Friday, March 23, 2018

Ticking Time Bomb - Part 1 (~১১ মিনিট)

চলুন একটা গল্প বলি। গল্পটার বাস্তবতাটা যদিও খানিকটা বেশিই, তবুও এটাকে গল্পের ছলে সামনে আনাই শ্রেয়। সময়গত দিক থেকে সামান্য অবিন্যস্তভাবে গল্পটা বলবো। যারা ক্রিস্টোফার নোলান-এর স্টোরিটেলিং স্টাইলের সাথে পরিচিত, তাদের কাছে এই সময়ের দৌড়াদৌড়ি নস্যি। তবে বাকিরাও সহজে মানিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে হয়।

যে সময়কালটা ধরবো, তা মোটামুটি ২০০৪-০৫ থেকে এই ২০১৮-এর মার্চ অব্দি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বেশ সাম্প্রতিক অতীতের কথা, তাই মাঝে মাঝেই গল্প তার কল্পনার বেড়া পেরিয়ে বাস্তবের আঙিনায় ঢুকে পড়বে। আর আপনারাও তখন আপনাদের বাস্তবের খাড়া-বড়ি-থোড় থেকে কল্পনার থোড়-বড়ি-খাড়ায় ঢুকে পড়বেন। 

প্রথমেই, আমরা ফিরে যাবো ২০০৪-০৫ সালে। এখন ঠিক যেখানে বসে গল্পটা লিখছি, তার খুব কাছাকাছিই এই গল্পের শুরু, খোদ বস্টন শহরে। এই শহরের লক্ষ লক্ষ ছাত্রের মধ্যে থেকে মাত্র ৪-৫ জন ছাত্রের মাথা থেকে বেরোনো এক আইডিয়া, সারা বিশ্বের এক বৃহৎ সংখ্যক মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে দিল, শুধু ব্যক্তিগত স্তরে নয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক স্তরেও। আপাতভাবে খুব নিরীহ একটি আইডিয়া। কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ছবি ও ব্যক্তিগত কিছু তথ্য-সম্বলিত একটি ওয়েবসাইট তৈরী করা হবে। সেই ওয়েবসাইটে এসে যে কেউ তার সহপাঠী বা সহপাঠিনী সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে।

কলেজ চত্ত্বর থেকে বেরিয়ে ২০০৬-০৭ সালে ধীরে ধীরে যখন এই ওয়েবসাইটটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, তখনও তা বেশ নিরীহই। ফেসবুকের কথা তখন বিশ্বের মানুষ সবে জানতে শুরু করেছেন। সকলে তাদের ব্যক্তিগত ভালোলাগা, মতাদর্শ এ সম্পর্কে তথ্য দেওয়া শুরু করেছেন। পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেতে শুরু করছেন। আবার যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে পুরোনো স্কুলের হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীর সাথে, যার সাথে টিফিনবেলায় ঝগড়া হতো; আর স্কুল ছুটির পরে চুড়ান ও ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফেরা হতো। তবে না, নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করা এই লেখার উদ্দ্যেশ্য নয়। তাই বেরিয়ে আসুন, আমরা এবার চলে আসবো ২০১২ সালে। 

সারা দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশে ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুক শুধু আর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ফেসবুক একটা স্টাইল, খবরাখবর পাওয়ার জায়গা, বিজ্ঞাপনের আস্তানা, আবার গ্রূপে আড্ডা মারার জায়গাও বটে। তার কিছু আগে থেকেই, পশ্চিমবঙ্গেও ফেসবুক গ্রূপে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে ফেসবুক থেকে শুরু হতে থাকলো সংগঠিত আন্দোলন, যেমন Jasmine Revolution। বিভিন্ন মিডিয়া গোষ্ঠী ফেসবুকে তাদের নিউজ দিতে আরম্ভ করলো। ফেসবুক এগিয়ে যেতে থাকলো নতুন দিগন্তের পথে। সোশ্যাল মিডিয়াই শুধু নয়, এক আদ্যন্ত মিডিয়া হয়ে উঠলো ফেসবুক। 

