর্থনৈতিক হাল কেমন, সে বিষয়ে ছোট্ট একটি ধারণা দিতে পারে। এছাড়া, ChatGPT computer programming বা coding-এর জন্য ভীষণরকমভাবে উপকারী। ইন্টারনেটের বিভিন্ন কোণ ঘেঁটে, বিশ্লেষণ করে coding-এর বিষয়ে খুব প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে এটি সক্ষম। ChatGPT-এর মতো উন্নত একটি সফ্টওয়্যার-এর উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসের দিকে একটু চোখ ফেরানো যাক। 

গত এক দশকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকেই ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে এক বিশেষ ধরণের অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়, যাদের মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম বলা হয়ে থাকে। গুগল ফোটোস যে আমাদের পরিবার পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে সকলকে আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখতে পারে, তা কিন্তু হয় মেশিন লার্নিং-এর সাহায্যেই। ইউটিউব খুললেই আজকাল আমরা আমাদের পছন্দমতো ভিডিও রেকমেন্ডেশন পেতে থাকি। এর পিছনেও আছে মেশিন লার্নিং। তবে মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে গবেষণা কিন্তু চলছে প্রায় ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে এক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট ২০১২ সাল।

২০১২ সালের আগে মেশিন লার্নিং নিয়ে বহু রিসার্চ ল্যাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হতো ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ গবেষণা শুধুই গাণিতিক কিছু তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তাদের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেত না। এর মূলত দুটো কারণ ছিল: data এবং computing power। আমাদের কাছে ডিজিটাল ফর্মে যথেষ্ট data ছিল না, যা মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি কার্যকরী হওয়ার জন্য অপরিহার্য। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি ডেটা বা তথ্য থেকেই কোনো প্রশ্নের সমাধান অনুমান করার চেষ্টা করে, data-ই তাদের মূল চালিকাশক্তি। ২০০০ সালের কাছাকাছি সময় থেকেই digitally data ধরে রাখার কাজটা মোটামুটি জোরকদমে এগোচ্ছিল, এবং ২০১০-এর মধ্যে মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করার জন্য বেশ ভালোরকম datasets তৈরী হয়ে গেছিল। 

কিন্তু যেদিকটায় তখনো খামতি ছিল, তা হল কম্পিউটিং পাওয়ার। মানে মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করার জন্য যে কম্পিউটার দরকার হতো, তা সাধারণভাবে পাওয়া যেত না। এই পুরো চিত্রটা বদলে গেল ২০১২-এর সেপ্টেম্বরে। ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টোর তিনজন বিজ্ঞানী দেখালেন যে, মেশিন লার্নিং-এর ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত যে CPU (Central Procesing Unit) ব্যবহার করি, তা কার্যকরী নয়।। বরং যদি Graphics Processing Unit বা GPU ব্যবহার করা যায়, তাহলে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। ইতিমধ্যে ভিডিও গেম, ভিডিও প্রসেসিং এবং সিনেমার কাজে GPU-র ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এরপর থেকে মেশিন লার্নিং-এও ব্যাপক হারে GPU-র ব্যবহার শুরু হয়। গবেষণাও তীব্র গতিতে এগোতে থাকে, সাথে সাথে AI-বিষয়ক পরীক্ষা-নিরিক্ষাও। গত এক দশকের ব্যাপক এবং বিবিধ AI গবেষণার অন্যতম সফল সফটওয়্যার হল ChatGPT । 

ChatGPT নিয়ে এতো উত্তেজনার কারণ হল যে, এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য তৈরী নয়। যেমন এটি শুধুমাত্র একটি computer programming assistant নয়, বা এটি শুধুমাত্র একটি ছবির ভিতর কি কি বস্তু আছে তা চিহ্নিত করছে না। এর আগে বিভিন্ন মেশিন লার্নিং সফ্টওয়্যার কোনো একটি নির্দিষ্ট ধরণের কাজের বিষয়ে বেশ কার্যকরী হয়েছে। কিন্তু এই আগের সফ্টওয়্যারের তুলনায় ChatGPT অনেক বেশি সাধারণ কাজ করতে পারে, কতকটা মানুষের মতোই। কোনো বিশ্লেষণ থেকে আমরা যেমন কোনো উপলব্ধিতে পৌঁছোই, সেরকম বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির ক্ষমতাও ChatGPT-র আছে, বরং মানুষের থেকে কিছুটা বেশিই আছে। এর একটা মূল কারণ হল, বিশ্লেষণের জন্য সে আর এখন আমাদের উপর বা আমাদের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভরশীল নয়। মনে রাখতে হবে, নতুন বিশ্লেষণের উদ্ভাবনী ক্ষমতাও আছে ChatGPT-র কাছে। সে নিজেই নতুন নতুন বিশ্লেষণ তৈরী করে সেখান থেকে নতুন উপলব্ধি করতে পারে। সেটা স্বভাবতই মানুষের উপলব্ধির গতিবেগের থেকে কয়েক গুন্ বেশি। ChatGPT-এর এই বিশ্লেষণ এবং সেখান থেকে উপলব্ধিতে উত্তরণের যে শেষ কোথায়, তা হয়তো মানুষ হিসেবে আমাদের উপলব্ধির বাইরে।

