ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ ১৮৬১-তে জন্মেছিলেন, তাই ২০১১-এর আশপাশ থেকে শুরু হয়েছিল ওনার জন্মের সার্ধশতবর্ষ পালনের হিড়িক। আর বাংলা সঙ্গীত সেই সুযোগে আরো কিছুদিন ওনার কাঁধে ভর করে বেঁচে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন প্রায় ৫ বছরের ওপর কেটে গিয়েছে সেই হাইপের। এখন বাজারের নতুন হাইপ লোকসঙ্গীত। পল্লীগীতিগুলোকে নতুন প্যাকেজে বাজারে আনা। বেশ অনেকদিন থেকে চলছিল এই ব্যাপারটা, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জন্মের ১৫০ বছর পালনের সময়টা কেটে যাওয়ার পর অতীতে-বেঁচে-থাকতে-চাওয়া বাঙালির "নতুন" অতীতচারণের দরকার পড়লো। সুতরাং বাজারে নতুন মোড়কে ছাড়া হল ফোক গানকে।
ফকিরার ইতরপনা অ্যালবাম দিয়ে শুরুর দিকটা বেশ সুন্দর হয়েছিল। এখনো সে গান নেশার মতো কানে লেগে আছে। কিন্তু কোনো ফর্মুলা যদি মার্কেটে খেটে যায়, সেটাই বারবার ব্যবহার করে মুনাফা করার নিয়ম। সুতরাং সব্বাই সেটা করতে লাগলেন। আর বাঙালি কে পায় কে? পাওয়া গেছে "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম", ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে সেটাই শোনা চালু হল। স্বাধীন সঙ্গীত যে কত বছর থেকে শোনা হচ্ছেই না, সেটার কোনো খেয়ালই আর কেউ করলো না। অথচ এর মধ্যে যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক হয়নি, তা নয়। কিন্তু সেগুলো কোনো জায়গাই পায়নি। এর মধ্যেই অনুপম রায় পুরো ব্যাপারটাই বুঝলেন।
অনুপম দেখলেন এমনি নিজের গানগুলো আলাদা অ্যালবাম করে বার করা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে চলে গেছে। সুতরাং, নিজের গানগুলো চালান করে দিলেন সিনেমার গানে। সাথে ফি-বছর একটা করে নিজের অ্যালবাম করার কনট্র্যাক্ট আদায় করে নিলেন। কিন্তু সেটা অনুপমের স্ট্র্যাটেজি আর সাফল্য অনুযায়ী খেটে গেলো। বাকিরা সেটা করতে পারলেন না। ফলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক পিছিয়েই পড়লো।
ইতিমধ্যে ফোক সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা এখনো বিদ্যমান। আর যাহা কিছু মার্কেটে খাটে, তাহাকে আরোই মার্কেটে লাগাও। এই ফর্মুলাই ব্যবসায়ীরা বোঝেন। তাই ফোক সঙ্গীত ঢুকে পড়লো ছায়াছবির গানেও। অনেকদিন ধরে একটু একটু করে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলো। প্রাক্তনে "ভ্রমর" ব্যবহার করা হল। কিন্তু "দূর্গা সহায়" বললো অতো রিস্ক নিয়ে লাভ নেই,যা আছে যত পারো ঢুকিয়ে দাও। তাই ফোক গানের মেডলি তৈরী করে ফেললো (https://www.youtube.com/watch?v=8PaCWoL31Yg)। কপিরাইট যখন নেই, আর মানুষ যখন খাচ্ছে, তখন চালিয়ে দিতে তো অসুবিধে নেই।
পুরোনো জিনিসের নতুন মোড়ক - ব্যাপারটা খুব একটা খারাপ না। এতে পুরোনো জিনিসেরই কদর নতুন প্রজন্মের কাছে বাড়ে। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেই নতুন মোড়কটাই যখন পুরোটা বাণিজ্যের স্বার্থে চলতে থাকে। যেটা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে হয়ে গেলো। একটা সময় এত্ত ভীষণ পরিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত বেরোতে শুরু করেছিল, যে মান পড়তে লাগলো। এই পল্লীগীতির নতুন মোড়ক নিয়েও একই শুরু হয়েছে। তাই পুরোনোকে নতুন করে আনার সহাবস্থান থাকুক, শুধু সেটা যেন বাণিজ্যের খাতিরেই না হয়। তার মধ্যে শিল্পটাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলবেন না। ফোক সঙ্গীত তো শিল্পের অকৃত্তিম চরিত্রের কথাই তুলে ধরে, সেটাই থাকুক না!
No comments:
Post a Comment