Wednesday, August 23, 2017

ফ্ল্যাশব্যাক - Flashback

ইন্টারভিউ দেখতে বেশ ভালো লাগে আজকাল। মেকী ইন্টারভিউ নয়, সামান্য মন-খোলা এবং সোজাসাপটা প্রশ্নোত্তর-সম্বলিত ইন্টারভিউ। কিংবা শুধু ভালো আলোচনাও চলতে পারে। সেসব কথোপকথনে যদি নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়, তবে আরও বেশি পছন্দ হয়। এহেন একটি ইন্টারভিউতে কবীর সুমন একবার বলেছিলেন, কিছু গান আছে, যেগুলোতে গলায় আবেগ না এনে, সোজাসুজি গাইতে হয়। "এ তুমি কেমন তুমি" গানটার প্রসঙ্গে, জাতীয় পুরস্কারের পর উনি এই মতামতটা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়, অনেক গানের ক্ষেত্রেই এই কথাটা খাটে, বিশেষত বেশ কিছু রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষেত্রে তো বটেই। আসলে অনেক গানের ক্ষেত্রে, কথা ও সুরটাকেই তার ম্যাজিকটা করতে দিতে হয়, কণ্ঠ্য শুধু কিছু nuance-কে ধরতে সাহায্য করে। "এমন দিনে তারে বলা যায়" - এমনই একটা গান।

মাঠের ধারে গাছের তলায় বসে এসব কথা ভাবছিলাম। ঠিক তখনই হেডফোনে "এমন দিনে তারে"-গানটা শুরু হল, ইমনের গলায়। নাহ, ইমন বড্ড আবেগ দিয়েই গাইছেন, সুমনের বলা নীতিকে ভেঙে দিয়ে। রূপঙ্কর মনে হয় এর থেকে ভালো গেয়েছেন। তবুও কেন জানি না, গানটার সাথে বয়ে চললাম। ইমনের একটা ইন্টারভিউতে পড়েছিলাম, উনি যখন "তুমি যাকে ভালোবাসো"-গানটা রেকর্ড করেন, তখন সদ্য পুরোনো সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওই গানটি খুব নির্লিপ্তভাবে গেয়েও সমস্ত আবেগ ঢেলে দিতে পেরেছিলেন। E minor-কর্ডের সমস্ত বিষাদ ওঁর কণ্ঠ্য ছুঁয়ে আমাদের সকলের হৃদয়ে আছড়ে পড়েছিল। কিন্তু এই গানটিতে কি ইমন একটু বেশিই ভেসে গেছেন তার প্রাক্তনের সাথে কাল্পনিক আলাপচারিতায়, তাই নির্লিপ্ত থাকতে পারেননি?

বেশ উজ্জ্বল ঝকঝকে নীল আকাশে টুকরো কিছু সাদা মেঘই দেখছিলাম এতক্ষন, বেশ মনোরম বাতাসও বইছিল। কিন্তু ইমনের "এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে, তপনহীন ঘন তমসায়"-গাওয়াতেই একটা কাল্পনিক আঁধার নেমে এলো। আমি আকাশের দিকে চেয়ে থেকেই দেখলাম, একটা খয়েরি রঙের গোলটেবিলের দুপ্রান্তে মুখোমুখি বসে আছে - একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। টেবিলের ওপর রাখা আছে, একটি স্ট্যান্ডের ওপর নরম আলোর মোমবাতি। ইমন গেয়ে উঠলেন,