নোট: লেখক এই লেখার সময় GPU-র সর্ববৃহৎ কোম্পানি Nvidia-তে চাকরিরত

Saturday, December 31, 2022

প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ ৪ (Mass Tech Layoff)

ভালো-মন্দ মিশিয়ে ২০২২ শেষ হল। প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে, এবছর যেমন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে বহু উল্লেখযোগ্য ভালো ঘটনা ঘটেছে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলিতে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাইও আমরা দেখেছি। সারা বিশ্বে প্রায় ১.৫ লক্ষ লোক Tech Sector-এ চাকরি হারিয়েছেন এই বছর। এর মধ্যে প্রচুর startup দেউলিয়া হয়েছে বা বন্ধ হয়ে গেছে। এই ধরণের ব্যাপক হারে ছাঁটাই-এর পিছনের কাহিনী নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার, তাহলে প্রযুক্তির ব্যবসা ও তার কার্যপ্রক্রিয়াটা একটু হলেও পরিষ্কার হবে।

সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে গেলে, COVID-19 Pandemic- কে সময়ের axis-এ রাখতেই হবে। তাই এক্ষেত্রেও ঘটনার সূত্রপাত সেই ২০২০-এর মার্চ মাসে। সেই সময় আমরা যে শুধু দীর্ঘদিনের জন্য ঘরবন্দী হয়ে পড়লাম তাই-ই নয়, প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরতাও এক ধাক্কায় বেশ অনেকটা বেড়ে গেল। তার আগেই যদিও জীবনের প্রায় সবক'টা দিকেই সফ্টওয়্যারের প্রবেশ ঘটে গেছে। বড় শিল্পে বিদ্যুৎ যেমন অপরিহার্য, বিভিন্ন কাজের জায়গাতেও সফ্টওয়্যারের ভূমিকা ঠিক তেমনই হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কোভিডের প্রকোপের ফলে, সফ্টওয়্যারের ব্যবহার কয়েক গুন্ বেড়ে গেল। এমনকি যে কাজগুলি সফ্টওয়্যার দিয়ে করা খানিকটা কষ্টকর অথবা কিছুটা অস্বাচ্ছন্দ্যের ছিল, সেগুলিও আমরা সফ্টওয়্যার দিয়ে করতেই বাধ্য হলাম। অনলাইন মিটিং, বাড়িতে বসে অফিসের কাজ, দীর্ঘক্ষণের ভিডিও কল, এমনকি জিনিসপত্র চোখের সামনে পরখ না করেই অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার করা - এসব কিছুই আগের থেকে অনেক বেশি মানুষ দৈনন্দিনভাবে করতে শুরু করলো। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি এতো দ্রুত সফ্টওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি কি করে এতো বিপুল পরিমান কাজের চাপ মেটাতে পারলো? সেই বিষয় নিয়ে সবার প্রথমে ভাবা যাক।

আমরা জানি যে, কোনো গাড়ি কারখানায় একদিনে কতগুলো গাড়ি তৈরী হবে, তার একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং পরিমাপ থাকে। কোনো জরুরী অবস্থা তৈরী হলে, সেই সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে ঠিকই, কিন্তু রাতারাতি তাকে কয়েক গুন্ বাড়িয়ে ফেলা কষ্টকর। তেমনি যে কোনো সফ্টওয়্যারেরই সুষ্ঠুভাবে কাজ করার একটা সীমা থাকে। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আর একটু পরিষ্কার হবে। Zoom নামটার সঙ্গে আমরা এখন সকলেই পরিচিত। সেই Zoom অ্যাপ্লিকেশনটি প্রতি মিনিটে একটি সীমিত সংখ্যক ভিডিও কল একসাথে চালিয়ে যেতে পারে। ধরা যাক, সেটা ২০ লক্ষ। এবার যদি দিনের কোনো এক সময়ে প্রতি মিনিটে ২০ লক্ষের বেশি Zoom ভিডিও কলের চেষ্টা করা হয়, তাহলে Zoom-এর সার্ভারে সমস্যা হতে পারে, এমনকি সেই সার্ভার বন্ধও হয়ে যেতে পারে। 

কোভিড-এর সময়ে বেশিরভাগ সফ্টওয়্যার কোম্পানিকেই অচকিতে আসা বিপুল কাজের চাপ সামলাতে হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে তারা সফ্টওয়্যার উন্নত করেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই নতুন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে সফ্টওয়্যার আপগ্রেডও করেছেন। এবং এই কাজটা করতে হয়েছে খুব দ্রুত, যাতে আমাদের কোনো সমস্যা না হয়। কোভিডের সময় আমরা কিছু কিছু সফ্টওয়্যার নিয়ে সমস্যায় ভুগেছি ঠিকই, কিন্তু মোটের উপর আমাদের অসুবিধা হয়নি। অথচ ভাববার বিষয় এই যে, সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলি নতুন পরিকাঠামো তৈরির জন্য নতুন ইঞ্জিনিয়ার বা রিসার্চার নিয়োগ করার মূলধন পেলো কোথা থেকে, বা শুধুমাত্র পরিকাঠামো উন্নতি করার জন্যও যে মূলধন দরকার হয়, তার সংস্থানই বা হলো কোথা থেকে? এটা বুঝতে গেলে সফ্টওয়্যারের ব্যবসার দিকটা একটু বোঝা দরকার। 

আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, বেশিরভাগ সফ্টওয়্যার কোম্পানি কিন্তু কোনোরকম লাভের মুখ না দেখেই এগিয়ে চলে বছরের পর বছর। বরং অধিকাংশই বিপুল পরিমান ব্যবসায়িক ক্ষতি বহন করে, যাকে আমরা বলি loss-এ run করা। যেমন ধরুন, উবার (Uber)। আমরা সকলেই এদের কথা জানি, ব্যবহারও করি হরবখত, প্রত্যেকদিন। কিন্তু গত ১৩ বছর ধরে ব্যবসা চালানোর পরেও, এখনো অব্দি তারা মাত্র ১ বছরই (২০১৮) কোনো প্রফিট বা মুনাফা করতে পেরেছে। অন্যান্য বছরে তারা Billions of dollars শুধু loss করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে এসব কোম্পানিগুলো টিকে আছে কি করে?

এরা মূলতঃ টিকে আছে ঋণ বা ডেট (debt) নিয়ে এবং এই আশায় যে ভবিষ্যতে হয়তো কখনো তারা লাভজনক হবে। এই ধরণের কোম্পানিদের কিছু আয় থাকে ঠিকই, কিন্তু এদের খরচের পরিমান এতটাই বেশি, যে ঋণ ছাড়া এদের পক্ষে চলা অসম্ভব। কিন্তু ঋণ তো কিছু নতুন নয় - আধুনিক অর্থনীতি দাঁড়িয়েই আছে ঋণের উপর - তবে অসুবিধাটা অন্য জায়গায়। সাধারণত ঋণ বা ধার নিলে, তা সুদসমেত ফেরত দেওয়ার ব্যাপার থাকে। তবে সফ্টওয়্যার-জামানায় ব্যাপারটা বেশ অন্যরকম।

সফ্টওয়্যার-সম্পর্কিত কোম্পানিগুলি বিশ্বের প্রথমসারির এবং সবথেকে বড় কোম্পানিগুলির তালিকায় ঢুকতে শুরু করে মূলতঃ ২০১০ এর পর থেকে। তার আগে Microsoft, Intel, IBM জাতীয় কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি থাকলেও, সফ্টওয়্যার দিয়ে বড় স্কেলে ব্যবসা শুরু হয়নি। অথচ সেই ২০১০-এর আগেই সারা বিশ্বে ঘটে গেছে ২০০৮-এর Global Financial Crisis (বা Great Recession), যা আমেরিকা-সহ সমস্ত উন্নত দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দিয়েছিলো। এতো বড় মন্দা গত ৭৫ বছরে সারা বিশ্ব দেখেনি। এই ঘটনার ফলে বিশ্বের GDP এতটাই ধাক্কা খেয়েছিল, যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমান ব্যাপক হারে কমে যায়। Economic activity নূন্যতম স্তরে চলে যায়। যার জন্য পৃথিবীর সবক'টা উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি তাদের সুদের হার (interest rate) শূন্য (০%) শতাংশ বা তার কাছাকাছি করে দিয়েছিল। যাতে সকলে অন্তত টাকা ধার করে ব্যবসাবৃত্তি করতে পারে এবং দেশে দেশে টাকার লেনদেন বাড়ে। 

সেই সময়ই, সফ্টওয়্যারও বিশাল আকার ধারণ করতে শুরু করে, কারণ প্রযুক্তি ততদিনে তৈরী ছিল। আর যেহেতু সুদের হার ছিল শূন্য শতাংশ, তাই ঋণ নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো ব্যাপার ছিল না। সফ্টওয়্যার ব্যবসা একেই মূলধন করে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায় বা scale করে। এছাড়া সফ্টওয়্যার ব্যবসার এক বিশেষ সুবিধা হল, সেটা একবার তৈরী হয়ে গেলে খুব দ্রুত অনেক জায়গায় বিপুল সংখ্যক ক্রেতার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এবং কিছু ক্ষেত্রে তাই-ই হলো। আমেরিকার সবথেকে বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে তেল, ব্যাঙ্ক, বীমা - এসব সেক্টরকে পিছনে ফেলে প্রথমে চলে এলো Apple, Google, Microsoft, Amazon, Facebook-এর মতো নতুন কিছু নাম। 

