কিছু বলছিনা, স্রেফ কিছু ঘটনা তুলে দিচ্ছি। ভাবনাটা পাঠকের দায়িত্ব।
২০০৫ সালে জুন মাসে "ষ্টার আনন্দ" বলে একটি বাংলা খবরের চ্যানেল শুরু হয়। সেই চ্যানেলটির একটি ভাগ থাকে এবিপি গ্রুপের হাতে, বাকিটা থাকে ষ্টার গ্রুপের হাতে। ষ্টার গ্রুপ হল Fox News-এর একটি সাবসিডিয়ারি সংস্থা, যার মালিক হলেন রুপার্ট মার্ডক নামক আমেরিকান businessman. ২০১২ সালে "ষ্টার আনন্দ" নাম বদলে নতুন নাম হয় "এবিপি আনন্দ", কারণ রুপার্ট মার্ডকের ষ্টার গ্রূপ ওই চ্যানেলটি চালাতে আর রাজি হয় না; যদিও ভারতে এখনো অব্দি সবথেকে বেশি লাভবান নিউজগ্রূপ ষ্টার নেটওয়ার্কের। ২০১২-এর পরে, এবিপি গ্রুপ সম্পূর্ণরূপে এবিপি আনন্দকে নিজের আয়ত্তে নেয়।
এই ঘটনা মাথায় রেখে, আরো কিছু ঘটনা দেখে নেওয়া যাক ২০০৫-২০১২-এর মধ্যে।
২০০৫ - রুপার্ট মার্ডকের ষ্টার গ্রূপ ও এবিপি গোষ্ঠী "ষ্টার আনন্দ" নামক বাংলা ২৪-ঘন্টার নিউজ চ্যানেল তৈরী করে।
২০০৫ - রিপাবলিকান পার্টির আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে নিউক্লিয়ার চুক্তি করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।
২০০৬ - বামপন্থী দলগুলো UPA সরকারকে বলে যে, এই চুক্তি হওয়ার আগে পার্লামেন্টে গভীর আলোচনা করার প্রয়োজন আছে, কারণ এটা ভারতের স্বায়ত্ত্ব শাসন, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর প্রশ্ন তোলে।
২০০৭ - মনমোহন সিং নিউক্লিয়ার চুক্তি করার জন্য নিজে থেকেই অনেকটা এগিয়ে যান, পার্লামেন্টকে ধোঁয়াশায় রেখে।
২০০৭-০৮ - পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম হয়।
২০০৭-০৮ - আনন্দবাজারের আনন্দ-প্রকাশনীর বিশিষ্ঠ লেখকগোষ্ঠী এবং অন্য বুদ্ধিজীবীরা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জন্য পথে নামেন।
২০০৭-০৮ - আনন্দবাজার, এবিপি আনন্দ-সহ এবিপি গ্রুপের সমস্ত প্রিন্ট ও নিউজ মিডিয়া পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বলতে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আনন্দবাজার-গোষ্ঠীর বিশিষ্ঠ লোকেরা সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত কথা বলেন। এবিপি আনন্দতে মমতা ব্যানার্জি নিজেও কয়েকবার একান্ত সাক্ষাৎকার দেন।
২০০৮ - বামফ্রন্ট কেন্দ্রের UPA-সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয়, কারণ কংগ্রেস নিউক্লিয়ার চুক্তি সাইন করতে বদ্ধপরিকর ছিল। বামফ্রন্ট এই চুক্তিকে কখনোই স্বীকৃতি দিতে চায় না।
২০০৮ - UPA তাও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখে, অন্য দলগুলির সাহায্যে।
২০০৮ - UPA-সরকার আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে নিউক্লিয়ার চুক্তি সাইন করে।
২০০৯ - বামফ্রন্ট লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ১৫টি আসন পায় পশ্চিমবঙ্গে (আগে ছিল ৩৫টি)।
২০১১ - বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারায়।
২০১২ - হিলারি ক্লিনটন তার ৩-দিনের ভারত সফরে, পশ্চিমবঙ্গে এসে নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে দেখা করেন। হিলারি ক্লিনটন ছিলেন তখনকার আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট্। তাঁর আগের সেক্রেটারি অফ স্টেট্ ছিলেন কন্ডোলিজা রাইস, যিনি ভারত এবং আমেরিকার নিউক্লিয়ার চুক্তি সাইন করেছিলেন ২০০৮ সালে।
২০১২ - রুপার্ট মার্ডকের ষ্টার গ্রূপ এবিপির সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার শেষ করে দেয়, ষ্টার আনন্দ বন্ধ হয়ে গিয়ে এবিপি আনন্দ শুরু হয়।
আবারো বলি, কিছু বলছিনা, এগুলো শুধুই ঘটনা, হয়তো শুধুই সমাপতন। কিন্তু ভাবতে পারেন, বা ভাবা প্র্যাকটিস করতে পারেন।
লাস্ট নোট: পৃথিবীর মধ্যে এখনো একটি মাত্র দেশই সবথেকে বেশি মাত্রায় অন্য দেশের সরকার বদলেছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়, সেটা কখনো সামরিকভাবে, কখনো যুদ্ধের মাধ্যমে, বা কখনো অন্য কিছু উপায়ে। তবে শাসন বদলানোর পরে প্রায় সবকটা দেশেরই অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে, আর সে ব্যাপারে তারা একদমই care করেনি।
No comments:
Post a Comment