"""
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার ।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর ॥
"""
সামান্য রাগই হল রবি ঠাকুরের ওপর। এভাবে দু'জনকে মুখোমুখি বসিয়ে দিলেন, হঠাৎ এতো বছর বাদে, জীবনের সায়াহ্ন যখন দুজনকেই হাতছানি দিচ্ছে ! ইজাজত-এর নাসির-রেখার মনে ঠিক কি চলছিল, একটু যেন অনুভব করলাম। এতো সহজে যে সহজ হওয়া যায় না, আগের জটিলতাগুলোকে পেরিয়ে আসা যায় না, তা বেশ বুঝতে পারছিলাম। রবি ঠাকুর সেই বুঝেই বোধ হয় নির্দেশ দিলেন, উচ্চৈঃস্বরে, "দেশ" রাগের সম্বাদী স্বর "পা" ছুঁয়ে পরের octave-এর "সা" ছুঁলেন।
"""
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব ।
""""
"কলরব"-এর তীব্রতা ধরতেই বোধ হয় রবি ঠাকুর "সা"-তে অনেকক্ষন সুরটাকে ধরে রাখলেন। কিন্তু সেই তীব্র প্রতিঘাতে আমরা সেই যে জীবন-সমাজকে পিছনে ফেললাম, তারপর তো আমাদের সামনে শুধু আমরাই থাকতে পারতাম। আমি ডুবে যেতাম তোমার চোখে, যে চোখে কোনো কলুষ ছিল না। তুমি আশা দেখতে আমার চোখে। আর সেই আশায় আমরা নিমজ্জিত হতাম হৃদয়াবেগের সাগরে। ইমন তখন গাইছেন,
"""
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব ॥
"""
হ্যাঁ, আমাদের অতীত-দুশ্চিন্তা-সঙ্কোচ তখন যেন আঁধারে হারিয়ে গেছে। এভাবেই ওগুলো অদৃশ্য হোক। তবেই বোধ হয় আমরা বলতে পারবো সমস্ত কথা খোলামনে। আমাদের যে মন একে ওপরের কষ্ট সত্যিই দেখতে চাইতো না। আমি জানি যে, তুমি কখনোই চাওনি আমার চোখে দুঃখ দেখতে। তুমিও জানো যে, আমি চাইনি। কিন্তু আজ আমরা সেই অযাচিত দুঃখ-কষ্টকেই স্বীকৃতি দেব স্বীকারোক্তির সুরে। আমাদের অন্তরজ্বালা ধুয়ে যাবে সেই সততার আবহে। রবীন্দ্রনাথ "দেশ" রাগের বাদী "রে", সম্বাদী "পা" আর "মা" -কে নিয়ে নতুন দ্যোতনা তৈরী করবেন এবং ইমন গাইবেন,
"""
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার ।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার ॥
"""
কিন্তু সত্যিই কি কিছু যাবে আসবে না? তোমার বর্তমান প্রিয়তম কি মেনে নেবে এই সুস্থ সরল বাক্যালাপ? আমার বন্ধু-বান্ধবী আর মনের কাছের মানুষ কি মেনে নেবে তোমার-আমার এই বাঁধনছাড়া কাব্যের আলিঙ্গন? জানি তারা খুব ভালোবাসে আমায়; তোমার ক্লেদাক্ত অবয়বটার কাছে আমায় যেতে দিতে চায় না। কিন্তু তুমি তো আজ "এমন দিনে", তোমার সমস্ত গ্লানি মুছে শুধু স্বচ্ছতার প্রতিমূর্তিতে আবির্ভূত - এ কথা আমি তাদের বোঝাতে পারি না। নিজেকেও বোঝাতে বড় কষ্ট হয়। আমিও তো জানি, যে "তুমি"-কে আজ আমি কল্পনা করছি এখন, অথবা আগেও করেছি, তার কোনো বাস্তব অস্তিত্বই নেই। ভালোবাসা তো আসলে অন্তরে চাওয়া মানুষটির স্রেফ প্রতিফলন। পৃথিবীতে কোনো মানুষেরই ভালোবাসার বাস্তব প্রতিরূপ বলে তো কিছু হয় না। পুরোটাই কাল্পনিক মূর্তি-গড়া। রবিবাবু ভালোবাসার এই অসম্ভবতা অনুধাবন করলেন এবং ইমন গাইলেন,
"""
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায় ।
"""
এখানে আবার রবিবাবু উঁচু স্বরের আশ্রয় নিলেন উদ্বেলিত বাতাসকে বয়ে আনতে, অসম্ভবকে প্রকাশ করতে। তা'ও আমাদের এই কাল্পনিক দেখা হওয়া তো মিথ্যে হতে পারে না, হোক না সে যতই অস্বাভাবিক। আবহাওয়া আর বিশ্ব-সংসারের বিদ্রোহেও, আমরা একে অন্যকে জানালাম আমাদের নিজেদের দিকগুলো, ভুলগুলো-ঠিকগুলো। 
"""
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
""""
মন আমাদের বহুকালই শান্ত হয়েছিল, আমরা বোধ হয় এবার পরিশ্রান্ত হলাম। আমরা আবারও বুঝলাম, দোষারোপের ভার সময়েরই নেওয়া দরকার, আমরা যে স্রেফ তার গোলামের কাজ করছিলাম। ভালোবাসা আমাদের গভীরে থাকলেও, কবর খুঁড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।
আকাশের দিকে তাকিয়ে এই নাট্যচিত্র দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম যে, তুমি, টেবিল, মোমবাতি - সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, আর যেন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। চোখে আর্দ্রতার অস্বচ্ছতা ঘনিয়ে আসছে। ইমন তখন গান শেষ করছেন,
"""
এমন ঘনঘোর বরিষায় 
এমন দিনে তারে বলা যায়।।
"""