২০২০-এর কোভিড লকডাউনের সময়, এসব প্রযুক্তি কোম্পানির ব্যবসা স্বাভাবিকভাবেই আরো বেড়ে গেলো। মুশকিল শুরু হল দুই বছর বাদে, ২০২২-এ। ইউক্রেনে যুদ্ধ, কোভিডজনিত supply chain-এর সমস্যা এবং চিনের লকডাউনের জন্য দ্রব্যমূল্য বাড়তে শুরু করলো। এছাড়াও গত দু'বছর ঘরবন্দি থাকায়, মানুষের খরচ করার সুযোগ ছিল কম। ফলে ২০২২-এ মানুষ বেশি হারে তাদের জমানো মূলধন খরচ করছিল। এই ধরণের বিবিধ কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গাতেই শুরু হল মুদ্রাস্ফীতি (inflation)। দ্রব্যমূল্য যখন প্রায় ৮-৯ শতাংশ হারে বাড়তে শুরু করলো, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো বাধ্য হল, সুদের হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে তুলতে। বেশ অনেক বছর বাদে এই প্রথম বার সুদের হার অনেকটা বেশি বাড়তে শুরু করলো। এবং এখন ২০২২-এর ডিসেম্বরে সেই হার প্রায় ৪.৫%। 

সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলি তাদের জন্মলগ্ন থেকে কখনোই এইরকম বেশি সুদের হারের সময়ে ব্যবসা করেনি। তারা শুধুই ভেবেছে কি করে নতুন ব্যবহারকারীদের (user) কাছে পৌঁছনো যায়, তা সে ব্যবসায় লাভ হোক বা না হোক। তারা ভেবেছে বিশাল সংখ্যক কাস্টমারের ভিত্তি তৈরী করতে পারলে, কোনো না কোনোদিন লাভ ঠিক হবে। সেই জন্য তারা বিশাল আকার ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের ধারণা নেই, এই রকম অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে কিভাবে হয়, কি রকম পরিকল্পনা করতে হয়। উপরন্তু কোভিডের জন্য অতিরিক্ত কাজ সামাল দিতে, তারা অনেক অনেক বেশি কর্মী নিয়োগ ও পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে, যা এ লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে। এই সমস্ত কারণে, তাদের বেশিরভাগের পক্ষেই এই অতিরিক্ত খরচ চালিয়ে যাওয়া এই সময়ে আর সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তাদের খরচ কমানোর প্রথম পদক্ষেপই হল কর্মী ছাঁটাই। 

Tech কোম্পানিগুলোর এই দিশেহারা দশার জন্য প্রথমে ভুগতে হচ্ছে সেই কর্মীদেরই। কারণ এই কোম্পানিগুলোর পাওয়ার স্ট্রাকচার সামান্য আলাদা হলেও, ম্যানেজমেন্ট স্ট্রাকচার মোটামুটি অন্য সেক্টরের কোম্পানিগুলোর মতোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। কিন্তু এখানে এ কথা উল্লেখযোগ্য যে, এর মধ্যে অনেক কোম্পানিই কর্মীদের পিঙ্ক স্লিপ দেখানোর সময়, তাদের প্রায় ৩ থেকে ৬ মাসের স্যালারি এবং অন্যান্য আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ বাতলেছে - এটা একটুখানি সিলভার লাইনিং। ২০২৩ হয়তো দেখাবে, সফ্টওয়্যার ব্যবসা কিভাবে বিবর্তিত হয় এই অনবরত বদলে চলা প্রযুক্তির দুনিয়ায়।

Saturday, June 25, 2022

Abortion Ban in the USA

সালটা ১৯৯১, সারা বিশ্বের টালমাটাল ছাড়িয়ে এক অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল আমেরিকা। গতকাল যে আমেরিকায় কেন্দ্রীয় স্তরে গর্ভপাত বা abortion ব্যান করা হল, সেই ঘটনার সাথে ১৯৯১-এর এই সমস্যার একটা যোগসূত্র আছে। ১৯৯১ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (সিনিয়র) মনোনীত করলেন Clarence Thomas-কে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি হিসেবে। মনোনয়নের পর্যালোচনা যখন চলছে, তখনই এক বিস্ফোরক তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হল। ক্ল্যারেন্স-এর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনলেন ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক অনিতা হিল। এই অভিযোগ সারা আমেরিকাকে তোলপাড় করে দিয়েছিল এবং প্রচুর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

অনিতা যে সব অভিযোগ প্রকাশ্যে, সেনেট হাউসে লাইভ টেলিকাস্ট-এ বলছিলেন, তা সেই সময়ে কেউ বলার কথা ভাবতে পারতো না। এই ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পরে MeToo মুভমেন্ট হয়েছে। তাই সেই সময়ে একজন মহিলা যৌন নিগ্রহের কথা প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, সেটা আমেরিকার ঘরের অন্দরে শোরগোল ফেলেছিল। আর এই অভিযোগ যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের সদ্য মনোনীত একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে, তাই এর গুরুত্বও ছিল বেশি। এর সাথে অনিতা এবং ক্ল্যারেন্স দুজনেই কৃষ্ণাঙ্গ, তাই নিয়েও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল, যে কাকে সমর্থন করা উচিত।

আমেরিকার সাংসদরা অনিতা হিলের কথা বিশ্বাস করেননি। অন্য দু-একজন একই অভিযোগ করলেও, ক্ল্যারেন্সকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়া থেকে আটকানো যায়নি। সাংসদরা ক্ল্যারেন্স-এর মনোনয়নে সিলমোহর দেন ১৯৯১ সালেই, এবং তিনি বিচারপতি হন আমেরিকার সর্বোচ্চ কোর্টের।

