এক প্রবল ঝড় এসে সব ওলোটপালোট করে দেওয়ার পরে, চারিদিক ভীষণ শান্ত হয়ে উঠছিল, যেমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু মনের ভিতরে তখনও ছিল উথালপাথাল করে দেওয়া শূন্যতা। পৃথিবীটাকে চিনতেই যেন খুব অসুবিধে হচ্ছিল। হয়তো তার সাথে নিজের ভিতরের খানিকটাও হারিয়ে গিয়েছিলো।
গল্পটা এরকম চলতে পারতো, এবং ধীরে ধীরে এই অচেনা পরিচয়ই হয়তো আপন হয়ে উঠতো। কিন্তু গল্প আর জীবন তো এক নয়, তা আমরা জানি। কিন্তু যেটা আমরা অনেকসময় ভুলে যাই - জীবন গল্পের থেকেও বেশি আদরের। সে যেমন সজোরে ধাক্কা দেয়, তেমনি সর্বাত্মক ভালোবাসায় সেই জীবনেরই প্রেমে পড়তে শেখায়।
তাই জীবন তৈরী করলো নতুন আখ্যান - ঝড়ের শেষে যে গুমোট আবহাওয়া ছিল, সেই মেঘ কেটে গেল, সূর্য ঝলমল করে উঠলো, গাছের পাতায় দেখা গেল অকাল সবুজ, প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে পাখিরা তাদের বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো ভীষণ কলরবে, সব ক্লীবতা দূর হয়ে গেল, আর শুরু হল নতুন চর্যা। সেই চর্যায় না থাকলো কোনো চাপানো বাঁধন, না কোনো আড়াল, না কোনো মলিনতা, না কোনো অন্ধকার।
অথচ বন্ধন তো তৈরী হল, যে বন্ধন পশমের আদর লাগিয়ে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেয় না। যে বন্ধন কোন নিয়মের বিধিনিষেধ না মেনেই ভীষণ জোরালো হয়। যে বন্ধন দূরত্বকে অবজ্ঞা করে অনায়াস পারদর্শিতায়। সেই বন্ধন অচিরেই এনে দেয় আরাম, অভ্যাস, দৈনন্দিন রুটিন। কিন্তু সেই প্রাত্যহিকতা এতটাই সহজাত, যে তা একেবারেই উহ্য। তার অনুভব আছে, উচ্চারণ নেই।
সেই অনুভবে, এক প্রান্তের সকালের রোদে অন্য প্রান্তের বিকেলের পাখিদের ঘরে ফেরার ডাক শোনা যায়। তারপর কিছুটা সময়কে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে আদানপ্রদান করে নেওয়া, অন্তরঙ্গতা। একটু বাদে দৈনন্দিন কাজের ব্যস্ততায় ডুব দেওয়া। তবু "মাঝদুপুরে হঠাৎ সেদিন আচমকা সব পড়লো মনে", এবং সেই বিষাদকে নদীর ধারে হাঁটতে গিয়ে জলের সাথে ভাগ করে নেওয়া। এরপরে কাজ শেষে, আবারো কিছু সময়ের ভাব, কিছু ভাবনার প্রকাশ। এই আসা যাওয়ার মাঝে যে সময়টুকু পড়ে থাকে, সেখানেই তৈরী হয়ে গেল কত রঙিন স্বপ্ন। মেঘের গায়ে নকশা আঁকা হল কত কল্পনার। জলের বুকে খেলে গেল কত তরঙ্গ, ভরসার দেওয়াল পেল হৃদয়ের প্রত্যেক নিলয়-অলিন্দ, সব জটিল সমীকরণ সমাধান খুঁজে পেল। বোধ হয় এরই অপেক্ষা ছিল চিরটাকাল, বহুযুগ, শুধু সমাপতন হয়নি সময়ের। কিন্তু ভাবনা, চিন্তা ও সর্বোপরি হৃদয়ের সমাপতনের কাছে সময়ের হার তো ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার শেষেই শুরু নতুন সময়ের, নতুন পথচলার।
No comments:
Post a Comment