পুনশ্চ: আমাদের এই কথোপকথনের পরেও একটা গান হওয়া প্রয়োজন ছিল, তাই "আমার ভিতর ও বাহিরে" শুরু হল। যেন বলে গেলো, চিঠিগুলো যেন আমরা আকাশের উদ্দেশ্যেই লিখি, একে-অপরকে নয়।

Saturday, August 19, 2017

বস্টনের বিশে অগস্ট ২০১৭ - Boston's 20th August 2017

শহরে দুটো পরস্পরবিরোধী rally ছিল আজ। এর মধ্যে প্রথম যেটা ডাক দেওয়া হয় সেই rally-টা "Free Speech"-এর জন্য করা হয়েছিল। পরে সেই আপাত "Free Speech"-এর বিপক্ষে একটা counter-protest মার্চের ডাক দেওয়া হয়। "Free Speech" rally-টির উদ্যোক্তারা ছিলেন far right-wing extremist-রা। হ্যাঁ, extremist-দের "free speech" একটু অদ্ভুতই বটে। আর সেই "Free Speech"-এর বিপক্ষের মার্চটা করলেন liberal-activists-রা। মোটামুটি সব শান্ত থাকলেও, সামান্য tension ছিল শহরে। মার্চগুলো হওয়ার সময়ে উত্তেজনা কিছু বাড়ে, কিন্তু খুব বড় কিছু হয়নি, কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু উগ্র দক্ষিনপন্থীদের এই ধরণের সমাবেশ, বস্টনের মতো উদারবাদী শহরে বেশ বেমানান। তাই এই সমাবেশগুলোর পিছনের সামান্য কাহিনী ছোট্ট করে লেখা থাকুক। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টও যখন এই মার্চগুলো নিয়ে tweet করছেন, তখন বিষয়টার বেশ গুরুত্ত্ব আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

অগাস্ট মাসের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা ঘটনা গেছে। তারই প্রলম্বিত অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে, বস্টন শহরের এই সমাবেশগুলি। কিছুদিন আগেই আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যের শার্লটসভিল শহরে জমায়েতের আয়োজন করে কিছু white nationalist-রা। তাঁদের দাবি এই যে, আমেরিকা শুধুমাত্র তাঁদের নিজেদের দেশ; তাই এই দেশের ওপর তাঁদের অধিকার সব থেকে বেশি। অনেকাংশে এই দাবিও করা হয় যে, তাঁরা অন্য জাতিগুলির থেকে মানবিক বৈশিষ্ট্যে উন্নত। সুতরাং, সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি কাজে তাঁদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তাঁদের নিজেদের স্বার্থ সবাগ্রে দেখার পরই, অন্যের স্বার্থের কথা ভাবা উচিত। তারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তাঁদের কিছু অতীত সত্যকে। আমেরিকার কনস্ট্রাকশন খুব গোড়া থেকে গড়ে তুলেছেন, দাসত্ব প্রথার ভিতর দিয়ে আফ্রিকার কালো মানুষেরা, white-nationalism-এ বিশ্বাসীরা এই ব্যাপারটা স্বীকার করতে নারাজ। পরের দিকে ভারত, চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর educated migrant worker-রা এসে যে আমেরিকাকে শিক্ষা এবং প্রযুক্তির দিক থেকেও উৎকর্ষতার শিখরে নিয়ে গেছে, সেই সত্যিটাকেও এনারা স্বীকৃতি দিতে চান না। তাঁদের বক্তব্য, আমেরিকার ভূখণ্ডে তাঁদের স্বার্থ বিগ্নিত হচ্ছে। তাঁরা তাঁদের অধিকার ফেরত চান, এবং সেই অধিকার বলার "free speech"-এর জন্যই তাঁদের rally. অন্য জাতির মানুষদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ঘৃণার প্ল্যাকার্ডও দেখা যাচ্ছে এই rally-গুলোতে, এমনকি Nazi-দের স্বস্তিকা লোগো-ও দেখা গেছে। সকলেই ভীষণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এই rally-গুলোতে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের এভাবে চটে যাওয়ার কারণ কি?