সেই ক্ল্যারেন্স গত ৩১ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং আমেরিকার ইতিহাসে সব থেকে বেশি সময় ধরে বহাল থাকা বিচারপতি। এখন যে ছয়জন বিচারপতির রায়ে আমেরিকাতে গর্ভপাত ব্যান হয়ে গেল, তার মধ্যে অন্যতম হলেন ক্ল্যারেন্স। ক্ল্যারেন্স এও বলেছেন যে সমলিঙ্গের বিবাহ, গর্ভনিরোধের ব্যবহার, এই সব বিষয়েও পরবর্তীকালে চিন্তা ভাবনা হওয়া দরকার এবং প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টে ক্ল্যারেন্স-এর সাথে আছেন পাঁচজন অন্য বিচারপতি, যারা প্রত্যেকেই নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট দ্বারা। তাঁদের তিনজন তো ট্রাম্পের মনোনয়নেই নির্বাচিত। এরা প্রত্যেকেই গোঁড়া, দক্ষিণপন্থী। বিপক্ষে যে তিনজন বিচারপতি আছেন, তারা অনেকটাই সংখ্যালঘু। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

এই abortion ban কে শুধু মহিলাদের অধিকারের ওপর আক্রমণ ভাবলে ভুল হবে। আমেরিকায় এই ব্যান দক্ষিণপন্থীদের বেশ অনেকদিনের লক্ষ্য ছিল। কারণ এই ব্যানের মাধ্যমে একদিকে সমস্ত শ্রমিক শ্রেণীকেই বার্তা দেওয়া গেল, সতর্ক করা গেল। এছাড়া এর দ্বারা সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন প্রান্তিক মহিলারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। যারা উচ্চশ্রেণীর তারা কোনো না কোনোভাবে abortion এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন (রাজ্যের মাধ্যমে)। কিন্তু পারবেন না পিছিয়ে থাকা মানুষেরা। ১৯৯১ সালেই কিন্তু এই ব্যানের আভাস ছিল, ক্ল্যারেন্স তাঁর মনোনয়নের সময়ই এই আভাস দিয়েছিলেন। তবুও আমেরিকার সাংসদরা তাঁকে নির্বাচিত করেন। এই পুরো ঘটনা এটা দেখিয়ে দেয়, কিভাবে দশকের পর দশক ধরে পরিকল্পনা করে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ, বিচারব্যবস্থা, এটাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা যায়। সেই দিক থেকেও এই ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, সারা বিশ্বেই।

Saturday, June 26, 2021

The Lost Decade

একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শুরুতেই আমরা মহামারী, বেকারত্ব, বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো সমস্যার সম্মুখীন। আবার এর সাথে সাথেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি মহামারীর প্রতিষেধক ভ্যাকসিন, যা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলেই এতো দ্রুত সম্ভব হচ্ছে। সাথে ট্রাম্পের পরাজয় এই নতুন দশকের শুভ সূচনা। ভালো-খারাপের এরকম আলো-আঁধারিতে আমাদের নতুন দশকে এগিয়ে চলা। আমেরিকার রাজনীতিতে আগামী দশক, বোধ হয়, আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই একই কথা ভেবেছিলেন সেই মানুষগুলো, যারা ২০১০-এ ওবামাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই নতুন দশকের শুরুতে পিছনে ফিরে দেখা দরকার, সেই ফেলে আসা দশকটার যে বড় বড় স্বপ্নগুলো ছিল, তাদের হাল কি হল?

এই লেখাটার শিরোনামটা একটু গোলমেলে ঠেকতে পারে, যদি আমরা কিছু cherrypick করা তথ্যের দিকে তাকাই। আমেরিকার সব থেকে ধনী ১ শতাংশ মানুষ তাঁদের অর্থের পরিমান দ্বিগুন (১৭ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার) করেছেন ২০১০-১৯-এর দশকটিতে [1]। তাঁদের কাছে এই দশক নিশ্চয়ই কোনো "lost decade" নয়। এই মাত্র এক শতাংশ সবথেকে ধনী মানুষ ২০১০ সালে আমেরিকার total wealth-এর ২৮ শতাংশের মালিক ছিল, ২০২০-তে তাঁরা ৩০-এরও বেশি শতাংশের মালিক। এই কতিপয় কিছু মানুষকে ওবামা হোক বা ট্রাম্প - দুজনেই বেশ "দক্ষ রাষ্ট্রপতি"র মতোই সেবা করেছেন।

এবার একটু পিছিয়ে পড়া জনগণের দিকে তাকাই। ধনসম্পদের দিক থেকে আমেরিকার সবথেকে নীচের ৫০ শতাংশ লোক ২০১০-এর শুরুতে মাত্র ০.৫% সম্পত্তির মালিক ছিলেন। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন, এতটাই কম। কপর্দকশূন্য বললেও অত্যুক্তি হয়না। ২০০৮-এর ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের পরে এই নিচে থাকা লোকগুলোর অবস্থা পথে বসার থেকেও খারাপ হয়েছিল। তারপর থেকে ধীরে ধীরে উঠে এসে এই নিচের ৫০% লোক এখন আমেরিকার মাত্র ২% সম্পত্তির অধিকারী হতে পেরেছেন। তবুও মধ্যবিত্ত আমেরিকান আর সবথেকে ধনী ১% আমেরিকানদের মধ্যে সম্পত্তির পার্থক্য ১০০০%। জানিনা এই বৈষম্যকে কোন বিশেষণ দিয়ে জাস্টিফাই করা যায়। যে দশকে ওবামার মতো তথাকথিত "ভালো রাষ্ট্রপতি" ৬ বছর দেশ শাসন করলেন আর ডেমোক্র্যাটের মতো লিবারালরা কিছু বছর ধরে আপার ও লোয়ার হাউস নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত করলো, সে দেশেও এই অবস্থায় রয়ে গেছে।

