Saturday, June 25, 2022

Abortion Ban in the USA

সালটা ১৯৯১, সারা বিশ্বের টালমাটাল ছাড়িয়ে এক অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল আমেরিকা। গতকাল যে আমেরিকায় কেন্দ্রীয় স্তরে গর্ভপাত বা abortion ব্যান করা হল, সেই ঘটনার সাথে ১৯৯১-এর এই সমস্যার একটা যোগসূত্র আছে। ১৯৯১ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (সিনিয়র) মনোনীত করলেন Clarence Thomas-কে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি হিসেবে। মনোনয়নের পর্যালোচনা যখন চলছে, তখনই এক বিস্ফোরক তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হল। ক্ল্যারেন্স-এর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনলেন ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক অনিতা হিল। এই অভিযোগ সারা আমেরিকাকে তোলপাড় করে দিয়েছিল এবং প্রচুর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

অনিতা যে সব অভিযোগ প্রকাশ্যে, সেনেট হাউসে লাইভ টেলিকাস্ট-এ বলছিলেন, তা সেই সময়ে কেউ বলার কথা ভাবতে পারতো না। এই ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পরে MeToo মুভমেন্ট হয়েছে। তাই সেই সময়ে একজন মহিলা যৌন নিগ্রহের কথা প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, সেটা আমেরিকার ঘরের অন্দরে শোরগোল ফেলেছিল। আর এই অভিযোগ যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের সদ্য মনোনীত একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে, তাই এর গুরুত্বও ছিল বেশি। এর সাথে অনিতা এবং ক্ল্যারেন্স দুজনেই কৃষ্ণাঙ্গ, তাই নিয়েও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল, যে কাকে সমর্থন করা উচিত।

আমেরিকার সাংসদরা অনিতা হিলের কথা বিশ্বাস করেননি। অন্য দু-একজন একই অভিযোগ করলেও, ক্ল্যারেন্সকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়া থেকে আটকানো যায়নি। সাংসদরা ক্ল্যারেন্স-এর মনোনয়নে সিলমোহর দেন ১৯৯১ সালেই, এবং তিনি বিচারপতি হন আমেরিকার সর্বোচ্চ কোর্টের।

সেই ক্ল্যারেন্স গত ৩১ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং আমেরিকার ইতিহাসে সব থেকে বেশি সময় ধরে বহাল থাকা বিচারপতি। এখন যে ছয়জন বিচারপতির রায়ে আমেরিকাতে গর্ভপাত ব্যান হয়ে গেল, তার মধ্যে অন্যতম হলেন ক্ল্যারেন্স। ক্ল্যারেন্স এও বলেছেন যে সমলিঙ্গের বিবাহ, গর্ভনিরোধের ব্যবহার, এই সব বিষয়েও পরবর্তীকালে চিন্তা ভাবনা হওয়া দরকার এবং প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টে ক্ল্যারেন্স-এর সাথে আছেন পাঁচজন অন্য বিচারপতি, যারা প্রত্যেকেই নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট দ্বারা। তাঁদের তিনজন তো ট্রাম্পের মনোনয়নেই নির্বাচিত। এরা প্রত্যেকেই গোঁড়া, দক্ষিণপন্থী। বিপক্ষে যে তিনজন বিচারপতি আছেন, তারা অনেকটাই সংখ্যালঘু। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

এই abortion ban কে শুধু মহিলাদের অধিকারের ওপর আক্রমণ ভাবলে ভুল হবে। আমেরিকায় এই ব্যান দক্ষিণপন্থীদের বেশ অনেকদিনের লক্ষ্য ছিল। কারণ এই ব্যানের মাধ্যমে একদিকে সমস্ত শ্রমিক শ্রেণীকেই বার্তা দেওয়া গেল, সতর্ক করা গেল। এছাড়া এর দ্বারা সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন প্রান্তিক মহিলারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। যারা উচ্চশ্রেণীর তারা কোনো না কোনোভাবে abortion এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন (রাজ্যের মাধ্যমে)। কিন্তু পারবেন না পিছিয়ে থাকা মানুষেরা। ১৯৯১ সালেই কিন্তু এই ব্যানের আভাস ছিল, ক্ল্যারেন্স তাঁর মনোনয়নের সময়ই এই আভাস দিয়েছিলেন। তবুও আমেরিকার সাংসদরা তাঁকে নির্বাচিত করেন। এই পুরো ঘটনা এটা দেখিয়ে দেয়, কিভাবে দশকের পর দশক ধরে পরিকল্পনা করে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ, বিচারব্যবস্থা, এটাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা যায়। সেই দিক থেকেও এই ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, সারা বিশ্বেই।