মোটামুটি গত দশক পর্যন্তও এই পরিমান white nationalism দেখা যায়নি, ku klux klan-জাতীয় উগ্র গোষ্ঠীরা থাকলেও প্রকাশ্যে বড় সমাবেশ করতো না কেউই। কিন্তু গত দশকে অন্যতম বড় যে ঘটনাটা ঘটেছে, তা থেকে আমেরিকা এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০০৮-এর গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের পর থেকে আমেরিকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমেছে। আরো বেশি লোক মাইনে না-বাড়ার ফলে, ঘরবাড়ির লোন দিতে গিয়ে, health care insurance-এর অভাবে গরিব হয়েছেন। অনেক লোক যে চাকরি হারিয়েছিলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। নতুন যেসব চাকরি তৈরী হচ্ছে, তা বেশিরভাগই ইনফরমেশান টেকনোলজি সেক্টরে। উপরন্তু সেই সব চাকরি আরো বেশি করে চলে গেছে ব্রাজিল, ভারত আর চীনে। যেসব চাকরি এখনো এখানে আছে, তাঁর একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে migrant worker, মানে আমার মতো লোকেদের কাছে। আমেরিকানরা সেই চাকরি পেতে পারছেন না, কারণ সেই চাকরি করতে দরকার প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষা। আমেরিকানদের চিরকাল এটাই মনে করানো হয়েছে, তাঁদের যেটা পছন্দ সেরকমই শিক্ষা গ্রহন করা উচিত; তাই তারা অনেকেই liberal art-জাতীয় বিষয় পড়তে আগ্রহী হয়েছেন। অথচ তারা যে সমাজে বাস করছেন, সেই high-tech society-র চাকুরিগত কি চাহিদা, সে সম্পর্কে তারা উদাসীন থেকেছেন। ফলে তাঁরা সঠিক টেকনিক্যাল শিক্ষা পাননি। আর এখন যখন সেই শিক্ষা তাঁরা পেতে চাইছেন, তখন আমেরিকার প্রায় সর্বত্র কলেজের টিউশন ফি এতটাই বেশি হয়ে গেছে, যে তারা সেটা afford-ই করতে পারছেন না। সুতরাং, অর্থনীতির কিছু সিদ্ধান্ত সাধারণ সাদা চামড়ার শান্তিপ্রিয় মানুষদেরও কোনঠাসা করে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বারাক ওবামা এখন নেলসন ম্যান্ডেলাকে কোট করতে বাধ্য হচ্ছেন, "No one is born hating another person because of the color of his skin or his background or his religion."