এর কারণ নিয়ে বলতে গেলে হয়তো ওবামার নতুন বই "A Promised Land"-এর মতোই বড় একটা বই লিখতে হয়। কিন্তু তার থেকে ছোট করে সংক্ষেপেও কিছু বিষয় দেখে নেওয়া যেতেই পারে। এটা থেকে আমরা ঠাওর করতে পারবো যে, রাজনীতির অভিমুখ ঠিক কিরকম হলে এই ধরণের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা আসতে পারে।

ওবামা আমেরিকার প্রথম কৃষাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। ওবামাকে ঘিরে আমেরিকায় উচ্ছাস তৈরী হয়েছিল ২০০৮ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই। কিন্তু ওবামা ক্ষমতায় আসার পরই বড় বড় ব্যাঙ্ক এবং ফিনান্সিয়াল সংস্থাগুলোকে প্রচুর পরিমান সরকারি অর্থসাহায্য দিলেন। এদের তখন বেশিরভাগেরই দেউলিয়া অবস্থা। তাঁদেরকে বলা হল "too big to fail", মানে এরা না থাকলে আমেরিকা দেশটাই টিকবে না। সাধারণ মানুষের জীবন এসব ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে এমনভাবেই জড়িয়ে যে এই ব্যাঙ্কগুলিকে বাদ দিয়ে আমেরিকা, এমনকি আধুনিক বিশ্বকেও ভাবা যায়না। কিন্তু তবুও এদের রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে ঘোষণা করার কথা ভাবা তো হলই না, উপরন্তু রাষ্ট্রীয় ট্যাক্স ডলারে এদের "বেইল আউট" করানো হল, যাতে এই ব্যাঙ্কগুলো বসে না যায় [2]। কিন্তু কার্যত দেখা গেলো, এই প্রচুর পরিমান অর্থসাহায্য পৌঁছালো ব্যাংকের CEO, CFO-জাতীয় উচ্চপদে বসে থাকা বিশাল সম্পত্তির মালিকদের হাতে [3]। এছাড়াও ওবামা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় বুশ জামানার ট্যাক্স ছাঁটও বহাল রেখে দিলেন। আর ট্রিকল ডাউন অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী মোট সম্পদের খুব সামান্যই পৌঁছালো পিছিয়ে পড়া, "ওয়ার্কিং ক্লাস" মানুষদের কাছে। ওবামা প্রথমেই যে বিশাল সুযোগ পেয়েছিলেন - আমেরিকার বিসদৃশ সম্পত্তির বৈষম্যকে মুছে দেওয়ার - উনি ওনার রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রথম মেয়াদে তার সামান্যও করতে পারেননি।

এর পরবর্তীকালে ওবামা কিছু মানুষের জন্য, যাঁদের বেশিরভাগ বৃদ্ধ ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মী, প্রায় নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করলেন, যাকে আমেরিকান মিডিয়া বিপ্লবী বলে আখ্যা দিতেও পিছপা হয়নি [4]। কিন্তু তারপরেও আমেরিকার প্রায় ১০% বা ৩ কোটি মানুষের কোন স্বাস্থ্যবীমাই ছিল না, এখনো নেই। তাছাড়াও স্বাস্থ্যবীমার বিষয়টি মানুষের চাকরির সঙ্গে যুক্ত হয়েই থেকে গেলো - মানে যতদিন ভালো চাকরী আছে, ততদিন বীমা আছে, নচেৎ নয়। অথচ এটা এখন প্রায় সবার জানা কথা, এবং বিভিন্ন গবেষণা বলেছে যে, বেশিরভাগ মানুষ গরীব থেকে আরো গরীব হয়ে যায় মূলত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচ সামলাতে না পেরে। আর এটা একটা রিকার্সিভ ফাংশনের মতো, যেখানে টাকা-পয়সার সমস্যার কারণে অনেকেই ঠিক করে নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে পারেন না, খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক করতে পারেন না, ওষুধ কিনতে পারেন না। ফলে তাঁরা আরো বেশি করে রোগে ভুগতে থাকেন। যার ফলে তাঁরা বেশি বেশি করে দেনার কবলে চলে যেতে থেকে থাকেন।

