"নিকারাগুয়ায় নিঃসহায় নিম্নবিত্ত নিঃস্ব মানুষদের নিখিরি বানানো চলছে না, চলবে না। গুয়েতেমালায় গণতান্ত্রিক গরীব-গুর্বোদের জোর করে গণধর্ষণ, ওয়াক থু, ওয়াক থু। ... প্রলেতারিয়েতদের পাশে পলিটব্যুরো লড়ছে লড়বে। হনুলুলুতে হারেরেরে হার্মাদদের হুঙ্কারের হামলাবাজিকে, ওয়াক থু, ওয়াক থু।" - ওপেন টি বায়োস্কোপ সিনেমাতে, ঠিক এভাবেই বামপন্থীদের এককালের বিদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধের স্লোগানগুলোকে উপহাস করা হয়েছিল। বিদ্রুপ করতে গিয়ে সামান্য অতিরঞ্জনের দরকার পড়ে, সেটুকু পরিমাণমতোই ছিল। কিন্তু সিনেমাতে এটা উপহাস হলেও, পরের দিকে এই মনোভাবটাই মেইনস্ট্রিমে উঠে আসে। কলেজে পড়াকালীন বেশি মাত্রায় শুনতে শুরু করি যে, কোনো একটা বাইরের দেশে কি হয়ে গেলো, সেই নিয়ে আমরা কেন মাথা ঘামাবো ! আমাদের চাকরি পেতে হবে, রাজ্যে আরো শিল্প দরকার - এসব না ভেবে, কেন আমরা "আমার নাম, তোমার নাম, ভিয়েতনাম"-এর মতো স্লোগানের পিছনে নিজের সময় ব্যয় করবো !
গত কিছুদিনে সিরিয়ায় বম্বিং-এর তীব্রতা বাড়ায়, দেখলাম অনেক মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন। সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলছেন। অন্তত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে সক্রিয়তা দেখিয়েছেন, সমবেদনা অনুভব করেছেন। শেষবার কলকাতা গিয়ে দেখে এসেছি, সিপিএম পার্টিটার শেষটুকু চিহ্নও প্রায় আর নেই। খুব আশাব্যঞ্জক অবস্থা ! কিন্তু এককালে পার্টিটার যে মনোভাবকে উপহাস করা হতো, সেই ভাবধারাকে ভিত্তি করেই যে আজ সিরিয়ার যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে বলছে খুব সাধারণ মানুষও - সেটাও কম আশাব্যঞ্জক নয় (হয়তো ওটাই একমাত্র আশা)। ওখানে (এবং অন্যান্য জায়গায়) সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির যে শক্তি প্রদর্শন চলছে, তা নিয়ে আগে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো আলাদা আলাদাভাবে মিটিং মিছিল করতো। এখনো হয়তো ছোট করে কোথাও কোথাও হয়। অচিরেই কিছুদিনের মধ্যে সেই ছোট সভাও বন্ধ হয়ে যাবে। তখনও আশা করি, বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তের নিপীড়িত মানুষদের জন্য বাঙালির সহমর্মিতা একইরকম থাকবে। তবে সেই আবেগের সাথে রাজনৈতিক সচেতনতাও যেন থাকে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের geo-political অবস্থানগুলো বেশ জটিল, সেইটুকু বাস্তববুদ্ধি বাঙালির কাছে প্রত্যাশিত। বিশ্ব-মানবতার সাথে এই সচেতন একাত্মতাই বাঙালিকে বিশ্বের নাগরিক করে তোলে, পৃথিবীর ছবিতে "ব"-লাগানো কোনো লোগো নয়।
No comments:
Post a Comment