এইরকম একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে মানুষ অদৃষ্টের কাছে খুব সহজেই আশ্রয় নেন। এখনই তাঁদেরকে বোঝানো সহজ হয় যে, এই সাদা চামড়ার মানুষদের নাকি আলাদা করে সংগঠিত হওয়ার দরকার হয়ে পড়েছে। তা না করলে, তাঁদের অধিকার চলে যাচ্ছে, immigrant, কালো মানুষ বা অন্য কোনো জাতির কাছে। সেই কাজটিই খুব সুন্দর করে পলিটিক্যালি সমাপতিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে। আর তাই এখানে বেড়ে চলেছে white nationalism-এর বহিঃপ্রকাশ। আরো বেশি মানুষ অসহায় হয়ে, এই অজ্ঞানতার অন্ধকারের দিকে ঝুঁকছেন। বস্টনের মতো শহর, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ব্যাকগ্রউন্ডের অসংখ্য ছাত্র এসে পড়াশোনা করে, সেখানেও দেখা যাচ্ছে extremist-দের জমায়েত। অসহায়তাটা এখানেই যে, শিক্ষার অন্যতম concentration যে শহরে, সেখানেও অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে। আসল সমস্যাটা যে অর্থনীতিগত, কিছু মানুষের disastrous economic decision-এর জন্য যে মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, চাকরি পাচ্ছেন না - এই কথাটা এতো শিক্ষার ভিতরেও মানুষকে বোঝানো যায়নি। উন্নত দেশের নাগরিক হয়েও, এখানকার মানুষরা চামড়ার রং, ধর্ম, জন্মস্থানের ভিত্তিতে একে ওপরের দূরে সরে যাচ্ছেন, এবং সেই দূরত্ব রূপান্তরিত হচ্ছে এক কাল্পনিক ঘৃনায়। সমগ্র বর্তমান পৃথিবীটা সেই কাল্পনিক ঘৃণাগুলোরই নামান্তরে প্রতিফলন।

Wednesday, August 16, 2017

সুখে না থাকাতেই - What is happiness?

সুখে না থাকাতেই, আছে আমার সুখ রাখা।

Thursday, August 10, 2017

ভালোবাসার মরীচিকা - Mirage of Love

Boston, 11-Aug-2017, 2:03 AM

তোমার অমন চুপটি করে আসা,
উজান মনে নিবিড় ভালোবাসা।
তোমার অমন মিষ্টি করে ডাক,
ভুলিয়ে দেয় সমস্ত বিভ্রাট।
তোমার আমার সরব অঙ্গীকার,
জীবনতরী একসাথে বাইবার।
তুমি যখন ব্যস্ত নিজের গানে,
আমার গিটার থাকবে সুরে-তানে।
শুরু হোক এই অজানা পথ চলা,
নতুন করে স্বপ্নের ডানা মেলা।

Wednesday, August 09, 2017

খামোকা অভিমান

Boston, 09-Aug-2017, 5:02 AM

আনমনা এই নরম আবেগ,
চিঠি পাঠায় শূন্যতার,
চুপটি করে বৃষ্টি আসে,
সাথে নিয়ে বিষণ্ণতা।

Friday, August 04, 2017

খামতিগুলো কি আমাদেরই? - Are those really our mistakes?

IIT-তে পড়ার সুযোগ পাইনি; Stanford বা MIT-তে apply করার সাহস হয়নি; মায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অব্দি পড়িনি। কিন্তু এইসব জায়গার ভালো ছেলেরাও যেখানে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, সেখানে কাজটা করার সুযোগ যখন পেলাম, তখন ভাবলাম এই লেখাটা এবারই প্রকাশ্যে আনা যেতে পারে। না না, ভাববেন না এটা কোনো, ছোট জায়গা থেকে বড় জায়গায় উঠে আসার রোমাঞ্চকর সংগ্রামের কাহিনী হবে। তার থেকে বাস্তবের কাছাকাছির কথাই বলার চেষ্টা করবো। এই লেখাটা এখনই লিখতে হতো কারণ, তা না হলে ভাওঁতাটাকে তো প্রকাশ করা যেত না, সেটা স্রেফ অভিযোগের মত শোনাতো।

আপনাদের অনেকেই হয়তো ছোটবেলা থেকে আমার মতো দুরূহ পরিস্থিতিতে বারবার পড়েছেন। যতবারই কোনো ভালো জায়গায় চাকরি বা শিক্ষার সুযোগ হারিয়েছেন, তখন নিশ্চয়ই কাছের লোকের সান্ত্বনা পেয়েছেন। কিন্তু সাথে সাথেই সমাজের থেকে নিশ্চয় পেয়ে থাকবেন, একটা ছোট হয়ে যাওয়ার দৃষ্টিমুখ। অন্যদের তুলনায় কোথাও যেন আপনি পিছিয়ে পড়েছেন বলে, আপনাকে মনে করানো হয়েছে। ধীরে ধীরে, আপনি নিজের মনেও কোথাও একটা সেটা মেনে নিয়েছেন। নিজের মধ্যে, খুব গভীরে তৈরী হয়েছে একটা inferiority complex.

