Alexandria Ocasio-Cortez - নামটা যদি এখনো না শোনা হয়ে থাকে, তাহলে চটপট এনার ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন। নিউ ইয়র্ক শহরে পুয়ের্তো রিকান পরিবারে জন্ম, প্রসঙ্গত পুয়ের্তো রিকো আমেরিকার দক্ষিণে একটি আমেরিকান কলোনি রাজ্য। Alexandria বস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন ও অর্থনীতি নিয়ে অনার্স পাশ করেন ২০১১ সালে। সেই সময়টায় সারা বিশ্বেই মন্দা চলছিল আর তাই চাকরি-বাকরির অবস্থা ছিল খুব খারাপ। Alexandria পড়াশোনার পর bar-এ, ফুড-স্টল-এ কাজ করা শুরু করেন, বাড়ির অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। এর কিছুদিনের ভিতরেই বার্নি স্যান্ডার্স ঘোষণা করেন যে, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তিনি লড়বেন। অনেক তরুণ- তরুণীর মতোই বার্নির হয়ে প্রচার শুরু করেন Alexandria। বার্নি শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। কিন্তু ২০১৮ সালে Alexandria নিজে ভোটে দাঁড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
নিউ ইয়র্কে শহরের যে অংশের বাসিন্দা ছিলেন Alexandria, সেখান থেকে ভোট দাঁড়াতেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এক অন্যতম প্রভাবশালী, উচ্চপদের নেতা। Alexandria অভাবনীয়ভাবে সকলকে চমকে দিয়ে সেই নেতাকে হারান, আর আমাদের ভারতের ভাষায় বললে এম.পি নির্বাচিত হন। তার পরের গল্পটা কিছুটা রূপকথার আকার নিচ্ছে। সারা দেশেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন ২৯ বছরের এই মেয়েটি। ক্লাইমেট চেঞ্জ, সরকারি-সহযোগিতা-প্রাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ফ্রি কলেজ এডুকেশন - এই জাতীয় নীতিগুলিকে শুধু প্রথম সারির রাজনৈতিক আলোচনাতে নিয়ে আসেন তাই নয়, যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিষয়গুলিকে তিনি ইতিমধ্যেই mainstream করে ফেলেছেন। কিন্তু Alexandria সম্পর্কে আমার এভাবে লেখার কারণ ওর অন্য একটি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।
Alexandria একটি রাজনৈতিক সংস্থার সদস্য। এই রাজনৈতিক সংস্থাই Alexandria-এর নির্বাচনের সময় তৃণমূল স্তরে জনসংযোগ আর প্রচারের কাজ করেছিল। সংস্থার নাম Democratic Socialists of America. এই সংস্থা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, কিন্তু একটি পলিটিকাল অ্যাকশন গ্রূপ। এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রার্থীদের সমর্থন করে ও প্রচার করে। এদের ওয়েবসাইট থেকে এদের রাজনৈতিক ও অর্থনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তবে খুব ছোট্ট করে বললে, এরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। তবে সোভিয়েত থেকে শিক্ষা নিয়ে এরা সমাজতন্ত্রের প্রশাসন থেকে গণতন্ত্রকে মুছে দিতে চাননা, তাই "ডেমোক্রেটিক"। তবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে এরাও মনে করেন, সমাজতান্ত্রিক ভাবেই অর্থনীতির গঠন হওয়া উচিত, অনেকটা কো-অপারেটিভ মডেলে। নিও-লিবারেল ইকোনোমি এবং গ্লোবালাইজেশন-এর প্রবলভাবে বিরোধী এরা। Alexandria নিজেও এই মতবাদেই বিশ্বাস করে থাকেন। তাই Alexandria-এর এই জনপ্রিয়তা এবং সাফল্য এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
আমেরিকার অর্থনীতি আমেরিকার নিচের সারির মানুষকে (৯৯%) যে তলানিতে ধীরে ধীরে নামিয়ে চলেছে, তাতে Alexandria-এর জনপ্রিয়তা বাড়াটা স্বাভাবিক। ছাত্রদের লোনের পরিমান আমেরিকায় নতুন নতুন রেকর্ড ছুঁয়ে চলেছে। যত কষ্ট করে মানুষ কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন, সেই পরিমান লোন শোধ দেওয়ার মতো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রান্তিক মানুষেরা স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ নিতে গিয়ে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর কাছে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় Alexandria-এর মতো তরুণীর মূল রাজনীতিতে আসাটা একটা আলাদা উত্তেজনা নিয়ে এসেছে রাজনৈতিক বৃত্তে। ওঁকে দেখে যদি আরো নতুন মুখ এই আদর্শকে পাথেয় করে তোলেন, তাহলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
No comments:
Post a Comment