এরপর আর একটি পয়েন্ট বলে আপাতত শেষ করবো। ওবামা এবং ওনার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি যা তথাকথিত লিবারাল পার্টি হিসেবে পরিচিত, তাঁরা নিজেদের cultural বামপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এতো সচেষ্ট ছিলেন, যে অর্থনৈতিক দিকে তাঁদের প্রায় কোনো নজরই ছিল না। cultural leftist issue গুলো মূলত freedom of abortion বা "pro-choice", gay marriage, কৃষাঙ্গদের অধিকার - এসবকে কেন্দ্র করে তৈরী করা হয়েছিল। এগুলো একটা উন্নত সমাজে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন একটা রাজনৈতিক মঞ্চ শুধুমাত্র এই ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করেই তৈরী হয়, তখন সেই রাজনীতি থেকে বৃহত্তর জনগণের পাওনা বলে কিছু থাকেনা। ফলত আমরা শেষ দশকের শেষার্ধে দেখতে পেতে থাকি, "me too" মুভমেন্ট। যা আদতে মেয়েদের বহু বহু বছর ধরে নিপীড়ত থাকার দরুন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। আমরা ট্রাম্পকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাই আমেরিকায়। আমরা দেখতে পাই ব্রিয়োনা টেলর বা জর্জ ফ্লয়েডকে মারা যেতে হয় পুলিশের হাতে, হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্টদের হাতে। এতো সবের পরেও ট্রাম্প সাড়ে সাত কোটি ভোট পান ২০২০ সালে। তাই অর্থনীতি ব্যতিরেকে যে সাংস্কৃতিক উদারবাদ বা বামপন্থা হতে পারেনা - আধুনিক ইতিহাসে এই দশকই তার সেরা উদাহরণ এবং আমাদের কাছে শিক্ষনীয়। 

ভীষণ আশা জাগিয়েও এই দশকের শেষে যে করুণ হাল আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলা যায়, আগের দশকের রাজনীতি সাংস্কৃতিক উদারবাদের সাথে অর্থনৈতিক উদারবাদের ছায়াযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। অর্থনৈতিক উদারবাদ সমাজে যে ভীষণ মেরুকরণ তৈরি করছে, তাকে মেনে নিতে পারছে না প্রগতিশীল সমাজ। অথচ অর্থনৈতিকভাবে প্রগতিশীল নীতিগুলো - সবার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, বাসস্থান, সমবায়ের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনা, গ্রিন এনার্জিতে বিনিয়োগ - সেগুলোকেই আমরা শুরু করতে পারছিনা বা রাজনৈতিক ইস্যু করে তুলতে পারছিনা। এসব নীতির ওপর ভিত্তি করেই যে আমরা অন্য প্রগতিশীল ইস্যুগুলোকে ছুঁতে পারবো, সেটা আশা করি পরবর্তী দশক আমাদের বোঝাবে, আর আমাদের রাজনীতিও সাংস্কৃতিক উদারবাদের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে।


[1] https://www.federalreserve.gov/releases/z1/dataviz/dfa/distribute/chart/#range:2009.4,2019.4

[2] https://money.cnn.com/2009/01/06/news/economy/where_stimulus_fits_in/

[3] https://abcnews.go.com/Business/story?id=8214818&page=1

[4] https://www.foxnews.com/transcript/bill-oreilly-obamacare-and-socialism

Tuesday, January 05, 2021

ছায়া

Kolkata, 06-Jan-2021, 08:30 AM

রোদ যখন পড়লো কাঁচে,
একটা কিছু হারিয়ে গেছে,
নীরব কোনো উচ্চারণে
একটা কিছু হারিয়ে গেছে।
ঘরের কোনায়, চিলেকোঠায়,
অনেক খুঁজেও পাইনি যখন,
ক্লান্ত শরীর চোখ বোজেনি
নতুন কোনো গান শোনেনি
হারিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে।

দিনের শেষে একটা ঘরে,
ভুলেছি কি হারিয়ে গেছে।
হঠাৎ করে পড়লো চোখে
আয়নাখানি তাকিয়ে আছে,
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা
পাকা দাড়ি তাকিয়ে আছে,
বইখাতার ভিতর দিয়ে
ভাঙ্গা চশমা তাকিয়ে আছে,
অনভ্যস্ত ফোনের টাচে
কাঁপা হাত তাকিয়ে আছে,
নরম শীতের দুপুরবেলায়
আলগা চাদর তাকিয়ে আছে।
খুঁজে পাওয়া ঘরে তবু
একটা ছায়া হারিয়ে গেছে।

Friday, October 30, 2020

An Important but Uninteresting Election

Four years. It is an important timeframe in modern world. A standard college curriculum takes four years. All the big sporting events including the Olympics and the World Cups happen every four years. In every four years, we add an extra day to our calendar. Heck, I just learnt that the best event for performance designing, the Prague Quadrennial also happens every four years. And that brings us to another important quadrennial event which surprised the world four years ago by its shocking performance. The American Presidential Election.

I came here around the time of the last US presidential election. Then some people still used to believe that Obama rescued the US from the 2008 Financial Crisis and the Great Recession. I still used to believe that monolithic is the only type of OS kernel; okay, not important! But then we woke up to November 4, 2016.

Donald Trump won the White House. A loosing businessman cum bad TV show host. The country was shocked after realizing its wide division between the coastal cities and the cities deep inside America. As if the US did not have enough problems, it chose to own another one.