এই যে আপনার মনের insecurity-এর সুযোগ নিয়ে, আপনার নিজের কাছেই, নিজেকে খানিকটা খাটো করে দেওয়া হলো - এটা ভীষণভাবে দরকার। কারণ আমরা যদি এটা প্রমান করতে না পারি, একজন অন্যজনের তুলনায় মেধা বা অন্য কোনো অংশে খারাপ, তা না হলে ঘোরতর সমস্যা। জয়েন্টের দু-তিনটে MCQ ভুল হলে আপনার কলেজ যাদবপুর থেকে যদি কোনো প্রাইভেটে পাল্টে দেওয়া না যায়, তাহলে তো খুব মুশকিল। কারণ সকল প্রাইভেট কলেজে তো যাদবপুরের মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু সেই ঘাটতি মানুষের কাছে নিয়ে এলে সিস্টেম চলবে কেমন করে! তাই প্রমান করা দরকার, ওই দু-একটা প্রশ্নের উত্তর ভুল দেওয়াই আপনার মেধাকে ছোট করে দেয়, অন্য একজনের তুলনায়।

এবার যেই আমরা সমষ্টিগতভাবে ভালো-খারাপের সংজ্ঞাটা শিক্ষার মতো প্রাথমিক বিষয়ে প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে পারলাম, ব্যাস, কেল্লা ফতে! এরপর আপনাকে বলা হবে, আপনি প্রমান করুন আপনার কাজের মাধ্যমে, যে আপনিও চাকরিক্ষেত্রে একজন ভালো কলেজের ছেলের সমমানের। অথচ শিক্ষাক্ষেত্রের পরেই যে চাকরিজীবনে আপনি ঢুকবেন, সেখানে প্রথমেই দেখা হবে আপনার শিক্ষাক্ষেত্র বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলীনতা। পরে, ধীরে ধীরে, আপনার মেধার কথাও বিচার্য হবে। কিন্তু লক্ষ্য করুন, প্রথমেই আপনাদের মধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে ভালো-খারাপের একটা কাল্পনিক দেওয়াল। আদপে সে দেওয়ালের প্রস্থ হয়তো সামান্যই, কিন্তু তাকেই সিস্টেম দেখাবে বিরাটভাবে। এভাবে অদৃশ্য মাপকাঠিগুলো গড়ে না তুললে তো, মানুষের মধ্যে ছোট-বড়র সংজ্ঞাটাকে বাড়তে দেওয়া যাবে না।

ঠিক এভাবেই systematic ঘাটতিগুলোকে মানুষের ঘাটতিতে চালান করা হয়। আপনার যখন চাকরি হচ্ছে না, আপনি ভাববেন যে আপনি নিজেই হয়তো যোগ্য নন। অথচ সিস্টেমের যে এটা দায়িত্ত্ব আপনাকে প্রকৃত সুযোগটা দেওয়া, এই কথাটা মাথাতেও আসবে না। এই যে দেখছেন গুগল, মাইক্রোসফট বা অন্যান্য বড় কোম্পানিতে লোকে কাজ করছে, আপনি ভাববেন, বাপরে, নিশ্চয় ওদের অসামান্য মেধার জেরে ওরা এসব জায়গায় কাজ করছে। কিন্তু সত্যিটা তো আমাকে আমারই এক সিনিয়র কয়েকবছর আগে বলেছিলেন। তাঁর নাম নেবো না, তবে তিনি বলেছিলেন, ২০০ টা মতো কোয়েশ্চেন হয় প্রোগ্রামিং-এর, ওগুলো ভালো করে তৈরী করে নে, তাহলেই যে কোনো বড় সফটওয়্যার কোম্পানিতে হয়ে যাবে। আর সত্যিটাও তাই, ওই ২০০টা কোয়েশ্চেনকেই এপাশ-ওপাশ করে প্রশ্ন করা হয় এসব জায়গায়। আর গাণিতিকভাবে বলতে গেলে, এর থেকে আলাদা ধরণের problem solve করার দরকারও পড়ে না, আমাদের কাজের ক্ষেত্রে। কিন্তু সকলেই যদি এটা রপ্ত করে ফেলে, তাহলেও সবাই কি এসব বড় জায়গায় কাজ করতে পারবে? কারণ এদের কোম্পানিতে কাজ করার লোকের চাহিদা তো সীমিত। সুতরাং, আবার দরকার পড়ে সেই তুলনামূলকভাবে ছোট করার গল্পটা।

সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা এই জিনিসটাকেই cater করে ranking, competitive exam-জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোর মাধ্যমে। আমাদের মনে প্রোথিত করে দেওয়া হয়, যে আমরা হয়তো খারাপ অন্যদের থেকে, তাই আমরা সুযোগ পাচ্ছি না বা আমাদের মাইনে কম অন্যদের তুলনায়। কিন্তু আইনস্টাইনই বলেছেন, "Everybody is a genius. But if you judge a fish by its ability to climb a tree, it will live its whole life believing that it is stupid." আমরা সাধারণরা বেশিরভাগই কেউ আইনস্টাইন বা রবীন্দ্রনাথ নই। কিন্তু আমাদের নিজেদের মতো করে যে বিশেষত্বগুলো আমাদের ভিতরেই আছে, সেগুলোকে তো আমরা বাড়তেই দিতে পারি না। সমাজের এলিটিজমের ফাঁকফোকর দিয়ে গলে যায় আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া-ভালোলাগা-প্রতিভাগুলো। তাই যেখানেই ওই এলিটিজমের ছোঁয়া দেখবেন, বুঝবেন লোকানো রয়েছে সিস্টেমেরই কোনো গাফিলতি। আর এভাবেই সিস্টেমটা survive করতে পারে। এখানে আপনার survival-এর উপায় হলো, এই সিস্টেমের খুঁটিনাটি জেনে, তার সাথেই ধূর্ততার খেলায় নামা। শুধু খেয়াল রাখা দরকার, সেই খেলায় নেমে, আপনি নিজে যেন সিস্টেমের তৈরী করা ট্র্যাপগুলোকে কোনোভাবেই বড় করতে সাহায্য না করে ফেলেন। অন্তত এটুকু চাহিদা সমাজ আপনার কাছে রাখে।


পুনশ্চঃ আমার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান কিছু বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় এখনো বিভিন্ন জায়গায় এই চাকরির সংগ্রামটা চালিয়ে যাচ্ছে, একটু ভালো চাকরি বা মাইনের আশায়, একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়। আমি যে প্রিভিলেজগুলো পেয়েছি, সেগুলো তাদের অনেকেই পায়নি। তাদের কারো কারো সাথে এখন কথা বলে বুঝতে পারি, কিভাবে তারা নিজেদের যোগ্যতাকেই প্রশ্ন করে! তাই এক ভিতরের তাড়না থেকেই লিখতে বাধ্য হলাম এই লেখাটা। আশা করবো, যারাই সাফল্য পাচ্ছেন, মনে রাখবেন যে তারা ঠিক কোন advantage-এর জায়গা থেকে শুরু করছেন, এবং কি কি সুবিধাগুলো পেয়ে আসছেন, যার জন্য আপনার এই সাফল্য। আর একটু খেয়াল রাখবেন, সমাজের কাছে যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে দিতে, আপনার কাছের বন্ধুবান্ধবগুলো যেন নিজেদেরকে হারিয়ে না ফেলে।

Tuesday, August 01, 2017

বিদেশের ছাত্রজীবন - Student Life abroad

বেশ আগের কথা। পেয়াঁজ কাটছিলাম। অসাবধানবশতঃ আঙ্গুলটায় ছুরি বসিয়ে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভিতর আঙ্গুল। কিছুক্ষণ পরে বাইরে এনে দেখলাম, রক্ত থামছেই না। বোরোলিনটা ইচ্ছে করেই ভারত থেকে নিয়ে আসি। একহাতেই কেটে-যাওয়া তর্জনীতে লাগালাম বাঙালীর মহৌষধী। রক্ত পড়া থামলো তাতে। কিন্তু খাবার বানানো থামালে তো চলবে না, তাহলে তো অভুক্তই শুতে হবে। বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার মত ডলার খরচের বিলাসিতা সম্ভব নয়। তাই বোরোলিন লাগিয়ে কাছের মার্কেট থেকে এক প্যাকেট ব্যান্ড-এড আনতে হল। ঘরে ফিরে ব্যান্ড-এড লাগিয়ে, একহাতেই যেরকম পারা যায় রান্না। তারপর রক্ত-বোরোলিন মিশিয়ে জমিয়ে খাওয়া।