এর পাশাপাশি যেটা হতে থাকলো, বিজ্ঞাপনের স্বার্থে ফেসবুক সংগ্রহ করতে লাগলো আমাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আরও আরও তথ্য। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কি খাচ্ছেন, কোন ব্র্যান্ডের পোশাক পড়ছেন, কোথা থেকে জামাকাপড় কিনছেন, কি পছন্দ করছেন, কি ভিডিও দেখছেন, কাকে কী বলছেন - সব তথ্য জমানো শুরু করলো। এমনকি আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ ঠিক কি রকম হতে পারে, তা আপনি ফেসবুককে সরাসরি না বললেও, সে আপনার আচার আচরন দেখে মোটামুটি প্রেডিক্ট করতে শুরু করলো। মানুষের ব্যবহার সম্পর্কে এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যভান্ডার - বিশ্ব ইতিহাসে আগে কোথাও কোনও দিন তৈরি হয়নি। ফেসবুকের মধ্যে তৈরী হতে থাকলো World's largest social data bank। এই বিপুল তথ্য ফেসবুক ব্যবহার করে সেই ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের জন্য। ফেসবুকের পারদর্শিতা এখানেই যে, সে একদম সঠিকভাবে সঠিক লোককে উপযোগী বিজ্ঞাপনটা দেখাতে পারে, কারণ সে খুব সুক্ষভাবে জানে আপনার পছন্দ ঠিক কোন ধরণের প্রোডাক্ট। এর ফলে ফেসবুকে বিভিন্ন কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিয়ে লাভবানও হল। আপনি বিজ্ঞাপনে দেখা কোম্পানির জিনিস কিনলেন, বা সেই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেলেন। এতক্ষন পর্যন্ত ব্যাপারটা মোটামুটি ঠিকই ছিল। কিন্তু বিজ্ঞাপন কি শুধুমাত্র consumer product-এরই হয়?

এই প্রশ্নের খুব সরাসরি উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের এবার চলে আসতে হবে ঠিক 2016 সালে। আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। সেই সময়কালে ফেসবুকের একজন প্রাক্তন-head লক্ষ্য করলেন, একটি আপাতভাবে-মনে-হওয়া Bernie Sanders-এর প্রচারের পেজ থেকে কিছু অদ্ভুত ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে ফেসবুকে। মানে যে বিষয়গুলোর বিপক্ষে Bernie Sanders কথা বলেন, ঠিক সেগুলোরই পক্ষে প্রচার করা হচ্ছে, অথচ ওনার স্বপক্ষে প্রচারের পেজ থেকে। পরে বোঝা যায়, কিছু লোকজন মিলে Sanders-এর বিপক্ষে তারই নাম দিয়ে উল্টো প্রচার করছিল। ততদিনে শুরু হয়ে গেছে ফেক নিউজের জমানা। যে নিউজ সত্যি নয়, তাকেই সত্যের মোড়কে জনগণের সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। আর ফেসবুক হয়ে উঠলো সেই ফেক নিউজের মূল কারখানা।

2017-তে জানা যায় আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য, Russian কিছু গ্রুপ ফেসবুকে প্রায় লক্ষাধিক ডলার ব্যয় করে আমেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারের জন্য।  তারা অন্য প্রার্থীদের বিপক্ষেও প্রচার করেছিল। যে রাষ্ট্রটি এতদিন অন্য দেশের নির্বাচনে নাক গলিয়ে এসেছে, তাদেরই নির্বাচনে তাদেরই দেশের একটি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মানুষকে যে ম্যানিপুলেট করা যেতে পারে, এটা অনেকেরই ধর্তব্যের বাইরে ছিল। রাশিয়ান গ্রুপগুলি ফেসবুকের বিজ্ঞাপন-মাধ্যমকে ব্যবহার করে। ফেইসবুকের কাছে যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম data আছে প্রচুর মানুষের সম্পর্কে, সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে নিপুন দক্ষতায় ভোটার টার্গেট করা হয়। মানে ধরুন আপনি conservative কোনো ideology-তে বিশ্বাস করেন, তখন আপনাকে দেখানো হয় Republican party-র বিজ্ঞাপন বেশি বেশি করে। বা আপনি যদি দ্বিধাগ্রস্থ অথচ সামান্য-হিন্দু-ঘেঁষা ভোটার হন, তাহলে আপনাকে BJP-এর বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। ফলাফল আমরা দেখতেই পাই, 2016 সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু এই গল্প শুধু বিজ্ঞাপনেই শেষ হয় না।

- বাকিটা পরের পার্টে

No comments:

Post a Comment