Like a domino effect, Boris Johnson became the British Prime Minister, Bolsonaro won the Brazilian Presidency, Modi won the second term in India, and also, Brexit happened. The world became a lot more divided, just like the US. The division was partly because of these leaders, partly because of the decade-old economic policies and its ineffective patches. To add a little bit of salt to the mix, America pulled itself out of the Paris Climate Accord. The world was already going downhill, it just accelerated its pace.

Interestingly, there was a reactive and opposite undercurrent. The young generation of the Bernie Sanders movement started fighting the Elections. They wanted to take control of their future. They were disgusted by their college-debt, by home-loans, and by top-centric economic policies (aka trickle-down economics). Not only they got enthusiastic and organic support, they started winning the Elections. So now, the US has an army of young politicians, who not only wins elections, not only does Facebook Live, but also is on Twitch! I mean, even you and I probably do not know what Twitch is, right?

So here we are after four years: still divided, still with the same economic worries, still in a racist society. Will anything change in this Election? But that may not be the right question. On a lovely snowy day, just on the verge of the Election, the question should be: what will change? And we know the answer: nothing!

Sunday, July 26, 2020

The Conundrum of Universal Healthcare and COVID-19

By now, there have been numerous articles and blog posts describing the necessity of universal healthcare (free healthcare for all) on the backdrop of COVID-19. The importance of a free healthcare system for everyone irrespective of their backgrounds has been emphasized enough and justifiably so. In the case of such highly infectious diseases like COVID-19, everyone in the society does need to be taken care of. The interesting point is that the countries with existing universal healthcare system was also badly affected by the Coronavirus. For example, Italy or France. Even the United Kingdom offers free healthcare as well, but it still got devastated by the pandemic. Then, it is a valid question whether universal healthcare could be the remedy for pandemics such as COVID-19.

Pandemics shock civilizations. It is supposed to do so. Before the detected outbreaks, a disease slowly spreads, and then it surprises the population by the extend of its proliferation. In such a situation, universal healthcare is a necessary tool for a government to take care of the whole population. However, it is not sufficient. No healthcare system could always be ready for the surge of patients amidst a pandemic, not even the best healthcare system in the world. We need something else.

The Magic Wand Failed
When an unprecedented event happens, we need to act with extraordinary measures and control that event. For example, if a pandemic such as the COVID-19 emerges, we need to mobilize our resources as fast as possible to protect the vulnerable citizens. We need to quickly contain the spread of the disease while we ensure that everyone in the society can continuously fulfill their basic needs. The pandemic demands such drastic sort of attention and mobilization. Well, this fact is pretty well-understood, and we are lucky because we have an excellent system on our hand which reacts to the urgent demand of our society by its "invisible hand". Hurrah, it is Market!

The holy book definition of market is that it caters to the demands and necessities of the public, and it is incredibly efficient. Unfortunately in reality, it turns out that the market is very insensitive to such human distress. The gatekeepers of the market are more insensitive than the market itself, quite ironically. 

With the expansion of COVID-19, the market and its gatekeeper governments were slower to react to the society's lifesaving demands, because the revenue and the other market metrics were more important. Although some countries had universal healthcare, their economic system was too much dependent on the market-based production system. When we needed our system to work for saving people's lives, it was busy figuring out the optimized time to lockdown the countries, so that the damage in GDP is less. We could not mobilize to produce enough PPEs for the doctors, enough ventilators for the patients, enough food supply for the starved. We have seen this from India to European "welfare nation-states" to United States of America to Brazil.

We Need No Magic Wand
At the height of COVID-19 near the end of March '20, when almost every country on Earth including the United States was panicked, President Trump had one of his highest approval ratings as the President of the United States. Modi in India was also enjoying great support by the Indians during the stressful time. The public really relied on the government, and was ready to adhere to its strong restrictions and policies.

The governments, however, failed the public. The United States initially denied the seriousness of the pandemic, and then dwindled on providing the essential supplies. The United Kingdom was not serious about necessary lockdown. The Indian government could not ramp up testing facilities during its own strict lockdown period. Hundreds of people died due to migration and starvation, but still "the curve" did not flatten. Many other countries followed similar abysmal strategies, barring a few. It is quite remarkable how the majority of the population sided with their own respective governments, irrespective of their ideological standpoints.

The governments just had to follow the scientists and listen to the epidemiologists and doctors. Most of the nation-states not only did the opposite, they also left the vulnerable population unprotected. At first, the United States issued massive multi-trillion dollars relief funds from its coffers, but only a tiny fraction went to the financially backward and medically challenged public. Most of the relief funds went to the big corporations, and the American households got a tiny one-time cash payment. Although it was a big step up from the usual trickle-down mentality of issuing all of the money to the top, the measures still fell really short of its true potential.

Such massive relief dollars and euros showed that the governments around the world are absolutely capable of empowering the needy, if they want. We do not need any magic wand of the "invisible hand" to help the public. We need properly planned financial ecosystem to distribute resources, especially on the face of a deadly pandemic. We have learnt this lesson after six horrific months of this lethal and global disaster. The question, however, in front of us is whether we will learn from our terrible experience and stop worshiping the sacred entity, "Market", which kills real people. Let's admit this - it is dysfunctional, insensitive and inhuman.