এরকম আরো ঘটনা আছে। একবার স্কোয়াশ খেলতে গিয়ে, স্কোয়াশ বল এসে লেগেছিল চোখে। স্কোয়াশ বলের স্পিড খুব বেশি হয় বলে, চশমা ভেঙে এক চোখ প্রায় অকেজো করে দিল কয়েক সপ্তাহের জন্য। অগত্যা একচোখেই বেশ কয়েকদিন দোকান-বাজার-রান্না। তখন আমেরিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুরূহ দশাটাও বেশ বুঝেছিলাম। যাই হোক, একবার বুড়ো আঙ্গুলটা পুড়ে যেতেও এভাবেই আধা-সক্ষমতায় সপ্তাহ-দুয়েক চালাতে হয়েছিল।

তবে স্রেফ আমি তো না, আমার মতো অনেক ছাত্র এভাবেই বিভিন্ন নিত্য-নৈমিত্তিক অসুবিধার মধ্যে পড়াশোনাটা চালিয়ে যায় এখানে। দেশ ছেড়ে, বন্ধু ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে। এই তো আমারই এখানের এক বন্ধুর ৫ বছরের সম্পর্ক ভেঙে গেল, সে এদেশে চলে আসার কিছু পরেই। তাড়াহুড়ো করে এক সপ্তাহের জন্য দেশে ফিরেও কিছু লাভ হল না। তাকে দেখেছি, বেশ কষ্ট করে নিজেকে আবার ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। অনেকদিন চুপিচুপি অভুক্ত থাকতেও দেখেছি তাকে। তবে যখন কোনো assignment বা অন্য কিছুর deadline থাকে, তখন আমাদের এমনিও পরপর বেশ কয়েকদিন ঠিকঠাক ঘুম-খাওয়া-দাওয়া হয় না। সময়ই থাকে না, নিজে খাবার তৈরি করার। আর নিজেকে তো একটু অবহেলা করাই যায়। নিজের প্রতিই তো অবহেলা, অন্য কেউ তো নয়।

এই অব্দি যদি পড়া হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তো ভাবতে শুরু করেছেন যে, এই কাঁদুনি গাওয়ার মানে কি। কিন্তু বাইরে থাকার উজ্জ্বল দিকগুলো দেখে যেমন সহজেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তার অপর পিঠটা সম্পর্কেও তো অবগত থাকতে হবে। নাহলে তো এটাও আমেরিকার War on Terror-এর মতো হয়ে যাবে।

এখন অবশ্য আর ছুরিতে আঙ্গুল কাটে না, বা গরম ভেসেলে হাত পোড়ে না, এখন এসব সামলে নিয়েছি। তবে মনটা তো চিরকালই অনিয়ন্ত্রিত, কেটে যায়, ছড়ে যায়, আঁধারেতে মিশে যায়। তবু বাইরের দুনিয়ার কাছে আমরা ভালো আছি। বন্ধুবান্ধবদের বেড়াতে যাওয়ার photo দেখে আনন্দ উপলব্ধি করছি। আমাদের আবার খারাপ থাকলে চলে নাকি! আমরা স্বপ্নের দেশে স্বপ্নের মতো আছি। তবে সেই স্বপ্নটা শুধুই যারা বেশ দূর থেকে দেখছে, তাদের কল্পিত স্বপ্ন, কিন্তু আমাদের তুলিতে রাঙানো। আচ্ছা তুলিরা কি ক্লান্ত হয়, অন্যের জন্য ছবি আঁকতে আঁকতে?

(চলবে, লেখাটা নয়, জীবনটা)